- বইয়ের নামঃ সেভেন ডায়ালস মিস্ট্রি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
সেভেন ডায়ালস মিস্ট্রি
১. ভোরে ওঠার ব্যাপার
হাসিখুশী জিমি থেসিজার আজও দেরি হয়ে যাওয়ার জন্য দুটো সিঁড়ি টপকে প্রায় লাফাতে লাফাতে ঘরে এসে ঢুকতেই ধাক্কা খেলো বাটলার ট্রেডওয়েলের সঙ্গে।
ঘরে তখন কেবল বসেছিলেন গৃহকত্রী লেডি কুট। তার মুখে বিরক্তির ছাপ। দেরি করে প্রাতঃরাশ সারা তাঁর মোটেই পছন্দ নয়। বিয়ের প্রথম দশ বছর স্যার অসওয়াল্ড কুট প্রাতঃরাশ আটটার আধ মিনিট দেরি হলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করতেন। সেই থেকে এটা একটি নিয়মের মধ্যে হয়ে গেছে। দেরি করে প্রাতঃরাশ করা লেডি কুটের কাছে মারাত্মক অপরাধের সামিল।
খুব অল্প বয়সে লেডি কুট ছিলেন ভারী সুন্দর। ভারিক্কি গুরুগম্ভীর চেহারা। স্বামী-স্ত্রীর সুখেই দিন কেটেছে। অসওয়াল্ড কুটের যখন ধীরে ধীরে উন্নতি হলো তখন সারা ইংল্যান্ডের মধ্যে বিখ্যাত এই চিমনি নামের প্রাসাদটি দুবছরের জন্য ভাড়া করলেন। স্যার অসওয়াল্ড বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন–মার্কুইস অব কেটারহ্যামের কাছ থেকে। তার পরেই তার আশা-আকাঙ্ক্ষায় যবনিকা পড়েছে।
লেডি কুট যেন একাকীত্বে ভোগেন, প্রথমে তার সময় কাটতো মেয়ের সঙ্গে কথা বলে। এখন তো অনেক লোক। পাত্রীর মত বাটলার, বাড়ির দেখাশোনার জন্য বিশাল দেহের এক মহিলা, ফাইফরমাস খাটার জন্য বেশ কয়েকজন চাকর। তিনি যেন বানের জলে দ্বীপে আটকা পড়া একজন।
চেয়ার ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন লেডি কুট। জিমি থেসিজার হাঁফ ছেড়ে খাওয়ায় মন দিলো।
খাওয়া শেষ করে জিমি এসে দাঁড়ালো বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা লেডি কুটের পাশে।
–বাকিরা কোথায় গেল? নৌকা চড়তে? জিমি জানতে চাইলো
–সম্ভবতঃ তাই। দ্বিতীয় প্রশ্নের অপেক্ষায় না থেকে তিনি ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
সামনে ট্রেডওয়েলকে দেখে জানতে চাইলেন, মিঃ ওয়েড প্রাতঃরাশ করতে নিচে নেমেছেন কিনা? আদৌ নামবেন কিনা সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করলেন।
নিশ্চয়ই মাদাম। উনি নামবেন। ট্রেডওয়েল জবাব দিলো। গতকাল উনি সাড়ে এগারোটায় নেমেছিলেন।
এই মুহূর্তে চশমাপরা এক যুবক ঘরে এসে ঢুকলো।
লেডি কুট দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে গেলেন।
অন্য দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়ে স্যার অসওয়ার্ল্ডের প্রাইভেট সেক্রেটারি রিউপার্ট বেটম্যানের সঙ্গে জিমির দেখা হয়ে গেলো। ও একটু মাথা ঝাঁকিয়ে লাইব্রেরির দিকে চলে গেল। বেটম্যানের ডাকনাম পঙ্গো।
জিমি অলস পায়ে লেকের দিকে এগোতেই তিনজনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। হেলেন, যার স্বভাব-কথায় কথায় হেসে ফেলা, দ্বিতীয় জন হলো ন্যান্সি, বাকি মেয়েটিকে শকস নামে ডাকা হয়।
-হ্যালো জিমি। ন্যান্সি বলে উঠলো। কিন্তু সে কোথায়?
–এখনও বিছানা ছেড়ে ওঠেনি জেরি ওয়েড? কিছু একটা না করলেই নয়। বিল এভারসলে বলে উঠলো।
–এরপর কোনদিন দেখবে ওর সকালের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ফোড়ন কাটলো রনি ডেভোরো।
–চলো ওকে বিছানা থেকে চ্যাংদোলা করে টেনে তুলি। বিল প্রস্তাব দিলো।
তার চেয়ে ওর গায়ে কবালতি ঠান্ডা জল ঢেলে দিলে কেমন হয়? জিমি মত প্রকাশ করলো।
কিন্তু ঠিক কি করা উচিত সেটা ওরা ভেবে ঠিক করতে পারলো না। সবাই মিলে এলো পঙ্গোর কাছে। সে এই দিকেই এগিয়ে আসছিলো।
সমস্যাটা গম্ভীর মুখে শুনে পঙ্গো বললো–ঘুম ভাঙাতে যার জুড়ি নেই সেই অ্যালার্ম দেওয়া ঘড়ি চাই। পঙ্গো অপেক্ষা না করে চলে গেল।
পঙ্গোর কথাটা সকলের মনে ধরলো। তার মানে একডজন ঘড়ি লাগবে জেরির ঘুম ভাঙাতে। বিল আর রনি ঘড়ির খোঁজে বেরিয়ে পড়তেই জিমি খাওয়ার ঘরে উঁকি মেরে দেখলো, জেরি গোগ্রাসে মার্মালেড আর টোস্ট খাচ্ছে। কিন্তু ও যাতে ওদের দলে এসে না ভেড়ে তার পরিকল্পনা শুরু হলো আবার।
আলোচনা অনুযায়ী ওরা লেডি কুটকে সব জানালো
-জেরিকে নিয়ে তোমরা মজা করতে চাও? বেশ, কিন্তু দেখো, কোনো জিনিসপত্রের কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সামনের সপ্তাহে লর্ড কেটারহ্যামকে বাড়িটা ছেড়ে দিতে হবে। লেডি কুট বললেন।
-না না, আপনি চিন্তা করবেন না। বিল বলে উঠলো। লর্ড কেটারহ্যামের মেয়ে বান্ডল ব্রেন্ট আমার খুব বন্ধু।
জেরি ওয়েড প্রাতঃরাশ সেরে বেরিয়ে এলো।
সুপ্রভাত লেডি কুট। জেরি বললো, বাকিরা কোথায়?
–মার্কেট বেসিং-এ গেছে। নিস্পৃহ গলায় উত্তর দিলেন লেডি কুট।
এই সময় সেখানে?
–মজা করতে।
–এত সকালে মজা, আশ্চর্য।
–এখন আর সকাল নেই, আর…
–আজ আমার একটু দেরি হয়ে গেছে। একটু হেসে জেরি বললো, তাই বলে আমি কুড়ে নই। সকাল এগারোটাতে আমাকে পররাষ্ট্র দপ্তরে হাজির হতে হয়।
এদিকে দোকানদার বেশ কয়েকটা অ্যালার্ম দেওয়া ঘড়ির প্রয়োজন জেনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।
দোকানের মালিক মিঃ মার্গাটরয়েড ওদের বোঝালেন একটু দামী জিনিষই ভালো।
–না, আমাদের দামী জিনিষের প্রয়োজন নেই। কাজে লাগলেই হলো। ন্যান্সি বললো।
–কেবল একদিনের জন্য দরকার। হেলেন বলে উঠলো।
জিমি সবকটা ঘড়ি অ্যালার্ম দিয়ে একসঙ্গে বাজাতে শুরু করলো। সেই আওয়াজ কান পাতা দায় হয়ে উঠলো।
ঘড়িগুলো পকেটে নিয়ে সবাই ফিরে এলো।