-আবার কবে দেখা হবে আপনার সঙ্গে?
-কাল এগারোটার সময়ে। আশা করি তখন আরও কিছু নতুন সংবাদ আপনাকে দিতে পারব। ওসব নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করবেন না। চলি।
পোয়ারো যেতেই আলডিন, ক্যাথারিন এবং কিংটনকে দেখলেন তারা গল্পে মশগুল।
.
২০.
মঁসিয়ে পপোপুলাস
পূর্বোক্ত ঘটনার পরের দিনের কথা।
ব্রেকফাষ্ট করছিলেন পপোপুলাস, সামনের চেয়ারে মুখোমুখি বসেছিল তার মেয়ে জিয়া।
হোটেলের বয় এসে পপোপুলাসের হাতে একটা কার্ড দিল। কার্ডখানা দেখে পপোপুলাস বললেন, ভদ্রলোককে আসতে বলো।
বয় চলে গেলে তিনি জিয়াকে বললেন, টিকটিকি পোয়ারো আসছে রে, কি ব্যাপার! ও হঠাৎ আমার পেছনে লাগল কেন?
জিয়া বলল, গতকাল ওকে টেনিস লনে দেখেছিলাম। মনে হয় উনি কোনো খোঁজখবর পেয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে উনি নাক গলাচ্ছেন কেন?
পপোপুলাস বললেন, আমার মনে হয় মিঃ আলডিন তাকে নিযুক্ত করবেন। রুথ এবং হার্ট অব ফায়ার দুটো হারিয়ে ভদ্রলোক একেবারে ক্ষেপে গেছেন।
পোয়ারো এসে হাজির হলেন সেখানে, সুপ্রভাত মিঃ পপোপুলাস। ভালো আছেন নিশ্চয়ই?
জিয়ার দিকে তাকিয়ে, আমাকে ভুলে যাননি তো মাদমোয়াজেল?
আপনাকে কেউ ভুলতে পারে? দয়া করে বসুন মঁসিয়ে। পোয়ারোর বসবার পর পপোপুলাস বললেন, কফি চলবে কি?
–না, এই মাত্র কফি খেয়ে আসছি।
–তা, এখানে কি মনে করে?
-কেন? পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে কি আসতে নেই? পপোপুলাস হেসে বললেন, পুরনো বন্ধুর জন্যে এমন টান যে প্যারী থেকে রিভিয়ারায় ছুটে এসেছেন, আমি তাহলে একজন কেউকেটা বলুন!
পোয়ারো হেসে বললেন, মাঁসয়ে পপোপুলাস কি নিজেকে এত অখ্যাত মনে করেন? আপনি যে একজন বিখ্যাত লোক, একথা কে না জানে।
–অন্য কেউ না জানলেও যে সব গোয়েন্দা আমার ওপর গোপনে নজর রাখেন তাদের চোখে আমি একদিক দিয়ে বিখ্যাত বৈকি। যা এবারে দয়া করে আসল কথাটা ব্যক্ত করুন পোয়ারো।
–আমি কোনো একটা ব্যাপারে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি মিঃ পপোপুলাস।
-আশ্চর্য! আমি সাহায্য করব বিশ্ববিখ্যাত ডিটেকটিভ এরকুল পোয়ারোকে! এরকম অদ্ভুত কথা এর আগে কোনোদিন শুনেছি বলে মনে হয় না।
–না, ঠাট্টা নয় বন্ধু। সত্যিই আমি আপনার সাহয্যপ্রার্থী।
–বেশ, কি সাহায্য করতে হবে বলুন। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই খুব গুরুতর তাই না?
–হ্যাঁ, ব্যাপারটা গুরুতরই বটে। মাদাম ক্যাথারিন-এর মৃত্যুর ব্যাপারে আমি তদন্ত করছি।
–কাগজে পড়েছি খবরটা। কে বা কারা তাকে ব্লু ট্রেনের কামরার ভেতরে হত্যা করেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি?
পকেট থেকে ভেলভেটের বাক্সটা বের করে পপোপুলাস-এর হাতে দিয়ে বললেন, দেখুন ত, রুবীগুলোর দাম কত হবে?
বাক্সটা খুলে রুবীগুলোর দিকে তাকিয়ে পপোপুলাস বললেন, আপনি কি সত্যিই এগুলোর দাম জানতে চান, না আপনার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
–ঠিকই ধরেছেন। আমি জানি, এগুলোর দাম পাঁচ হাজার পাউণ্ডও হবে না।
-হা নকল হলেও এগুলো দেখতে আগের মতই। সাধারণ লোকে নকল বলে বুঝতেই পারবে না। কিন্তু এগুলো আপনার হাতে এলো কি করে? কার কাছে ছিল?
–ছিল কাউন্ট দ্য লা রোচির কাছে।
–আশ্চর্য ব্যাপার তো!
–হ্যাঁ, ব্যাপারটা একটু আশ্চর্য বটে। এবার শুনুন এগুলো বোঝা যাচ্ছে নকল। কিন্তু আসল রুবীগুলো মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরা থেকে অপহৃত হয়েছে।
–কি বলছেন!
–শুনুন বন্ধু! চোরাই মাল উদ্ধার করার কাজ পুলিশের।
আমি শুধু হত্যাকারীকে বের করতে চাই। মিঃ আলডিন আমাকে এই কাজের জন্যেই নিযুক্ত করেছেন। তবে হত্যাকারীর সন্ধান করতে গেলেই রুবীগুলোর ব্যাপারও এসে যায়। কারণ মাদাম ক্যাথারিন-এর হত্যা আর রুবী অপহরণ দুটো ঘটনাই পরস্পর সংযুক্ত।
পপোপুলাস হেসে বললেন, তারপর?
–আমার ধারণা, রুবীগুলো শীঘ্রই হস্তান্তরিত হবে বা হয়ে গেছে এই শহরেই। এই কারণেই মনে হচ্ছে আমার–আপনি হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।
–কিভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি বলুন।
–আপনার মতো বুদ্ধিমান লোককে কি খুলে বলতে হবে? রাশিয়ার কোনো ভূতপূর্ব গ্র্যাণ্ড ডিউক, অষ্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো আর্কডাচস, কিংবা ভারতের কোনো মহারাজা যদি কোনো দামী রত্ন বিক্রি করতে চান তাহলে সেগুলো কোথায় এবং কার কাছে যায় সে খবর আপনার জানা আছে।
-হ্যাঁ, এ ধরনের গোপন লেনদেনের ব্যাপারে আমার কিছুটা সুনাম আছে বটে। কারণ আপনার মতো আমিও গোপনীয়তা রক্ষা করে থাকি।
–তাহলে বুঝতে পারছেন কেন আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইছি। এর সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
পপোপুলাস বললেন, ধরুন এ ব্যাপারটা যদি আমার জানা থাকে, তবু সে কথা আপনাকে বলব কেন? পেশাগত গোপনীয়তা আমি জানাতে রাজী নই মিঃ পোয়ারো।
–কথাটা ঠিকই বলেছেন মঁসিয়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি আশা করি আমাকে অন্ততঃ বলবেন সেটা। কারণ সতের বছর আগে কোনো একজন নাম করা লোক তার দামী জিনিস আপনার কাছে জামিন হিসাবে গচ্ছিত রেখে ছিল এবং জিনিসটি আপনার হেফাজত থেকে চুরি হয়েছিল। সে সময় আমিও আপনাকে কোনো বিশেষ ব্যাপারে গোপন ভাবেই সাহায্য করেছিলাম।
পোয়ারো একবার জিয়ার দিকে দেখলেন সে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে কথাগুলো শুনছে। পোয়ারো বলে চললেন, আমি তখন প্যারীতে। আপনি আমাকে সেখান থেকে এনে সেই চোরাই মাল উদ্ধারের কাজ আমার ওপরে ছেড়ে দিলেন। এবং আমি সেই জিনিস উদ্ধার করে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।