- বইয়ের নামঃ মার্ডার ইন দ্য মিউস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
মার্ডার ইন দ্য মিউস
দ্য ইনক্রেডিবল থেফট
দ্য ইনক্রেডিবল থেফট
আকাশ এখন পরিষ্কার। ঝকঝক করছে তারার চোখ। লর্ড মেফিল্ড এবং স্যার জর্জ ঘর থেকে বেরিয়ে টেরেসে এলেন।
-বেশ দামি সেন্ট ব্যবহার করেন মহিলা–এখনো গন্ধ ভেসে রয়েছে হাওয়ায়। বললেন স্যার জর্জ।
-এ জন্য আমাকে তোমার ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। হাসলেন লর্ড মেফিল্ড।
দুজনে ধীর পায়ে টেরেসে ঘুরে বেড়ালেন। স্যার জর্জ একটা সিগারেট পুরো নিঃশেষ করলেন।
–চল নিচে যাওয়া যাক–ব্যাপারটা নিয়ে বসা যাক। বলে লর্ড মেফিল্ড ঘুরে দাঁড়ালেন। পরক্ষণে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলে উঠলেন, জর্জ, ওটা কি–তাকিয়ে দেখ–
-কোথায়—
দেখতে পাওনি, স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে কেউ মনে হল টেরেসের ওদিকে চলে গেল।
-আমি তো কিছু দেখতে পেলাম না–সামনের ঝাপসা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বললেন স্যার জর্জ, তোমার চোখ ছলনা করেছে।
দুজনে হাসতে হাসতে স্টাডিরুমে প্রবেশ করলেন। সেক্রেটারি মিঃ চার্লিল ফাইল কাগজপত্র গোছগাছ করছে।
–সব ঠিক আছে তো চার্লিল। জিজ্ঞেস করলেন লর্ড মেফিল্ড।
–হ্যাঁ স্যার, সবকিছু আপনার ডেস্কের ওপর রাখা আছে।
জানালার ধারে মূল্যবান কাঠের বড় ডেস্ক।
সেটার সামনে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাছতে লাগলেন লর্ড মেফিল্ড।
হাতের ফাইলপত্র সরিয়ে রেখে চার্লিল বলল, আজ রাতে আমাকে আর দরকার হবে লর্ড মেফিল্ড?
–মনে হয় না, বাকি সব আমি দেখে নেব। তুমি বরং আজ চলে যাও।
–ধন্যবাদ স্যার।
ওদের দুজনকে শুভরাত্রি জানিয়ে সেক্রেটারি ঘর ছেড়ে বেরলো। পরমুহূর্তে নিয়োগকর্তার ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়াল।
–এক মিনিট চার্লিল, বোমারু বিমানের নক্সাগুলো
–টেবিলে একেবারে ওপরেই রয়েছে স্যার।
–দেখছি না তো।
সেক্রেটারি ডেস্কের সামনে এগিয়ে এলো। লর্ড মেফিল্ডের সঙ্গে হাত লাগিয়ে সে-ও খুঁজল এবং হতভম্ব হল। নক্সাগুলো নেই।
কিন্তু এ তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার–কয়েক মিনিট আগেই আমি ওগুলো এখানে রেখেছি ডেস্কের ওপরে।
স্যার জর্জও এগিয়ে এসে ওদের সঙ্গে হাত মেলালেন। সমস্ত নথিপত্র খুঁজে দেখা গেল বোমারু বিমানের নক্সাগুলো কোথাও নেই।
–আসল জিনিসগুলোই উধাও। একী অসম্ভব কাণ্ড, সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন লর্ড মেফিল্ড। এ ঘরে কেউ এসেছিল?
–কেউ আসেনি স্যার।
–নিশ্চয় কেউ সরিয়ে ফেলেছে। জলজ্যান্ত নক্সাগুলো তো হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না। মিসেস ভান্দারলিন এসেছিলেন?
-না স্যার, পরিষ্কার মনে করতে পারছি।
–তিনি এ ঘরে এসে থাকলে সেন্টের গন্ধ থাকত। বললেন স্যার জর্জ।
-ভালো বিপদে পড়া গেল। আচ্ছা চার্লিল, ওগুলো আলমারির ভেতরে ছিল, তুমি নিশ্চিত? নাকি অন্য জায়গায় কাগজপত্রের সঙ্গে ছিল?
-না লর্ড মেফিল্ড। এতবড় ভুল হতে পারে না। অন্য আরো কাগজপত্রের সঙ্গে ডেস্কের ওপরে রেখেছিলাম। সবার ওপরে ছিল নক্সাগুলো।
-কেউ যদি ঘরে না এসে থাকে–তুমি ঘর ছেড়ে কোথাও যাওনি তো?
-আমি বাইরে-হ্যাঁ স্যার, আমি এঘরে যখন কাজ করছিলাম, বাইরে একটা মেয়ের চিৎকার শুনলাম
মেয়ের চিৎকার শুনলে? বিস্মিত হলেন লর্ড মেফিল্ড।
হ্যাঁ, স্যার। ডেস্কের ওপর জরুরী কাগজপত্র রেখে আমি কখনো বাইরে যাওয়ার কথা ভাবি না–কিন্তু হঠাৎ–ওরকম একটা শব্দ শুনে অবাক হয়ে বেরিয়ে আসি-হলঘরের দিকে ছুটে যাই
চিৎকার করেছিল কে?
-মিসেস ভান্দারলিনের ফরাসি পরিচারিকাটি। চোখমুখ ফ্যাকাসে করে হলঘরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কাঁপছিল। বলল, ভূত দেখেছে সে।
-ননসেন্স। ভূত এখানে কোথায়?
-বলল, আপাদমস্তক সাদাকাপড়ে ঢাকা একজন মহিলা চলতে চলতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
–যা-নয় তাই বললেই হল।
–আমিও তাই বললাম স্যার। লজ্জা পেয়ে ছুটে ওপরতলায় চলে গেল। আমিও ঘরে ফিরে আসি।
-কতক্ষণ আগে এ ঘটনা হয়েছে?
–আপনারা এ ঘরে আসার মিনিট দুই আগে হবে।
–তুমি তাহলে এ ঘর ছেড়ে কতক্ষণ ছিলে?
সেক্রেটারি একটু ভাবল। পরে বলল, দু-তিন মিনিটের বেশি কিছুতেই হবে না।
মাথা ঝাঁকালেন লর্ড মেফিল্ড। চোখ তুলে বন্ধুর দিকে তাকালেন।
–আমি তাহলে ঠিকই দেখেছিলাম জর্জ। তোমাকে বলেছিলাম–জানালার পাশ থেকে কাকে সরে যেতে দেখলাম। বোঝা যাচ্ছে, চার্লিল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। নক্সাগুলো সেই রহস্যময় ছায়ামূর্তিই
–কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না। বললেন স্যার জর্জ।
.
–একজন অচেনা বাইরের লোককে এর মধ্যে আনতে চাইছ কেন তুমি?
বন্ধুর দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বললেন লর্ড মেফিল্ড।
–আমি তাকে জানি, চার্লস। ওঁর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। ঘটনাটা যাতে ফাঁস হয়ে না যায় সে ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।
-ভদ্রলোকের নাম যেন কি বললে
–এরকুল পোয়ারো। তাঁর বিচক্ষণতা প্রশ্নাতীত।
-তুমি যেভাবে বলছ, তাতে মনে হচ্ছে, তিনি এখানে এসে মন্ত্রবলে নক্সাগুলো বার করে দেবেন।
-সেটাই রহস্য চার্লস। তার যুক্তিবুদ্ধি সত্যকে প্রকাশ করবে, আর আমরা সেটাই জানতে চাই, বললেন স্যার জর্জ, ওই ভদ্রমহিলাকে নক্সাগুলো নিয়ে পালাতে দেওয়া যায় না।
মিসেস ভান্দারলিনের কথা বলছ?