- বইয়ের নামঃ প্রাচীন মূর্তি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
প্রাচীন মূর্তি
১
ভিকটর সাইমনের পিছু পিছু রকি বীচের উকিল মিস্টার নিকোলাস ফাউলারের অফিসে এসে ঢুকলো কিশোর আর রবিন।
হাল্লো, ভিকটর! উঠে দাঁড়ালেন ফাউলার। হাত বাড়িয়ে দিলেন বিখ্যাত গোয়েন্দা মিস্টার সাইমনের দিকে। তারপর কেমন আছো? কিশোর, রবিন, তোমরা কেমন?
ভাল, স্যার, ঘাড় কাত করে জবাব দিলো কিশোর।
তার মানে হাতে সময় আছে তোমাদের, রবিনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন উকিল সাহেব। কেস নিতে পারবে।
পারবো, রবিন বললো। মিস্টার সাইমনের কাছে সে-খবর শুনেই তো এলাম।
গুড। বসো।
ডেস্কের সামনে তিনটে চেয়ারে বসলো তিনজনে। ফাউলার বসলেন ডেক্সের ওপাশে তার আগের জায়গায়। জিজ্ঞেস করলেন, চা? কফি?
মাথা নাড়লো রবিন আর কিশোর। খাবে না। মাথা ঝাঁকালেন সাইমন। কফি।
বেল বাজিয়ে খানসামাকে ডেকে নির্দেশ দিলেন উকিল, দুকাপ কফি।
ভূমিকা বিশেষ করলেন না তিনি। সরাসরি কাজের কথায় চলে এলেন। কিশোর আর রবিনকে জিজ্ঞেস করলেন, মুসাকে দেখছি না?
ও গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত, জবাব দিলো কিশোর। কোথায় নাকি পুরনো গাড়ির পার্টস পেয়েছে, আনতে চলে গেছে।
হুঁ। যাই হোক, তোমাদের কেন ডেকেছি, জানো নিশ্চয়?
শুধু জানি, একটা কেস ঠিক করেছেন আমাদের জন্যে। আর কিছু না। মিস্টার সাইমনকে নাকি ফোন করেছিলেন। তিনি আমাদের খবর দিয়েছেন।
হ্যাঁ। দারুণ রহস্যময় একটা কেস। সেটার সমাধান করতে হবে। আশা করি পারবে তোমরা, মাথার টাকে হাত বোলালেন উকিল সাহেব। ছোটখাটো মানুষ। উঁচু ডেস্কের ওপাশে তার শরীরের বেশির ভাগটাই অদৃশ্য। মিস্টার চেস্টার রেডফোর্ডের মৃত্যুর খবর নিশ্চয় কাগজে পড়েছে।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর আর রবিন।
সাইমন বললেন, চিরকুমার ছিলেন যদ্দূর শুনেছি। লোকে বলে মাথায় ছিট ছিলো। রকি বীচে এসেছেন বেশিদিন হয়নি।
হ্যাঁ, কিশোর বললো। একটা কেসে তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। হাতির দাঁতের একটা মূল্যবান মূর্তি হারিয়ে গিয়েছিলো তাঁর। খুঁজে দিয়েছিলাম। মেরিচাচীর বাবার বন্ধু ছিলেন। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ ছিলো না তার। দূর সম্পর্কের দুচারজন ভাইটাই বাদে। খামখেয়ালি লোক ছিলেন। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন।
অনেক কিছুই জানো দেখছি, উকিল বললেন। উইলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে গেছেন। তবে একটা বিশেষ রহস্যের সমাধান করতে না পারলে কেউই কিছু পাবে না।
ফাউলার জানালেন, নিজের হাতে উইল লিখেছেন রেডফোর্ড। তবে তাতে আইনগত কোনো বাধা নেই। সাক্ষী ছিলো দুজন।
দুজনেই তাঁর আত্মীয়, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, কাজেই রহস্য সমাধানের ব্যাপারে কোনোরকম সাহায্য ওরা করবে না। তাতে নিজেদের ক্ষতি, হাসলেন উকিল। তবে আশা করি তোমাদের কোনো অসুবিধে হবে না। পুরানো রহস্য খুঁচিয়ে বের করে সমাধান করে ফেলতে পারো। আর এটা তো নতুনই। রহস্যটা কি জানার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছ, না? দাঁড়াও, আগে উইল থেকে কয়েকটা প্যারাগ্রাফ পড়ি…
ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো খানসামা। দুটো কাপ টেবিলে নামিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
নাও, চা নাও, সাইমনকে বললেন উকিল। নিজে একটা কাপ তুলে নিলেন। গোটা দুই চুমুক দিয়ে নামিয়ে রাখলেন কাপটা। তারপর ড্রয়ার খুলে একটা দলিল বের করলেন। পড়তে শুরু করলেন, আমি নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি, মূল্যবান অ্যাজটেক যোদ্ধাকে তারই হাতে দেয়া হবে, যে এসে প্রমাণ করতে পারবে যে সে ওই যোদ্ধার সত্যিকারের বংশধর।
ফাউলার থামলে রবিন বলে উঠলো, এইই? কারো নামটাম নেই?
আরেক জায়গায় তোমাদের চারজনের নাম লেখা রয়েছে, বলে শেষ পাতাটা ওল্টালেন ফাউলার। সাইমন আর তিন গোয়েন্দার নাম। পড়লেন, আমার অনুরোধ থাকলো রকি বীচের গোয়েন্দা ভিকটর সাইমন আর তিন গোয়েন্দা; কিশোর পাশা, মুসা আমান এবং রবিন মিলফোর্ড যেন অ্যাজটেক যোদ্ধাকে খুঁজে বের করে তার সম্পত্তি তাকে প্রদান করে। তদন্তের জন্যে যতো খরচ হবে, সব দেয়া হবে আমার এস্টেট থেকে। কাজ শেষে তাদের পারিশ্রমিকও দেবে এস্টেট। আর যতোক্ষণ অ্যাজটেক যোদ্ধাকে তার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া না হয়, ততোক্ষণ আমার কোনো উত্তরাধিকারী আমার সম্পত্তির একটা কানাকড়িও পাবে না।
উইলের দুটো অংশ আরেকবার পড়তে বললেন সাইমন। মন দিয়ে শুনলেন। ভ্রূকুটি করলেন। অবাক হয়েছেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হাতে কোনো সূত্র আছে, নিক? যা দিয়ে শুরু করা যায়?
না। যে কজন উত্তরাধিকারী আছে, সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি আমি নানাভাবে। মিস্টার রেডফোর্ডের পরিচিত যাদেরকে চিনি, তাদেরকেও খুঁটিয়ে প্রশ্ন করেছি। কেউ কিছু বলতে পারেনি। তবে উইলে একটা বাক্য রয়েছে, এটা সূত্র হলেও হতে পারে। এই যে, লেখা আছেঃ গোয়েন্দাদেরকে অবশ্যই পিন্টো আলভারোকে খুঁজে বের করতে হবে।
দলিলের একটা কপি দেয়া যাবে কিনা জানতে চাইলেন সাইমন। মাথা ঝাঁকিয়ে উকিল বললেন, অবশ্যই। চাইতে পারো ভেবে ফটোকপি করিয়েই রেখেছি, বের করে দিলেন তিনি। এই নাও। যেসব জায়গায় তোমাদের কথা লেখা আছে, তোমাদের প্রয়োজন হবে বুঝেছি, দাগ দিয়ে রেখেছি।