- বইয়ের নামঃ মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ ভূমিপ্রকাশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া
০১. শহর বাগদাদ
মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া (এরকুল পোয়ারো)
০১.
শহর বাগদাদ। প্রিন্সটন হোটেলের হলে হাসপাতালের একজন নার্স তখন একটা চিঠি, লেখায় দারুণ ব্যস্ত, কাগজের উপর তার ঝর্ণা কলম দ্রুত চলছিল।
……প্রিয়, সত্যি এ সবই যেন আমার খবর। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গা দেখে রাখা ভালো, যদিও আমার কাছে ইংলন্ড সব সময়েই দর্শনীয়। বাগদাদের অবস্থা যে এত নোংরা ও অগোছালো চোখে না দেখলে তুমি বিশ্বাসই করতে পারবে না। আরব্য রজনীর সেই মিষ্টি পরিবেশ, রোম্যান্টিক ভাবের সঙ্গে শহর বাগদাদের মিল খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হয় যেন। অবশ্য প্রকৃতি এখানে কৃপণ নয়, কল কল শব্দে নদী তার ধারা অব্যাহত রেখে চলেছে বাগদাদ শহরটাকে নিজের কোলে টেনে রেখে। কিন্তু শহরটা যেন গিলতে চাইছে, কি ভয়ঙ্কর বীভৎস তার চেহারা! ভালো দোকানের বড় অভাব। মেজর কেলসি সঙ্গে করে আমাকে বাজারে নিয়ে যান।
ডঃ রেলির সেই কাজটার প্রসঙ্গে পরে আমি তোমাকে সবিস্তারে লিখে জানাব। তিনি জানিয়েছেন, সেই আমেরিকান ভদ্রলোক এখন এই বাগদাদ শহরেই আছেন এবং সম্ভবত আজ অপরাহ্নে তিনি আমার সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে পারেন। প্রসঙ্গ তাঁর স্ত্রী, ভদ্রমহিলা দারুণ সৌখিন, কল্পনাবিলাসীনী। তার সম্বন্ধে ঠিক এরকমই একটা আভাস দিয়েছিলেন ডঃ রেলি। এর বেশি আর কিছু তিনি বলেন নি। কিন্তু তাঁর দৃষ্টিশক্তি অবশ্যই আছে, আমি কি বলতে চাইছি তা বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়ই। এই ডঃ লিডনার, ইনি একজন প্রত্মতত্ত্ববিদ এবং বিশাল এই মরুভূমির কোন এক প্রান্তরে আমেরিকান মিউজিয়াম তৈরি করার জন্য মাটি খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত এখন তিনি।
এবার চিঠির ইতি টানতে যাচ্ছি। আমি ভেবেছিলাম, স্টাকিন্স সম্বন্ধে তুমি যা বলেছিলে সেটা নিছক ধ্বংসের ব্যাপার। আচ্ছা মেট্রন কী বলছিল?
বলার আর কিছু নেই।
তোমার চিরদিনের অ্যামি লিথেরান।
খামের উপর ঠিকানা লিখল সে, সিস্টার কারশ, স্টোফার হসপিটাল, লণ্ডন।
লেখা সে সবে মাত্র শেষ করেছে, এমন সময় স্থানীয় এক যুবক তার সামনে এসে দাঁড়াল।
ডঃ লিডনার আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
নার্স লিথেরান ফিরে তাকাতেই দেখল তার সামনে মাঝারি উচ্চতার এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন, কাঁধটা ঈষৎ ঝুঁকে আছে, বাদামী রং-এর দাড়ি, ক্লান্ত চোখ।
ওদিকে ডঃ লিডনারের সেই ক্লান্ত চোখের সামনে তখন ভাসছিল বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবতী, ঋজু দেহ, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তার ধারণা বদলাতে হল, তিনি ভেবেছিলেন লিথেরানকে তিনি দেখবেন মৃত্যুপথযাত্রী কোন রুগীকে দেখে ঘাবড়ে যাওয়া হসপিটাল নার্সের মতো; কিন্তু তার মুখের অবয়ব যেন অন্য কথা বলছিল, স্পষ্ট নীল দুটি চোখে কৌতুকের ছোঁয়া, মসৃণ চকচকে বাদামি চুলে তার মুখ ঢেকে গেলেও উৎফুল্ল ভাবটা ঢাকা পড়েনি। নার্স লিথেরান, তিনি ভাবলেন, তার কাজে লাগতে পারে।
.
০২.
অ্যানি লিথেরানের পরিচয়
আমি লেখিকা নই, লেখার সম্বন্ধে আমার কোন ধ্যান-ধারণাও নেই। কিন্তু ডঃ রেলির অনুরোধ কেউ প্রত্যাখ্যান করতে পারে না বলেই আমি এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি।
কিন্তু ডাক্তার, বললাম, আমি আদৌ কোন সাহিত্যিক নই।
অবান্তর কথা? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, মনেই করো না এটা একটা কেস নোট লিখছো তুমি।
তা বটে, ঘটনাটাকে এভাবে নেওয়া যেতে পারে।
ডঃ রেলি আরো বললেন, তেল ইয়ারিমাহর ব্যবসা সংক্রান্ত একটি সহজ সরল ঔজ্জ্বল্যহীন বিবরণ পাওয়া একান্ত প্রয়োজন।
স্বার্থসম্পন্ন কেউ যদি সেটা লেখে তাতে কোন প্রত্যয় থাকে না।
বেশ তো, তাহলে আপনি নিজে কেন লিখছেন না ডক্টর? –প্রশ্নটা হঠাৎ আমার মুখে এসে গেল।
ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না, কিন্তু তুমি ছিলে, তাছাড়া, দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি আবার বললেন, আমার মেয়ে আমাকে অনুমতি দেবে না।
এভাবে মেয়ের কাছে তাঁর পরাজয় স্বীকার করাটা কত যে ঘৃণ্য, কথাটা আমি তাকে বলতে গিয়েও চেপে গেলাম, তাঁর চোখে একটা অসহায় ভাব দেখে। বিচিত্র তার সেই চাহনি, বোঝা মুশকিল, তিনি কৌতুক করছেন কি করছেন না।
ঠিক আছে, দ্বিধাগ্রস্থভাবে আমি তাকে শুধোলাম, মনে হয় আমি পারব।
অবশ্যই তোমাকে করতে হবে।
কিন্তু কিভাবে সেটা শুরু করব বুঝতে পারছি না।
এর অতীতের কিছু ভাল নজির আছে। শুরু থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত গিয়ে থেমে যেতে হবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে এর কোথায় এবং কীভাবে শুরু সেটাই তো আমার ভাল করে জানা নেই।
বিশ্বাস কর, নার্স, শুরু করার অসুবিধেটা যত না বেশি তার চেয়েও বেশি অসুবিধে হল কীভাবে তুমি শেষ করবে।
আপনি কী আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন ডক্টর?
না, না মোটেই তা নয়। আমার কথায় পরিহাসের কোন স্থান নেই। এ কাহিনী রক্তে মাংসে গড়া মানুষের, মানুষে গড়া তাদের নকল প্রতিমূর্তির নয়। তোমার নিজের মতো করে তাদের বিষয়ে লেখবার চেষ্টা করো। তুমি বুদ্ধিমতী, এ ব্যাপারে তোমার সাধারণ জ্ঞান যথেষ্ট আছে বলেই আমার বিশ্বাস।
অতএব এই হল আমার কাজের ভূমিকা। আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিলাম আমার সাধ্য মতো আমি চেষ্টা করে দেখব।