• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর 22, 2023
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result
  • বইয়ের নামঃ স্ক্যাণ্ডাল ইন সোরোন্টো
  • লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
  • বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই

স্ক্যাণ্ডাল ইন সোরোন্টো

১. সবটা বাজে ভাবে ঘটল

০১.

সবটা বাজে ভাবে ঘটল শুরুতেই।

প্রায় চার ঘণ্টা দেরী করল পশ্চিমগামী প্লেনখানা। ২০৪ প্যানআম ফ্লাইট ব্যাংকক থেকে আসছে। ইতিমধ্যে প্রায় সন্ধ্যে আটটা নাগাদ ডুরেল জেনেভাতে পৌঁছে গেল।

দেখতে দেখতে গোটা বিমানবন্দর দূরপাল্লার আরোহীদের ভিড়ভাড়াক্কায় ছয়লাপ। অতিথি অভ্যর্থনা আর বিদায় সম্বর্ধনার মধ্যে এক সময় ডুরেল ডিপ্লোম্যাটিক পাশপোর্ট দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, যেখানে অ্যান্টন প্যাসেক অপেক্ষা করছিল।

কে জানে কার জন্যে।

মোটেই এড়াবার ছিল না ব্যাপারটা।

হয়তো প্যাসেকও ডুরেলের মতোই, দুজন দুজনের কাছে অতি বিস্ময়কর প্রাণী।

ডুরেল হাল্কাচালে, জনাকীর্ণ এয়ারটার্মিনালের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে লাগল।

প্রথমে এক কাপ এসপ্রেসো কফি বানাতে বলে পাশের স্টেশনারী কর্নার থেকে কয়েক প্যাকেট আমেরিকান সিগারেট কিনল।

একটিবারের জন্যেও ডুরলে ফিরে তাকিয়ে দেখল না যে প্যাসেক তখনও তার প্রতি নজর রাখছে, কিন্তু অতীব উদাসীন, এবং অতি নিকটে পায়ে পায়ে তাকে প্রায় ধরে ফেলেছে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়।

কিন্তু কেন? কে. জি.ডব্লু-র লোকেরা কি আদৌ তার জন্যে এরায়পোর্টে অপেক্ষা করছে কিংবা অনুসরণ! আশ্চর্য, কিন্তু একটা মিনিটও ডুরেল সেরকম কোন কিছুই ভাবল না, কারণ তাহলে প্যাসেক আরো নিজেকে সতর্ক রাখত।

কেননা, তাকে চিনতে সে ভুল করেনি; যেহেতু তার দুজনই কোন এক সময়ে বহুকাল যাবৎ একই ব্যবসায় লিপ্ত। হঠাৎ, একসময় সে পাবলিক টেলিফোন থেকে বেপরোয়া ডায়াল ঘুরাতে লাগল। একষট্টি একান্ন একষট্টি।

অপেক্ষা করতে লাগল। অপরপক্ষের কোন এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে এল।

খানিক এদিক-ওদিক তাকিয়ে ডুরেল বলল, ব্যাংকক থেকে মোড়কটা এখানে এসে পৌঁছে গেছে।

তারপরই খানিক নীরবতা নিঃশ্বাসে হিস হিস তুলল।

স্যাম

ঠিকই ধরেছ–তোমার প্লেন দেরী করেছিল?

এ্যালেন জিজ্ঞেস করল, তুমি কেমন আছ স্যাম? জলদি এসে গেছ?

ডুরেল বলল, ভালো আছি। তুমি কেমন?

সে বলল, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করে বসে আছি। সময় এক্কেবারে নেই। তুমি এসে গেছ স্যাম, তুমি যে আসতে পেরেছ, এযে কি আনন্দ

ডুরেল বলল, তোমার কি মনে হয় এটা একটা ক্রোশ জয়? তোমার কি তাই ধারণা-সে উত্তরে জানাল।

ডুরেল দেখল টেলিফোন ঘরের জানালা বারাবর প্যাসেক হাঁটছে।

ডুরেলের কঠিন চোয়াল সহসা মারাত্মক কঠিন হয়ে উঠল। অতি দ্রুত রিসিভার নামিয়ে রাখতে তৎপর হলো।

এ্যালেন বলল, সেবার জেনেভাতে গিয়েছিলাম, আমাকে তোমরা আশা করোনি, আমি কখনো দেখিনি। অথচ কি মজা।

ডুরেল বলল, প্যাসেক আমার পিছু নিয়েছে।

এ্যালেন বলল, কে? কি বললে?

ডুরেল বলল, মেজর এ্যাণ্টন প্যাসেক। আমস্টারডমে ববি লঙঔমকে যে খুন করেছিল?

মনে পড়ে? সে একজন পাক্কা মাস্টার প্ল্যাস্টার।

এ্যালেন বলল, সে কি তোমাকে দেখেছে?

ঠিক ধরতে পারছি না।

হঠাৎ, অতি দ্রুত টেলিফোন ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য পথ ধরল।

প্যাসেক সেখানে নেই। বুঝতে পারল সে, আপতত কেউই আর অনুসরণ করছে না।

ডুরেস টার্মিনাল রেস্তোরাঁয় ঢুকে আরো কিছু সময় কাটাবার জন্যে অবিরত মেনু উল্টে-পাল্টে দেখতে থাকল। কেননা সময় খরচের জন্যেও একটা খরচ আছে। হ্যাটব্যাকের আয়নায় নিজের চেহারা যেন নতুন করে দেখালো। এ হেন ডুরেল, এখন ওয়েটারের সঙ্গে কিছু কথা বলল। তারপর নিঃশঙ্ক একটা ট্যাক্সির দরজা খুলে ড্রাইভারকে নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলে দিল। হোটেল ডি লা প্যাকস।

ডুরেল এতক্ষণ বাদে ভাবতে পারল সে মুক্ত, পরিপূর্ণ নিঃশ্বাস ফেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।

ডুরেল একসময় ট্যাক্সি থেকে নেমে সোজা হোটেল ডি লা প্যাকসের প্রথম লবিতে এসে থামল। তারপর আবার কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে অন্য আর-একটা ট্যাক্সি ধরে ডানদিকে মোড় ফিরল। রুস্তা-লার মধ্যপথ ধরে সোজা চলে গেলে গ্র্যাণ্ড থিয়েটার।

এখন, নিজেকে পরিপূর্ণ মুক্ত বোধ করল।

খবর বিনিময়ের প্রধান এবং বিশ্বস্ত জায়গা গ্যালারী চেক হল সিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আর সেই কাজে এ্যালেন একমাত্র সহচর অতি পরিচিত দোসর। আঁকাবাঁকা পথ ধরে ডুরেল এগোতে থাকল। আর কয়েক পা পেরোলেই গ্র্যাণ্ড রু-র। তার খুব কাছেই আর্ট শপ অর্থাৎ শিল্পবিপণী। ডুরেল হাঁফ ফেলল। আর্ট শপের ওপরেই এ্যালেনের কামরা। দোকানের দিকে ডুরেল তাকাল।

কিন্তু, কি আশ্চর্য, এত সাতসকালে, সন্ধ্যে উত্রাল না, অথচ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। কিন্তু হৈ-হল্লার অন্ত নেই। সেই মাতোয়ারা উদ্দীপনার মধ্যে ডুরেল সবুজ কাঠের একটা দরজা বন্ধ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল।

না, সবই ঠিক আছে। একটা সঙ্কেতেই এ্যালেন দরজা খুলে বাইরে এসে হাত বাড়াল।

ওঃ। তোমাকে দেখে যে কি আনন্দ হচ্ছে

তোমাকে দেখে আমারও-প্যাসেক সম্বন্ধে কি ভাবছ?

সব জায়গায় খবর দিয়েছি। দেখি কতদূর কি হয়–যাইহোক তোমাকে এরা যে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে, আমি খুব খুশি হয়েছি

কিন্তু ব্যাপারটা আসলে কি জানো?

কি?

আমি কেবল প্রিন্স সুভানা ফনের আর্থিক মিশনকেই সাহায্য করছিলাম, কিন্তু চেকরা এতই সন্দেহ করছে যার জন্য প্যাসেক এয়ারপোর্টে হত্যে দিয়েছে, আমি তো বুঝতেই পারছি

ডুরেল হেসে বলল, সবাই জানে কিংবা হয়তো আমি ওদের অনেক কিছু জেনে ফেলেছি এই ভয়

ওরা ব্যাংককে তোমাকে কোন উপদেশ দেয়নি।

হ্যাঁ, তারা আমাকে বলেছিল যে ঐরকম কাহিনী কিছু একটা শুনতে পাব।

এ্যালেন জিজ্ঞেস করল, হা ভালো কথা, কনস্যুলেটর মিস্টার হ্যানসন কি ঐ প্লেনেই ছিলেন?

ডুরেল উত্তর দিতে দেরী করল।

এ্যালেন আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি কি সাইলাস হ্যানসনকে জানো?

এফ.বি.আই.-য়ের দায়িত্বে–ডুরেল বলল, হ্যাঁ, আমি তাকে জানি।

এ জায়গাটা কেমন? অফিসটা কিসের? এসব তেমন কিছুই জানাইনি। ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে দেখা হলে সব খুলে বলব। একটা কাজ তোমাকে করতেই হবে

এ্যালেনের গলার স্বর কাঁপছিল ডুরেল লক্ষ্য করল। এই ধরনের অকস্মাৎ মর্মাহত এবং পীড়িত বোধের কারণ কি হতে পারে ঠিক ভাবতে পারল না ডুরেল। সে একবার শুধু ডাকল। এ্যালেন

এ্যালেন বলল, আমি সত্যিই, দুঃখিত স্যাম—

কেন? কিসের দুঃখ

জানি না

এই জীবনের কি কোন শেষ নেই–

না, শেষ নেই। চলতে চলতে এ পথ যদি ফুরিয়ে যায় যাক, ক্লান্তি আসে আসুক। জানি একদিন কোন চড়ায় গিয়ে নিশ্চয়ই ঠেকবে, সেদিন সব গ্লানি ধুয়ে মুছে যাবে। কিন্তু এমন বিচলিত হতে তোমাকে তো দেখিনি।

এ্যালেন বলল, আমি ঐসব কাজকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করি। আগে ভাবতাম বুঝি-বা ভালো কাজই করছি। সব কাজেরই প্রয়োজন আছে দুনিয়ায়। কিন্তু এখন সত্যি ঘৃণা করি ডুরেল, তোমার কাছে বলতে লজ্জা নেই। ইলিনসে ফিরে আর পাঁচজন লোকের মতো সহজভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে চাই।

ডুরেল ভাবল, সে একি শুনছে।

বলে চলল নিজের মনেই, ধরো, ববি লঙস্ট্রমের হত্যা, কিংবা জন পিটারকে হংকঙে জলে ডুবিয়ে মারা অথবা ইলিয়ট সিংগারকে লণ্ডনের আণ্ডারগ্রাউণ্ড ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া এ সব কাহিনী শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত স্যাম। ব্যাপারগুলো সহজভাবে নাও স্যাম।

এ্যালেন বলল, বাস্তবিকই ওসব কাজ মেয়েদের জন্য হতে পারে

ডুরেল বলল, এই জাল থেকে তুমি বেরিয়ে আসতে চাইছে। যতদূর মনে পড়ছে সেই সৌভাগ্যবানের নাম জ্যাক ট্যালবট।

এ্যালেন বলল, হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো?

কিন্তু, ব্যাপারটা কি? সে কি ভীষণ উৎপাত শুরু করেছে।

যদি বলি তার চেয়েও খারাপ।

কত খারাপ

যার জন্য তোমাকে আমরা এখানে ডেকে এনেছি–এই সেই লোক যে কিনা প্রিন্স সুভনার পেইন্টিং স্ক্রল চুরি করেছিল, তারপর থেকে জ্যাক উধাও এবং স্ক্রলসও অদৃশ্য

তাই কি

হ্যাঁ, একেবারে নিপাত্তা। সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। অথচ জ্যাক ট্যালবটকে চাইই, চাই। উই হ্যাভ টু ফাইন্ড দোজ পেইন্টিংস এণ্ড উই মাস্ট ফাইন্ড জ্যাক—

এবং ঠোঁটের পর্দা কাঁপল ডুরেলের, এবং–তাকে খুন করতে–কবরের তলা থেকে যেন এ্যালেনের গলার স্বর উঠে এল, এবং তোমাকেই খুন করতে হবে, ডুরেল তোমাকেই, তোমাকেই

.

০২.

তারপর, অনেকক্ষণ কেটে গেল।

সে চুপচাপ বসেছিল। শান্তু, নিরুদ্বেগ। কোলের ওপর দুটো হাত অত্যন্ত স্থির এবং নিটোল পড়ে আছে। সামনে টেস্ট রুম।

ডুরেল ভাবল, এই সেই অ্যালেন, কুড়ি নম্বর এ্যানাপোলিস স্ট্রীটের হেডকোয়ার্টারে কে সেকশনে যার দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যার বয়স মনে হয় এখন ছাব্বিশ। ডুরেল সুমিষ্ট কণ্ঠে ডাকল, এ্যালেন।

এ্যালেন তার দিকে চেয়ে একখণ্ড হাসি দিয়ে ভুলিয়ে দিতে চাইল অতীতের সব জ্বালা। তোমাকে এই পথেই যেতে হবে। ডুরেল বলল, কিন্তু জানি না কিভাবে তুমি চলবে–তুমি ছাড়া যেভাবে আমার জীবন, সময়, আয়ু কেটে গেছে। তেমনিভাবে চলে যাবে–নখ খুঁটে এ্যালেন মুখ তুলে চাইল, কি ঠিক বলছি

জানি না। স্বাভাবিকভাবেই ডুরেল নিজের কাছেই যেন জবাবদিহি করল; আই ডাজ নট এভার সীম টু এণ্ড-আবার একটু থেমে বলল, এর কোথায় শেষ জানি না, সম্ভবত আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এর শেষ নেই

মুখ তুলে তাকাল এ্যালেন।

যাক গে। এখন তোমার জ্যাক ট্যালবটের খবর বলো স্যাম–এ্যালেন বলল, তুমি কি ভাবছো বলো তো আমাকে?

কিছু না। ডুরেল বলল, তুমি তাকে ভালোবাস

এ্যালেন বলল, যথেষ্ট ভালোবাসি।

কি মনে হয় তোমার পেইন্টিং স্ক্রল চুরির সঙ্গে হাত আছে—

হা। আমি বিলক্ষণ মনে করি।

বুঝেছি। তোমার গলায় সেটাই কাটার মতো বিধছে–শুধু তাই নয়। আমি তার ভালো মন্দ সবটাই দেখতে চাই। কতখানি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো জানি না। তবে এটা ঠিকই কর্তব্যের খাতিরে বিপদাপন্ন বন্ধুকে ত্যাগ করতে মোটেই পিছুপা হবে না

নিশ্চয়ই–ডুরেল বলল, হ্যাঁ তা ঠিক

এ্যালেন বলল, মাত্র তিন দিনের মধ্যে ফয়সালা করতেই হবে। সুভানার এটাই ছিল চরম নির্দেশ–অর্থাৎ আলটিমেটাম

সুভানার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সম্বন্ধে তুমি কিছু জানো কি? ডাউন স্ক্রলস। বড়ডো মুশকিলে পড়ে গেছি প্রিন্সের কাছে। খুব সিরিয়াস। সেই সুযোগে এখন চেকরা দারুণ ভূমিকা নিয়েছে। অথচ ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্ল্যানিং বোর্ড মনে করছে

কি মনে করছে?

চেকরা চাইনীসদের মুখপাত্র, বাট উই আর নট শিওর, নেগোসিয়েসান চলছে তো চলছেই। আনটিল লস্ট নাইট-আর তখনই কি প্রিন্সের ছবিগুলো ট্যালবট চুরি করে

তাই হবে হয়তো।

আমি বহুদিন শুনেছি ডাউন স্কুলের কথা। ডুরেল বলল, দেয়ার আর ফোর অফ দেম, রাইট? এটা কি ঠিক সিল্ক পেইন্টিংস অন রোলস অ্যাবাউট থ্রী ফিট ওয়াইড অ্যাণ্ড টেন ফিট লঙ

এ্যালেন চুপ করে শুনল।

রিসেন্টলী রোমের মিউজিয়ামে দেখানো হয়েছে?

দ্যাটস রাইট–এ্যালেন এইবার মুখ খুলল, কিন্তু নিশ্চয়ই তুমি সেগুলোকে অল এ্যাট ওয়ান্স দেখনি।

এ্যালেন বলল, দো ওয়্যার ডান বাই এ ওয়াগুরিং বুদ্ধিষ্ট পিলগ্রিম, এ পেইন্টার নেমড় পেঙকা। যে কিনা সারা সাউথ-ইষ্ট এশিয়া হেঁটে বেড়িয়েছিল। রিমার্কেবল চাইনীজ এ্যানসিয়েন্ট আর্ট বড় একটা চোখেই পড়ে না। কমসে কম দাম হবে কোটি ডলার। যতদূর মনে হয় সম্রাট সুর তীর্থ ভ্রমণের সময়কার ভেরিয়াস সিনসিনারী প্রতীক হিসেবেই ফিরে পেতে চায় ওর যথাযথ মূল্য। প্রিন্স সুভানার ওগুলো বার্থ রাইট। যাইহোক। কেন রোমে গিয়েছিল?

যতদূর ধারণা কালচারাল ইন্টারচেঞ্জড। আর্ট গ্যালারীতে মাত্র দুসপ্তাহ হৈ-হৈ ব্যাপার।

তারপর ওগুলো কি রোমেই চুরি যায়?

প্রিন্স স্ক্রলগুলো জেনেভা থেকে দেশে নিয়ে যাবার ঠিক করে। টিন খনির আলোচনা শেষ করে সব কথা পাকা। জ্যাক এর মধ্যে কিভাবে যে হাতসাফাই করলে। আমাদের কাছেই ব্যাগটা ছিল। প্রিন্স জ্যাককে সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করত বলে রোম থেকে জেনেভা হোটেলে ওঠে আর একেবারে হাওয়া হয়ে গেল সেখান থেকে। এমন নিদারুণ বিশ্বাসঘাতকতা

ডুরেল বলল, আর এ্যান্টন প্যাসেক। তার সম্পর্কে কিছু ভেবেছ কি?

ডুরেল মনে মনে বলল, হ্যাঁ এটা প্যানেকেরও কাজ হতে পারে। টিন খনির আলোচনায় আমাদের সঙ্গে সুভানার সম্পর্কটা নষ্ট করে দেবার জন্য স্ক্রল সমেত জ্যাককে কে.জি.ইউ-র লোকেরা গায়েব করেও তো দিতে পারে। যাতে করে আমেরিকানদের ওপর সব দোষটাই পড়ে–

এরকম কথা আমিও ভাবছি–এ্যালেন চুপ করে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল।

দেন ইউ আর শিশুর যে জ্যাকই চোর?

সুভানা অন্যরকম দাবী করে। প্রিন্স যে স্যুটে থাকতত জ্যাক সেখানে থেকে একটা প্যাকেট কাগজের বাণ্ডিলের মতো নিয়ে চম্পট দেয়। সুভানার ব্যক্তিগত একজন চাক্ষুষ দেখেছে।

কিন্তু অতখানি খারাপ কাজ কি জ্যাক করবে? তার সবটাই জানো তুমি। আর ভালোবাসতে।

এ্যালেন বলল, আসলে ট্যালবট জ্যাক দারুণ বেপরোয়া। তার কাজ সারা দুনিয়া জুড়ে ঘুরে বেড়ানো, এদিকে ইঞ্জিনীয়ারিং-এ চোস্ত। পেইন্টিংগুলো চুরি হবার পর স্বভাবতই প্রিন্স এখন আমেরিকানদের ওপর চটে গেছে ইনক্লডিং নরামকো টিম। আর এতে তো প্যাসেক খুশী হবেই-কিন্তু তাকে এয়ারপোর্টে দেখে খুব একটা খুশী বলে মনে হলো না–ডুরেল বলল।

এ্যালেন বলল, যাক্ সে সব কথা। এখন তোমার একমাত্র কাজ হবে তিনদিনের মধ্যে যেমনভাবে হোক জ্যাককে খুঁজে বের করে প্রিন্সের মামলাটি সব পৌঁছে দিতেই হবে।

চেয়ার ছেড়ে ডুরেল উঠে দাঁড়াল। এর মধ্যে যদি সময় থাকে আমি একবার যাব জ্যাক ট্যালবটের কামরায়। তোমার কাছে ঠিকানা আছে?

আমি আগেই জানিয়ে দিয়েছি

তোমার কাছে কোন চাবি আছে কি?

সে সেখানে নেই। তার কারণ খবর ক্যনস্যুলেট রাখে না। কেবল তার প্যাডে একটা ঠিকানা পাওয়া গেছে। ভিলা-ডেল-সল। লাউসেন রোড, জেনেভা, নর্থ পয়েন্ট। ইটালীর একজন বিজনেস ম্যাগনেট। বিরাট চাই। নাম হল- কাউন্ট বার্নাডো এ্যাপোলিও–

এ্যালেন বলল, বিখ্যাত শিল্প-সংগ্রাহক।

ডুরেল বলল, এই অঞ্চলটাকে এ্যাপোলিও কি ভিলা-ডেল-সল বলে বেড়াত।

হ্যানসন ব্যাপারটা বলতে পারবে?

প্রিন্স সুভানার সঙ্গে পেইন্টিং স্ক্রল চুরির কথাটা নিয়ে শিগগির ফয়সালা হওয়া উচিত।

আগে প্যাসেক সম্পর্কে ভাবতে হবে। কারণ জ্যাককে সেই হয়তো খুন করেছে।

এলেন বলল, পেপার স্ক্রলটা ফেরৎ পাবার জন্য হয়তো উগ্র হয়তো ব্যবহার সুভানা করতে পারেন। সাবধানে কথা বলবে। দেখ জ্যাক যে চোর এ ধারণাটা পাল্টানো চাইই–তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করব।

.

০৩.

তখন প্রায় রাত নটা।

অনেকক্ষণ হয়ে গেল চিত্রশালা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারপর সারারাত মনে মনে ভাবল টংটনে একটা কেবল করলে কেমন হয়। সে কি সাফ সাফ জানিয়ে দেবে। সে তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছে।

অবশেষে ডুরেল এগিয়ে গেল গ্র্যাণ্ড রুর দিকে। হঠাৎ মনে হলো তাকে কে যেন অনুসরণ করছে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ডুরেল সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রালের কাছে থামল।

থমকে দাঁড়াল অনুসরণকারী ছায়ামূর্তি। ডুরেল বুঝতে পারল বিপদ আসন্ন। নিরিবিলি আরো একটা জায়গায় পা দিতেই সে অদ্ভুতভাবে পেছন দিক থেকে একটা প্রচণ্ড ঘুষি ঘুরিয়ে মারল। তারপর একটা নির্জন জায়গায় শরীরটাকে টেনে এনে আরো কয়েক ঘা ঘুষি মারল। অপরপক্ষ রক্তাক্ত ঠোঁট ফাঁক করে কি যেন বলল, কমেট

কে বলেছে আমার পিছু নিতে? দেখি তোমার পাশপোর্ট এখানে আসার তোমার কোন এক্তিয়ারই নেই, এই বলে সে আরো কয়েকটা রদ্দা মারল ঘাড়ে, গর্দানে।

আমায় রেহাই দিন মঁসিয়ে ডুরেল।

এবার বলো তো কবে থেকে আমার পিছু নেবার কাজে লেগেছ।

আপনি এখানে আসার ঘণ্টা কয়েক আগে থেকে।

তখন চলন্ত একটা ট্যাক্সি থামিয়ে হোটেলে ডি লা প্যাকসে দ্রুত পৌঁছে গেল।

অস্ত্র পায়ে প্রিন্স সুভানা ঘরের মধ্যে পায়চারী করছিলো। বললেন, মঁসিয়ে ডুরেল, আমরা আমেরিকান অফিসিয়ালদের ওপর এতই নির্ভরশীল যে এখন অবশ্যি অধের্য হয়ে পড়েছি

প্রিন্স বললেন, দেখুন, তিন দিন পরে দেশে ফেরবার আগে যেমনভাবেই হোক, আমার পৈতৃক ছবিগুলোর একটা ব্যবস্থা করুন। আশাকরি স্বীকার করবেন এগুলো ট্যালবটই চুরি করেছিল। আমি আর এখন অন্য কোন কথা শুনতে চাই না।

ডুরেল বলল, আপনি কি নিশ্চিত ট্যালবটই সম্পূর্ণ দায়ী?

সুভানা বললে, আমাদের কাছে তো তেলরঙের ছবিগুলোর আর্থিক মূল্যের চেয়েও ধর্মীয় মূল্য অনেক বেশী। আর জ্যাককে শুধু এ ব্যাপারে নয়, মাইনিং লীজের ব্যাপারেও বিশ্বাস করেছিলাম আমেরিকান শিল্পপতিদের প্রতিনিধি হিসেবেই।

ডুরেল সেই মুহূর্তে জিজ্ঞেস করল, তা হলে সব আমেরিকানদেরই আপনি ট্যালবটের মতো একজন চোর বলে ভাবেন?

সুভানা বললেন, অনেক কিছু মূল্যবান জিনিষের বদলেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। ডুরেল জানাল, আপনার ভৃত্যের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।

কি লাভ। তার সঙ্গে কথা বলে।

হঠাৎ দ্বাররক্ষী এসে খবর দিল একজন জনৈক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছেন।

প্যাসেক মুহূর্তের মধ্যে একদম ভেতরের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল।

ঠিক এই মুহূর্তে প্যাসেককে এইখানে দেখে ডুরেল চমকে উঠল। প্যাসেক চাতুরীপূর্ণ চাউনির ফাঁকে মৃদু হাসল।

প্যাসেক বলল, ডুরেল এটা কিন্তু নিরপেক্ষ অঞ্চল। যা হোক, কি মনে করে এখানে–জানতে চাইল ডুরেল।

ব্যবসা।

কিসের ব্যবসা।

খনিসংক্রান্ত এগ্রিমেন্ট আর কি।

প্যাসেক, মস্কোতে কে.জি.ইউ ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাকা গোয়েন্দা ডুরেলকে বাইরে ডেকে এনে আলোচনা আমন্ত্রণ জানাল। দুজনে এসে থামল একটা অজানা সেতুর কাছে।

ট্যালবটকে খুঁজে পেলে। তোমাদেরই একজন লোক এমনি করে তোমাদের ভরাডুবি করল?

ডুরেল বলল, তার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই।

প্যাসেক বলল, তোমাদের অতি বিশ্বস্ত অনুচর, বন্ধু, সেই আবার যা নয় তাই বলে বেড়াচ্ছে। প্রিন্স যার ফলে প্রত্যেকটা আমেরিকানদের ওপরে দারুণ চটে গেছেন

ডুরেল বলল, বছর কয়েক আগে আমস্টারডামে ছিলাম।

প্যাসেক বলল, বুঝেছি, তুমি রবার্ট লঙস্ট্রমের কথা বলতে চাইছ

ডুরেল বলল, সে আমার খুবই বন্ধু ছিল।

আমাদের ইচ্ছের বাইরে ওর মৃত্যুটা ঘটে যায়।

ট্যালবট এখন কোথায়?

যতদূর মনে হয় তার পাত্তা এখানকার ত্রিসীমানায় পাওয়া যাবে না। আর তোমাকেও আদেশ করছি এখনই জেনেভা পরিত্যাগ করতে। প্যারিস যেতে আমি তোমায় সাবধান করছি। যেখানে খুশী যাও কিন্তু জেনেভায় থেকো না।

.

০৪.

ডুরেল তারপর অন্য পথ ধরে পাবলিক টেলিফোন থেকে হ্যানসনকে খবর দিল।

হ্যানসন বলল, কি ব্যাপার?

ডুরেল বলল, এ্যালেনকে ফোন করলাম। কেউ ধরল না।

ঠিক আছে। তোমার কাছে আমি যাচ্ছি। কোথায় আছ এখন? নির্দিষ্ট একটা জায়গার নাম করে ডুরেল সেখানে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগল। যথারীতি একসময় হ্যানসন এসে পৌঁছতে তারা দুজন স্মিক্সিথভিল পাড়ি দিল।

ডুয়েল বলল, চলো তার আগে ট্যালবটের কামরাটা সার্চ করি

হ্যানসন বলল, আমি তন্নতন্ন করে দেখেছি। কোন হদিস নেই। এখন বুঝতে পারছি ও সব কাজই করতে পারে টাকার জন্যে।

ডুরেল বলল, টাকাই যদি তার একমাত্র লক্ষ হয় তাহলে সে শুধুমাত্র ঐ পেইন্টিং চুরি করবে কেন বুঝছি না।

ডুরেল বলল, আমার ধারণা ফ্রান্সিস এ্যাপোলিও এর মধ্যে জড়িত আছে। এ্যালেন একটা ঠিকানা দিয়েছিল ভিলা-ডেল-সলের। যেটা নিঃসন্দেহ কাউন্ট এ্যাপোলিওর।

ডুরেল অবশেষে রুসেন্ট পিয়েরে ফিরে এলো। ডুরেল কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঃশব্দে এ্যালেনের বাড়িতে ঢুকল কিছুক্ষণ আগে যে কেউ এসে এখানে তোলপাড় করে গেছে তার চিহ্ন প্রভূত বিদ্যামান।

রক্তাক্ত শয্যার পাশে মেহগনি কাঠের ডেস্ক ভেঙেচুরে খানখান।

হ্যানসন একটা হলঘর পেরিয়ে মাঝখান বারবার সেই বিছানার কাছে গিয়ে দেখল একটা বাদামী স্কার্ট আর রক্তাক্ত ব্লাউজের পাশে ২৮কোল্টের হাতীর দাঁতের বাঁটযুক্ত ছোট একটা বন্দুক নিঝুম ঘুমিয়ে রয়েছে যেন।

ডুরেল বছর তিন আগে এই রমণীর আগ্নেয়াস্ত্রটি এ্যালেনের কাছে দেখেছিল। তারপর ডুরেল মাথানীচু করে বেডরুমের দিকে এগিয়ে চলল।

.

০৫.

তথন এ্যালেন প্রায় মৃত্যুমুখে। দেওয়াল, ডেস্ক, বিছানা সর্বত্র রক্তের ফোঁটা ফোঁটা দাগ বর্তমান ইতস্ততঃ ছড়ানো। অতীব ক্ষীণ শব্দ তুলে সে ডাকল, স্যাম–

ডুরেল বলল, এ্যালেন আমি ভীষণ দুঃখিত, আমার আসতে খুব দেরী হয়ে গেল-এই নারকীয় কাজ কে করেছে আমাকে বলো।

স্যাম-সে বলার চেষ্টা করল, পারল না।

বলো, বলল, এ্যালেন।

অসহায় বোধ করে ডুরেল বলল, তবে কি প্যাসেক–

না।

তবে কি জ্যাক ট্যালবট—

এ্যালেন চুপ করে থাকাতে ডুরেল বুঝতে পারল কোথায় যেন ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছে অবিরত, যা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ডুরেল বলল, এখানে জ্যাক ফিরে এসেছে। জেনেভায় সারা দিন ছিল। স্ক্রলগুলো কি তার কাছেই আছে?

এ্যালেন বলল, হা হা। আমি ক্লান্ত স্যাম—

ডুরেল বলল, এ্যালেন তুমি ভাল হয়ে যাবে।

না। আর মিথ্যে বলল না স্যাম

ডুরেল বলল, কতক্ষণ এভাবে পড়ে আছো?

আধঘণ্টা হবে। আমি এমন কাজকে চিরকালই ঘৃণা করতাম স্যাম–আমার ভেতরটা এক্কেবারে এখন ফতুর হয়ে গেছে।

তা ঠিক–ডুরেল বলল, জ্যাক পেশাদার খুনে

এ্যালেন জবাবে বলল, তার থেকেও জঘন্য। প্যাসেকের চামচা

তোমাকে বলতে আমার বাধা নেই স্যাম। আমার লাইফ ইনসিওর করা আছে।

ইনসিওর!

স্যাম, সব কিছুই জ্যাক জানত। এ্যালেন বলল, অর্থাৎ আমার সবকিছু, সব কাজকর্ম গোপনীয়তা

তাছাড়া আর কিছু। সে আর কি মধু পেতে চেয়েছিল?

জানি না। হঠাৎ মিডল য়ুরোপের ফ্রীমন্ট নাবিকশ্রেণীর বাজে লোক নিয়ে বন্যজন্তুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর

কতজন তারা সঙ্গে ছিল?

জনা চারেক হবে।

ডুরেল বলল, ফ্ৰীমন্ট ক্রুর লোকেরা তো কে সেকসনের লোক?

আর কোন কথা বলতে পারলো না এলেন।

অদূরে টেলিফোন বেজে উঠল।

মনে হয় প্যাসেক–

না। হ্যানসন জানাল। বাইরে আমি আমাদের লোকদের প্রয়োজনবোধে ফোন করতে বলেছিলাম

ডুরেলের হাত থেকে হ্যানসন রিসিভার টেনে কানের কাছে ধরল। এবং বলল, অপরপক্ষকে রোম এবং নেপলসের জন্য ২৩০০ সুইস এয়ারলাইন্সের দুটো টিকিট কাটতে।

কার ফোন? দানিয়েল?

হা। এতক্ষণে জ্যাক ২৩০০ এয়ার ফ্লাইট ধরে রোমে চলে গেছে।

হঠাৎ এ্যালেন বলে উঠল, দেখ স্যাম ওকে মেরে ফেল না। আমার অনুরোধ।

তারপর এ্যালেনের মৃত্যু ঘটে।

.

০৬.

হ্যানসন বলল, স্যাম, এ্যালেন আমার বড় প্রিয় ছিল।

বাজে কথা ভাল লাগে না। ডাক্তার এসে গেলে তার কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে সকারের ব্যবস্থা করো।

মুহূর্তে তার কাজে তৎপর হয়ে উঠল ডুরেল। এ বাড়ির সঙ্গে যাতে কে.জি ইউর লোকেরা আর কোন যোগাযোগ না করতে পারে এটাই এখন ডুরেলের দুরন্ত দুর্ভাবনা ভয়ানক কাজ করতে শুরু করল। ওপর তলায় গিয়ে ডুরেল দ্রুত রেডিওসেটগুলো ভেঙে চুরমার করে দিল।

তারপর শ্লথ পায়ে নীচে নেমে এলো।

সী জিজ্ঞাসা করল, যে প্লেনটা একটার সময় রোমে যায় আমরা কি ওটাই ধরব?

ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই। আমরা তার আগে একবার ভিলা-ডেল-সল যাব।

ওরা দুজন তখন লাল গাড়ির গতিপথ জেনেভার উত্তর দিকে ঘুরিয়ে দিতে হাইওয়ের পথে স্পীড তুলল। একটাই মাত্র এখন উদ্দেশ্য। যেভাবে তোক ট্যালবটকে পাকড়াও করে স্ক্রলগুলো উদ্ধার করতেই হবে। এবং প্যাসেকের খপ্পর থেকে তাকে চিরদিনের মতো মুক্ত করতে হবে।

একসময় অপরিচিত একটা জায়গায় হানসান সী গাড়ি থামল। মিস্টার ডুরেল, ঐ যে দূরে এ্যাপোলিওর বাগানবাড়ি।

ডুরেল বলল, এখানে কেউ আছে বলে তো মনে হয় না। নিঃসঙ্গ প্রাসাদপুরী।

হ্যানসন বলল, কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আছে।

কি করে বুঝলে?

ট্যালবটের কাছে খুব সম্প্রতি এ বাড়ির টেলিফোন নম্বর পাওয়া গেছে।

আর দেরী নয়। ভেতরে ঢোকা যাক।

ডুরের বলল, না! একজনকে বাইরে থাকা দরকার। বরং আমি ভেতরে যাই।

মোরামের পথ ঘুরে ডুরেল বাগানের উল্টোদিকে বাড়াল।

খানিক দূরে দোতলায় ব্যালকনির তলায় নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে একখানা ওপেন সীডান চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে কেউ নেই।

অথচ কাঁচের ভেতর থেকে কড়া তামাক পাতার পোড়া গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে আছে। বারান্দার ঈশান কোণের দিক থেকে মনে হলো একটুখানি আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।

আরো একটা সতর্কতা অবলম্বন করে ডুরেল এগোতে থাকল।

ডুরেল আরো কিছুটা ঘুরপাক দিয়ে উঠতেই সী হঠাৎ পেছন থেকে লাফ মেরে বলল, ঘাবড়ে যেও না। এফ. বি. আই-এর লোক সামনে। টেক ইট ইজি। আস্তে আস্তে ডুরেল মেহগনি কাঠের দরজা ঘেঁষে দাঁড়াল।

ভেতরে একটা পায়ের পাতার ধ্বনি চৌকাঠ ছুঁয়ে গেল।

আরো একটু সামনের দিকে ডুরেল এগোলো।

আরো একটু এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই বড় হলঘরের পেছন দিকের লোহার দরজাটা প্রচণ্ড ঝড়ের তাণ্ডবে যেন খুলে গেল।

আর সেই তীব্র ধ্বংসের মুখে মরিয়া বেগে হিংস্র পাশবিক চাউনি নিয়ে একটা দৈত্যাকৃতি লোক এগোতে থাকল ডুরেলের দিকে।

এমন একটা ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটে যাবে যার জন্য সে সবসময় প্রস্তুত

সে একটা ধারালো অস্ত্র ডুরেলের দিকে ছুঁড়ে মারবার উপক্রম করল। ডুরেল তৎক্ষণাৎ দ্রুত নিজেকে পেছন দিকে সরিয়ে বলল, ওভাবে ছুরি চালাতে নেই। আমি পুলিশের লোক নই।

হঠাৎ লোকটি ইস্পাতের ফলাটা ছুঁড়ে মারতেই ডুরেলের মোটা কোটের হাতা ছুঁয়ে কিছুটা কেটে বেরিয়ে গেল। তারপর লোকটা ছুটতে শুরু করল। ডুরেলও পেছন পেছন ধাওয়া করল। এবং হ্যানসনের কাছে পৌঁছতে নির্দেশ দিল। আর নিজের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরল। তার ময়লা ধূসরিত ঘেঁড়া পকেট হাতড়ে কাগজপত্র বার করল সাইলাস।

প্রথমটা একখণ্ড ইতালীয় পাশপোর্ট, তারপর বর্ডার স্লীপ, ফ্রেঞ্চ বডার দিয়ে যাবার একটা স্ট্যাম্প। আর গতকালকার সুইজারল্যাণ্ড প্রবেশ পথের একটা তারিখ। সে নাম পড়লো ব্রুনো বেলারিও। বাস করে ফিলিবেশে দ্বীপে। যদিও দ্বীপটা এ্যাপেলিওর একটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এদিকে কেন যে ব্যাটা মরতে এসেছিল। সী পকেটের ভেতরে থেকে আরো একটা এনভেলাপ করল। তাতে ছিল ত্রিশ হাজার লিরা। আর খামের ওপরে হোটেল সেন্টসীয় ছাপা মারা পাবেশেপী ১৪২ নেপলস।

এখানে ওখানে জিনিসপত্তর উল্টোপাল্টে, হাজার খোঁজাখুঁজি করে, আলমারীর মাথায়, খাটের তলায়, কিচেনে, সিঁড়ির ঘুরুনী ঘরের কোণে–কোথাও চিহ্ন পাওয়া গেল না স্ক্রল পেইন্টিংগুলোর।

তবে এটা ঠিক, কোন মহিলা এখানে দু-একদিনের জন্য রাতবিরেত কাটিয়ে গেছে সে কি এ্যাপোলিওর স্ত্রী? না অন্য কেউ, কেননা হ্যাঁঙারে ঝুলছে কিশোরী মেয়ের খাটো স্কার্ট। না কোন ভুল নেই। এখানে জ্যাক নিশ্চয়ই সিক্ত লালা ঝরিয়ে গেছে।

বুনো কি পাহারা দিতে পাঠিয়েছিল এ্যাপোলিওর প্রেরিত স্ত্রী অবৈধ প্রণয়লিপ্সার লীলাক্ষেত্রেকে। তার উত্তর আপাতত পাওয়া সম্ভব নয়।

যাইহোক, আর দেরী না করে নীচে নামল দুজন। নীচে নেমে দেখল লোকটির কোন হৃদস্পন্দন হচ্ছে না।

সাবাস, হ্যানসনের মার জব্বর মার।

সাবাস, সাবাস হ্যানসন, সাবাস।

.

০৭.

হ্যানসন হতবাক।

ডুরেল বলল, ব্যাপার কি?

সত্যি মরে গেল ব্রুনোটা?

ডুরেল বলল, অনেক খবর বার করা যেত ব্যাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে।

তা, ঠিক

পুলিশের কাছে খবর যাবার আগে, এক্ষুনি ব্রুনোর ডেডবডি প্যাকেট করে ফেল। তারপর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আবার পৌঁছে যাব রোমে। জ্যাকুমেলার ওখানেই সব খবর পেয়ে যাব। ট্যালবট সম্পর্কে হুঁশিয়ার। হঠাৎ ভয়াল হয়ে উঠল সীর চোখ দুটো।

শুধু এইটুকু জেনে রাখ আমরা ইটালীর এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে জড়িয়ে আছে যার নাম কাউন্ট এ্যাপোলিও। সবার আগে এখন এয়ারপোর্টে চলল। যদি হঠাৎ মহিয়সী ফ্রান্সিসকার সঙ্গে মোলাকাৎ হয়ে যায়, খুব ভালো হয়।

.

০৮.

ঠিক সেইসময়, ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ে ফ্রান্সিসকা যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠল।

সীজার এখনো বিছানায়, মাদকীয় অশালীনতা ঢাকতে সকালের রোদ ততখানি বিচলিত নয় বোঝা গেল। তিনি বার্নাড এ্যপোলিওর সঙ্গে কি পাশবিক মজাটাই না করেছেন।

ফ্রান্সী স্মিথ—

সীজার, ও নামে আমাকে ডাকবেন না।

অস্ফুট রব তুলল সীজার, কী?

তখনো আবার সেই একই গলায় বলল, আগে ঠিক নামে ডাকো আমায়। আর তা না হলে উত্তর না।

সীজার বলল, সত্যি। আমাকে ভীষণ ভালোলাগায় তোমার ভেতরের অভিজাত মেজাজটা। এসো কাছে এসো, একবার

আমাকে আবার তুমি আর কিছু করতে বলল না। দ্যাখো খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। জেনেভাতে তোমার যা ইচ্ছা তাই করছো। ট্যালবটকেও ঘোল খাইয়েছ। আমার ভাই ব্রুনো কি টেলিফোন করেছিল?

জানি না। তাকেই জিজ্ঞেস করো। আমি এখন যাব

সীজার আর বাধা দিল না।

তোমার কি ধরনের স্বামী এ্যাপোলিও? তোমার স্বামীর চরম শত্রুর সঙ্গে রাত কাটালে বিছানায়–তার থেকেও বড় কথা তুমি কি তাকে খুন করতে চাও?

সীজার বলল, না। আমার কোন দিনই সে ইচ্ছে নেই–তার কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে উঠল। ফ্রান্সিসকা বাস্তবিকই বারবণিতা। কিন্তু বার্নার্ড এ্যাপোলিওর কাছে এসে অবদমিত মনের সব সংশয় অন্যভাবে ঘটে গেল। এ্যাপোলিও তাকে হাত ধরে অন্য রাস্তায় পৌঁছে দিল। ধনে মানে সবচেয়ে উঁচুস্তরের সেই মানুষ যার আদি এবং অস্তে কোন সংখ্যা নেই। দ্যাখো। সেই যে ব্রুনো গেল আর কোন পাত্তা নেই। একবার তোমাকে সেন্টসীতে যেতেই হবে–

আমাকে?

আমার ভাবনা হচ্ছে শুধু ব্রুনোর জন্য। তুমি কি ঠিক জানো, জেনেভা থেকে স্ক্রলগুলো হোটেলের ঠিকানায় পাঠিয়েছিল।

হ্যাঁ, ফ্রান্সি বলল। ট্যালবট ওগুলো আমাকে দেবার পর আমি নিজে ব্রুনোর সঙ্গে জেনেভা পোস্টঅফিস থেকে ওগুলো পোস্ট করি। সবই ঠিক ছিল, ব্রুনো ভুল করে রশিদটা ভিলাতে কোথায় যে রাখলো আর খুঁজে পেল না। সেইজন্যেই তো বুনো ওখানে গেছে। আমরা এমন কিছু রাখিনি যাতে আমেরিকানদের সুবিধে হয়। আমি ওকে জুতোর মধ্যে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু যতদূর মনে হচ্ছে সে বেডরুমের টেবিলের ওপরই রেখেছিল এবং তাড়াহুড়োতে ফেলে রেখে এসেছে। সীজার বলল, নিশ্চয়ই পেইন্টিংগুলো সেন্টসীতে আছে। সাবধান আমরিকানরা ভীষণ কড়া নজর রাখছে। ওরা ট্যালবটকেই খুঁজছে। যদি ট্যালবটকে ধরতে পারে তাহলে তোমাকেও জানাবে আর আমাকে তো বটেই। সুতরাং আর দেরী নয়। এক্ষুনি মানে মানে বেরিয়ে পড়ো। ছবিগুলো চাইই-চাই।

 ৯. সীজারের কাছ থেকে মুক্ত

০৯.

ঘড়িতে এখন সকাল চারটে।

ফ্রান্সিসকা নিজেকে সীজারের কাছ থেকে মুক্ত করে যখন উঠে দাঁড়াল; ঠিক সেই মুহূর্তে ডুরেল রোমের কিউ মিসিনো বিমানবন্দরে জেকুমেলার কাছে থেকে প্রচণ্ড দুঃসংবাদ পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। কে সেকসনের কাজ নিয়ে জেকুমেলারকে খুবই ব্যস্ত থাকতে হতো। সে একজন রোমান বিশিষ্ট ভদ্রলোক।

জেকুমেলার এসে জানাল, প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে ট্যালবটকে পেলাম না।

তবে কি হলো? প্লেনটা কি মিলানে থেমেছিল? আর ওখান থেকেই অন্য কোথাও চম্পট দিয়েছে। তা হলেও হতে পারে।

ডুরেল বলল, যাইহোক ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে ট্যালবট ইটালী ছেড়ে কিছুতেই যেতে পারবে না। আর দেরী নয়, সী–তুমি এক্ষুনি মিলানের দিকে চলে যাও। সেখানকার হোটেল, ট্যাক্সি, বাস তন্নতন্ন করে খোঁজো। পেতেই হবে তাকে। আর আমি সেন্টসী হোটেলেই থাকব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাউন্টেস এ্যাপোলিও তার খপ্পরেই আছে। আর বিশ্বাস করে তার কাছেই জমা দিয়ে রেখেছে পেইন্টিংগুলো।

রাত ক্রমশ কেটে ফর্সা হতে লাগল আকাশ। রাস্তাঘাট নির্জন। গাড়ি থেকে নেমে ডুরেল সেন্টসী হোটেলের ভেতর সটান ঢুকে গেল।

ডুরেলের মালপত্র নিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে লাগল লম্বা ছিপছিপে চাপরাশি।

ডুরেল ঠিক সেই অবসরে তার কাছে থেকে সতর্কতার সঙ্গে জেনে নিতে চেষ্টা করল সেন্টসী হোটলের মালিক কি কাউন্ট এ্যাপোলিও?

চাপরাশি বলল, না। কখনো সীজার এখানে আসে না।

তখন ডুরেল যথেষ্ট টাকার লোভ দেখিয়ে বলল, কাউন্টের চাকর-বাকররা থাকে কি?

সে বলল, আমায় মাপ করবেন। আমি অত খবর বলতে পারবো না।

ডুরেল বলল, আমি ব্রুনো বেলারিওর একজন বন্ধুই বলতে পারো। এখানে আসবার কথা ছিল। সে একটা ব্যাবসার কাজে বাইরে বাইরে ঘুরছে। আচ্ছা তার নামে কোন পোস্টাল পার্সেল এসেছে কি না, দেখো তো। তার বদলে প্রচুর টাকা তোমায় দেব।

লোকটি বলল, একটু সবুর করুন। দুএক মিনিটের মধ্যে আমি আসছি

তারপর লোকটি ঘুরে এসে বলল, চারশো দু নম্বর রুম বুক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনো পার্সেল-টার্সেল নেই।

তুমি ঠিক দেখে বলছো তো।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল ডুরেল।

ভাবল ব্রুনোর শেষ পরিণতি কোথায় কে জানে। আর হ্যানসন।

নীচে নেমে এসে একটা চলন্ত ট্যাক্সি ধরে স্থানীয় কাগজের অফিসের কাছ বরাবর ট্যাক্সি থামিয়ে সেখানে নামল। হেডলাইন দেখল। তারপর কিছু কাহিনী পড়ল এ্যাপোলিওর। কিন্তু এমন প্রয়োজনীয় বিশেষ তেমন কিছু চোখে পড়ল না।

সে চেষ্টা করল এক বিস্মৃতির বিবর্ণ কয়েকটা মাস পেছিয়ে যেতে।

এখানকার সব খবর সম্পর্কে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল এবং শক্তিশালী।

সেন্টসীতে একটা ফোন করল কাগজের পাতা থেকে চোখ ফিরিয়ে।

কাকে চান? সিগনোরিনা পাডগেট দাদ্রে? একটু ধরুন।

দাদ্রে বলল, কে? স্যাম। আরে তুমি এখানে?

ডুরেল বলল, তুমি ব্যাংককে থাক আমি জানতাম।

দিন কয়েকরে জন্যে এখানে এসেছ।

হ্যাঁ, দিন তিনেক হবে সেন্টসীতে আছি।

হ্যাঁ, কাগজে এইমাত্র খবর দেখে ফোন করলাম

দাদ্রে বলল, দীর্ঘকাল তোমার পথ চেয়ে আমি বসে আছি। যত তাড়াতাড়ি পার সেন্টসীতে চলে এসো। এখন আমি ব্যালকনিতে বসে আছি, প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছে তোমার জন্য।

ডুরেল বলল, ঠিক আছে। নিশ্চয়ই আমি এক্ষুনি যাবো।

তোমার কাউন্টেস এ্যাপোলিওকে মনে আছে?

সে সহসা বলল, ওহো। সে তো এখন নেপলসে, মন্টিকালোতে তার ভিলা। সোবরান্টোর খুব কাছে। তুমি কি যেতে চাও

ডুরেল বলল, না। তোমার সাহায্য আমি শুধু চাই। দাদ্রে বলল, স্যাম সত্যি কথা বলতে কি জানো, আমরা আজ একটা নতুন ছবির শুটিংয়ে এখানে এসেছি। ডুরেল জানাল, আমার ধারণা কাউন্টের অনুমতি ছাড়া ঐ দ্বীপে কেউই ঢুকতে পারে না

দাদ্রে বলল, ওটা ঠিক কথা নয়। এ্যাপোলিওর ক্ষমতার আধিপত্যও কম নয়। তবে এটা ঠিক এ্যাপোলিওর দাপট থেকে তা বাঁচানো খুবই কঠিন।

কিছুক্ষণের মধ্যে ডুরেল দ্রুত সেন্টসীতে পৌঁছে সোজা পাঁচতলায় চারশো দুনম্বর কামরার সামনে এসে উপস্থিত হলো। বিছানার ওপর সাদা একটা ব্যাগ লক্ষ্য করল।

সোজা এগোলো ডুরেল। কাউন্টেস এ্যপোলিও ছাড়া কেউ নয়। সমস্ত ঘটনার সূত্রগুলো মিলে যাচ্ছে, একটার পর একটা।

ডুরেল বলল, কে আপনি?

কাউন্টেস এ্যাপোলিও? আপনি কে?

ডুরেল বলল, ভয় পাবেন না। আপনি কি ব্রুনোকে খুঁজছেন?

হা।

ডুরেল বলল, সে এখনও ফেরেনি?

কাউন্টেস হেসে বলল, যতদূর মনে হচ্ছে আপনি একজন আমেরিকান। আপনি ব্রুনোকে জানেন কি ভাবে।

ডুরেল বলল, আপনার সঙ্গে ওর ছাড়াছাড়ি হবার পরেই জেনেভাতে

কিন্তু আমি তো জেনেভাতে কোনদিনই ছিলাম না–

আমার চোখ নিশ্চয়ই ভুল দেখেনি ম্যাডাম।

ডুরেল আর বিলম্ব না করে এক আঘাতেই মাটিতে ফেলে দিল। তার শরীরের পারফিউমের গন্ধ সেই রাতে বুনোর চুলেও লেগেছিল। এখন কি সব সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে।

ডুরেল বলল, তোমাকে জানতে আমার বাকী নেই মিশরীয় ফ্রান্সী স্মিথ।

কে তুমি? ব্রুনো এখন কোথায়?

ব্রুনো-ডুরেল বলল, দ্যাখো গে এতক্ষণে জেনেভার হ্রদের তলায় জলের পোকারা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে।

ডুরেল বলল, ট্যালবট কোথায়? পেইন্টিং স্ক্রলগুলো কোথায় জমা রেখেছো?

আমি জানি না।

হঠাৎ সব নিস্তব্ধতা ভেঙে আকস্মিকভাবে ট্যালবটের আবির্ভাব ঘটল।

ভয়ে চিৎকার করে উঠল ফ্রান্সিসকা। ট্যালবট ডুরেলকে জোরালো এক ঘুসি মারতেই ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে গেল।

ট্যালবট বলল, বেলারিও কোথায়? ফ্রান্সিসকা কোথায় তাকে খুঁজতে যাচ্ছে। তুমি সুইজারল্যাণ্ড থেকে আসছো? সরকারী লোক।কে সেকসনে কাজ করো। তাহলে তোমাকে খুন করতেই হবে।

ডুরেল বলল, তাহলেই কি তুমি স্ক্রল পেইন্টিংগুলো পেয়ে যাবে। আমার মনে হয় মেজর প্যাসেক সেসব এতক্ষণে হাতিয়ে নিয়েছে।

ট্যালবট বলল, প্যাসেক যে আমার সঙ্গে ধোঁকাবাজী খেলছে এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি

ডুরেল সেই মুহূর্তে মূৰ্ছা যাবার ভান করল। আর ঐ অসহায় ভাবের মূর্ঘনায় ট্যালবট অসতর্ক হতেই ডুরেল মাথা নিচু করে তার তলপেটে একটা বড় রকমের ঘুষি মারলো।

ট্যালবটের পিস্তলটাও সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল।

গলা ঘেঁষে বুলেটটা বেরিয়ে গেলো। তার বেশি কিছু নয়।

.

১০.

তুমি কি কাউন্টেসকে দেখেছো?

ভয়ে বেলবয়ের চোখদুটো ছোট হয়ে গেলো।

পনেরো মিনিট আগে লবিতে মেলব্যাগ ঘাটাঘাটি করছিল।

তাতে কি ধরনের পার্সেল দেখলে?

বেশ বড়োসড়ো। তাকে আরো কিছু লিরা দিয়ে ডুরেল ডেক্স ক্লার্কের কাছে এসে জানাল, ফ্লান্সিসকা কয়েক মিনিট আগেই বেরিয়ে গেছে। আর ট্যালবটের কোন হদিসই সে জানে না। কে জানে তার গতি কোথায়?

দাদ্রে ডুরেলের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু একঘণ্টা পার হয়ে গেলো।

কোথায় ডুরেল, কোথায় কে।

কামরা থেকে দাদ্রে বেরিয়ে পড়লো। শান্তা লুসিয়ে বীচের দিকে সেই রেস্তোরাঁয় একটা দেশীয় নৌকোতে জনা কয়েক ভদ্রলোক আর মহিলাকে ছবি তুলতে দেখলো।

তীরভূমির নীচে ডুরেল নামতে লাগলো। সেখানে যদি দাদ্রের দেখা পায়, বলা যায় না। কি তাই।

ডুরেল এগুতে থাকলো। দাদ্রে বলল, কি ব্যাপার স্যাম। তোমার কানে চোট লাগল কিসে?

ওসব কথা থাক। চলো কোথাও গিয়ে দুদণ্ড বসে প্রাণখুলে কথা বলি।

তারা একসময় একটা পানশালায় ঢুকে গেলো।

দাদ্রে বলল, এবার বলো তো আমার কাছে তুমি কি চাও।

ডুরেল বলল, তুমি কি কাউন্টেস এ্যাপোলিওকে চেনো।

দাদ্রে জানালো, শিগগিরি পরিচয় ঘটলেও ঘটে যেতে পারে।

ডুরেল বলল, এ্যাপোলিওর আস্ক পোনালাস আর্টকালেক্টরকে তুমি কি জানো।

সে তো একটা পাকা চোর আমি জানি। কোন ঘটনাই বলছে না অথচ সাহায্য চাইছ। তবে ওটা ঠিক তোমাকে একা ফিলিবেনো দ্বীপে এ্যপোলিওর ওখানে কিছুতেই আমি যেতে দেবো না। যেতেই হয় আমার সঙ্গে যাবে।

এমন সময় ডুরেল বুঝল তার ঠিক পেছনের চেয়ারে সে এসে নিঃশব্দে বসল সে আর মেজর প্যাসেক ছাড়া আর কেউ নয়।

.

১১.

রাশিয়ায় তৈরী স্যুট পরে প্যাসেক। ডুরেলকে স্যালুট করলো।

দাদ্রে বলল, লোকটা কি রাশিয়ান। ও কি তোমাকে চেনে?

ডুরেল বলল, আমাকে তো নিশ্চয়ই চেনে। তোমাকেও এবার চিনলো। এমন একটা ভাব দেখাবে যেন নতুন আলাপ। এর জন্যই হয়তো ওকে মেরে ফেলতে হবে।

ওরা দুজন চকিতে পানশালার থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের ধারে পৌঁছে গেলো।

তারপর ডুরেল দাদ্রেকে বিদায় দিলো।

ডুরেল নেপলস ছেড়ে মন্টিক্যাপোলিতে ঠিক সোয়ান্টোর কাছে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করলো। পুরো জায়গাটা মৎস্যজীবীর ডেরা। সে আপাতত সবচেয়ে উঁচুতলার বাড়িটার দিকে এগোতে থাকলো। সারা টবে ফুটে আছে অসংখ্য রঙিন ফুল। নিঃসন্দেহে এইটাই কাউন্ট এ্যাপোলিওর মনোরম বাসস্থান।

প্রথমে ডুরেল পথের মুখে অপেক্ষমান দারোয়ানকে তার নামের স্লিপ দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

প্রবেশ অনুমতি মিলল।

এ্যাপোলিও যেন বলে উঠল, মিস্টার ডুরেল,ভদ্রতাসূচক সাক্ষাৎকারের সময় খুবই সংক্ষিপ্ত। তবে এটা ঠিক, আপনার উদ্দেশ্য আমার জানা আছে। ফিলিবেনো দ্বীপের বুনো বেলারিও বলে যে লোকটির মৃতদেহ জেনেভার লেকে সনাক্ত করা হয়েছে বলে প্রমাণিত তার সম্পর্কে কোন তথ্য

ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই জানি। আপনার বিলক্ষণ শত্রু ছিল লোকটা।

কাউন্ট বললেন, আপনি আমার স্ত্রীকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছেন। এই আস্পর্ধা পরিত্যাগ করে জেনেভায় ফিরে যান। জানবেন এটা ইটালী, আর ইটালী মানেই কাউন্ট এ্যাপোলিওর এক্তিয়ার

ডুরেল বলল, একটিবার অনুরোধ, আমি কেন এসেছি সেটুকু জানবেন কি? ব্রুনোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো একটা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর সেই সঙ্গে চুরি গেছে স্ক্রল পেইন্টিংগুলো।

আপনার কি ধারণা আমি ঐ চোরাই ছবিগুলো কিনেছি।

ঐ ব্যাপারে যতদূর জানি আপনার স্ত্রী আর ট্যালবট দুজনেই যুক্ত

অর্থাৎ কি বলতে চান?

ডুরেল বলল, আপনার স্ত্রী এখন এই মুহূর্তে আপনার এখানেই আছেন, আপনি কি নিশ্চিত?

বিশ্বাস করুন, আপনার স্ত্রীর সমূহ বিপদ।

কাউন্ট বললেন, আপনি এখন আসতে পারেন

ডুরেল বলল, হ্যাঁ আমি যাব। আবার নিশ্চয়ই একদিন দেখা হবেই হবে

ডুরেল আর অপেক্ষা করল না।

.

১২.

সবে লিফট ছেড়ে করিডোরের বাঁকে পা রাখতেই সাইলাসের ফোন: নীচের লবিতে আমি আছি।

তুমি কি একা?

ডুরেল বলল, না। কয়েকজনের সঙ্গেই।

দাদ্রে এসে ডুরেলের হাত চেপে ধরল।

একটু দাঁড়াও

একটু অপেক্ষা কর। নীচে সাইলাস রয়েছে।

সাইলাস। কেন আমার কি কোন কদর নেই স্যাম–তুমি কি চাকরীতে ইস্তফা দিতে পারো না

কোনদিন হয়তো দেবো।

আমি যখন থাকবো না তখন দরজা বন্ধ করে রেখোতাকে বিদায় জানিয়ে ডুরেল নেমে এল।

নৌকাটার কোণে দাঁড়িয়ে ছিল সাইলাস। তারপর দুজনে অদূরে হোটেলে গিয়ে দাঁড়াল।

প্যাসেককে আমরা খুঁজে পাইনি তুমি বিশ্বাস করো। ট্যালবটও হাপিস

এখানেই ওরা দুজনে আছে। কাউন্টেস কি তার ভিলা ছেড়ে চলে গেছে।

সাইলাস বলল, সে ছবির লোকদের সঙ্গে চলে গেছে নৌকো করে, ফিলিবেনো তার স্বামীর কাছে যাবে। দাদ্রে এল জীবন্ত, নিঃশব্দে। ট্যালবটের দেখা পাওয়া পর্যন্ত এক ঘণ্টা কেটে গেলো।

ট্যালবট ভাবল, দাদ্রে যা চেয়েছিল তা পেয়েছে, কিন্তু তার ক্ষমা করা উচিত ছিল কিন্তু সে অক্ষম। ডুরেলকে খুন করতে পারলে সব ল্যাটা চুকে যায়। কিন্তু তার ছবিটা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কোন ঘটনাই ঘটছে না। তাই অপেক্ষা করতে লাগলো।

ফিসফিস করে সাইলাস বলল, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ স্যাম?

হ্যাঁ—

আমাদের স্ক্রলটা চাই–চাই

আমরা কোথায় আছি সে জানে না–এবং সে অপেক্ষা করছেও মেয়েটার জন্য। সীজার তাই। মনে কর তাদের দেখা হলো না–তুমি কি করে জানলে তারা আসবে।

আমার মনে হচ্ছে এখনও সুযোগ হয়নি সীজারকে দেবার মতো। সেন্টসী থেকে ওগুলো নিয়েছে। এবং এ্যাপোলিওর ভিলায় ওগুলো নিয়ে চলে যাবে।

ডুরেল বলল, আমরা যদি না পাই, সীজার ঐ স্ক্রলগুলো লুকিয়ে ফেলে, তাহলে আর এক সপ্তাহের আগে পাবো না। যুবরাজ সুভানা ফঙ কমোডিয়ায় ততদিনে চলে আসবে।

.

১৩.

ঐ পথ ধরে ফ্রানি এগিয়ে এলো। নিটোল নির্জনতায় মগ্ন মদিরতায় ঢাকা সেই মন মন্দিরে। একটিবার তার এ্যপোলিওর কথাও মনে হলো। যা হোক, এখন সীজারের সঙ্গে আজকের ব্যাপারটা পাকাপাকি হয়ে গেলে আর সে কাউন্টের কাছে ফিরে না।

কেন যেন অকস্মাৎ রক্তের প্রবাহ অন্য কথা মনে করিয়ে দিলো। সারা শরীর ছমছম করে উঠলো।

সীজার দার নেই।

নাম ধরে ডাকতে লাগলো সীজার, সীজার, সীজার। কোথাও কোনো অস্তিত্বের চিহ্ন নেই।

এমন সময় ডুরেল পেছন থেকে এসে বলল, সহজ হবার চেষ্টা করো ফ্রান্সি। সীজার কোথায় বলল।

ফ্রান্সিসকার মুখে কোন রা নেই।

আবার ডুরেল বলল, তোমার জানা উচিত ছিল এখানে ট্যালবট তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। একদম চেঁচাবে না–

ফ্রান্সিসকা বলল, জ্যাক কোথায়?

ডুরেল বলল, নীচে বেদির আড়ালে তোমার জন্য সময় গুনছে। তুমি কি সীজারের কাছে এসেছো? ওর হেপাজতেই কি পেইন্টিংগুলো আছে? দ্যাখো ফ্রান্সি আমি তোমার বয়ফ্রেণ্ড সীজারকে চাই না। চাই শুধু পেইন্টিংগুলো

একটা সাংকেতিক শব্দ হঠাৎ-বাজল। কোন দিক থেকে তা বুঝতে পারা গেলো না।

ডুরেল বলে উঠল, সীজারের আবির্ভাব নিশ্চয়ই।

ফ্রান্সি জানাল না। পেছনের দরজা দিয়ে সীজার আসে

ডুরেল বলল, তোমার মরণ অবধারিত ট্যালবটের হাতে। নড়বার চেষ্টা করো না। সহসা নীচে পায়ের শব্দে সব নীরবতা ভেঙ্গে দিল। ডুরেলের দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে এল। মাথায় ওপর বন্দুকের নল। অপরপ্রান্তে ছুটে এসে দেওয়ালে বিধল ধারালো অস্ত্র। ছিটকে গেলো লৌহখণ্ড। জ্বলন্ত সীসার বুলেট।

ডুরেল আচম্বিতে আততায়ীকে প্রবল আঘাতে কাবু করে দিতেই ফ্রান্সিসকা চিৎকার তুলল।

.

১৪.

ডুরেল বলল, তোমার কি হয়েছে সাইলাস?

সে জানাল, যাক, আপতত তুমি যে বেঁচে গেছ। আশ্বস্ত হলাম। তোমাকে একটা বিরাট পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল লোকটা।

কে বলো তো লোকটা?

মনে হয় ট্যালবট।

ডুয়েল বলল, অন্যদিকে থেকে আর-একজন ধারালো ছুরি ছোঁড়ে। হাতের টিপ দারুণ।

সে বলল, মনে হচ্ছে ওটা নির্ঘাৎ সীজারের অস্ত্র। এখান থেকে আমরা এক্ষুনি চলো বেরিয়ে পড়তে চাই। অতঃপর তারা তিনজন এই অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ল।

হঠাৎ ফ্রান্সিসকা বলে উঠল, সত্যি, সীজার যে অবস্থায় আমাকে ফেলে রেখে পালাল ভাবতেই পারছি না–

বীরপুরুষ। ডুরেল বলল–বুঝলে, এই হচ্ছে ইটালীয়ান প্রেমের ধরন।

সবাই এক সঙ্গে অন্ধকার পথ ধরে হোটেলের পথে এগিয়ে চলল।

ফ্রান্সিসকে ডুরেল তার ঘরের নম্বর আর চাবি দিয়ে পনাশালার নির্দিষ্ট কামরায় ঢুকতে যাবার আগে কে যেন তার নাম ধরে ডাকল।

ডুরেল চারপাশে তাকাল।

মেজর প্যাসেক অদূরে দাঁড়িয়ে। বলল, কাত রাতটা মনে হচ্ছে ভালো কাটেনি?

ডুরেল বলল, এমন সময়ে এ জায়গায় কি মনে করে

প্যাসেক বলল, পেইন্টিংগুলো হাতানো গেল না

ডুরেল দেরী না করে তার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো।

ডুরেল তার নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখলো বাথরুমে নগ্ন ফ্রান্সিসকা তোয়ালেতে মুখ মুছছে। বলল, তোমাকে সমুদ্রের পরী বলে মনে হচ্ছে–

সে বলল, এসো না আমরা মিলেমিশে থাকি।

দুজনে দুজনের অতি নিবিড় স্পর্শ ছুঁড়ে দিয়ে ডুরেলই আবার প্রথম কথা বলল, আচ্ছা পেইন্টিংগুলো ঠিক কোথায় বলতে পারো? আর সীজার ওগুলো নিয়ে আসলে কি করতে চায়?

আমার মনে হয় সেগুলো এখন ওর কাছেই। কিন্তু সে কি করবে। আর বেচবেই বা কোথায়?

ফ্রান্সি বলল, কোথায় আর, শেষমেষ কাউন্টের কাছেই আসবে

ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমার সাহায্য পেতে পারি ফ্রান্সি, সীজার কি ফিলিবেনো দ্বীপে যাচ্ছে। আজ কি কাল। তুমি কি স্বামীর কাছে তার আগেই পৌঁছে যেতে চাও

ঠিক এই সময় দাদ্রের আবির্ভাব হল। ফ্রান্সিসকা বলে উঠল, তুমি যা ভাবছো তা নয়। এখানে কাজের কথাই হচ্ছে।

তবুও দাদ্রে ডুরেলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে একপলক চেয়ে রইলো।

দাদ্রে বলল, আশাকরি ফিলিবেনোতে আবার কোন না কোনদিন দেখা হবে

দাদ্রে বলল, মেয়েরা এইভাবে তোমাকে ফেলে পালায়?

ডুরেল হাসল–মনে করো তাই।

গত কয়েক বছর ধরেই তুমি আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে শুধু বলে এলে। সে কি শুধু স্তোক। নাকি আমার সাহায্য পাবার খাতিরে খালি ফিকির।

ফিলিবেনো যেতে আমাকে সাহায্য করে। আর কিছু চাই না। আর চাই কাউন্ট এ্যাপোলিওকে।

দাদ্রেকে জানাল পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ডন এঞ্জেলোকে। ও আমার সব কথাই রাখে। তোমার ফিলিবেনো যাবার সব ব্যবস্থাই নিশ্চিয়ই সে করে দেবে–কারণ, এঞ্জেলো আমাকে প্রায়ই বিয়ে করতে চায়।

ডুরেল পরদিন সকাল ঠিক দশটা নাগাদ এঞ্জেলোর সঙ্গে ফিলিবেনো দ্বীপে পৌঁছে গেছে।

ছোট্ট দ্বীপ। কাছে, দূরে অনেক ছোটখাটো নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। আঙুল দেখিয়ে ডুরেল জিজ্ঞেস করল ঐ যে দূরে যে বোটটা দেখা যাচ্ছে ওটা কি কাউন্টেস-এর?

না। ওটা সীজারের। তাকে নিয়ে সমস্যা নয়। যত ঝামেলা ঐ কাউন্ট এ্যাপোলিও।

এঞ্জেলো চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। জিজ্ঞেস করল, চেনেন নাকি সীজারকে।

হা। গতরাতেই দেখা হয়েছে এ্যাপোলিওর অভিন্ন হৃদয়েষু।

কাউন্টের বাড়ি দূর পাহাড়ের শেষ মাথায়।

ট্যালবট অথবা প্যাসেক কারুর কোন হদিশ নেই। সমুদ্র, পাহাড় তার মধ্যে একদিক দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে। সেই পথ ধরে ডুরেল একা এগুতে থাকলো। আরো কিছুদূরে হাঁটতেই এক সময় সীজারের অতি মনোরম বোটের প্রায় কাছাকাছি এসে পড়লো।

কিছুটা এগিয়ে পেছন থেকে ঢুকে গেলো বোটের ভেতর। স্থলভাগের দিকে একবার তাকালো। না, কোথাও তেমন ভয়ের কিছু নেই।

অথচ গুলির শব্দে আবার চারপাশ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। ডুরেল পেছন দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে ছুটতে আরম্ভ করল। ছুটতে ছুটতে একটা চার্চের কাছে এসে হাঁফ ছাড়ল। দাদ্রে সেখানে কোথা থেকে এল তা মনে করার প্রয়োজন হল না। তারা দুজন দ্রুত সামনে এগুতে থাকল। হঠাৎ প্যাসেকের কণ্ঠস্বর সে শুনলো।

সে পরিত্রাহী দাদ্রের নাম ধরে ডাকছে।

এই যে এদিকে মিস দাদ্রে

তার প্রায় সামনাসামনি ডুরেল থমকে পড়ল। প্যাসেক বলল, কি, আপনাকে যে আজকাল আর বড় একটা দেখাই যায় না।

দাদ্রে তখন ডুরেলকে ফিসফিসিয়ে বলল, এই সেই লোকটা না। নেপলসের বারে যাকে দেখেছিলাম?

বলল, হ্যাঁ, মেজর প্যাসেক। ও সবই জানে। আর তোমাকেও দারুণভাবে নজর রেখেছে। সামনে বাড়িতে চলল। ওটা আমার চেনা জানা

এক বুড়ো ডুরেলকে বলল, দুঃখিত। এটা তো টুরিস্টদের থাকবার জায়গা নয়।

আমি সীজারের কাছে এসেছি।

তা হলে ভেতরে আসুন।

বৃদ্ধ বলল, আপনারা কি পুলিশ দফতর থেকে এসেছেন? আসলে ব্যাপারটা কি, যতই হোক সীজার আমার ভাই।

তাকে আমার বলবার কিছুই নেই। যদিও সে সব ঘটনাতেই লিপ্ত, বুঝতে পারলেন এবার ব্যাপারটা।

বৃদ্ধ বলল, তার মাথায় সবমসয় খুন চেপেই থাকে, খুন আর খুন

ডুরেল বলল, বুঝতে পারলাম। ওর কাছে আপনি কি কোন পেইন্টিং দেখেছেন ওহো, নিশ্চয়ই–এই তত আধঘণ্টা আগেই সীজার তো সেগুলো নিয়ে গেলো। অন্য কোন জায়গায় তোমরা এক্ষুণি লুকিয়ে পড়ো নইলে বিপদ।

ডুরেল বলল, দাদ্রে, আমার এই বুড়োকে বিশ্বাস আছে। অন্তত এই বয়সের লোকেরা মিথ্যে বলবে না। তুমি এখানেই থাকবে আমি না ফেরা অব্দি। বুঝলে, এখন জীবনমরণের দরজা এই বুড়োই।

.

১৫.

পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ফ্রান্সি এগিয়ে চলতে লাগলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে সে সমুদ্র সৈকতে এসে গেলো।

মুহূর্তে আকস্মিক আঘাতে ফ্রান্সি সাদাবালির ওপর লুটিয়ে পড়লো। সে দেখলো, সামনে মূর্তিমান জ্যাক। এখানে তুমি কী করে এলে?

কেন? নৌকায়? জেনে রেখো আজ তোমার শেষ দিন।

জ্যাক বলল, তোমার মতন বেইমান মেয়েমানুষকে আমি দুনিয়া থেকে একেবারে সরিয়ে দেবো। মাটিতে ধরাশায়ী ফ্রান্সির সুবর্তুল স্তনাগ্রে জুতোর কেপ সোলর মারাত্মক চাপ দিয়ে বলল, এখনও সময় আছে। ছবিগুলো কোথায়?

ঝাঁকিয়ে ফ্রান্সি বলল, সীজারের কাছে

সীজারের কাছে–তীব্র ভর্ৎসনা করলো জ্যাক।

প্লীজ জ্যাক, আমাকে তুমি সত্যি মেরে ফেলল। এখন আমি মরে বাঁচতে চাই।

জ্যাক কি মনে করে জানি অত্যন্ত বিচলিত মনে আর কোন দিকে না তাকিয়ে ফ্রান্সিকে পালিয়ে যেতে সুযোগ দিলো।

উলঙ্গ ফ্রান্সি তীরভূমি লক্ষ্য করে ছুটল, সমস্ত শরীর থেকে সহস্রধারায় রক্তকণা ছুটতে শুরু করলো। কিন্তু সে কোথায় যাবে।

অবশেষে এক সময় দুটো পাহাড়ের মাঝখানে সংকীর্ণ একটা জায়গায় এসে ফ্রান্সি দেখলো কোথাও কেউ নেই। এইটুকু জায়গাই আত্মগোপনের জন্য যথেষ্ট। এতক্ষণ পরে বুঝতে পারলো সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ। বুকের ভেতর থেকে একটা চাপা কান্না উঠে এলো। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে সে দুহাত দিয়ে নগ্নতা ঢাকতে চেষ্টা করলো।

.

১৬.

ঠিক সেই সময় ডুরেল ডন এঞ্জেলোর ভিলাতে বসে ছিল।

প্যাসেক বা ট্যালবট কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। একজন উদো পুরুষ শিকারের সন্ধানে পানসী ভিড়িয়ে দিলো।

এঞ্জেলো এক সময় বলল, ঐ লোকটাকে চেনো?

হ্যাঁ চিনি। ডুরেল যেন নিজেকে কাছেই স্বগত করলো।

এই মুহূর্তে ট্যালবট যে পথ দিয়ে চলে গেছে বলে বুঝতে পারলো, ডুরেল ঠিক পরমুহূর্তে সেই দিকে দ্রুত পা বাড়াতেই শুনল বন্য জন্তুর বিকট চিৎকার, না অন্য কোন আর্তনাদ।

সেই দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে ডুরেল পৌঁছল যেখান থেকে আসছে সেই মর্মাহত আতাঁরব।

একি ফ্যান্সিসকা—

ফ্রান্সি শরীরের গোন অংশ কোটরের ফাঁক থেকে আড়াল করে অবিরাম কাঁদতে লাগলো।

আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না। জ্যাক নিশ্চয়ই এতক্ষণ সীজারকে পাকড়াও করেছে।

সীজারকে জ্যাক খুন করবেই, আমাকে তুমি সাহায্য করো।

পেইন্টিংগুলো কোথায় সত্যি করে বলো? সীজারের কাছে কি?

হা।

কাউন্টের কাছে সত্যি বিক্রি করবে তো?

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই করবে।

প্যাসেককে তুমি নিশ্চয়ই জানো?

ফ্রান্সি ঘৃণা ভরা মুখ নিয়ে বলল, ঐ নামে আমি কাউকে জানি না।

ডুরেল বলল, বুঝেছি, এবার আমার পক্ষে তোমার স্বামীর কাছে যাওয়াই উচিত।

কেন?

আর কেন। তোমার স্বামীর কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বলাই ভালো।

ফ্রান্সি বলল, একি বলছো তুমি! আমি সেখানে কি মুখে ফিরে যাবো।

জানি না।

.

১৭.

ডুরেল আর দেরী না করে বেলারিও ভবনের দিকে ছুটে চলল। এখানে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে পেছনের সিঁড়ি ঢুকে পড়লো। ডুরেল কয়েকবার তার নাম ধরে ডাকল, রাফেল। রাফেল

আরো একটা করিডোর পেরোতেই রাফেলকে রক্তাক্ত এবং অচৈতন্য দেখতে পেয়ে শরীরের সমস্ত রোমকূপ খাড়া হয়ে উঠলো। একি!

ডুরেল বলল, কে তোমায় এভাবে মারল। দাদ্রে কোথায়?

একটা পালোয়ান তোমার দাদ্রেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

বুঝেছি। ট্যালবট। সে ছাড়া একাজ আর কেউ করতে পারেনা।

ডুরেল বলল, প্রথম লোকটা কি চাইছিল?

সীজার, সীরাজকে চায় বলেই তো মনে হলো। কিন্তু সে তো এ্যাপোলিওর কাছে গেছে। তারা দাদ্রেকে নিয়ে গেলো কেন?

হ্যাঁ, এবার সব বুঝতে পারছি। ডুরেল বলল, তুমি নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবে। আমি থাকতে পারলে ভালোই হতো। কিন্তু আমার কাজের বড় তাড়া।

ঠিক আছে। শুধু দুঃখ বয়ে গেলো দাদ্রে, আমরা দাদ্রেকে হারালাম।

.

১৮.

অধৈর্যের সঙ্গে কাউন্ট এ্যাপেলিও অপেক্ষা করছেন। ভৃত্য ল্যাম্বার্ডো খবর দেবার পর তাকে নিজের ঘরে চলে যেতে বললনে কাউন্ট।

সীজার বিলম্ব ঘটলেও ঠিক ঠিক এসে পৌঁছেছে পেইন্টিংগুলো নিয়ে।

কাউন্ট স্বাগত জানিয়ে বললেন, পেইন্টিংগুলো ঠিক আছে। সীজার জানালো, হ্যাঁ। সব ঠিক আর নিশ্চয়ই আপনার টাকাটাও প্রস্তুত।

কাউন্ট বলল, ভালো কথা নিশ্চয়ই জেনেভার ব্রুনোকে জানো?

সীজার বলল, জানি বোধহয়।

পেইন্টিং-এর প্যাকেজ খুলতেই কাউন্টের মুখের চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। অপূর্ব! তুলনাহীন! স্ত্রীর প্রতি সীজারের বিশ্বাসঘাতকতার কথা আর মনে হলো না একটিবারের জন্যেও।

সীজার বলল, কি দেখলেন? এবার টাকাটা দেখান

এ্যাপোলিও ড্রয়ার টেনে বার করলো খামভর্তি নোটের তাড়া। তার পাশে একটা হাতীর দাঁতের বাঁট।

সীজার অনুমান করলো সেটা কোনো ধারালো অস্ত্র।

কাউন্ট বললেন, কি, চুপ করে রইলে যে। গুনতে চাও কি?

নিশ্চয়ই। আমি এবং আপনি তো প্রায় একরকমই বলা চলে।

তাই বলে নিশ্চয়ই পরস্ত্রী হরণ করে থাকি না। মুহূর্তে কাউন্ট মরিয়া হয়ে বলে উঠল, তোমার কুকীর্তির জন্যে আমার হাতে তোমার মৃত্যু আজ কেউ ঠেকাতে পারবে না। তোমার ব্রাদার ব্রুনো আমার মনুষ্যত্বকে অনেকদিন আগে খুন করেছে। তুমি আমার স্ত্রীর পবিত্র পতিব্রতাকে খতম করেছে–পার অস্বীকার করতে? আমাকে তুমি একটা উঁচড়ে পরিণত করতে চাও। এ রকমও শুনেছি, ডন স্ক্রলের জন্যে বাজারে ওয়েট করবেন। আপনি তাকে বলেছেন স্ক্রলগুলো চুরি করবার জন্যে আমার সঙ্গে আপনি ষড়যন্ত্র করছেন।

হ্যাঁ। সত্যি সত্যি কি আমাকে খুন করতে চান।

নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন এ্যাপোলিও। তোমার প্ল্যানটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকে স্ক্রলগুলো বিক্রি করে পুলিশকে জানিয়ে বেইজ্জৎ করতে চাও। তাই না?

হা, ওটাই আমার প্ল্যান ছিল ঠিকই

সীজার বলল, সে আমায় ভালোবাসে। এক সঙ্গে বিছানায় রাত কাটিয়ে তার সবটা আমার জানা আছে।

বুঝলাম। এতদিন আলেয়ার মতো কাজ করে গেছে আমার অনুমান। তুমি ছাড়া অন্য কেউ হলে বাধা দিতাম না।

সীজার হেসে উঠলো, আমি বুঝতে পারছি। আমাকে তুমি খুন করতে পারবে না। যেহেতু আমি এক বিছানায় ফ্রান্সির সঙ্গে শুয়েছি। আপনার তাতে বদনামই হবে। এবং পুলিশের কাছে গালগল্প বানিয়ে আমার সব দোষকে খতম করে দেবেন

হ্যাঁ, সব ব্যবস্থাই প্রস্তুত।

কিন্তু আমার সঙ্গে ফ্রান্সিসকার সম্পর্কের কথাটা কাগজে লেখা থাকবে না, সেটা আমার একমাত্র হত্যার কারণ হবে

আস্তে আস্তে বল।

আপনি কি মনে করেন চুপ করে থাকবে ফ্রান্সি।

তুমি কি সন্দেহ করো নাকি। তুমি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে ফ্রান্সি একটা ভালো বউ সেজেই আমার কাছেই থাকবে। সীজার অকস্মাৎ ঘামতে শুরু করলো। আর তাকে উদ্ধত দেখাল না তার পেছনে মাটিতে গড়িয়ে পড়েছেন ডন স্ক্রল। মুখ তুলে সে তাকালো। এ্যাপোলিওর পিস্তল তার দিকে তাহলে একটা ফাঁদই ছিল।

হ্যাঁ। যেমন তুমি ভেবেছিলে আমাকে প্রতারিত করে ছবিটা পুলিশের হাতে তুলে দেবে।

সীজার বলল, বেশ আমাকে তুমি গুলি করো। আমি মারা গেলে ফ্রান্সি আমেরিকানদের কাছে যাবে, অথবা ট্যাবটের সঙ্গে একটা ফয়সালা করবে? যে আদতে প্রথমে চুরি করেছিল।

উঠে দাঁড়ালো এ্যাপোলিও।

সীজার দরজার দিকে যাও। সীজার বুঝতে পারলো সে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গেছে।

সে তখন পিস্তল লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ল এ্যাপোলিও ওপর।

সে লাফ দিতেই তার চোখ কালো বোরটার ওপরে স্থির। এ্যাপোলিও যেখানে টাকা গোনার সময় ছবিটা রেখেছিল। এ্যাপোলিও পালাবার জন্য ডেস্ক থেকে পিস্তলটা হাতে তুলে বেঁকে গিয়েছিল। তখন সীজারের হাতে ছুরি। সে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এ্যাপোলিওর কণ্ঠস্বর সে শুনতে পেলো। যখন ছুরির ফলা তার শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।

ফিরে দাঁড়িয়ে সীজার নিঃশব্দে ঘর থেকে পা মেপে মেপে বেরিয়ে গেলো।

.

১৯.

মিনিট পনেরো পরে ডুরেল এ্যাপোলিওর বাড়িতে এসে গেলো। কিন্ত মহলের ভেতরে একটা চাপা গুঞ্জন ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ্যাপোলিও বাঁ হাত পেটের ওপর আর ডান হাতের তালুতে পিস্তল অনেকখানি ভয়ার্ত করে তুলল অন্ধকারকে। ডুরেল একি দেখছে। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আততায়ী আত্মরক্ষা করেছে।

মিস্টার ডুরেল, কাউন্ট জানালেন, জানতাম না আপনি ফিলিবেনো দ্বীপে অবস্থান করছেন।

ডুরেল তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সীরাজকে চাই

ডুরেলের দিকে তাকিয়ে কাউন্ট বললেন, নিশ্চয়ই পেইন্টিংয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তা হলে আমার সঙ্গে আসুন। কিন্তু একটা কথা।

বলুন

এখন আমার স্ত্রী কোথায়? এবং কেমন আছে?

ফ্রান্সিসকা ভালোই আছে। কিন্তু সীজার এখন কোথায় যেতে পারে?

নিশ্চয়ই বেলারিওদের সেই ভাঙ্গা বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে সে, আমরা সেই আণ্ডারগ্রাউণ্ড পোড়ো জমির মধ্যে পাবই পাবো।

প্রতিটি কথা ডুরেল মন্ত্রমুগ্ধের মতো গিলে যেতে থাকলো। আর তেমনি কাউন্ট তার আহত শরীরটা পাহাড়ের কোল বেয়ে টেনে উঠছে যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দূরে থাক ভাবাই যায় না।

কাউন্ট বললেন, আমার প্ল্যান ভেস্তে গেছে এ যে কি চরম ব্যর্থতা। যা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। ওকে চুরির দায়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মরে গেলেও আত্মার শান্তি হতো

না। ডুরেল বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি। কেন ফ্রান্সিসকাকে কাউন্টেস করেছিলেন?

কাউন্ট আবেগভরা গলায় বলতে লাগলেন প্রথম যুদ্ধের পর যখন আমার বংশে বাতি দেবার আর কেউ রইলো না, তেমন এক নিঃসঙ্গ জীবনের দুযযাগে বাঁচার জন্যে জীবনের ভালোবাসাকে স্রেফ বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই ওকে আলমারীতে সাজিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম কাউন্টেস করে। হ্যাঁ, টাকা, শুধু টাকা, টাকা চেয়েছিল। তাকে তেমনি অগুণতি অর্থ দিয়েছি কিন্তু কিছুতেই এক বিছানায় বিভোর থাকতে পারতাম না। আসলে কেন জানি না মন চাইতো না। তাইতো সে সীজারের সঙ্গে গোপনে প্রেমে মশগুল হয়ে পড়লো।

ফ্রান্সিকে আপনি কি এখনো ভালোবাসেন?

হ্যাঁ, এখনও বাসি।

যাক, আর রক্ত পড়ছে কি?

না। আপাতত এখন ভালোই মনে হচ্ছে–

এখন আপনি হাঁটবেন না–বরং আমি একাই যাই। আপনি শুধু পথের নির্দেশটা দিন। তারপর কাছ থেকে বিদায় নিল।

.

২০.

ডুরেল চলতে শুরু করল সব সংকীর্ণতার আবরণ ভেঙে দুমদাম পা ফেলে। চারদিকে বীভৎসভাবে জমে রয়েছে চুন, বালী, সুরকী। কোথাও কোন প্রাণের সাড়া নেই। জায়গা যত সাংঘাতিক তার থেকেও মৃত্যুফঁদ ততখানি গভীর বলে মনে হতে লাগলো।

তবু দাদ্রেকে তাকে রক্ষা করতেই হবে। একথা ভাবতে ভাবতে দ্রুত এগুতেই হঠাৎ কোন এক অতল গহ্বর ভয়ার্ত রব ভেসে উঠল।

দাদ্রে। আমি এখানে।

ডুরেল চিৎকার তুলতে বিকট বন্দুকের গুলি দেওয়াল বিদীর্ণ করল!

স্যাম এখানে আমি।

-পিস্তল খাড়া করে ডুরেল বলল, জ্যাক। তারপর আবার স্বর তুলল দাদ্রে

চারদিকে থেকে সেই মৃত্যুদূতের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক ধোঁয়া ধুলোবালি সমেত ঘোর আচ্ছন্নতা ঘিরে ফেলতে লাগলো।

সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। শুনতে পাচ্ছে না। সে বুঝতে পারলো আর কোথাও পালাবার পথ নেই। সেখানে পরাক্রম ট্যালবট সামনাসামনি চিৎকার করে ডাকল, ডুরেল। দাদ্রের মাথা আমার রাইফেলের পয়েন্টের মধ্যেই আছে।

ট্যালবট জানালো, পেইন্টিংগুলো। কোথায়? সীজারই বা কোথায়?

ডুরেল বলল, সীজারের কথা বলতে পারি না। কিন্তু প্যাকেট আমার হেপাজতে। আমার কথা কি দাদ্রে শুনতে পাচ্ছে? ট্যালবট বলল, বিলক্ষণ শুনতে পাচ্ছে।

ডুরেল বলল, দাদ্রেকে ছেড়ে দাও।

ট্যালবট বলল, তাহলে আগে তোমার সাইলেন্সারের মুখ নামিয়ে দাও—

ডুরেল কিছুটা শব্দ করে মাটিতে নামিয়ে রাখলো।

ট্যালবট বিশ্বাসঘাতকতার ভূমিকা পালন করতে বিলম্ব করলো না। ট্যালবট তার দিকে রাইফেল উঁচিয়ে ধরতেই ডুরেল পকেটে হাত ঢুকিয়ে ৩৮ বোরের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরলো।

দাদ্রে বলল, স্যাম। পালিয়ে যাও আমার অনুরোধ। শ্বাসরোধকারী মুহূর্তে ট্যালবট প্রাণের আকুলি জানিয়ে উৎকট কাশতে শুরু করতেই সেই প্রাণান্তক অবস্থার সুযোগে ডুরেলের হাতের আঙুলে গর্জে উঠলো ট্রিগার। ট্যালবটের রাইফেল মুহূর্তে ততোধিক পরিমাণে শব্দ তুলতে অন্ধকার আর ধোঁয়ার মধ্যে সমস্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।

প্রথমে আর্তনাদ উঠল ট্যালবটের।

ডুরেল বুঝতে পারলো তার লক্ষ্যভেদ তখন নিখুঁত।

ডুরেল বলল, দাদ্রে তুমি কেমন আছ

খুব ভালো আছি-স্যাম

ট্যালবট তখন মাটিতে পড়ে গুমরে উঠলো মিস্টার ডুরেল, আমাকে এই নোংরা কাজে লাগিয়েছিল শয়তান প্যাসেক। ঠিক সেই মুহূর্তে ডুরেল পিছন ফিরতেই দেখলো মেজর প্যাসেক নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।

.

২১.

প্যাসেক উদ্ভট গলায় বলল, আশাকরি মেহমান এবার বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে নিজেকে সংযত করবেন।

ডুরেল বলল, এ্যালেনকে খুন করেছিল কে?

প্যাসেক জানালো, আমি। সে কথা থাক। এখন পেইন্টিংগুলো কোথায়?

ডুরেল বলল, আমার ঠিকই জানা আছে। যদি কিছু টাকার দরকার থাকে তা এক্ষুনি নিতে পারেন।

প্যাসেক বলল, চুপ করুন।

খানিকক্ষণ নীরবতার পর প্যাসেক ট্যালবটের দিকে চেয়ে বলল, এখন নিশ্চিত এ্যাপোলিওর প্রাসাদেই পেইন্টিংগুলো আছে। শেষ কাজ তোমাকেই শেষ করতে হবে ট্যালবট যেনতেনপ্রকারেণ আমার পেইন্টিংগুলো চাই-ই।

ট্যালবট শুধু তার দিকে তাকালো কিন্তু কোনো কথা বলল না।

আগামীকাল আমরা এখানেই সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকব। তারপর যতদূর জানি সুভানা ফঙের সঙ্গে আমেরিকানদের চুক্তির শর্ত শেষ হয়ে যাবে। তার তারপরই আমার জেনেভা মিশন। আর টিনখনি চুক্তি

ট্যালবট বলল, সবই ঠিক আছে কিন্তু আমি নিজের হাতে ঐ হতচ্ছাড়া লোকটাকে খুন করতে চাই।

প্যাসেক বলল, আর এই যুবতী তন্বীটি কে–চিরকালের মতো ওকেও স্তব্ধ করতে পারলেই আমার পথ চলা সহজ হবে। সুস্থ হয়ে তুমি আবার আগের মতো কাজে নেমে পড়বে। আমি তোমার কাছে চিরঋণী ট্যালবট। আমি ঐ চিত্রকলা নিতে সব সময় রাজী আছি। জেনে রেখো তার জন্য সুইস ব্যাঙ্কে সব রকম অ্যাকাউন্ট বহাল রয়েছে, যা তোমার খুশি রেখে দিও।

এবার ট্যালবট মুখ তুলে তাকাতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না।

সে সব যাক গে। এখন ফ্ৰীমন্ট গোয়েন্দাদের নামগুলো রাখলে দেখি। কোথায় সেগুলো? এ্যালেনের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এসেছিল। এখান থেকে আমি এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে চাই।

অবাক বিস্ময়ে ডুরেল তাকিয়ে দেখলো।

আর দেরী নয়। প্যাসেকের মনের পরিবর্তনের জন্য অনেক আগেই আগ্নেয়াস্ত্র নামিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে কতক্ষণই বা অপেক্ষা করবে। সীজারকে অকস্মাৎ অনেক দূর থেকেই আবিষ্কার করল সে।

একটা শক্তিশালী রাইফেল সীজারের হাতে।

ট্যালবটকে প্যাসেক অবিরাম ফ্ৰীমন্ট গোয়েন্দা দপ্তরের ডাটা দেবার জন্য জবরদস্তি শুরু করলো। নাছোড়বান্দা। ট্যালবটও কিছুতেই রাজী নয় মুখ খুলতে।

এমন সময় একটা জ্বলন্ত অঙ্গারের টুকরো সমস্ত পরিবেশকে এক নাটকীয় দৃশ্যে পরিণত করলো। চিৎকার করে ডুরেল ট্রিগারে আঙ্গুল টিপলো। শেষ করতেই হবে শত্রুকে। এই চরম সুযোগ।

ট্যালবট বলল, আমাকে তুমি নিশ্চয়ই মারবে না।

হ্যাঁ, পতঙ্গের মতো। নামগুলো আমি চাই।

তারা মিলানে আছে।

না, তারা মিলানে নেই।

তোমার পকেটেই খবরগুলো আছে। ওগুলো আমাকে দাও।

ডুরেল জানে যা সার্জেন প্যাসেক মনে করবে তা সে করবেই।

প্যাসেক তাকে আর দাদ্রেকে সম্ভবত ট্যালবটকেও মেরে ফেলতে পারে।

ডুরেলের সঙ্গে ছিল ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। সেই জ্যাকের অস্ত্রটিকে সে প্যাসেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার জন্যে দূরে ছুঁড়ে দিলো।

কিন্তু সে এখানে ছায়ায় ছায়ায় ঢুকে পড়েছে। প্যাসেক ট্যালবটের সঙ্গে কথা বলছিল।

সে সেই ডাটাগুলো চায়।

কেউই সীজারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো না। সীজার দাঁড়াল কেউই দেখলো না। পাহাড়ে হেলান দিয়ে নিজেকে স্থির করলো, বন্দুক ছুঁড়ল তারপর।

প্রথম সাবধান বাণী।

কিন্তু সন্দেহজনক ট্যালবট এটা শুনেছে কিনা।

প্যাসেকের সঙ্গে তর্ক করছিল সেই বিরাট লম্বা লোকটা। ডাটাগুলো যে তার কাছে নেই সেটা প্রমাণ করবার জন্যে সে প্রচুর চেষ্টা করলো।

প্যাসেক তার দ্রুতগামী বিরাট দেহটা কিছুটা নাড়িয়ে সীজারের দিকে গুলি ছুড়লো।

প্যাসেকের তিনটি গুলি লক্ষ্য অনুযায়ী গেলো।

কেবল একবার ডুরেল প্যাসেককে সতর্ক করে দিল।

তারপর তার বন্দুকের গুলি শত্রুদের দিকে বন্দুক নিয়ে প্যাসেক প্রস্তুত, কিন্তু অন্য কোন উপায় ডুরেলের ছিল না। সে একবারই গুলি করলো। দ্বিতীয়বার আর গুলি ছুঁড়তে হলো না।

ডুরেল তার বন্দুকটা নামাল।

দাদ্রে

আমি ঠিক আছি স্যাম।

আমি ভাবতেই পারিনি যে এমন হতে পারে।

যাক গে।

ভুলে যাও ব্যাপারটা।

এস্টান প্যাসেক তাকে পৌঁছে দিলো।

সীজার বলল নিঃশব্দে, আমি মারা যাচ্ছি। প্রথমে এ্যাপোলিও তারপর এই লোকটি আমাকে মেরে ফেলার জোগাড় করেছে–আমি প্রতারিত হয়েছি ফ্রান্সিসকা।

আর কোন বিপদ নেই ফ্রান্সিসকা।

জ্যাক ট্যালবটের পকেট উল্টেপাল্টে দেখলো। তারই পকেটের মধ্যে সেগুলো ছিল।

মিথ্যে কথা বলেছিল ট্যালবট।

ঠিকই ছিল ফ্ৰীমন্ট ডাটাগুলো। এবং ইস্যুরেন্স কাগজগুলো ছিল। কোডচিহ্ন দেওয়া ছিল একটা কালো ডায়েরীর মধ্যে।

পকেট বইটা ডুরেল রাখল। এবং যেখানে দাদ্রে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে গেল। এমনভাবে তার দিকে তাকাল যেন সে একজন বিদেশী স্পাই। সে সম্ভবত সেই সময় তাই ছিল।

কোন কিছু অনুরোধ ডুরেলকে করতে হলো না। আরো কিছুক্ষণ বাদে পেন্টিংগুলো ফেরৎ দিয়ে দিল তাকে অতি অনায়াসে।

জিজ্ঞেস করল ডুরেল, কেমন আছেন এ্যাপোলিও?

আগের চেয়ে এখন ভালোই আছেন।

চোখর পাতা বন্ধ করে কাউন্টেস বলল, এখন আমি সেই বিশ্রী ফুলের মতো পাকরী। আর কেউই আমাকে ভাল মনে ঘরের আলমারীতে তুলে রাখবে না।

ডুরেল বলল, কেন চেষ্টা করে দ্যাখো। তাকে তো ফিরেও পেতে পারো।

সে উত্তরে বলল, দেখি, তোমার কথাটা হয়তো ফলেও যেতে পারে।

ডুরেল তারপর পরিধান অতি দ্রুত পাল্টে পেন্টিংয়ের প্যাকেটটা নিয়ে একেবারে দাদ্রের পাশে বসলো।

রওনা হবার একরকম সব প্রস্তুতি পর্ব শেষ।

সত্যি কি তুমি যাচ্ছো স্যাম?

না, যাবার মুখে

তোমার কি সব কাজ শেষ

ডুরেল বলল, হ্যাঁ। সবই প্রায় শেষ।

প্রথম কোথায় যেতে চাও।

কোথায় আর! ছকেবাঁধা জীবন। ওয়াশিংটন নির্দেশ দিলেই রাজী। পা বাড়ালেই রাস্তা।

দাদ্রে বলল, আমি সেইদিন সব চেয়ে বেশী সুখী হবো যদি কখনো তোমার পাশে থেকে সাহায্য করতে পারি। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো স্যাম।

চলো। নিয়ে যাই এখান থেকে।

.

২২.

হোটেল কন্টেকোপালতে বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া। ডুরেল তার ঘরে ফিরে গেল।

ডুরেল ভোরের আলো না ফুটতেই জেনেভাতে ফোন করে প্রিন্স সুভানাকে পেন্টিং উদ্ধারের কাহিনী বর্ণনা করতে ভুললো না। আপতত টিনখানি চুক্তির স্বাক্ষর আর কোনো দ্বিধা সংশয় থাকবার কথা নয়।

খানিক পরে ডুরেল দাদ্রেকে সঙ্গে করে এ্যাপোলের কাছে গেলো।

ডুরেল আবেগ পুলকিত শিহরণে দাদ্রেকে উত্তেজিত করে তুললো।

মুহূর্তের মধ্যে ডুরেল বলল, যাই এক্ষুণি আবার দেখা করতে হবে হ্যানসনের সঙ্গে।

নেপলস্ থেকে লোকটা ট্রেনে বোম, রোম থেকে সোজা জেনেভা।

সর্ব প্রথম সুভানার সঙ্গে দেখা করে তার চিত্রশিল্পগুলোকে ফেরত দিতে হবে।

ডুরেল বলল, দাদ্রে, এখন আমায় ছেড়ে দাও। বিশ্বাস করো লক্ষ্মীটি, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি

স্যাম আমার কাছে এইটুকুই যথেষ্ট।

আর কোন উত্তর দিল না ডুরেল।

ডুরেল বলল, আমরা নিশ্চয়ই আবার এক সঙ্গে মিলতে পারবো।

এখন আর কোন কথা নয়।

সমস্তই বিস্তারিত বিবরণ লিখে পাঠাতে হবে ওয়াশিংটনে। আর কতক্ষণই বা সময় লাগবে ক্রীমন্ট গোয়েন্দা সংগঠন আর কে সেকসনের লোকদের নতুন করে ঘোর পাল্টিয়ে আনতে। তারপর, সুস্থ জীবনে চর্যাপদ উঠে আসবে দিনের মধ্যেই। তারপর শুধু ব্রুশ, দাদ্রে আর বুশ।

তারা একসময় পাশাপাশি দুজনে রোম স্টেশনের দিকে এগুতে থাকল। আর এই এলো বলে রোমের ট্রেন।

Previous Post

সেভেন ডায়ালস মিস্ট্রি – আগাথা ক্রিস্টি

Next Post

স্পার্কলিং সায়ানাইড – আগাথা ক্রিস্টি

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

No Result
View All Result
  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
Next Post
স্পার্কলিং সায়ানাইড - আগাথা ক্রিস্টি

স্পার্কলিং সায়ানাইড - আগাথা ক্রিস্টি

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Go to mobile version