কাউন্ট বললেন, আমাকে কি জন্য তলব করা হয়েছে। দয়া করে বলবেন কি?
নিশ্চয়ই বলব। আপনাকে ডেকে এনেছি মাদাম ক্যাথারিন-এর সম্বন্ধে দু-চারটে কথা জিজ্ঞেস করবার জন্যে। আমি জানতে পেরেছি যে আপনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল।
–নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচয় থাকাটা অপরাধ নাকি?
–আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন মিঃ কাউন্ট। আপনি হয়তো জানেন না যে, মাদাম ক্যাথারিন মারা গেছেন।
-মারা গেছেন! বলেন কি!
–শুধু মারা গেছেন বললে ভুল হবে। তিনি নিহত হয়েছেন।
–কী সর্বনাশ! মাদাম ক্যাথারিন নিহত হয়েছেন। এ কি দুঃসংবাদ। কবে, কখন, কোথায় নিহত হলেন তিনি? কে তাকে হত্যা করল?
–গত চোদ্দই জানুয়ারি শেষরাত্রে ব্লু ট্রেনের একটা কামরার ভেতরে নিহত হয়েছেন তিনি। কোনো অজ্ঞাত আততায়ী তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেছে তাঁকে।
খবরটা শুনে কাউন্ট দ্য রোচি একেবারে মুষড়ে গেলেন। তিনি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ এমনভাবে ছিলেন যে, দেখেই মনে হলো তিনি যেন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন।
মিনিট দুই এইভাবে থাকবার পর তিনি বললেন, ট্রেনে ভ্রমণ করা দেখছি রীতিমত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। আজকাল ট্রেন ডাকাতরা নির্বিবাদে যা খুশী তাই করে চলেছে। আর
আমাদের পুলিশ বিভাগ নিরপরাধ লোকদের ধরে টানা-হাচড়া ও হয়রানি করছে।
–পুলিশ বিভাগ অকারণে কাউকে হয়রান করে না মিঃ কাউন্ট। বললেন কমিশনার।
-শুনে ব্যথিত হলাম। তা আমাকে ট্রেন ডাকাত বলে মনে হয়েছে নাকি আপনাদের?
কাউন্টকে থামিয়ে দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট গম্ভীর স্বরে বললেন, দয়া করে থামুন মঁসিয়ে। পুলিশ এত বোকা নয় যে আপনাকে ট্রেন ডাকাত বলে মনে করবে। যাক, এবার শুনুন, কেন আপনাকে ডেকে আনা হলো। নিহত মাদাম ক্যাথারিন-এর হ্যাণ্ডব্যাগে আপনার লেখা একখানা চিঠি পাওয়া গেছে। চিঠির বিষয়বস্তু আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে।
ম্যাজিস্ট্রেটের কথায় কাউন্ট বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তার চোখে মুখে একটা অস্বস্তির ভাব ফুটে উঠলো।
ম্যাজিস্ট্রেট আবার বললেন, চিঠিখানা পড়ে আমরা জানতে পেরেছি যে মাদাম ক্যাথারিন আপনার সঙ্গে দেখা করবার জন্যে আসছেন। শুধু তাই নয়, আপনি তাকে ইতিহাসে বিখ্যাত হার্ট অব ফায়ার রুবীটাও সঙ্গে আনতে লিখেছিলেন। অতএব বুঝতে পারছেন, বিনা কারণে আপনাকে এখানে আনা হয়নি। ওই চিঠি সম্বন্ধে আপনার বক্তব্য আমরা শুনতে চাই।
ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশ্নের জবাবে কাউন্ট দ্য লা রোচি ধীর অথচ স্পষ্ট কণ্ঠে বললেন, চিঠিখানা যখন আপনারা পড়েই ফেলেছেন তখন আর কিছু গোপন করে লাভ নেই। আমি অকপটেই স্বীকার করছি মাদাম ক্যাথারিন-এর সঙ্গে আমার প্রণয় ছিল। আমরা রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। এবং অনেকের মতো আমারও একটা প্রাইভেট লাইফ আছে। মাদাম ক্যাথারিন সত্যিই আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্যে আসছিলেন।
–আপনি গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশনে মাদামের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তারপর ট্রেনে উঠে তাঁর কামরাতেই ছিলেন। তাই নয় কি?
-না, এ কথা সত্যি নয়।
-আপনি কি চোদ্দ তারিখে সন্ধ্যার সময় তাঁর সঙ্গে গেয়ার দ্য নয়েন স্টেশনে দেখা করেননি?
–নিশ্চয়ই না। ঐ তারিখে ভোর বেলায় আমি নিস-এ পৌঁছই। অতএব আপনার অনুমান একেবারে ভিত্তিহীন।
-ভিত্তিহীন হলেই আমি খুশী হব মিঃ কাউন্ট। কিন্তু আপনার বক্তব্যের সমর্থনে আমরা কিছু সাক্ষ্য প্রমাণ চাই। চোদ্দ তারিখের বিকেল বেলা থেকে পনেরো তারিখের ভোর রাত্রি পর্যন্ত আপনি কোথায় কোথায় ছিলেন এবং কি করছিলেন তার একটা তথ্য নির্ভর প্রমাণ আপনার কাছে আছে তাই না মঁসিয়ে?
ম্যাজিস্ট্রেটের কথা শুনে কাউন্ট বললেন, সেদিন সন্ধ্যার পরে মন্টিকার্লোর কাফে দ্য প্যারীতে ডিনার খেতে যাই। ডিনার শেষ হলে আমি যাই লে স্পোর্টিং-এ, সেখানে জুয়া খেলে কয়েক হাজার ফ্র লাভ করেছিলাম।
-তারপর কি করলেন?
–তারপর সোজা আমি বাড়িতে চলে আসি।
–আপনি কি ট্রেনে এসেছিলেন?
–না। আমি আমার টু সীটার গাড়ীতে এসেছিলাম।
–আপনার সঙ্গে আর কেউ ছিল নাকি?
–না।
–আপনার এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারবেন কি?
–নিশ্চয়ই পারব, কাফে দ্য প্যারী এবং লে স্পোর্টিং-এ অনেকেই আমাকে দেখেছিলেন। ওই দু জায়গায় খবর নিলেই আমার কথার সত্যতা জানতে পারবেন।
–আপনি বাড়িতে এসেছিলেন কখন?
শেষ রাত্রে।
দরজা খুলে দিয়েছিল কে? আপনার চাকর নিশ্চয়ই।
–না, আমি নিজেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছিলাম। সদর দরজার একটা বাড়তি চাবি আমার কাছে থাকে।
সেই চাবির সাহয্যেই আমি ভেতরে ঢুকেছিলাম।
–তার মানে, লে স্পোর্টিং থেকে বাড়িতে ফেরা অবধি আপনার বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই। তাই না?
-হ্যাঁ, অবস্থাটা প্রায় সেই রকমই দাঁড়াচ্ছে।
হাকিম কনস্টেবলকে ডেকে বললেন, মহিলাদের ঘরে যে স্ত্রীলোকটি বসে আছে, তাকে নিয়ে এস।
এক মিনিটের মধ্যে মিস ম্যাসন হাজির হলেন আদালত কক্ষে। তাঁর দিকে তাকিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, আপনাকে একটা বিশেষ দরকারে ডেকে আনা হয়েছে এখানে।
-কি জানতে চান বলুন।
–আপনি বসুন, তারপর বলছি।
ম্যাসনের কানে কানে ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, দেখুন তো এই ভদ্রলোকটিকে আপনি চেনেন কি না।
কাউন্ট দ্য লা রোচিকে দেখিয়ে দিলেন তিনি।
মিস ম্যাসন কাউন্টকে ভালো করে লক্ষ্য করে বলল, না, এঁকে আমি দেখেছি বলে মনে হয় না।