ঘর খালি। ঘরটি বেশ বড়ো। তিনদিকে তিনটে জানলা। বারান্দার দিকে সব জানালাই খোলা। মাঝখানের জানালাটার খিল খোলা।
সে সেটা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে সজাগ দৃষ্টিতে চারপাশ দেখলো। না, কিছুই নেই।
মুহূর্ত খানেক পর আবার লাইব্রেরিতে ঢুকলো। দরজার তালা বন্ধ করে চাবি নিজের কাছে রেখে আলো নিভিয়ে কান পেতে রইলো, চট করে খোলা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
খুব হালকা পায়ে চলার আওয়াজ বারান্দায় শোনা যাচ্ছে?
না, কিছুই নেই। এটা কি তার কল্পনা মাত্র।
রাত দুটো বাজার ঘন্টা পড়লো।
.
বান্ডলের অ্যাডভেঞ্চার
বান্ডল ব্রেন্ট যেমন বুদ্ধিমতী তেমনি কল্পনাশক্তি প্রবল। সে বুঝতে পেরেছিল, বিল এই রাতের বিপজ্জনক কাজে ওকে অংশ নিতে দেবে না। তাই আগে থেকে নিজের মনে পরিকল্পনা করে রেখেছিল। সে তার শোবার ঘর থেকে বাড়ির বাইরেটা এ ঝলক দেখে নিয়েছিল। ওর ঘরের জানলার পাশে চমৎকার আইভি লতার ঝোঁপ রয়েছে, সেইরকম লতার অ্যাবী সাজানো আছে।
বিল আর জিমির কাজে বাধা দেওয়ার কোনো কারণ সে খুঁজে পায়নি। ওদের দুজনকে যে এত সহজে বোকা বানাতে পারলো সেটা ভেবে ও মনে মনে অবাক হলো।
সে নিজের ঘরে এসে চট করে সান্ধ্যপপাশাক ছেড়ে পরে নিলো একটি পোশাক যেটি সে স্যুটকেসে করে নিয়ে এসেছিলো। ঘোড়সওয়ারের ব্রিচেস, রবারের সোলের জুতো আর গাঢ় রঙের একটা পুলওভার পরে বান্ডল তৈরি হয়ে নিলো। রাত একটাতে কাজ শুরু করবে সেটা সে আগেই ভেবে রেখেছিল। কারণ ততক্ষণে সকলে ঘুমের মধ্যে ডুবে যেতে পারবে।
নির্দিষ্ট সময়ে সে জানলার কাঁচ তুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। বিড়ালের মতো গাছে উঠতে বান্ডল অভ্যস্ত। তাই নিঃশব্দে কিছু ফুলগাছের ঝোঁপের ওপর সে লাফিয়ে পড়লো।
পশ্চিম দিকের ঘরে আছেন বিমানমন্ত্রী আর তার সেক্রেটারি। বাড়ির দক্ষিণে আর পশ্চিমে একটা লম্বা বারান্দা আছে।
বাড়ির ছায়ার আড়ালে নিজেকে গোপন রেখে সে পায়ে পায়ে দক্ষিণের বারান্দার দিকে এগোলো। দ্বিতীয় কোনটা পার হতেই সে বাধা পেলো। সামনে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ, সে তার পথ রোধ করতে চায়।
বান্ডল চিনতে পারলো।
–সুপারিন্টেন্ডন্ট ব্যাটল, আমাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছেন।
–সেইজন্যই এখানে রয়েছি।
–আপনি এখানে কি করছেন?
–যাদের বাইরে আসার কথা নয়, তারা যেন না আসে, সেটা দেখছি। যেমন আপনি, আশা করি এত রাতে আপনি যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবেন না?
–আপনি আমাকে ফিরে যেতে বলেছেন? বান্ডল বললো। ভাবছিলাম একটু পশ্চিম দিকটায় যাবো। না যেতে পারলে বড় মন খারাপ হয়ে যাবে।
বেশ তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে ব্যাটল, লেডি এইলিন। আপনি জানলা দিয়ে না দরজা দিয়ে বাইরে এসেছেন?
–জানলা দিয়ে। আইভি লতা বেয়ে সহজেই নিচে নেমেছি।
এবার আপনার পক্ষে শুতে যাওয়াই মঙ্গল, লেডি এইলিন দৃঢ়তা স্পষ্ট। বান্ডল হতাশ হয়ে পেছন ফিরে হাঁটতে শুরু করলো। আইভি লতা বেয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো, আচ্ছা সুপিরন্টেন্ডেন্ট ওকে সন্দেহ করবে না তো?
অবশ্য ব্যাটলের হাবভাব সেটা বেশ স্পষ্ট। জানলার কার্নিসে পা রেখে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আপন মনে হেসে উঠলো। উনি ওকে সন্দেহ করেন এর চেয়ে মজার ব্যাপার আর হয় না।
বিছানায় শুয়ে ঘুমোনোর মেয়ে বান্ডল নয়। আবার অন্যদিকে যখন কোনো দুঃসাহসিক আর উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটতে চলেছে তখন চুপচাপ বসে থাকার মত মেয়ে সে নয়।
ঘড়িতে তখন দুটো বাজতে দশ মিনিট বাকি। কয়েক মুহূর্ত কি ভেবে চুপচাপ দরজা খুললো। নিঃশব্দে বারান্দা দিয়ে এগোলো।
যেতে যেতে একটু থমকে দাঁড়ালো। কিসের যেন আওয়াজ আসছে। পরক্ষণে কিছু নয় ভেবে আবার পা বাড়ালো। এবার প্রধান বারান্দায় উঠে পশ্চিম দিকে চললো। ঠিক এখানেই কিছু একটা সামনে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল।
জিমির তো এখানে থাকার কথা। কিন্তু ও গেল কোথায়?
রাত দুটো বাজার ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পেলো তখনই।
কি করবে ভাবছে এমন সময় তার হৃদপিণ্ড ছলাৎ করে লাফিয়ে উঠলো। টেরেন্স ও’রুরকের ঘরের দরজার হাতলটা আস্তে আস্তে খুলতে শুরু করেছিল।
সে নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ করে হাতলটার দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু দরজাটা খুললো না। হাতলটা আবার নিজের জায়গাতেই ফিরে এলো। এ সবের মানে কি?
বান্ডল আচম্বিতে সচেতন হলো। জিমি যে কারণে হোক ওর জায়গা ছেড়ে চলে গেছে। বিলকে ডাকতে হবে।
সে দ্রুত পায়ে বিলের ঘরে চাপা স্বরে বিলকে ডাকতে লাগলো। কয়েকবার ডাকার পর বিলের সাড়া না পেয়ে আলো জ্বালালো। একি বিছানা খালি! বিল কোথায় গেল তাহলে?
হঠাৎ খেয়াল হলো সে ভুল করে অন্য ঘরে ঢুকে পড়েছে। কারণ পাতলা রাত্রিবাস, টুকিটাকি মেয়েলি জিনিষ পড়ে আছে। কালো ভেলভেটের কিছু পোশাক ড্রেসিং টেবিলে রয়েছে বুঝতে অসুবিধা হলো না, এটা কাউন্টেস র্যাডকির ঘর। কিন্তু তিনিই বা কোথায়?
বান্ডল হতভম্ব হয়ে ভাবতে লাগলো। ঠিক সেই মুহূর্তে নিচ থেকে উঠে আসা গোলমালের আওয়াজে তার সম্বিত ফিরে এলো।
শব্দ লক্ষ্য করে বান্ডল দ্রুত নিছে নেমে লাইব্রেরির দিকে ছুটলো, কেউ যেন প্রচণ্ড শব্দে চেয়ার টেবিল আছড়ে ফেলছে।
লাইব্রেরির দরজা বন্ধ। দরজায় আঘাত করলো। খুললো না। ভেতরে লড়াই যে ভালো চলছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না বান্ডলের।