বেশ তো, আমি আপনার কী সাহায্যে লাগতে পারি বলুন?
আগের মতই এমোটের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে পোয়ারো বলেন–এই কেসের কেন্দ্র-ব্যক্তি হলেন মিসেস লিডনার। আমি তার সম্বন্ধে কিছু জানতে চাই মিঃ এমোট।
তা আপনি তার সম্বন্ধে কী জানতে চান বলুন তো?
কোথা থেকে তিনি এসেছেন? কুমারী বেলায় কি তার পদবী ছিল, কি রকম দেখতে ছিলেন, তার চোখের রং কি ছিল, এসব আমি জানতে চাই না। মানে আমি কেবল তার সম্বন্ধে জানতে চাই। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
আপনি কী মনে করেন এই কেসের ব্যাপারে সেটা খুব প্রয়োজনীয়?
হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত। পোয়ারো বলেন, আর এ ব্যাপারে আপনিই আমাকে সাহায্য করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন, ঠিক কি ধরনের মহিলা ছিলেন তিনি।
আমি কী পারব?
কেন, এর আগে আপনি কী কখনও ভেবে দেখেননি?
মিঃ এমোট কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। মনে হয় কিভাবে শুরু করা যায়, সেই কথাটা তিনি ভাবছিলেন। ভাববার পর তিনি বললেন, তার সম্বন্ধে নার্স কি ভাবেন সেটা আমাদের আগে জানা দরকার। একজন মহিলা অন্য আর এক মহিলাকে খুব তাড়াতাড়ি চিনে নিতে পারে। আর নার্স হিসাবে ওঁর অভিজ্ঞতা প্রচুর।
আমার বলার ইচ্ছা থাকলেও পোয়ারো আমাকে বলার সুযোগ একেবারে দিলেন না। আমার হয়ে তিনি দ্রুত বললেন–তার সম্বন্ধে একজন পুরুষের কি চিন্তাধারা সেটা জানাই আমার উদ্দেশ্য। এমোটের ঠোঁটে সূক্ষ্ম হাসির রেখা।
আমার মনে হয় চিন্তাধারা একই হবে, একটু থেমে তিনি আবার বলেন, বয়স তার যথেষ্ট হয়েছিল, তবে আমি হলপ করে বলতে পারি যে, এই বয়সেও তার মত অমন রূপসী মহিলার সংস্পর্শে আমি এর আগে কখনও এসেছি বলে মনে হয় না।
এ তমামুলি উত্তর মিঃ এমোট, এমোটের কথায় পোয়ারোর মনপুতঃ হল না, আমি আপনার কাছ থেকে আরও কিছু আশা করি।
মিনিট দুই চুপ করে থেকে এমোট আবার বলতে শুরু করলেন–ছেলেবেলায় আমি এক রূপকথার কাহিনী শুনেছিলাম। তুষার রানী এবং খুদে কে। আমার ধারণা, মিসেস লিডনারকে সেই তুষার রানীর সঙ্গে তুলনা করলে অত্যুক্তি হবে না।
ও, হ্যাঁ, হানস্ এন্ডারসনের গল্প তাই না? আর হ্যাঁ, সেই কাহিনীতে একটি ছোট্ট মেয়ের ভূমিকা ছিল। কি যেন মেয়েটির নাম? জেরদা না?
হতে পারে। তবে আমার খুব বেশি মনে নেই।
ওঁর সম্বন্ধে আর একটু আলোকপাত করতে পারেন না, মিঃ এমোট?
ডেভিড এমোট মাথা নাড়লেন।
আপনি তো জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, বড় দুরূহ নারী চরিত্র। দেবতারা যেখানে তাদের চরিত্র ঠিক ভাবে নিরুপণ করতে পারেন না, আমি মানুষ। তাদের থেকে বেশি কি আর জানতে পারি বলুন? সত্যি বড় বিচিত্র ছিল মিসেস লিডনারের চরিত্র। তার চেয়েও বিচিত্র ছিল তার মন। এই রোদ, এই বৃষ্টির মতন। তার মনের হদিশ পাওয়া বড় মুশকিল ছিল। আজ হয়তো তাকে খুব রূঢ় বলে মনে হল, আবার কাল সকালে তার ব্যবহার হয়তো অতি মনোরম বলে মনে হবে। তবে ওঁর সম্বন্ধে মুখে আমরা যাই বলি না কেন আপনি ঠিকই বলেছেন এ কেসের কেন্দ্রবিন্দু হলেন তিনি। আর তিনিও তো নিজেকে ঠিক এই রকমই চাইতেন সকলের মধ্যমণি হয়ে বসে থাকতে। সবাই তাকে মান্য করুক, খাতির করুক আর তিনি তাদের উপরে খবরদারি করুন। এই ছিল তাঁর কাম্য।
আর কেউ যদি তাকে সেই ভাবে সন্তুষ্ট করতে অপারগ হয়ে থাকেন? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন–তার সম্ভাব্য পরিণাম কী ঘটতে পারত অনুমান করেছেন?
সেক্ষেত্রে তার রূপ হত অতি কদাকার।
এই কথার পর আমি লক্ষ্য করলাম মিঃ এমোটের চোয়াল দুটো কেমন শক্ত হয়ে উঠল, দাঁতে দাঁতে ঘষছিলেন কথা বলতে গিয়ে। এই পরিবর্তনটাই কী আশা করছিলেন মিঃ পোয়ারো?
আমার অনুমান মিঃ এমোট, বেসরকারিভাবে আপনি আপনার মতামত, জানাতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না, পোয়ারো আর কোন ভূমিকা না করেই জিজ্ঞাসা করে বসলেন, মিসেস লিডনারের সম্ভাব্য খুনী কে হতে পারে মিঃ এমোট?
জানি না। মিঃ এমোট সরাসরি অস্বীকার করে বসলেন–সত্যি কথা বলতে কি, এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। এক এক সময় আমি ভাবি, আমি যদি কার্ল রেইটার হতাম, তাহলে আমি হয়তো তার সম্ভাব্য খুনী হতে পারতাম। কার্লের কাছে তিনি ছিলেন শয়তান। তবে তার সেই ভূমিকায় কার্লের সমর্থন ছিল বোধহয়। সে নিশ্চয়ই চাইতো, তাঁর কাছে তিনি শয়তানের রূপ নিয়ে দেখা দিন, তাকে তিনি লাথি মেরে বিদেয় করুন।
তা মিসেস লিডনার কি তাকে সত্যি সত্যি লাথি মেরেছিলেন?
না। ঠিক তা নয়। তবে এমব্রয়ড্রারির সুঁচ দিয়ে খোঁচা মারার মতোন আর কি। কাউকে পিছন থেকে লাথি মারার পদ্ধতিই ছিল তার ঠিক এই রকম।
আড়চোখে পোয়ারোর দিকে তাকালাম তার ঠোঁট জোড়া ভয়ে কেঁপে উঠতে দেখলাম।
কিন্তু, পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন–কিন্তু কার্ল রেইটার যে তাকে খুন করতে পারেন, এ ধারণা আপনার নেই নিশ্চয়ই!
না নেই। আমার মনে হয় না, কোন নারী আপনাকে বার বার বোকা বানালেও আপনি এমন কোন অস্বাভাবিক আচরণ করবেন না, যাতে করে সেটা খুনের পর্যায়ে নেমে আসে।
পোয়ারো মাথা নাড়তে নাড়তে কি যেন ভাবছিলেন।
মিসেস লিডনারকে অমানুষের পর্যায় ফেলতে চান ডেভিড এমোট। সেই সঙ্গে আবার বিপরীত দিকটার কথা চিন্তা করতে গেলে অন্য কিছুও ভাবতে হবে বৈকি। ওদিকে মিঃ রেইটারের আচরণ অত্যন্ত রিক্তিকর এবং অসহ্য।