- বইয়ের নামঃ ক্যারিবিয়ান মিস্ট্রি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
ক্যারিবিয়ান মিস্ট্রি
১. মিস জেন মারপল
ক্যারিবিয়ান মিস্ট্রি (১৯৬৪) – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
মিস জেন মারপল সেন্টমেরী মিডের শান্ত গ্রামীণ পরিবেশ ছেড়ে বেড়াতে এসেছেন ক্যারিবিয়ান সাগরের ছোট্ট দ্বীপভূমি ওয়েস্ট ইণ্ডিজে।
এখন বয়স হয়েছে তাঁর। গীর্জার কাছেই জীবনের দীর্ঘ বছরগুলো কেটেছে। গত শীতে কঠিন নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডাক্তারের উপদেশ ছিল উন্মুক্ত সূর্যালোক-স্নানের।
এর পরেই ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপভূমি ওয়েস্ট ইণ্ডিজে আসার রাজসিক ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ভাইপো রেমণ্ড ওয়েস্ট।
রেমণ্ড একজন সফল ঔপন্যাসিক। বই থেকে তার আয়ও যথেষ্ট। কর্তব্যবশেই পিসীর জীবন আনন্দময় করে তুলতে সে প্রস্তাব করেছিল ওয়েস্ট ইণ্ডিজে আসার।
গোড়ায় মৃদু আপত্তি প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মত হয়েছিলেন সেণ্টমেরী মিডের বাড়ি ছেড়ে আসতে।
রেমণ্ড ব্যবস্থার কোন ত্রুটি রাখেনি কোন দিকে। তারই এক বান্ধবীর সঙ্গে আকাশ পথে এসেছেন ত্রিনিদাদ পর্যন্ত। তারপর সেখান থেকে সমুদ্র তীরে সেন্ট অনবরাতে গোল্ডেন পাম হোটেলে।
এই হোটেলটা আগে চালাতেন স্যাণ্ডারসনরা। কিছুকাল আগে তারা ইংলণ্ডে চলে আসেন। তাদের জায়গায় হোটেল চালাচ্ছে কেণ্ডাল দম্পতি।
রেমণ্ডকে তারা নিশ্চিন্ত থাকার আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছিল তার পিসীর জন্য কোন ভাবনা তাকে করতে হবে না।
এখানে একজন ভাল ডাক্তারও রয়েছেন। দরকার হলেই পাওয়া যাবে। আর তারা নিজেরা তো আছেনই।
মলি কেণ্ডাল খুব উদ্যমী যুবতী। বয়স কুড়ি ছুঁয়েছে। বেশ হাসিখুশি। মিস মারপলকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে যথাসময়েই তার জন্য সবরকমের আরামের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
মলির স্বামী টিম কেণ্ডাল। অত্যন্ত সদাশয় যুবক। সামান্য কৃশ দেখতে, গায়ের রঙ গাঢ়।
একেবারে নিজের মত করে একটা চমৎকার বাংলো পেয়েছেন মিস মারপল। পশ্চিম ভারতীয় মেয়েরা হাসিমুখে আদেশ পালন করতে সব সময়েই তৈরি।
এখানে আসার পর থেকে রোজই তিনি বাংলোর সামনের রাস্তা ধরে সমুদ্রের তীরের এলাকায় একটা চেয়ারে এসে বসেন, স্নানের দৃশ্য দেখেন আর অভ্যস্ত হাতে উল বোনেন। সঙ্গী হিসেবে দু-একজন বয়স্ক অতিথিকেও পেয়েছেন।
এরা হলেন বৃদ্ধ মিঃ র্যাফায়েল, ডাঃ গ্রাহাম, ক্যানন প্রেসকট আর তার বোন। এদের সঙ্গে আছেন মেজর প্যালগ্রেভ।
একজন বৃদ্ধার পক্ষে উন্মুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ, নিশ্চিন্ত আবাস আর অনর্গল গল্প করার মত সঙ্গী–এর পর আর কি চাই! অসংখ্য পামের অরণ্যে রোজকার জীবনযাত্রায় দুদিনেই বেশ অভ্যস্ত করে নিয়েছেন তিনি নিজেকে।
আপাততঃ মেজর প্যালগ্রেভ সঙ্গ দিচ্ছিলেন মিস মারপলকে। ভদ্রলোক ঘুরেছেন অনেক, দেখেছেন অনেক। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার গল্প করেনও বেপরোয়া ভাবে।
–কেনিয়ায় না গেলে জায়গাটা সম্পর্কে কোন ধারণাই করা সম্ভব নয়। জীবনের সেরা চোদ্দটি বছর আমার কেটেছে সেখানে।
এভাবেই স্মৃতিচারণ করে চলেছিলেন মেজর। মিস মারপলের মত একজন নীরব শ্রোতা পেয়ে অতীতের আনন্দের দিনগুলোর কথা শুনিয়ে অপার আনন্দ লাভ করছিলেন তিনি।
উপজাতিদের বিচিত্র রীতির রঙ চড়ানো কাহিনী শুনতে শুনতে মিস মারপল মেজরকে উৎসাহিত করতে বললেন–আপনার অভিজ্ঞতা সত্যিই বড় বিচিত্র। অবশ্য এ জায়গাটাও চমৎকার।
মেজর প্যালগ্রেভ চারদিকে তাকিয়ে খুশির স্বরে বললেন–হ্যাঁ, সত্যিই চমৎকার।
–এমন জায়গাতেও নিশ্চয়ই অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে থাকে।
-তা ঘটে বৈকি। শুনবেন নাকি? ক বছর আগে একটা খুন হয়েছিল। লোকটির নাম হ্যারি ওয়েস্টার্ন। কাগজে এনিয়ে কদিন খুব লেখালেখিও হয়েছিল।
-হ্যারি ওয়েস্টার্ন তার স্ত্রীর প্রেমিক কাউন্ট ফেরারিকে গুলি করে হত্যা করেছিল। অবশ্য টাকার জোরে সবই পরে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল।
মিস মারপলের পশমের গুলি গড়িয়ে পড়ে গিয়েছিল। কথা বলতে বলতে মেজর সেটা নিচু হয়ে তুলে দিলেন।
-আমিও একবার অদ্ভুত এক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম, বলতে লাগলেন মেজর, ঠিক নিজে নয়, ক্লাবে আড্ডা দেবার সময় এক ডাক্তার ভদ্রলোক তার জীবনের ঘটনা শুনিয়েছিলেন।
স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়েছিল বলে মাঝরাতে এক তরুণ তাকে ডেকে তুলেছিল। তরুণটি স্ত্রীর খুবই অনুগত ছিল।
কিছুদিন যাবৎ সে স্ত্রীর আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল। কেমন হতাশার ভাব তাকে জড়িয়ে থাকত সবসময়।
ডাক্তার ঠিক সময়ে পৌঁছে উপযুক্ত ব্যবস্থাদি করায় মেয়েটি সেযাত্রা বেঁচে গিয়েছিল বটে কিন্তু একমাস পরেই ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
খুবই দুঃখের ঘটনা, মৃদুস্বরে বললেন, মিস মারপল, খুনের ঘটনা বর্ণনায় মেজরের উৎসাহ লক্ষ্য করে বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন তিনি।
এমনি আরও দু-একটা অদ্ভুত ঘটনার বিবরণ শুনিয়ে মেজর একসময় বললেন, আমার এক ডাক্তার বন্ধু একবার তার এক বন্ধুর একটা ফটো বার করে দেখায়। বন্ধুটির নাম রবিনসন না কি যেন ছিল। সে তার বাড়িতেই ছিল। তার বন্ধুটি আবার সবসময় ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াত। অদ্ভুত কিছু দেখলেই ছবি তুলে নিত।