এব্যাপারে আপনারা অর্থাৎ ইংরেজদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। পোয়ারো হাসতে হাসতে বললেন খোলাবাতাসকে বাইরে থাকতে দিতে আপনাদের আপত্তি। যে কোন উপায়ে ঘরের মধ্যে টেনে এনে তবেই শান্তি।
আমি যদি একটা জানলা খুলে দিই, আপনার অসুবিধা হবে, মঁসিয়ে পোয়ারো। রিচার্ড জানতে চাইল।
-না না, কখনো নয়। পোয়ারো রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগলেন বহু বছর আগে বেলজিয়াম থেকে লন্ডনে চলে এসেছি। সেই থেকে আপনাদের রীতিনীতি, আদব কায়দাকে নিজের মতো করে মানিয়ে নিয়েছি। কিন্তু আপনি জানলা খুলবেন কি করে? শুনেছি আপনার বাবা বিশেষ ধরনের তালা-চাবি তৈরি করেছিলেন, যা ওই
পোয়ারোর কথা থামিয়ে রিচার্ড বলল–একদম ঠিক। বাবার চাবির আছে এখন আমার কাছে।
রিচার্ড এক থোকা চাবি নিজের জ্যাকেটের পকেট থেকে বের করল, পোয়ারো আড়চোখে দেখলেন, এ সেই চাবির গোছা, যা তিনি গতকাল রাতে সবার অগোচরে মৃত স্যার ক্লডের ট্রাউজার্সের পকেট থেকে বের করেছিলেন।
রিচার্ড সেই চাবির থোকা থেকে একটা চাবি বের করে বিশেষ পদ্ধতিতে বন্ধ ফ্রেঞ্চউইন্ডো খুব সহজে খুলে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে একরাশ বাঁধ না মানা ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে ঢুকে পড়ল।
-মঁসিয়ে পোয়ারো, রিচার্ড ঘুরে দাঁড়াল, আপনাকে আমার স্ত্রী গতরাতে এখানে থাকার অনুরোধ জানিয়েছিল, এই সমস্যা সমাধানের কথা বলেছিল, তবে কথা কি জানেন, ও মানসিক ভাবে অসুস্থ। ফিটের অসুখ আছে। সামান্য উত্তেজনার ঘটনা দেখলে ও আর ঠিক থাকতে পারে না, বেহুশ হয়ে পড়ে। ওই অবস্থায় কাকে কি বলছে বুঝতে পারে না। গতরাতের ব্যাপারটাও তেমনই। বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে বেচারি জ্ঞানবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিল। ঘোরের বশে যা কিছু আপনাকে বলেছে, সে সম্পর্কে কোন ধারণা ওর ছিল না। তাই বলছি, ওর কথা বাদ দিন, আমি যা বলছি, সেটাই শেষ কথা বলে জানবেন।
রিচার্ড বলে চলল–বলতে আপত্তি নেই। আমার বাবার অর্থের অভাব ছিল না। প্রচুর সম্পত্তি রেখে গেছেন আমার জন্য। তাই হারিয়ে যাওয়া ফর্মুলা ফিরে পাওয়া গেল, কি গেল না তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তবে স্বীকার করি, ওটার দাম প্রচুর। তবুও ওটা না পেলে আর্থিক ভাবে আমি পঙ্গু হয়ে পড়ব না। আমার চাওয়া খুবই ছোট। যেটুকু বাবা রেখে গেছেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। তাছাড়া আমি মনে করি ধীরে ধীরে কত রকমের উন্নত অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। বাড়তি কোন মারণাস্ত্র তৈরি না হলে দুনিয়ার কোন লোকসান হবে না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, খোয়া যাওয়া ফর্মুলার পেছনে আর না ছুটে, এখানেই থেমে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এতে সকলের মঙ্গল হবে।
–অর্থাৎ আপনি চাইছেন, আমি এখান থেকে বিদায় নিয়ে ঘরে ফিরে যাই, তাইতো? পোয়ারো ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলেন।
-ঠিক ধরেছেন। রিচার্ডের গলায় অস্বস্তি, আপনি কি সহজে আমার বক্তব্য বুঝে গেলেন বলুন তো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, মঁসিয়ে পোয়ারো।
কিন্তু একটা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে, পোয়ারো বলতে থাকলেন, ধরুন, আপনার সিদ্ধান্ত মেনে মাঝপথে তদন্তের কাজ থামিয়ে আমি ফিরে গেলাম, কিন্তু সেখানেই কি ব্যাপারটা থেমে থাকবে, মঁসিয়ে অ্যামরি? ব্যাপারটা যে কত দূর প্রসারতা লাভ করবে, তা আপনার ধারণার বাইরে। চুরি করা ফর্মুলা প্রচুর টাকার বিনিময়ে কোন বিদেশি রাষ্ট্রের হাতে চলে যাবে। ওই ফর্মুলা মাথায় রেখে একের পর এক ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা তৈরি হবে। ব্যাপারটার গুরুত্ব নিশ্চয়ই এবার অনুধাবন করতে পারছেন?
-সত্যি, এতটা তলিয়ে দেখিনি স্বীকার করছি, কিন্তু তাহলে
গতকাল, সন্ধ্যের পর এঘরে মোট পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রত্যেকেরই ফর্মুলাটা চুরি করার সুযোগ ছিল। অতএব সন্দেহ সকলের ওপর বর্তায়। সকলেই দোষী, যতক্ষণ না আসল দোষীকে সাব্যস্ত করা যাচ্ছে।
পোয়ারোর বক্তব্য রিচার্ডের কাছে পরিষ্কার হল না, সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
ঠিক এই সময় ঘরে এসে প্রবেশ করল বাটলার ট্রেডওয়েল। রিচার্ডের কাছে এগিয়ে এল মাপ করবেন, স্যার। ডঃ গ্রাহাম এসছেন, আপনাকে চাইছেন।
-বেশ, চল। রিচার্ড চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পেয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল মঁসিয়ে পোয়ারো, কথার মাঝখানে চলে যেতে হচ্ছে বলে দুঃখিত। ভাববেন না, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আবার ফিরে আসছি।
দ্রুত পায়ে ঘর থেকে অদৃশ্য হল রিচার্ড অ্যামরি।
এরকুল পোয়ারো ও রিচার্ড অ্যামরির আলোচনা এতক্ষণ নীরবে শুনছিলেন ক্যাপ্টেন হেস্টিংস, আর উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছিলেন। রিচার্ড বিদায় নিতেই সোফা ছেড়ে চলে এলেন পোয়ারোর সামনে।
–সমস্ত ঘটনাটা আমার কাছে জলের মতো হয়ে গেছে। স্যার ক্লডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে।
-কিছু বলছ নাকি, বন্ধু। আনমনে পোয়ারো বললেন।
ক্যাপ্টেন হেস্টিংস সহজ ভাবে বললেন বিষ খাইয়ে স্যার ক্লড অ্যামরিকে খুন করা হয়েছে, উদ্দেশ্য ফর্মুলা চুরি, আমি নিঃসন্দেহ।
.
০৯.
–জবাব নেই, সহকারীর দিকে তাকিয়ে পোয়ারো হেসে উঠলেন, কি তাড়াতাড়ি তুমি কেমন সমস্যাটা সমাধান করে দিলে। তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না, আমার যদি তোমার মতো একটু মগজ থাকত। স্বীকার করছি, ভায়া, তোমার উজ্জ্বল সিদ্ধান্ত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা আমার নেই।