–মিস ম্যাসনকে জেরার ধরন দেখে।
-তাতেই কি ধরে নিতে হবে আমি মিঃ ক্যাথারিনকে সন্দেহ করছি? না আমি কাউকেই করছি না। আমি শুধু ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে প্রকৃত অপরাধীকে বের করতে চেষ্টা করছি।
-কিন্তু আপনি সেদিন বলেছিলেন কাউন্টকে অনুসরণ করে হার্ট অফ ফায়ার উদ্ধার করেছেন। এবং জিনিসটা আমাকে দেখিয়েছেন।
–সেকথা তো অস্বীকার করছি না মিঃ আলডিন।
-আপনার কথা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তাহলে রুবীটা বাদ দিয়ে এবার আপনি বুনো হাঁসের পিছনে তাড়া করছেন।
–না মঁসিয়ে, বুনো হাঁসের পিছনে তাড়া করা পোয়ারোর কাজ নয়।
–তাহলে সেই রুবীটা!
-ওটা নকল।
পোয়ারোর কথায় মিঃ আলডিন বিস্ময়ে বিহ্বল হলেন। তাঁর বিস্মিত মুখের ভাব দেখে পোয়ারো বললেন, এবার তাহলে বুঝতে পারছেন তো ঘটনার গতি সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে এগোচ্ছে। কাউন্টের পেছনে ঘোরা বৃথা পণ্ডশ্রম।
–কাউন্টকে আপনি আগাগোড়াই হত্যাকারী ভাবেননি।
–তা ভাবিনি, এবং সেকথা আপনার কাছে গোপন রাখিনি।
–তা সত্ত্বেও কি ওই রুবীর ব্যাপারে তাঁকে আপনি সন্দেহ করেননি।
করেছিলাম। কারণ কাউন্ট ওই রুবীটা হস্তগত করার জন্যে মাদাম ক্যাথারিনকে চিঠিতে রুবীটা আনার অনুরোধ জানাল। কাউন্ট জানতেন মাদাম রুবীটা আনবে তাই তিনি আগেই নকল হার্ট অফ ফায়ার যোগাড় করে রেখেছিলেন। অর্থাৎ সুযোগ মত আসলটি হাতিয়ে তার জায়গায় নকলটি রেখে দেবেন। তিনি আরও বুঝেছিলেন মাদাম কখনও আসল নকলের প্রভেদ বুঝতে পারবেন না। আর কেলেঙ্কারীর ভয়ে কোনোদিন বুঝতে পারলেও কথাটা চেপে যাবেন।
–আপনি তাহলে কি প্রথমেই সন্দেহ করেছিলেন কাউন্ট নকল রুবী সংগ্রহ করে রেখেছেন।
-না তা করিনি। এবং সেই জন্যেই সন্দেহ মুক্ত ছিল না। এখন আর তাকে সন্দেহ করি না।
-এখানে কি আর একটা প্রশ্ন আসে না?
–কি প্রশ্ন মঁসিয়ে?
–কাউন্ট নকল রুবীটা পাচার করার জন্যে এত ব্যস্ত হয়েছিলেন কেন?
–কারণ কাউন্ট বুঝতে পেরেছিলেন পুলিশ তার বাড়ি সার্চ করবে আর তখন নকল রুবীটা পেলে তাকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে গ্রেপ্তার করবে। তাই নকল রুবীটা সরাবার ব্যস্ততা।
–এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝলাম। কিন্তু ও যদি হত্যাকারী না-হয়, তবে কে এই পাষণ্ড?
-যে গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশনে মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ঢুকেছিল। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, কে সেই লোক?
তবে কি ড্রেকই আমার সর্বনাশ করেছে?
–সঠিক কিছু বলতে পারছি না। এখন আমার একমাত্র কাজ হবে সেই লোকটাকে খুঁজে বের করা।
আশা করি শীগগিরই তাকে পাবো। আজ উঠি।
নেগ্রেসকো থেকে বেরিয়ে আসতেই মিঃ পোয়ারো দেখতে পেলেন মিঃ ক্যাথারিন একটা মোটর গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির আরোহীর সঙ্গে কথা বলছেন। গাড়ির আরোহীকে দেখে চিনতে পারলেন–মিস গ্রে।
পোয়ারো তাড়াতাড়ি একটা থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদেরকে লক্ষ্য করলেন, কিন্তু ওরা দেখতে পেল না।
মিনিট দুয়েক পরেই গাড়িটা চলে গেল। মিঃ ক্যাথারিন তখনও দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করতে লাগলেন চলমান গাড়িটাকে।
মেয়েটি চমৎকার, তাই না মঁসিয়ে?
চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালেন মিঃ ক্যাথারিন। পোয়ারো তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।
ক্যাথারিন বললেন, আপনি এখানে?
-মাদমোয়াজেল ক্যাথারিন কি কিছু বলেছেন আপনাকে? আপনাকে দেখে বেশ বিচলিত মনে হচ্ছে।
–সব কথাই যে আপনাকে বলতে হবে তার কোনো কারণ আছে কি?
-না না, তা থাকবে কেন! মিষ্টি হেসে পোয়ারো আবার বললেন, আপনি হয়তো দেখতেই পাননি…. আপনি যখন কথা বলছিলেন আরেকটা গাড়ি থেকে অপর একজন মহিলা আপনাকে লক্ষ্য করছিলেন। বাঁ দিকে তাকালে তাকে দেখতে পাবেন।
বাঁ দিকে তাকিয়েই দেখল মিরেলি তাকে লক্ষ্য করছে আরেকটা গাড়িতে বসে।
–ও দেখছি এখনও পেছন ছাড়েনি।
–ও নিশ্চয়ই জানে যে আপনি এখন অনেক টাকার মালিক।
–ঠিক বলেছেন। ওর কাজই হলো মক্কেল বধ করা। অনেক মেয়ের সংসর্গে আমি এসেছি কিন্তু ওর মতো মেয়ে আজও দেখেনি। ওর ওই সুন্দর চেহারার আড়ালে আছে কুৎসিত মন।
–মাদমোয়াজেল, ক্যাথারিনও তো খুব সুন্দরী, তাই না।
মিস ক্যাথারিন-এর সঙ্গে ওর তুলনা করবেন না মঁসিয়ে। ক্যাথারিন হলেন স্বর্গের দেবী আর ও হলো নরকের কীট। আপনি হয়তো ভাবছেন মিস গ্রের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মিরেলিকে ছেড়ে তার পেছনে ঘুরছি আমি, তাই নয় কি?
–না মঁসিয়ে, এটা ঠিক নয়। মিরেলির সঙ্গে কি সত্যিই সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন আপনি?
-হ্যাঁ।
-তাহলে এগিয়ে যান মাসিয়ে। মিস গ্রে-কে স্ত্রীরূপে পাওয়া যে কোনো পুরুষের পক্ষেই ভাগ্যের কথা।
–কিন্তু তার আগে মিরেলির সঙ্গে একবার বোঝাঁপড়া করতে হবে। কেন ও এখনও আমার পেছনে লেগে আছে তার অবসান ঘটাতে চাই।
দ্রুতপদে মিরেলির গাড়ির দিকে সে চলল। আর পোয়ারো তাঁর বাড়ির দিকে রওনা হলেন।
হোটেলে ফিরে পোশাক ছেড়ে পোয়ারো সবে বিশ্রাম করতে বসেছেন, হঠাৎ তার টেলিফোনটা বেজে উঠল।
রিসিভার তুলে নিলেন পোয়ারো, হ্যাল্লো–এরকুল পোয়ারো বলছি।
অপর প্রান্ত থেকে মিঃ আলডিন–এর প্রাইভেট সেক্রেটারী। স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। দয়া করে লাইনটা ধরুন।
একটু পরেই আলডিন কথা বললেন, মিঃ পোয়ারো বলছেন কি? আমি আলডিন।
–হ্যাঁ, বলুন। আমি কথা বলছি।
-শুনুন মঁসিয়ে, এইমাত্র মিস ম্যাসন ফোন করে বললেন, আপনার কথা শোনার পর এতক্ষণ ধরে তিনি চিন্তা করেছিলেন। এখন তার দৃঢ় বিশ্বাস সেদিন রুথ-এর কামরায় যাকে দেখেছিলেন সে ড্রেক ছাড়া আর কেউ নয়।