- বইয়ের নামঃ প্রজাপতির খামার
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
প্রজাপতির খামার
১
এখানেই বিছাই, বলে, মেঝেতে ম্যাপ বিছিয়ে দেখতে বসে গেল কিশোর পাশা।
হ্যাঁ, এইই ভালো হয়েছে, বললো রবিন। টেবিলটা একটু সরাতে হয়েছে, এই যা। তবে বড় ম্যাপ দেখতে মাটিতেই সুবিধে।
বেশি আওয়াজ করো না, হুঁশিয়ার করলো জিনা। বাবা স্টাডিতে। শব্দ শুনলেই এসে চেঁচামেচি শুরু করবে।
না, করবো না, মাথা নেড়ে বললো মুসা।
এই রাফি, চুপ থাকবি, কুকুরটাকেও সাবধান করলো জিনা। নইলে বের করে দেবো। বুঝেছিস? বুঝতে পারলো রাফিয়ান। শুয়ে পড়লো একেবারে ম্যাপটার ওপরই।
আরে গাধা, সরা ধমক লাগালো কিশোর। তাড়া আছে আমাদের। বাটারফ্লাই হিল খুঁজে বের করতে হবে
বাটারফ্লাই হিল? জিনা বললো। দারুণ নাম তো!
হ্যাঁ, বাংলা করলে হয় প্রজাপতির পাহাড়। ওদিকেই ছুটি কাটাতে যাচ্ছি আমরা এবার। কয়েকটা গুহাও আছে কাছাকাছি। তাছাড়া রয়েছে একটা প্রজাপতির খামার…
প্রজাপতির খামার! জিনা অবাক। প্রজাপতির আবার খামার হয় নাকি!
হয়, মুসা জানালো। আমাদের ইস্কুলের এক বন্ধু, জনি, তার বাড়ি ওখানে। সে-ই আমাদের দাওয়াত দিয়েছে ওখানে যেতে…।
তা-ই বলো, মাথা দোলালো জিনা। এজন্যেই হুট করে চলে এসেছে আমাদের বাড়িতে। আমি তো ভাবলাম আমাদের এখানেই ছুটি কাটাতে এসেছে। তোমরা তাহলে বাটারফ্লাই হিলে যাচ্ছে প্রজাপতির খামার দেখতে!
যা, রবিন বললো। ভাবলাম, এদিক দিয়েই যখন যেতে হবে, তোমাকেও নিয়ে নেবো। তা যাবে তো?
যাবো না মানে? এরকম একটা চান্স ছাড়ে নাকি কেউ?
গভীর মনযোগে ম্যাপ দেখছে চারজনে। হঠাৎ ঝটকা দিয়ে খুলে গেল স্টাডিরুমের দরজা। বিড়বিড় করে আপনমনে কি বলতে বলতে এগিয়ে এলেন জিনার বাবা মিস্টার পারকার। ছেলেমেয়েদেরকে দেখতেই পেলেন না আত্মভোলা বিজ্ঞানী, এসে পড়লেন একেবারে ওদের গায়ের ওপর। হোঁচট খেয়ে মাটিতেই পড়ে গেলেন।
রাফি ভাবলো, ওদের সঙ্গে খেলতে এসেছেন মিস্টার পারকার, খুশিতে জোরে ঘেউ ঘেউ করে উঠে নাচানাচি শুরু করলো সে।
তুমি যে কি, বাবা, মিস্টার পারকারকে ধরে বললো জিনা। একটু দেখে হাঁটতে পারো না?
এই রাফি, চুপ! ধমক লাগালো কিশোর। এতো হাসির কি হলো? থাম!
তিন গোয়েন্দাও এসে হাত লাগালো। মিস্টার পারকারকে ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে দিলো। তারপর কেউ তার কাপড় ঝেড়ে দিতে লাগলো, কেউ দেখতে লাগলো কোথাও ব্যথা-ট্যথা পেয়েছেন কিনা। কড়া চোখে ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে আচমকা গর্জে উঠলেন তিনি, এটা একটা শোয়ার জায়গা হলো! এই জিনা, তোর মা কোথায়? জলদি যা, ডেকে নিয়ে আয়! ডেস্কটা যদি একটু গুছিয়ে রাখে! কাগজপত্র কিছু পাচ্ছি না। ডাক, জলদি ডাক!
মা তো বাড়ি নেই, বাবা। বাজারে গেছে।
নেই? সেকথা আগে বলবি তো! যত্তোসব! গজগজ করতে করতে গিয়ে আবার স্টাডিতে ঢুকলেন তিনি। দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল দরজা।
পরদিন সকালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ওরা। তিন গোয়েন্দা আর জিনা সাইকেলে চলেছে, পাশে পাশে ছুটে চলেছে রাফি। সাগরের ধার দিয়ে গেছে পথ। রোদে ঝলমল করছে নীল সাগর।
গোবেল দ্বীপটা দেখা যেতেই হাত তুলে চেঁচিয়ে উঠলো জিনা, ওই যে, আমার দ্বীপ।
মুখ ফিরিয়ে তাকালো অন্যেরা। বহুবার দেখেছে ওরা ওই দ্বীপ, আর দ্বীপের পুরানো দুর্গের টাওয়ারটা। তবু যতোবারই দেখে নতুন মনে হয়। যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলো, সাইকেল চালাতে চালাতে ফিরে ফিরে তাকালো ওরা ওটার দিকে।
সঙ্গে প্রচুর খাবার দিয়ে দিয়েছেন তিন গোয়েন্দার প্রিয় কেরিআন্টি, জিনার মা। কাজেই দুপুরে খাবার অসুবিধে হলো না ওদের। পথের পাশে গাছের ছায়ায় বসে খেয়ে নিলো, জিরিয়েও নেয়া হলো সেই সাথে। তারপর আবার চলা।
কটা নাগাদ পৌঁছবো? জিজ্ঞেস করলো জিনা।
এই চারটে, জবাব দিলো কিশোর।
বেলা গড়িয়ে আসছে। পথের দুধারে এখন ছড়ানো প্রান্তর। কোথাও মাঠ, কোথাও চাষের জমি। দূরে দেখা গেল পাহাড়।
ওটাই বোধহয়, বলে গলায় ঝোলানো ফীন্ডগ্লাস চোখে ঠেকালো কিশোর। যা, ওটাই। অদ্ভুত চ্যাপ্টা চূড়া। বুড়ো মানুষের দুমড়ে যাওয়া হ্যাটের চূড়ার মতো লাগছে দেখতে।
সাইকেল থেকে নামলো সবাই। এক এক করে ফান্ডগ্রাস চোখে লাগিয়ে পাহাড়টা দেখলো।
চারটের আগেই পৌঁছতে পারতো ওরা, রাফির কারণে পারলো না। ওরা সাইকেলে চড়ে চলেছে, আর কুকুরটা চলেছে দৌড়ে, তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ওকে বিশ্রাম দেয়ার জন্যে মাঝে মাঝে থামতে হচ্ছে ওদের।
অবশেষে পৌঁছলো ওরা বাটারফ্লাই হিলের গোড়ায়। ঢালু উপত্যকায় ছড়িয়ে আছে তৃণভূমি, তাতে গরু চরছে। ঢালের আরও ওপরে, ঘাস যেখানে ছোট আর শক্ত, সেখানে চরছে ভেড়ার পাল। পাহাড়ের পায়ের কাছে যেন গুটিসুটি মেরে শুয়ে রয়েছে ফার্মহাউসটা।
ওটাই জনিদের বাড়ি, বললো কিশোর। ছবি দেখেছি। এই চলল, ওই ঝর্নাটায় হাতমুখ ধুয়ে চুল আঁচড়ে নিই। রাফি, সাংঘাতিক ঘেমেছিস। ইচ্ছে করলে গোসল করে নিতে পারিস।
মুখহাত ধুয়ে, পরিপাটি হয়ে বাড়িটার দিকে এগোলো ওরা। পায়েচলা মেঠোপথ পেরিয়ে এসে থামলো ফার্মের গেটের কাছে। ভেতরে বিরাট এলাকা। উঠনে মুরগী মাটিতে ঠুকরে ঠুকরে দানা খাচ্ছে। পুকুরে হাঁস সাঁতার কাটছে।