–মঁসিয়ে পোয়ারো হতে পারে। কিন্তু ওর মুখে যে কথা ঘটনার আগের দিন শোনা গিয়েছিলো তার সঙ্গে তো খাপ খায় না এটা। তাছাড়া একটা ঘটনা ঘটেছিলো তার পরের দিনও। কথাবার্তার কিছুটা ফিলিপ ব্লেক শুনেছিলেন আর অন্য খানিকটা অংশ এলসা গ্ৰীয়ারও শুনেছিলেন। সেদিন লাইব্রেরী ঘরে ঝগড়া হচ্ছিলো মিঃ আর মিসেস ক্রেলের মধ্যে। পাশের হল ঘরে ছিলেন ফিলিপ, শোনেন সেখান থেকে। বাইরের বারান্দায় খোলা জানালার পাশে এলসা ছিলেন। তাই শুনছিলো একটু বেশি।
ওরা কি শুনেছিলো? জানতে চাইলো পোয়ারো।
শুনেছিলেন ফিলিপ ব্লেক মিসেস ক্রেল বলেছেন–তুমি আর তোমার ঐ মেয়ে মানুষরা আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে খুন করতে। তুমি একদিন আমার হাতে খুন হবে।
আত্মহত্যার কথা কিছু বলেননি? ঠিক তাই। একটাও না। যদি তুমি করো এটা তাহলে আত্মঘাতী হবো আমি।উনি ও ধরনের কোনো কথা বলেননি। তেমন কোনো কথা মিস এলসা গ্রীয়ারের সাক্ষ্যেও শোনা যায়নি। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এলসা বলেছিলেন, সব জিনিসটাকে বুদ্ধি দিয়ে ক্যারোলিন বিচার করার চেষ্টা করো। আমার খুব প্রিয় তুমি এবং সব সময়ে তোমার আর তোমার বাচ্চার আমি মঙ্গল কামনা করি। তাই বিয়ে করতে যাচ্ছি এলসাকে সব সময়েই আমরা তো রাজী আছি পরস্পরকে মুক্তি দেবার ব্যাপারে। মিসেস ক্রেল তার উত্তরে বলেছিলেন, ঠিক আছে তবে যেন বলতে না শুনি কোনোদিন যে তোমাকে আমি সাবধান করে দিইনি। অ্যামিয়াস আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, তুমি কি বলতে চাইছো, ক্যারোলিন তখন বলেছিলো, আমি বলতে চাইছি যে তোমাকে আমি ভালবাসি এবং আমি তোমাকে হারাতে রাজী নই। বরং তোমাকে আমি মেরে ফেলবো তবুও কাছে যেতে দেবো না ওর।
একটু নড়েচড়ে বসলো পোয়ারো, মিস গ্ৰীয়ার যথেষ্ট নির্বুদ্ধিতার কাজই করেছিলেন এই প্রসঙ্গটা তোলার ব্যাপারে। বিবাহ বিচ্ছেদে মিসেস ক্রেল সম্মতি না দিয়েই তো সহজ করে তুলতে পারতেন কাজটা।
আমরা ঐ ব্যাপারে কিছু সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছিলাম, হেল বললেন, বিশ্বাস করে মিসেস ক্রেল তাদের বহুদিনের বিশ্বস্ত পারিবারিক বন্ধু মেরিডিথ ব্লেককে বলেছিলেন মনের কিছু কথা। মেরিডিথ খুব বিচলিত হয়ে এ নিয়ে আলোচনা করেন অ্যামিয়াসের সঙ্গে। মনে হয় যতদূর আগের দিন বিকেল বেলায় এই কথাবার্তাটা হয়েছিলো। সামান্য বকাবকিও করেছিলেন মেরিডিথ তার বন্ধুকে। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হবে ওদের বিবাদ বিচ্ছেদ হওয়াটা। তাছাড়া অত্যন্ত কম বয়সী মেয়ে এলসা গ্ৰীয়ার ওকে টেনে নিয়ে কোর্টে যাওয়াটা ভালো কাজ হবে না। মিঃ ক্রেল তার উত্তরে মুখটিপে হেসে বলেছিলেন, ওসব কিছুই চায় না এলসা। ও যাবে না কোর্টে। নিজেরাই এটা মিটিয়ে নেবো আমরা।
তাহলে তো মিস এলসা গ্রীয়ারের পক্ষে ঐভাবে সব কথা ফাঁস করে দেওয়াটা আরও বোকামির কাজ হয়েছে? বললো পেয়ারো।
আঃ আপনি মেয়ে মানুষদের চেনেন তো? এ ওর টুটি টিপে ধরতে পারলে কিছু আর চায় না, বেশ ঘোরালো হয়ে উঠেছিলো পরিস্থিতি। কেন যে অ্যামিয়াস ক্রেল ও ভাবে চলতে দিচ্ছিলেন তা আজও আমি পারি না বুঝতে। যা বলেছিলেন মেরিডিথ ব্লেককে তা থেকে জানা যায় তিনি ছবি আঁকাটা আগে চাইছিলেন শেষ করতে। আচ্ছা এর কোনো মানে হয়?
হা, হয় তা আমার মতে। আমার মতে হয় না। অকারণে মানুষটা বাট বাড়াতে চাইছিলো।
এলসা গ্ৰীয়ার কথাটা যে ভাবে ফাঁস করে দিয়েছিলো, বোধ হয় তাতে খুব রেগে গিয়েছিলেন মিঃ ক্রেল।
হা, হয়েছিলেন তা, তাই বলেছিলেন মেরিডিথ ব্লেক, যদি ছবিটা শেষ করারই প্রশ্ন হতো, তাহলে কয়েকটা ফটো মেয়েটির তুলে নিয়ে কোনো অসুবিধে ছিলো কি কাজ করার? জল রঙ দিয়ে ছবি আঁকে এমন একজন কে আমি জানি। ওইভাবে ফটো তুলে ও কাজ করে।
মাথা নাড়লো পোয়ারো, না অনেকটা বুঝতে পারছি আমি শিল্পী ক্রেলকে। আপনাকে এ কথা মনে রাখতে হবে যে ঠিক ঐ সময়ে আর কিছুই ঐ ছবিটা ছাড়া ক্রেলের কাছে বড় হয়ে উঠতে পারেনি। যতো গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন মেয়েটিকে বিয়ে করার প্রশ্নটা বোধহয় ছবিটাই বড় হয়ে উঠেছিলো সবচেয়ে এই মুহূর্তে। তাই ওখানে মেয়েটির আসা বা থাকার ব্যাপারে তখন প্রাধান্য দিতে চাননি অন্য কোন প্রসঙ্গকে অবশ্য কারণটা মেয়েটি বুঝতে পারেনি। প্রেমটাই সব থেকে প্রধান হয়ে ওঠে মেয়েদের কাছে।
আমি কি তা আর জানি না? গাঢ় সুরে পুলিশ সুপার হেল বললেন।
পুরুষরা, বিশেষ করে একটু অন্য ধরনের হয়ে থাকে শিল্পীরা, আবার মন্তব্য করলো পোয়ারো।
শিল্পকলা সুপারিনটেন্টে বললেন ব্যাঙ্গের সুরে, যতসব বাজে কচকচি শিল্পকলা নিয়ে। ওটা আমি কখনই বুঝিনি এবং বুঝবোও না। যে ছবিটা ক্রেল আঁকছিলেন ওটা দেখা উচিত আপনার কোনো সামঞ্জস্য নেই কোথাও। এমনভাবে মেয়েটিকে এঁকেছে যেন মনে হচ্ছে কনকন করছে ওঁর দাঁত। ছবিটা পুরো বাজে। ছবিটা সম্বন্ধে বহুদিন পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে একটা বাজে চিন্তা ঘুরপাক খেত। মুছে ফেলতে পারতাম না কিছুতেই, বিশেষ করে মেয়েটিকে।
হেসে ফেললো পোয়ারো, দেখুন, আপনি কেমনভাবে না জেনে অসাধারণ যে অ্যামিয়াসের শিল্প তা স্বীকার করে নিচ্ছেন।
ছাড়ুন তো বাজে কথা। সুন্দর যা কিছু আনন্দ দেয় মনকে এমন জিনিস আঁকে না কেন শিল্পীরা? যতো সব কুৎসিত জিনিসগুলোকে খুঁজে পেতে নিয়ে পড়ে কেন?