- বইয়ের নামঃ দক্ষিণের দ্বীপ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প
দক্ষিণের দ্বীপ
১
বসন্তের এক চমৎকার সকাল। ওমর শরীফ-তিন গোয়েন্দার ওমর-ভাইয়ের সঙ্গে হেঁটে চলেছে কিশোর আর মুসা, রকি বীচ এয়ার ক্লাবের দিকে। বিমানে উড়বে, তারপর ওখানেই দুপুরের খাবার সারার ইচ্ছে ওদের। বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে রানওয়ে আর অন্যান্য বাড়িগুলো। পাশে একটা পার্ক। মাঝখান দিয়ে পথ চলে গেছে। পার্কের ভেতর দিয়েও যাওয়া যায়। সেদিক দিয়েই চললো ওরা, সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখতে মাখতে। টুঁইই টুঁইই করে একটা নাম না জানা পাখি ডাকছে ফুলের ঝাড়ে, দেখা যায় না।
এতো ভালো লাগছে, পার্ক থেকেই বেরোতে ইচ্ছে করছে না কিশোরের। তবে বিমানে ওড়াটাও কম মজার নয়। সুযোগ পেলেই আসে এখানে, ওড়া চর্চা করে।
ঢোকার মুখে দেখা হয়ে গেল লোকটার সঙ্গে। খাটো, একহারা শরীর, ক্লিন শেভ, ইটের মতো লাল চুল ছোট করে ছাটা, রোদে পোড়া চামড়া। মুখ দেখলে মনে হয় কোনো কথা বললেই বুঝি মারমুখো হয়ে উঠবে। তোবড়ানো একটা ব্রায়ার পাইপ দাঁতে কামড়ে রেখেছে। তাকিয়ে আছে সবুজ মাঠের দিকে, যার বুক চিরে চলে গেছে রানওয়ে।
লোকটার দিকে তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নিয়েছিলো ওমর, কি মনে হতে আবার তাকালো। থমকে দাঁড়ালো সে। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। তারপর প্রায় চিৎকার করে উঠলো, আরে, ডজ না! হ্যাঁ, ডজ ম্যাকমবার! তুমি এখানে কি করছো? এতোদিন পর! কেমন আছো?
দাঁতের ফাঁক থেকে পাইপ সরিয়ে নিলো ছোটখাটো মানুষটা। তার চোখও বড় বড় হয়ে গেছে। ওমর না! আমাদের সেই দুর্ধর্ষ ওমর শরীফ, মরুর বুনো ঘোড়া!
মনে আছে তাহলে?
থাকবে না আবার। তোমার মতো বেদুইন ডাকাতকে ভোলা যায় নাকি? হাত বাড়িয়ে দিলো ডজ।
হাতটা ধরলো ওমর। তারপর একটানে নিয়ে এসে বুকে ফেললো। জড়িয়ে ধরলো একে অন্যকে, বেদুইনের কায়দায় কোলাকুলি করে স্বাগত জানালো।
তার পর? কেমন আছো, ভাই?
ভালো।
আরও কিছু কুশল বিনিময়ের পর দুই কিশোরের দিকে তাকালো ডজ। ওমরকে জিজ্ঞেস করলো, ছাত্র বুঝি?
ছাত্র এবং বন্ধু। পরিচয় করিয়ে দিলো ওমর, ও কিশোর পাশা। আর ও মুসা আমান। নামকরা গোয়েন্দা ওরা।
তা-ই নাকি? হাত বাড়িয়ে দিলো ডজ। এক এক করে হ্যান্ডশেক করলো কিশোর আর মুসা।
ডজের পরিচয় দিলো ওমর, ক্যাপ্টেন ডজারন ম্যাকমবার। আমরা ডাকি ডজ। ইরাকী বাহিনীতে একই স্কোয়াড্রনে ছিলাম আমরা। ইরাক-ইরানের যুদ্ধের সময় যা খেল দেখিয়েছে না ও। হুট হুট করে যখন তখন প্লেন নিয়ে ঢুকে পড়তো। শত্রু এলাকায়। একদিন খুব নিচু দিয়ে উড়ে শত্রুর বাংকার আবিষ্কার করতে গিয়ে বাড়ি লাগালে টেলিগ্রাফের খুঁটির সঙ্গে। তারপর গায়েব। আমরা তো ভেবেছি মরেই গিয়েছে। প্লেনটা পাওয়া গেছে বিধ্বস্ত অবস্থায়। কিন্তু ডজের খোঁজ নেই। বহুদিন আর কোনো খবর পাইনি। থামলো ওমর। ডজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর একদিন খবর পেলাম, দক্ষিণ সাগরের এক দ্বীপে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। আমাদের ডজারন ম্যাকমবার।
যে বলেছে, সে একটা আস্ত মিথ্যুক, কড়া গলায় প্রতিবাদ করলো ডজ। কারণ ওখানে বিলাসেও গা ভাসিয়ে ছিলাম না আমি, কোনো একটা বিশেষ দ্বীপে বাসও করছিলাম না। আমি তখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।
তা বেশ করেছিলে, ওমর বললো। যার যা স্বভাব তা-ই তো করবে। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি কেন আমরা? এতোদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা। একটু খাতির-টাতির করা দরকার। খেয়েছো?
এখানেই খেয়ে নেবো ভাবছিলাম। আমি এসেছিলাম ক্লাবটা দেখতে। হলিউড-ফলিউড দেখে দেখে আর সময় কাটছিলো না। রকি বীচ ক্লাবের নাম শুনেছি। অনেক পুরনো আমলের বিমানও নাকি আছে এখানে। তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে কল্পনাই করিনি।
আমিও না। এখানকার মেম্বার আমি। এরা দুজনও, কিশোর আর মুসাকে দেখালো ওমর। এসো। আগে গিয়ে বসি। খাওয়া-দাওয়া হোক। দক্ষিণের দ্বীপে নারকেল আর কলা কেমন ফলালে সেই গল্প শোনাও আমাদেরকে। তারপর ক্লাবটা দেখানো যাবেখন। এসো।
নারকেল ফলাবো! ফুহ্! জঘন্য লাগে আমার! দেখলেই বমি আসে এখন। তোমারও আসতো, যদি আমার মতো এতো নারকেল খেতে হতো, মুখ বাঁকালো ডজ। সুইং ডোর ঠেলে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো ওমরের পিছু পিছু।
জানালার কাছে একটা টেবিল বেছে নিয়ে এসে বসলো চারজনে।
তো, আমেরিকায় কি করছো? জানতে চাইলো ওমর। মেনু কার্ড টেনে নিলো সে। ছুটিতে বেড়াতে এসেছো? বাড়ি গিয়েছিলে?
ডজের বাড়ি বৃটেনে। মাথা নাড়লো সে, না, যাইনি। বেড়ানোর কথা বলছো? এখানেও জঘন্য লাগছে আমার। দুনিয়ার কোথায় গেলে যে ভালো লাগবে বুঝতে পারছি না। আসলে দক্ষিণ সাগর মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে আমার। আরেকটা মেনু কার্ড, টেনে নিলো সে। এই, শিক কাবাব হলে কেমন হয়? ভেড়ার মাংসের?
চমৎকার হয়!
দারুণ! বলে উঠলো মুসা।
ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো ডজ। জোরে হেসে উঠলো, ভোজন রসিক মনে হচ্ছে?
ধরে ফেলেছেন তাহলে, হাসতে হাসতে বললো কিশোর।
দ্বীপের কথা আর বলবেন না, ডজ ভাই.‥
বাধা দিয়ে ডজ বললো, শুধু ডজ। ওসব ভাবটাই শুনতে ভালো লাগে না। শুধু ডজ।