তিনি ঘর থেকে ছুটে বেরোলেন, একটু পরে ফ্যাকাসে মুখে ফিরে এলেন। -ও’রুরকে নিশ্চয়ই কেউ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে। কিছুতেই ওর ঘুম ভাঙাতে পারলাম না। কাগজগুলোও নেই। নিশ্চয়ই ওরা হাতিয়েছে।
৪. ফর্মুলা উদ্ধার
হের এবারহোর্ডের মুখ দিয়ে আর কথা সরছে না। যেন অ্যানিমিয়া হয়েছে।
জর্জ এ ব্যাপারের জন্য সরাসরি দায়ী করলেন ব্যাটলকে।
-ব্যাটল, তোমার হাতেই আমি সব ছেড়ে দিয়েছিলাম, এটা তুমি অস্বীকার করতে পারো না? ব্যা
টলের কঠিন মুখের কোনো পরিবর্তন হলো না।
-সত্যিই তাহলে কাগজগুলো উধাও হয়ে গেছে, তাই বলতে চাও।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাথা নাড়লেন। তিনি এগিয়ে গেলেন লোরেনের কাছে, তখনও তার হাতে বাদামী খামটা ধরা ছিল।
মিঃ লোম্যাক্স, আশা করি আপনার হারিয়ে যাওয়া জিনিষ সব এর মধ্যেই আছে। তবে এর কৃতিত্ব পাওয়ার কথা এই তরুণীর, এতে আমার কোনো ভাগ নেই।
জর্জ খামটা নেওয়ার আগে স্যার স্ট্যানলি ডিগবি চঞ্চল হাতে খামটা নিয়ে নিলেন। খুলে ফেললেন। স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠলো তার মুখে।
তিনি লোরেনের দুহাত ধরে আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললেন, প্রিয় মিস, আপনার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
–অবশ্যই! জর্জ বললেন।
তিনি তখন লোরেনের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ মেয়েটিকে তিনি মোটেও চেনেন না।
লোরেন এই দৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জিমির দিকে তাকালো।
জিমি পরিচয় দিলো।
–এ হল মিস ওয়েড। মানে, জোরাল্ড ওয়েডের বোন।
জর্জ খুশী হয়ে লোরেনের হাতে চাপ দিয়ে বললেন, প্রিয় মিস ওয়েড, আপনাকে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারছি না, কিন্তু আপনি কিভাবে
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল এগিয়ে এসে বললেন, আমার মনে হয়, এটা আপাততঃ চাপা থাকাই ভালো।
প্রসঙ্গ পাল্টে মিঃ বেটম্যান বললেন, একজন ডাক্তার ডেকে আনার জন্য। মিঃ ও’রুরকে একবার দেখা উচিত।
জর্জের নির্দেশ মতো বিল বেরিয়ে পড়লো ডাঃ কার্টরাইটের উদ্দেশ্যে।
জর্জ বললেন, চলো ডাক্তার আসার আগে কি করা যায় দেখা যাক।
তিনি অসহায় ভাবে রিউপার্ট বেটম্যানের দিকে তাকাতেই পঙ্গো মুশকিল আসান করলো। বললো, স্যার, আমি সঙ্গে আসবো।
তিনজনে চলে যেতেই লেডি কুটও তাদের পেছন পেছন গেলেন।
–আমি ভাবছিলাম স্যার অসওয়াল্ড এই মুহূর্তে কোথায়?
লোরেন কেঁপে উঠলো–তাহলে তিনি কি খুন হয়েছেন?
-বাজে কথা বলার দরকার নেই। ব্যাটল একটু ধমকের সুরে বললেন।
বাইরে ভারী পায়ের শব্দ শোনা গেল। ঘরে এসে ঢুকলেন বিরাট চেহারার এক পুরুষ। তিনি চকিতে ঘরের চারদিকে তাকিয়ে নিয়ে বললেন–অফিসার, এখানে কি ঘটেছে?
–চুরির চেষ্টা, স্যার। তবে এই তরুণী মিস ওয়েডের জন্য চোর সফল হয়নি।
তিনি অপরিচিত লোরেনের দিকে লক্ষ্য করলেন। ব্যান্ডেজ বাঁধা জিমির দিকেও দেখলেন। তারপর একটা মাউসার পিস্তল দেখিয়ে বললেন–এটা কি অফিসার? বাইরের লনে পেয়েছি। চোর সম্ভবত পালানোর সময় ফেলে রেখে গেছে। আপনি হাতের ছাপ পরীক্ষা করবেন নিশ্চয়ই। আমি তাই সাবধানে এনেছি।
–আপনার সবদিকেই নজর থাকে, স্যার অসওয়াল্ড।
ব্যাটল আলতো ভাবে পিস্তলটা নিয়ে টেবিলের ওপর জিমির অটোমেটিকের পাশে রেখে দিলেন।
এবার রাতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তৃত বিবরণ দিলেন ব্যাটল।
–হুম, স্যার অসওয়াল্ড সব কিছু শুনে বললেন, তবু আমার মনে হয় একটু খোঁজ করা উচিত ছিল। কাউকে পাহারাতেও রাখা দরকার ছিল।
তিনজনকে রাখা হয়েছিল নিচে, ক্লান্তস্বরে ব্যাটল বললেন। স্যার অসওয়াল্ড একটু আশ্চর্য হলেন, আটকানোর আদেশ ছিল।
–তা সত্ত্বেও তা করেনি?
-না, করেনি, ব্যাটল গম্ভীর ভাবে বললেন। স্যার, আমি ভাবছি অন্য কথা, অবশ্য অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে সে ভাবনা কোথাও না পৌঁছে দিলে তা নিয়ে আলোচনা নিষ্ফল।
–আপনার আপত্তি না থাকলে আপনার কথা আমাকে বলতে পারেন, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল।
-স্যার, এ ব্যাপারে আইভিলতার ভূমিকা বেশি। মাফ করবেন, আপনার কোটেও কিছু লেগে আছে।
স্যার অসওয়াল্ড অবাক হলেন। কিছু বলবার আগেই রিউপার্ট বেটম্যান এসে ঢুকলো।
-স্যার, আপনি এখানে। আপনাকে না দেখতে পেয়ে লেডি কুট ভেঙে পড়েছেন। আপনি দয়া করে গিয়ে ওকে একটু শান্ত করুন।
তিনি সেক্রেটারিকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
–খুব পাকা সেক্রেটারি। ব্যাটল মন্তব্য করলেন।
-হ্যাঁ, আমি ওর সঙ্গে স্কুলে পড়তাম। ডাক নাম পঙ্গো। ও বরাবার গাধাই রয়ে গেল। বড্ড বাস্তববাদী, রসকস একদম নেই।
ব্যাটল বললেন–কোনো ভদ্রলোকের নীরস হওয়া বড্ড খারাপ। তাতে গোলমালও হতে পারে।
-পঙ্গো গোলমাল করছে ভাবতে পারি না। জিমি বললো, বুড়ো কুটের সঙ্গে নিজেকে বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছে। চাকরিটাও পাকা হয়েছে।
—-সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, বান্ডল বলে উঠলো, স্যার অসওয়াল্ড এত রাতে বাগানে কি করছিলেন, তা তো জানতে চাইলেন না?
তিনি হলেন সত্যিকার মস্ত বড় মানুষ। ব্যাটল বললেন, এঁরা জানেন কোনো ব্যাখ্যা জানতে না চাইলে তা দেওয়া উচিত নয় এবং চাওয়া উচিত নয়। তিনি ব্যাখ্যা করা বা মার্জনা চাওয়া পছন্দ করেন না। তিমি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বলতে পারেন, বুঝেছেন।
এ প্রসঙ্গে বান্ডল আর কোনো কথা বললো না।
-এবার আমার বন্ধুর মত শুনতে পারবো। মিস ওয়েড কি করে এখানে এসে হাজির হলেন? ব্যাটল মজার গলায় কথাটা বললেন।