- বইয়ের নামঃ স্ক্যাণ্ডাল ইন সোরোন্টো
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই
স্ক্যাণ্ডাল ইন সোরোন্টো
১. সবটা বাজে ভাবে ঘটল
০১.
সবটা বাজে ভাবে ঘটল শুরুতেই।
প্রায় চার ঘণ্টা দেরী করল পশ্চিমগামী প্লেনখানা। ২০৪ প্যানআম ফ্লাইট ব্যাংকক থেকে আসছে। ইতিমধ্যে প্রায় সন্ধ্যে আটটা নাগাদ ডুরেল জেনেভাতে পৌঁছে গেল।
দেখতে দেখতে গোটা বিমানবন্দর দূরপাল্লার আরোহীদের ভিড়ভাড়াক্কায় ছয়লাপ। অতিথি অভ্যর্থনা আর বিদায় সম্বর্ধনার মধ্যে এক সময় ডুরেল ডিপ্লোম্যাটিক পাশপোর্ট দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, যেখানে অ্যান্টন প্যাসেক অপেক্ষা করছিল।
কে জানে কার জন্যে।
মোটেই এড়াবার ছিল না ব্যাপারটা।
হয়তো প্যাসেকও ডুরেলের মতোই, দুজন দুজনের কাছে অতি বিস্ময়কর প্রাণী।
ডুরেল হাল্কাচালে, জনাকীর্ণ এয়ারটার্মিনালের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে লাগল।
প্রথমে এক কাপ এসপ্রেসো কফি বানাতে বলে পাশের স্টেশনারী কর্নার থেকে কয়েক প্যাকেট আমেরিকান সিগারেট কিনল।
একটিবারের জন্যেও ডুরলে ফিরে তাকিয়ে দেখল না যে প্যাসেক তখনও তার প্রতি নজর রাখছে, কিন্তু অতীব উদাসীন, এবং অতি নিকটে পায়ে পায়ে তাকে প্রায় ধরে ফেলেছে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়।
কিন্তু কেন? কে. জি.ডব্লু-র লোকেরা কি আদৌ তার জন্যে এরায়পোর্টে অপেক্ষা করছে কিংবা অনুসরণ! আশ্চর্য, কিন্তু একটা মিনিটও ডুরেল সেরকম কোন কিছুই ভাবল না, কারণ তাহলে প্যাসেক আরো নিজেকে সতর্ক রাখত।
কেননা, তাকে চিনতে সে ভুল করেনি; যেহেতু তার দুজনই কোন এক সময়ে বহুকাল যাবৎ একই ব্যবসায় লিপ্ত। হঠাৎ, একসময় সে পাবলিক টেলিফোন থেকে বেপরোয়া ডায়াল ঘুরাতে লাগল। একষট্টি একান্ন একষট্টি।
অপেক্ষা করতে লাগল। অপরপক্ষের কোন এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
খানিক এদিক-ওদিক তাকিয়ে ডুরেল বলল, ব্যাংকক থেকে মোড়কটা এখানে এসে পৌঁছে গেছে।
তারপরই খানিক নীরবতা নিঃশ্বাসে হিস হিস তুলল।
স্যাম
ঠিকই ধরেছ–তোমার প্লেন দেরী করেছিল?
এ্যালেন জিজ্ঞেস করল, তুমি কেমন আছ স্যাম? জলদি এসে গেছ?
ডুরেল বলল, ভালো আছি। তুমি কেমন?
সে বলল, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করে বসে আছি। সময় এক্কেবারে নেই। তুমি এসে গেছ স্যাম, তুমি যে আসতে পেরেছ, এযে কি আনন্দ
ডুরেল বলল, তোমার কি মনে হয় এটা একটা ক্রোশ জয়? তোমার কি তাই ধারণা-সে উত্তরে জানাল।
ডুরেল দেখল টেলিফোন ঘরের জানালা বারাবর প্যাসেক হাঁটছে।
ডুরেলের কঠিন চোয়াল সহসা মারাত্মক কঠিন হয়ে উঠল। অতি দ্রুত রিসিভার নামিয়ে রাখতে তৎপর হলো।
এ্যালেন বলল, সেবার জেনেভাতে গিয়েছিলাম, আমাকে তোমরা আশা করোনি, আমি কখনো দেখিনি। অথচ কি মজা।
ডুরেল বলল, প্যাসেক আমার পিছু নিয়েছে।
এ্যালেন বলল, কে? কি বললে?
ডুরেল বলল, মেজর এ্যাণ্টন প্যাসেক। আমস্টারডমে ববি লঙঔমকে যে খুন করেছিল?
মনে পড়ে? সে একজন পাক্কা মাস্টার প্ল্যাস্টার।
এ্যালেন বলল, সে কি তোমাকে দেখেছে?
ঠিক ধরতে পারছি না।
হঠাৎ, অতি দ্রুত টেলিফোন ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য পথ ধরল।
প্যাসেক সেখানে নেই। বুঝতে পারল সে, আপতত কেউই আর অনুসরণ করছে না।
ডুরেস টার্মিনাল রেস্তোরাঁয় ঢুকে আরো কিছু সময় কাটাবার জন্যে অবিরত মেনু উল্টে-পাল্টে দেখতে থাকল। কেননা সময় খরচের জন্যেও একটা খরচ আছে। হ্যাটব্যাকের আয়নায় নিজের চেহারা যেন নতুন করে দেখালো। এ হেন ডুরেল, এখন ওয়েটারের সঙ্গে কিছু কথা বলল। তারপর নিঃশঙ্ক একটা ট্যাক্সির দরজা খুলে ড্রাইভারকে নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলে দিল। হোটেল ডি লা প্যাকস।
ডুরেল এতক্ষণ বাদে ভাবতে পারল সে মুক্ত, পরিপূর্ণ নিঃশ্বাস ফেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।
ডুরেল একসময় ট্যাক্সি থেকে নেমে সোজা হোটেল ডি লা প্যাকসের প্রথম লবিতে এসে থামল। তারপর আবার কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে অন্য আর-একটা ট্যাক্সি ধরে ডানদিকে মোড় ফিরল। রুস্তা-লার মধ্যপথ ধরে সোজা চলে গেলে গ্র্যাণ্ড থিয়েটার।
এখন, নিজেকে পরিপূর্ণ মুক্ত বোধ করল।
খবর বিনিময়ের প্রধান এবং বিশ্বস্ত জায়গা গ্যালারী চেক হল সিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আর সেই কাজে এ্যালেন একমাত্র সহচর অতি পরিচিত দোসর। আঁকাবাঁকা পথ ধরে ডুরেল এগোতে থাকল। আর কয়েক পা পেরোলেই গ্র্যাণ্ড রু-র। তার খুব কাছেই আর্ট শপ অর্থাৎ শিল্পবিপণী। ডুরেল হাঁফ ফেলল। আর্ট শপের ওপরেই এ্যালেনের কামরা। দোকানের দিকে ডুরেল তাকাল।
কিন্তু, কি আশ্চর্য, এত সাতসকালে, সন্ধ্যে উত্রাল না, অথচ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। কিন্তু হৈ-হল্লার অন্ত নেই। সেই মাতোয়ারা উদ্দীপনার মধ্যে ডুরেল সবুজ কাঠের একটা দরজা বন্ধ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল।
না, সবই ঠিক আছে। একটা সঙ্কেতেই এ্যালেন দরজা খুলে বাইরে এসে হাত বাড়াল।
ওঃ। তোমাকে দেখে যে কি আনন্দ হচ্ছে
তোমাকে দেখে আমারও-প্যাসেক সম্বন্ধে কি ভাবছ?
সব জায়গায় খবর দিয়েছি। দেখি কতদূর কি হয়–যাইহোক তোমাকে এরা যে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে, আমি খুব খুশি হয়েছি
কিন্তু ব্যাপারটা আসলে কি জানো?
কি?
আমি কেবল প্রিন্স সুভানা ফনের আর্থিক মিশনকেই সাহায্য করছিলাম, কিন্তু চেকরা এতই সন্দেহ করছে যার জন্য প্যাসেক এয়ারপোর্টে হত্যে দিয়েছে, আমি তো বুঝতেই পারছি