- বইয়ের নামঃ ব্ল্যাক কফি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
ব্ল্যাক কফি
০১. লন্ডন শহর
ব্ল্যাক কফি (এরকুল পোয়ারো)
০১.
লন্ডন শহর।
মে মাসের সকাল। এতক্ষণ হালকা কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন ছিল চারপাশ। ধীরে ধীরে সূর্যের মুখ দেখা দিয়েছে।
রাস্তাঘাটে যানবাহনের ঢল নেমেছে। ব্রেকফাস্ট সেরে মানুষজন চলেছে যে যার কাজে। মোটরকার, পুলকার, সাইকেল, বাসে চেপে ব্যস্ত হাজার হাজার নারীপুরুষ ছুটছে।
হোয়াইট হল ম্যানসন। ছোট্ট ফ্ল্যাটের ব্যালকনি। বেলজিয়াম পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত তুখোড় বড় কর্তা আরামকেদারায় গা এলিয়ে দিয়েছেন। অন্যান্য দিনের মতো। সামনে খবরের কাগজ মেলে ধরেছেন। চোখ খবরের শিরোনামে আবদ্ধ।
অনুগত ভৃত্য ভ্যালেট জর্জকে ডেকে এক কাপ হট চকোলেট আনতে বললেন। এটি তার প্রিয় পানীয়। ইতিমধ্যে এক কাপ হয়ে গেছে, এটি দ্বিতীয়।
মাঝে মাঝে পোয়ারোর দৃষ্টি খবরের কাগজ থেকে ছিটকে চলে যাচ্ছে রাস্তার দিকে। হোয়াইট হল ম্যানসনের বাসিন্দাদের অনেকেই এই সময় যে যার কাজের দিকে রওনা হয়, আজও তার ব্যতিক্রম হল না। কাছাকাছি স্কুল-কলেজে পড়ান এমন কয়েকজন যুবক-যুবতীও তাদের মধ্যে আছে।
পোয়ারো এবার দৃষ্টি ফেরালেন ঘরের দিকে। জর্জকে দেখতে পেলেন। হট চকোলেটের কাপ তার হাতে।
পোয়ারো কাপ হাতে নিলেন। বললেন–জর্জ, বল ত, আলতো চুমুক দিলেন কাপে, বলছি, কাল রাতে কোন ফোন এসেছিল? আমাকে চাইছিল?
–হ্যাঁ, স্যার। জর্জ বিনীত স্বরে বলল, ইস, বলতে একদম ভুলে গিয়েছি। আসলে আপনি কাল রাতে মিসেস অলিভারের সঙ্গে থিয়েটার দেখতে চলে গেলেন। আপনার আসতে দেরি হচ্ছিল বলে আমি খাওয়াদাওয়া সেরে শুয়ে পড়েছিলাম। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল।
-বেশ, বেশ, কথা না বাড়িয়ে বল, কে ফোন করেছিল? তার নাম বলেছে?
–হ্যাঁ বলছি, একটু সবুর করুন।
মনিবের ধমক খেয়ে জর্জ কপালে আঙুলের দুটো টোকা দিল। মনে করার চেষ্টা করল। ট্রাউজারের হিপ পকেটে হাত ঢোকাল। পরক্ষণেই বেরিয়ে এল, একটুকরো কাগজ। জ্যাকেটের বুক পকেট থেকে চশমা বের করল। নাকের ওপর রাখল। চিলতে কাগজটা মেলে ধরল।–হ্যাঁ, এই সেই কাগজ, যেখানে নামটা টুকে রেখেছিলাম। স্যার ক্লড অ্যামরি, ফোন নম্বর দেখে মনে হয় বেশি দূরে নয়, ফারের কাছাকাছি জায়গাটা হবে। উনি আপনাকে ফোনে যোগাযোগ করতে বলেছেন, স্যার। তবে, ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপন, পাঁচকাণ যেন না হয় তাও বলেছেন।
-ধন্যাবাদ, জর্জ। হট চকোলেটের খালি কাপটা জর্জের ট্রে-তে রেখে পোয়ারো বললেন, ওই নাম ও টেলিফোন নম্বর লেখা কাগজটা ডেক্সের ওপর রেখে নিজের কাজে যাও। কাগজটা পড়া বাকি আছে, পরে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
জর্জ ঘর থেকে চলে গেল। পোয়ারো কাগজের দিকে চোখ মেলে দিলেন। নাহ, কাগজে নতুন কোন খবর নেই। সভ্য মানুষের চরম দুঃখ আর হতাশার একঘেয়ে খবর অ্যাডলফ হিটলারের অত্যাচার–জার্মানির আদালতগুলি আইনকানুনের তোয়াক্কা করে নাৎসী বাহিনীর শাখা দপ্তরে পরিণত হয়েছে বুলগেরিয়ার ফ্যাসিপন্থীরা সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে
এবার একটি দুর্ঘটনার খবর ঘটেছে তাঁর নিজের দেশ বেলজিয়ামে মনস-এর খনির ভেতর শ্রমিকরা কাজ করছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। মৃত্যু হয় বিয়াল্লিশ জন লোকের।
দৈনিক টাইমস-এর পাতা উল্টে পোয়ারো শোক সংবাদ কলমে চোখ রাখল খুব চেনা আর খুব কাছের কয়েকজনের মৃত্যু সংবাদ পড়ে মনটা বিষণ্ণ হল।
কাগজটা ভাজ করে টেবিলের এক পাশ রেখে দিলেন। টুলের ওপর পা দুটো তুলে দিলেন। চিন্তায় আচ্ছন্ন মন। অ্যামরি, স্যার ক্লড অ্যামরি নামটি ঘুরপাক খাচ্ছে। নামটা বড় চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু তোক কে? না, মনে পড়ছে না–জর্জ, ব্যারিস্টার, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বড় কর্তা, নাকি রাজনৈতিক নেতা?
চিন্তাচ্ছন্ন মনে আরাম কেদারা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পায়ে পায়ে এসে ঢুকলেন স্টাডিরুমে। প্রয়োজনে এখানে বসেই তিনি খাওয়া সারেন ও রাত কাটান। ভ্যালেট জর্জ তার মনিবের এই ধরনের জীবনযাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত।
মস্ত এক ডেস্ক, দু’পাশে লম্বা স্টিলের শেলফ। হরেক রকম রেফারেন্স বই থরে থরে সাজানো, পুরোনো কাগজপত্রও স্থান পেয়েছে।
পোয়ারো লাল রেক্সিনে মোড়া মোটা একটা বই টেনে বের করলেন। হু ইজ হু’ বইটা ডেস্কের ওপর রাখলেন, চেয়ার টেনে নিলেন। বইয়ের পাতা ওল্টাতে লাগলেন।
একটা পৃষ্ঠায় এসে থমকে গেলেন পেয়েছেন, খুঁজে পেয়েছেন। এতক্ষণ ধরে যার সন্ধান করছিলেন।
মনে মনে নয়, জোর গলায় পড়তে লাগলেন
অ্যামরি, স্যার ক্লড হোর্টিং, জন্ম-২৪ নভেম্বর, ১৮৭৮। শিক্ষা ওয়েসাউথ গ্রামার স্কুল ও কিংস কলেজ, লন্ডন। বিবাহ–১৯০৭। স্ত্রী হেলেন গ্রাহাম (১৯২৯ সালে তার মৃত্যু হয়)। পুত্র সংখ্যা–একটি। ১৯২৭ সালে নাইটহুট উপাধি লাভ। কর্মজীবনে পদার্থ বিজ্ঞানের গবেষক। ১৯০৬ জিইসি ল্যাবোরে টরিজ, ১৯১৬–রয়েল এয়ারফোর্স ফাস্ট (বেতার বিভাগ), ১৯২১–বিমান মন্ত্রণালয় গবেষণা দপ্তর, মোয়ালেজ। বস্তু আর পদার্থকণার ধরনের নতুন পথের ব্যাখ্যাকার দ্য ট্রাভেলিং ওয়েভ সিনিয়র অ্যাক্সিলাটের মনরো’ সম্মানে সম্মানিত, যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষামূলক জার্নালে তার গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে, ঠিকানা–অ্যাবটস ক্লিভ, মার্কেট ক্লিভ-এর পাশে, সারোটি মার্কেট, ক্লিভ-৩১৪। অ্যাথেনিয়াম ক্লাবের সদস্য।