সাড়া পেয়ে কাউন্টারের ওপর কাগজটা নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াল সে। চশমার ভারি লেন্সের ওপাশ দিয়ে গভীর কৌতূহলের সঙ্গে তাকাল ওদের দিকে। ভঙ্গি দেখে মনে হয় যেন বহুদিন বাদে এই প্রথম মানুষ চোখে পড়েছে।
আপনিই মিস্টার হ্যারি? জানতে চাইল কিশোর।
হ্যাঁ, খসখসে গলায় জবাব দিল লোকটা, কি সাহায্য করতে পারি?
ব্ল্যাকহোলটা কতদূরে, বলতে পারেন?
চোখ বড় বড় হয়ে গেল হ্যারির, ব্ল্যাকহোল! ওখানে যাওয়ার জন্যে এসেছ নাকি?
হ্যাঁ, গুহার কাছে ক্যাম্প করতে চাই।
কাউন্টারের ওপর ঝুঁকে সামনের দিকে গলা বাড়িয়ে দিল হ্যারি। ক্যাম্প করবে? ব্ল্যাকহোলে?
কেন, অসুবিধে আছে নাকি?
আনমনে মাথা নাড়তে নাড়তে জিজ্ঞেস করল লোকটা, এখানে এই প্রথম এলে নাকি?
হ্যাঁ, রকি বীচ থেকে। বেড়াতে বেরিয়েছি।
শিপরিজ বেড়ানোর জন্যে খুব ভাল জায়গা।
গুহাটা কতদূরে, বলেননি কিন্তু।
এই রাস্তা ধরেই চলে যাও পাঁচ মাইল। তারপর খানিক হাঁটতে হবে।
কাউন্টারে কনুই ঠেকাল মূসা। বার্গার আছে নাকি?
আছে,হ্যারি বলল, খুব ভাল বার্গার। তাজা। তাজা জিনিস ছাড়া বেচি আমি।
দিন তাহলে। তিনটা।
প্লেটে করে বার্গার এনে দিল হ্যারি।
বার্গারের কাগজের মোড়ক ছাড়াতে ছাড়াতে জিজ্ঞেস করল রবিন, গুহার কাছে ক্যাম্প করার জায়গা আছে নাকি?
আছে। কাছেই একজন জেলে থাকে, নাম রিক ভেলভার। খাতির করে নিতে পারলে ওর বাড়ির কাছে তোমাদের থাকতে দেবে সে। তোক ভাল। গুহার কাছে না গিয়ে ওর বাড়ির কাছাকাছি থাকলেই ভাল করবে। এক মুহূর্ত বিরতি দিয়ে মুখ খুলল হ্যারি, আমি হলে অন্তত ওই গুহার কাছে ক্যাম্প করতে যেতাম না কিছুতেই।
শুধু ক্যাম্প করা নয়, আমরা তো ভাবছি গুহাটাতেই ঢুকব।
পাগল! ঢোক গিলল হ্যারি।
কেন, বেআইনী নাকি?
না। তবে সুস্থ মস্তিষ্ক কোন লোক এখন আর ওই গুহায় ঢুকতে চাইবে না।
কেন?
বললাম তো, মাথা খারাপ না হলে ওই গুহায় ঢোকার কথা ভাববে না কেউ, এমন ভঙ্গি করল হ্যারি, যেন এতেই সর প্রশ্নের জবাব হয়ে গেছে।
আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না! রবিন বলল।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, গুহায় ঢোকাটা বিপজ্জনক নাকি?
নাহলে এত কথা বলব কেন? আমার পরামর্শ শুনলে, ওই গুহার ধারেকাছে যেয়ো না।
কাউন্টারে কনুই রেখে অধৈর্য হয়ে বলল রবিন, দয়া করে কারণটা কি আমাদের খুলে বলা যায়?
এক মুহূর্ত চিন্তা করে নিল হ্যারি। বেশ, না শুনে যখন ছাড়বে না..ইদানীং অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটছে গুহার মধ্যে।
এইবার টনক নড়ল মুসার। খাড়া করে ফেলেছে কান। বার্গার চিবানো বন্ধ হয়ে গেল। খাইছে! ভূত নাকি?
তা বলতে পারব না, মাথা নাড়ল হ্যারি। কয়েক দিন আগে আমার পরিচিত এক জেলে গিয়েছিল গুহার কাছে। এত ভয় পেয়েছিল, আরেকটু হলে হার্টফেল করেই মরত বেচারা। নেহাত হাটটা শক্ত আর নীরোগ বলে বেঁচে গেছে। গুহার ভেতরে আর আশোঁপাশে নাকি আজব আলো দেখা যায়, শব্দ শোনা যায়, গোলাগুলি চলে।
গোলাগুলি! ভুরু কুঁচকে ফেলল কিশোর।
হ্যাঁ। দুজন অতি উৎসাহী লোক গুহার আলোক-রহস্য জানতে গিয়েছিল, তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। আততায়ীকে দেখতে পায়নি ওরা।
কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো মুসা, আর যাই করুক, ভূতে গুলি ছোড়ে না। গলা টিপে ধরে, নয়তো ঘাড় মটকে দেয়। কোন কোন ভূত জীবন্ত মানুষের শরীর থেকেই চুপচাপ রক্ত খেয়ে চলে যায়।
আবার বার্গার খাওয়ায় মন দিল সে।
চট করে ভাবনাটা খেলে গেল কিশোরের মাথায়–ওই গুহার মধ্যেই ঢোকেনি তো হ্যারিস গেনার? জিজ্ঞেস করল, লোক দুজন কারা, এই এলাকার কেউ?
না, চিনি না। আগে নাকি কখনও এখানে দেখা যায়নি ওদের।
ওদের চেহারার বর্ণনা দিতে পারেন? তাদের মধ্যে কি হ্যারিস গেনার নামে একজন কলেজের লেকচারার আছেন?
তা বলতে পারব না। ওদের সঙ্গে দেখা হয়নি আমার। যে জেলের কাছে গুহার কথা শুনেছি, লোকগুলোর কথাও সেই বলেছে।
জেলের নাম কি? ওকে কোথায় পাওয়া যাবে?
আপাতত পাওয়া যাবে না ওকে। ওর মায়ের শরীর খারাপ, তাকে দেখতে গেছে। অনেক দূরে থাকে ওর মা। কিশোরের চোখের দিকে তাকাল। হ্যারি। মনে হচ্ছে নোক দুজনকে তোমাদের দরকার?
না না, এমনি, গুহাটার ব্যাপারে কৌতূহল হচ্ছে তো, ওদের মুখ থেকেই সক শুনতাম, কোনমতে দায়সারা জবাব দিয়ে হ্যারির প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল। সে।
ক্যাম্প করার জন্যে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো চাইল কিশোর। এগুলো নিয়ে, খাবার আর জিনিসের দাম মিটিয়ে, হ্যারিকে ধন্যবাদ দিয়ে দরজার দিকে এগোল।
গুহার কাছে না যাওয়ার জন্যে আরেকবার ওদেরকে সতর্ক করল দোকানদার।
.
০৭.
মহাসড়ক ধরে মাইল পাঁচেক এগোনোর পর ডানে একটা সরু কাঁচা রাস্তা দেখা গেল। এবড়োখেবড়ো, নুড়িতে ভরা রাস্তাটা চলে গেছে সৈকতের ধারে তৈরি একসারি বাড়ির দিকে। জেলেদের বাড়ি ওগুলো।
রাস্তাটা ধরে গাড়ি চালাল মুসা। দুশো গজ দূরে পাহাড়ের গোড়ায় গিয়ে সৈকতটা যেখানে আচমকা শেষ হয়েছে সেখানে একটা ছোট বাড়ি। ওটার খানিক দূরে পাহাড়ের পাথুরে দেয়ালে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। বাড়ির পেছনে পাহাড়, একটা আঁকাবাঁকা পথ উঠে গেছে চুড়ার দিকে।
ওটাই সভবত রিক ডেলভারের বাড়ি, হাত তুলে দেখিয়ে কিশোর বলল।
যাব নাকি ওদিকে? জানতে চাইল মুসা।
যাও।
বাড়ির কাছ থেকে সামান্য দূরে এনে গাড়ি রাখল মুসা। নেমে গেল। কিশোর আর রবিন। ড্রাইভিং সীট থেকে মুসাও নেমে এসে এগোল ওদের পেছন পেছন।