-হ্যাঁ চিনি। যে লোকটা চিঠিখানা লিখেছে সে নিজেকে কাউন্ট দ্য রোচি বলে পরিচয় দিয়ে থাকে।
–আপনি যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে ঔ লোকটার সম্বন্ধে দু-একটা কথা জানতে চাই আপনার কাছে। আমি জানি এখন জিজ্ঞেস করা মানে আপনাকে দুঃখ দেওয়া। কিন্তু আপনার মেয়ের হত্যাকারীকে বের করতে হলে তো আমার সবকিছু জানতেই হবে। আপনি দয়া করে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন।
নিশ্চয়ই দেবো। কি জানতে চান বলুন?
–লোকটার সম্বন্ধে আপনি যা যা জানেন, দয়া করে সব খুলে বলুন।
-বেশ, তাহলে শুনুন। আজ থেকে বার বছর আগে রুথ-এর সঙ্গে প্যারীতে ওর পরিচয় হয়। রুথ-এর বয়স তখন সবে মাত্র আঠারো বছর। ওই বয়সে মেয়েরা সাধারণতঃ রোমান্টিক হয়। রুথ-এরও তাই হলো। আমার অজ্ঞাতে ওদের মেলামেশা চলতে থাকে। বেশ কিছুদিন পর আমি ব্যাপারটা জানতে পারি।
–তারপর?
-আমি তখন ওই কাউন্ট-এর সম্বন্ধে গোপনে খোঁজখবর নিতে থাকি। কয়েক দিনের মধ্যেই জানতে পারি যে ওর পরিচয়টা একেবারে ভুয়ো। ওর বাপ, দাদা চোদ্দ পুরুষ কেউই কাউন্ট ছিল না। আমি আরও জানতে পারি যে লোকটা একটা পয়লা নম্বরের স্কাউনড্রেল। বড় ঘরের মেয়েদের পটিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেল করাই ওর কাজ।
এই সময় কমিশনার বলে উঠলেন : আপনি ঠিকই বলেছেন। সত্যিই ওর কাজ হলো মেয়েদের ব্ল্যাকমেল করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও আমরা ওকে আইনের ফাঁদে ফেলতে পারিনি। যে সব মেয়েকে ব্ল্যাকমেল করে তারা কেলেঙ্কারির ভয়ে পুলিশের কাছে মুখ খোলে না। এবং কোর্টেও আসতে চায় না। আর এই সুযোগে কাউণ্ট মশাই তার কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ওর ওপরে আমাদের নজর আছে। এবার আপনার বক্তব্য বলুন।
কাউন্টের আসল পরিচয় পাবার পর আমি রুথকে ওর খপ্পর থেকে উদ্ধার করে লর্ড লুকোনবারীর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিই। ভেবেছিলাম ওদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে কিন্তু তা হলো না। চরিত্রহীন লর্ড নন্দন রুথ-এর সঙ্গে এমন দুব্যবহার করতে লাগলো যে শেষ পর্যন্ত আমি রুথকে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে বলি।
–মামলাটা কি রুজু হয়েছে? –বললেন পোয়ারো।
–না। কথা ছিল যে রুথ রিভিয়ারা থেকে ফিরে এলে মামলাটা রুজু করা হবে।
–এবার হার্ট অফ ফায়ার সম্বন্ধে বলুন।
মাস দুয়েক আগে থেকে রুবীটা সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে করতে দশদিন আগে সেটা আমার হাতে আসে।
-তারপর কি করলেন?
রুবীটা আমার হাতে আসার পরদিনই আমি সেটা রুথকে উপহার দিই। তবে আমি ওকে বিশেষভাবে বলেছিলাম যে রুবীটা রিভিয়ারায় যাবার সময়ে যেন সঙ্গে না নেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ও আমার কথা অমান্য করার ফলে ওকে প্রাণ দিতে হলো।
মিঃ আলডিন-এর কাছে সব কথাগুলি জেনে মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, এবার তাহলে ঘটনাগুলিকে পর্যায়ক্রমে সজানো যায়। পরপর সাজালে যা দাঁড়াচ্ছে, ত হলো :
(১) হার্ট অফ ফায়ার যে মাদাম ক্যাথারিন-এর কাছে আছে এ খবর কাউন্ট দ্য রোচি জানতে পেরেছিল।
(২) মাদাম ক্যাথারিন যাতে রুবীটা সঙ্গে নিয়ে যান, তার জন্য চিঠিতে ওই রুবী সম্বন্ধে প্রবন্ধ রচনার আকারে গল্প জুড়ে দিয়েছিল কাউন্ট।
(৩) গেয়ার দ্য নায়ন স্টেশনে একটি লোক ট্রেনে উঠে মাদাম ক্যাথারিন-এর কামরায় ঢুকেছিল। মাদাম নিজেই তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন।
(৪) মাদামের মেইড মিস ম্যাসন সেই লোকটিকে দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু তার মুখ দেখতে না পাওয়ায় তাকে চিনতে পারেনি।
(৫) লোকটি মাদামের কামরায় আসবার পরে মাদাম তার মেইডকে প্যারী স্টেশনে নেমে যেতে বলেন।
(৬) মেইড প্যারী স্টেশনে নেমে যায়। তবে যাওয়ার আগেও সে লোকটিকে দেখতে পেয়েছিল।
(৭) মিস ম্যাসন-এর কাছ থেকে জানা যায় যে, ভেলভেটের বাক্সটা মাদামের কাছেই ছিল।
(৮) মাদাম কন্ডাক্টরকে বলেছিলেন, সে যেন সকালে তার ঘুম না ভাঙায়।
(৯) এর পরেই মাদাম নিহত হল এবং হার্ট অফ ফায়ার অপহৃত হয়।
(১০) সেই লোকটির আর পাত্তা পাওয়া যায় না।
মঁসিয়ে পোয়ারোর ঘটনা সাজাবার কায়দা দেখে সবাই খুশী হলেন। কমিশনার বললেন, এবার হত্যাকারীর মোটিভটা বুঝতে পারা যাচ্ছে।
তাছাড়া হত্যাকারী কে? সে সম্বন্ধে একটা ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে–বললেন ম্যাজিস্ট্রেট।
পোয়ারো বললেন, এবার ওপরের দশদফা ঘটনাকে বিশ্লেষণ করা যাক।
মিস ম্যাসন-এর সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে গেয়ার দ্য নায়ন স্টেশনে গাড়ি থামলে মাদাম ক্যাথারিন ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামবার জন্যে করিডরে আসেন। প্ল্যাটফর্মে কোনো একটি লোককে তিনি দেখতে পান। লোকটিকে তিনি সঙ্গে করে নিজের কামরায় নিয়ে আসেন।
এরপর মাদামের কাজকর্ম ও কথাবার্তা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহ আসে যে ওই লোকটি কাউন্ট দ্য রোচি ছাড়া আর কেউ নয়। এবং আরো সন্দেহ হয় যে, কাউন্টই মাদামকে হত্যা করে রুবীটা অপহরণ করে সরে পড়েছিল।
আপনি ঠিকই বলেছেন মঁসিয়ে। আমারও ঠিক এই রকম মনে হচ্ছে যে, ওই শয়তান রুথকে হত্যা করেছে।
–না মিঃ আলডিন। আগে থেকেই এটা ধরে নেওয়া চলে না। ঘটনা পরম্পরায় কাউন্ট দ্য রোচির ওপরে সন্দেহ এলেও সেই-ই যে ট্রেনে উঠেছিল তার কোনো প্রমাণ নেই।
–কিন্তু তাহলে আর কে হতে পারে! না মঁসিয়ে, আপনি যাই বলুন না কেন, আমার বিশ্বাস লোকটি কাউন্ট ছাড়া আর কেউ নয়।