ইটালিয়ান ভদ্রলোক? তার নাম কি?
–ডঃ কারোলির কথা বলছি, স্যার।
-উনি বিকেলে চায়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসছেন, এটা নিশ্চয়ই বাড়ির সকলে জানতেন না?
-ঠিক বলেছেন, স্যার। উনি মিসেস লুসিয়া রিচার্ডস-এর বন্ধু, তাই মিস ক্যারোলিন তাঁকে অতিথি হয়ে এখানেই থাকতে বলেন। তবে কথা শেষ না করে ট্রেডওয়েল মুখ বন্ধ করল।
–কী হল, থেমে গেলে কেন? পোয়ারো জানতে চাইলেন, তবে কি?
-আমি কেন চুপ করে গেলাম, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্যার ট্রেডওয়েলের বিনীত কণ্ঠস্বর। এই পরিবারে যা কিছু ঘটছে, তা পাঁচকান করা উচিত নয়। এতদিন যাঁর সম্মানের কথা ভেবে কিছু বলিনি, তিনি যখন আজ আর বেঁচে নেই, তবে আর ভয় কিসের? তাই আমি মনে করি……..
ট্রেডওয়েল তার মনিবের মৃত্যুতে যে মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েছে, পোয়ারোর বুঝতে দেরি হল না। তিনি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে। সহানুভূতির সুরে বললেন ট্রেডওয়েল, তুমি মুখে না বললেও আমি আঁচ করতে পারছি তোমার মনের কথা। তুমি এই পরিবারের বাটলার, সাবেক রীতিনীতিতে আটকে আছ। অন্যদিকে তোমার মনিবের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা এসব ছেড় বাইরে বেরোতে পারছ না। তাইতো?
ট্রেডওয়েল নীরবে ঘাড় নেড়ে পোয়ারোর কথায় সায় দিল।
তবে তোমাকে জানিয়ে রাখি, তোমার মনিবের ডাকেই আমি এখানে এসেছি। সাক্ষাতে তিনি সব আমায় বলতেন। অতএব, আমি চাই, তুমি যা কিছু জানেনা, সব ঝেড়ে বলে ফেলল।
–বেশ, তাই হোক। ট্রেডওয়েল বলতে শুরু করল, মিস ক্যারোলিন অ্যামরি এই ডঃ কারোলিকে পরিবারের সকলের সঙ্গে ডিনারে আমন্ত্রণ জানালে লুসিয়া রিচার্ডস মোটেই খুশি হননি। ওঁর চোখ মুখ ও আচরণে তা প্রকাশ পেয়েছিল।
–আচ্ছা, এবার বল, পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন–ওই ইটালিয়ান লোকটাকে দেখে তোমার কি মনে হয়?
–স্যার, ডঃ কারোলির ওপর ট্রেডওয়েল যে বিরক্ত, তা বোঝা গেল, মাফ করবেন স্যার, ডঃ কারোলিকে অন্যান্যদের কেমন লাগে জানি না, তবে আমার তাকে গোলমেলে লোক বলে মনে হয়।
–অর্থাৎ তুমি বলতে চাইছ, পোয়ারো বললেন, ডঃ কারোলি এই পরিবারে আসার পর থেকেই তোমার অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে, ঠিক বলেছি?
-হ্যাঁ, স্যার, ঠিক তাই।
–এমন কোন ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে, তোমার মনে ডঃ কারোলি সম্পর্কে সন্দেহজনক ধারণার জন্ম হয়েছে?
-তাহলেও বলি, স্যার। ট্রেডওয়েল বলে চলল, আজ বিকেলে সকলে যখন চা পানে ব্যস্ত, সেই সময় স্যার ক্লড আমাকে ডেকে লাইব্রেরি অর্থাৎ এ ঘরের দুটো ফ্রেঞ্চ উইন্ডোর পাল্লা ভেতর থেকে বন্ধ করে তালা আটকে দিতে বলেছিলেন, এমনকি দরজায় লাগানো তালাও। তারপর ডিনার শুরু হল। পরিবারের সদস্যরা ডিনার টেবিলে হাজির। ডিনারের ফাঁকে স্যার ক্লড আমাকে হুকুম দিলেন গ্যারাজে ফোন করতে, গাড়ি পাঠিয়ে স্টেশন থেকে আপনাকে নিয়ে আসার জন্য। মিসেস লুসিয়া রিচার্ড, তার হাবভাবেও অস্বাভাবিকতা ছিল। ডিনার শেষ না করেই টেবিল ছেড়ে কোনরকমে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওনার আবার ফিটের অসুখ আছে, কোথায় কখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবেন, আগে ভাগে কেউ বলতে পারে না। তাই উনি তেড়ে খুঁড়ে চলে আসাতে, সকলে ভাবলেন, নিশ্চয়ই লুসিয়ার শরীর খারাপ করছে, জ্ঞান হারাবে। অতএব একে একে খাওয়া না সেরে সবাই টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লেন।
পোয়ারো শান্তভাবে চিন্তা করতে লাগলেন, স্যার ক্লড আমাকে উইক এন্ডেই আসতে বলে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ উনি মত পালটে শুক্রবার অর্থাৎ আজই আমায় অনুরোধ করেন। কিন্তু কেন? এখন ব্যাপারটা সামান্য হলেও আঁচ করতে পারছি।
-ডিনার টেবিল থেকে লুসিয়া তাহলে সোজা এঘরেই এসে ঢুকেছিলেন, তাই না ট্রেডওয়েল?
-হ্যাঁ, পোয়ারোর প্রশ্নের জবাবে ট্রেডওয়েল বলল।
বাটলার ট্রেডওয়েলের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে পোয়ারোর অনুসন্ধানী দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছিল ঘরময়। টেবিলের ওপর একটা ব্যাগ দেখে হাতে তুলে নিলেন লেডিস ব্যাগ।
–কোন মহিলা বোধহয় মনের ভুলে তার ব্যাগটা ছেড়ে চলে গেছেন। ট্রেডওয়েল, বলতে পার, এটা কার ব্যাগ?
-ওটা মিসেস লুসিয়া রিচার্ডস-এর, ট্রেডওয়েল বলল, আমার পরিষ্কার মনে আছে এঘর ত্যাগ করার সময় উনি ব্যাগটা টেবিলে রেখে চলে গেলেন।
পোয়ারো তার বন্ধু ও সহকারীর দিকে তাকালেন, অর্থাৎ বন্ধু, এ সম্পর্কে তোমার কি ধারণা।
–ট্রেডওয়েল মিথ্যে বলছে না। ক্যাপ্টেন হেস্টিংস বললেন–ঘর ছেড়ে চলে যাবার সময় মিসেস লুসিয়া টেবিলে ওই হাত ব্যাগটা রেখে চলে গেলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি।
–ঘর থেকে বেরোলেন, অথচ নিজের ব্যাগ নিতে ভুলে গেলেন। সত্যিই আজব ব্যাপার।
কথা বলতে বলতে এরকুল পোয়ারো লেডিস ব্যাগটা সোফার ওপর রেখে দিলেন। এখন তার মনে নানা সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে। ব্যাগটা তাকে ভাবিয়ে তুলল। দুদে গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো এখন গভীর চিন্তার সমুদ্রে তলিয়ে গেলেন।
ট্রেডওয়েলের কথাতে তাঁর চিন্তার ঢেউগুলো ছড়িয়ে পড়ল। তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন।
–আর একটা ব্যাপার, স্যার, খানিকটা থেমে ট্রেডওয়েল আবার বলতে শুরু করল এ ঘরের দরজা জানলা ভাল করে বন্ধ করার কথা বলছি। স্যার ক্লড আমায় বলেছিলেন…….. ট্রেডওয়েল কথা শেষ না করে চুপ করে গেল।
-বল বল। পোয়ারো আগ্রহ ভরে জানতে চাইলেন, বল, তোমার মনিব কি বলেছিলেন, কোনো কিছু গোপন করো না এসো, আমরা বরং বাড়ির সামনের দরজা দেখিয়ে তিনি বললেন ওপাশে গিয়ে কথা বলি।