- বইয়ের নামঃ নকল কিশোর
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
নকল কিশোর
০১.
আরে, গেল কোথায়! এখানেই তো ছিল! চেঁচিয়ে উঠল মুসা আমান।
ঝট করে তার দিকে তাকাল কিশোর আর রবিন। মোবাইল হোমে তিন গোয়েন্দার গোপন হেডকোয়ার্টারে রয়েছে ওরা।
কি গেল কোথায়? জানতে চাইল রবিন।
কড়া চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। কেন, জান না?
নিরীহ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রবিন।
কি জানি না? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
দেখ, বিরক্ত ভঙ্গিতে হাত নাড়ল মুসা। সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে আমার। এসব রসিকতা ভাল্লাগছে না! খেয়ে ফেলে থাকলে বল।
আমরা তোমার খাবার খেতে যাব কোন দুঃখে? আর তোমার মত খাই খাই করি নাকি?
সত্যি বলছ খাওনি?
না।
সরিয়েও রাখনি, মজা করার জন্যে?
না, এবার জবাব দিল রবিন। আমরা তো আমাদের কাজেই ব্যস্ত।
অবাক কাণ্ড! তাহলে গেল কোথায়?
দেখ, কোথায় রেখেছ, কিশোর বলল। একখানে রেখে আরেকখানে খুঁজলে পাবে কি করে? যাকগে, যা বলছিলাম, কিছু একটা করা দরকার আমাদের। রিক্রিয়েশনের জন্যে। ইয়ার্ডে কাজ করতে করতে হাড় কালো হয়ে গেছে আমার। আর ভাল্লাগে না। চল, কাল কোনখান থেকে ঘুরে আসি। কোথায় যাওয়া যায়? ডিজনিল্যাণ্ডে আর না, অনেক হয়েছে। এক কাজ করি, চল, ম্যাজিক মাউনটেইনে যাই। কখনও যাইনি।
আমিও না, মুসা বলল। জায়গাটা কেমন, তা-ও জানি না। রবিন, জান?
শুনেছি তো ভাল। ডিজনিল্যাণ্ডের ধারেকাছেও লাগে না, তবে ভাল। অনেক মজার মজার জিনিস আছে, চড়ার ব্যবস্থা। আসলে বাচ্চাদেরই বেশি ভাল লাগবে। এই যেমন ফেরিস হুইল, চাড রাইড, এসব আর কি।
— হুঁ, মাথা দোলাল মুসা। বাচ্চাদেরই। তবে আমারও খারাপ লাগবে না। অন্তত বাগান সাফ আর গ্যারেজ পরিষ্কারের চেয়ে তো ভাল।
আর মেরিচাচীর মরচে পড়া লোহার চেয়ার ঘষার চেয়ে, যোগ করল কিশোর। তাহলে কি ঠিক হল? ওখানেই যাচ্ছি আমরা। রোলস রয়েসে চেপে যাব। অনেক দিন ওটাতে চড়ি না। হ্যানসনকে ফোন করে দেব নিয়ে আসতে।
ভালই হবে, হেসে বলল রবিন। ওটা থেকে নামতে দেখলে লোকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে। ভাবে কোনও কোটিপতির ছেলে। বন্ধু বান্ধব নিয়ে হাওয়া খেতে বেরিয়েছে। হাহ হাহ।
যাওয়ার ব্যবস্থা তো হল, অধৈর্য হয়ে বলল মুসা। এখন আমার খাওয়ার কি হবে? খিদেয় তো পেট জ্বলে গেল। সত্যিই তোমরা দেখনি?
আবার সেই এক কথা, হাত নাড়ল কিশোর। তুমি আর রবিন তো তখন ওয়ার্কশপে কাজ করছিলে। ওখানে রাখনি তো? চল, আমিই দেখছি। ওটা বের না করলে আর শান্তিতে থাকতে দেবে না আমাদের।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ওয়ার্কশপে বেরিয়ে এল ওরা। রবিন খুঁজে বের করল ওটা, কিংবা বলা যায় তাকাতেই চোখে পড়ল। ওয়ার্কবেঞ্চের ওপর পড়ে রয়েছে লাঞ্চ প্যাকেট। বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল মুসা। একটা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে।
ওই তো, রবিন বলল। নিজেই ফেলে গেছ। আর এদিকে আমাদের মাথা খারাপ করছ।
ব্যাগটা তুলে নিল মুসা। ভেতরে ছেঁড়া প্যাকেট কে জানি খেয়ে ফেলেছে! কে? রবিনের দিকে তাকাল সে।
তুমিই হয়ত খেয়েছ, কিশোর বলল। তারপর ভুলে বসে আছ।
আমি? খেলে ভুলে যাব, কথা হল একটা? তাছাড়া পেটের তো ভোলার কথা নয়।
তাহলে ইঁদুর, ছেঁড়া কাগজটা দেখতে দেখতে রবিন বলল। ইঁদুরে সবই খায়। তোমার চেয়ে রাক্ষস।
ইঁদুর? আমার বিশ্বাস হয় না। স্যালভিজ ইয়ার্ডে ইঁদুর থাকলে ওটার ঘুম হারাম করে ছাড়তেন মেরিচাচী। সেই সঙ্গে নিজের ঘুমও। না মারা পর্যন্ত। মনে নেই গত বছর…
তা আছে, হেসে বলল কিশোর। ওই একটা চোখে পড়েছিল বলে। শেষে ওটাকেই মেরেছে, না অন্যটাকে, সে ব্যাপারেও শিওর নই আমি। যত খুঁতখুতেই হোক, স্যালভিজ ইয়ার্ডের মত একটা জায়গা থেকে ইঁদুর নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার সাধ্য হবে না। ইঁদুর এমন এক জাত একেবারে শেষ করার ক্ষমতা কারও নেই।
এখন তাহলে কি করব? মাথায় হাত দিয়ে বসার অবস্থা মুসার। পেটের মধ্যেই তো ইঁদুর ঢুকে বসে আছে। তিনি
হেসে ফেলল কিশোর। আজ কিছু খাওনি নাকি? এমন করছ। চল, ফ্রিজে কিছু থাকতে পারে। না থাকলে মেরিচাচীকে বললেই রেডি করে দেবে।
ইয়ার্ডের অফিসের দিকে এগোতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল কিশোর। গেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রাস্তা থেকে গেটে ঢোকার মাঝখানে এক চিলতে জায়গা, সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা সবুজ, মার্সিডিজ। কেউ বেরোচ্ছে না ওটা থেকে।
এই, ওই গাড়িটা আগে দেখেছ?
মুসা আর রবিনও তাকাল। মাথা নাড়ল দুজনেই।
আস্তে করে ওখানে এসে দাঁড়িয়ে গেল, কিশোর বলল। দেখলাম।
তাতে কি? মুসার প্রশ্ন। ওখানে কোনও গাড়ি থামতে পারে না নাকি? হয়ত ইয়ার্ডে ঢুকবে, কাস্টোমার।
হয়ত, মাথা দোলাল কিশোর। কিন্তু তাহলে কেউ নামছে না কেন? আজ সকালেও গেটের পাশ দিয়ে যেতে দেখেছি গাড়িটাকে। তখন থামেনি। খুব আস্তে আস্তে চলছিল।
কিশোর, বলে উঠল রবিন। এখন মনে পড়েছে, আমিও দেখেছি! পেছনের বেড়ার কাছে, রাস্তায়। সাইকেল নিয়ে যখন আসছিলাম। এই ঘণ্টাখানেক আগে।
ওরাই হয়ত আমার লাঞ্চ চুরি করেছে! মুসা বলল।
তা তো নিশ্চয়, টিটকারির ভঙ্গিতে বলল রবিন। ইন্টারন্যাশনাল ফুড থিভস। তোমার কয়েকটা স্যাণ্ডউইচ চুরি না করলে কি ওদের চলে?