- বইয়ের নামঃ জিনার সেই দ্বীপ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
জিনার সেই দ্বীপ
০১.
বাস থেকে নেমেই কুকুরটার ওপর চোখ পড়ল তিন গোয়েন্দার। কিংবা বলা যায় কুকুরটাই ওদেরকে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করল, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে একনাগাড়ে ঘেউ ঘেউ করছে।
ওই যে রাফি, মুসা বলল। জিনা কোথায়?
কেন, রাফির পাশে দেখতে পাচ্ছ না? হেসে বলল কিশোর।
কই?…ও, আবার ছেলে সাজার ভূত চেপেছে মাথায়।
মালপত্রগুলো ভাগাভাগি করে হাতে তুলে নিয়ে সেদিকে এগোল তিনজনে। কাছে গিয়ে মুসা বলল, আর গম্ভীর হয়ে থাকার ভান করে লাভ নেই, জিনা, চিনে ফেলেছি।
ম্লান হাসল জিনা। তোমরা এলে তাহলে। খুব খুশি হয়েছি।
তুমি অমন মুখ গোমড়া করে রেখেছ কেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আম্মার শরীরটা ভাল না।
কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন হয়ে প্রায় একসঙ্গে জিজ্ঞেস করল তিন গোয়েন্দা। কেরিআন্টিকে খুব ভালবাসে ওরা।
কি জানি, গরমটা বোধহয় সহ্য করতে পারেনি।
হু, গম্ভীর হয়ে মাথা দোলাল কিশোর। হতে পারে। যা গরম পড়েছে।
রবিন জানতে চাইল, আংকেলের কি খবর?
— কি আর হবে, জবাব দিল জিনা। আম্মার শরীর খারাপ হলে যা হয়। দুশ্চিন্তা করে করে মেজাজ আরও চড়ে গেছে। কাউকে দেখলেই খেঁকিয়ে ওঠে।
খাইছে! শঙ্কিত হয়ে পড়েছে মুসা, ও-বাড়িতে থাকব কি করে তাহলে?
অত ভাবছ কেন? হেসে আশ্বাস দিল জিনা, থাকার কি আর জায়গা নেই? বাড়িতে থাকতে না পারলে আমার দ্বীপটায় চলে যাব। ছুটি কাটাতে কোন অসুবিধে হবে না।
গরমের লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। ছুটি কাটাতে গোবেল বীচে জিনাদের বাড়িতে এসেছে তিন গোয়েন্দা। এখানে এলে খুব আনন্দে সময় কাটে ওদের। কিন্তু আসার সঙ্গে সঙ্গে এমন একটা দুঃসংবাদ শুনবে এবার, ভাবেনি। শুরুতেই কেমন গড়বড় হয়ে গেল।
কিশোর বলল, তা নাহয় গেলাম। কিন্তু আন্টির শরীর খারাপ থাকলে আমাদের আনন্দ জমবে না।
চলো আগে, বাড়ি তো যাই। তারপর দেখা যাবে।
জোরে জোরে লেজ নাড়ছে রাফি। তার দিকে কারও নজর নেই বলে খ করে অভিযোগ করল। এই
মুসা হেসে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছিস রে, রাফি?
রাফি জবাব দিল, ঘউ, অর্থাৎ, ভাল।
ট্যাক্সি নিল ওরা।
গোবেল ভিলায় পৌঁছল। দরজা খুলে দিল এক মাঝবয়েসী গোমড়ামুখো মহিলা। চেহারা দেখে মনে হয়, হাসতে শেখেনি। এমন দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাল যেন, ওরা একেকটা শুঁয়াপোকা।
দরজা খুলে দিয়েই চলে গেল সে।
বাপরে বাপ, কি ভঙ্গি! কে? নিচু গলায় জিনাকে জিজ্ঞেস করল মুসা।
আমাদের নতুন রাঁধুনী।
কেন আইলিন কোথায়?
ওর মায়ের পা ভেঙেছে। মাকে দেখতে গেছে। কদিনের জন্যে মিসেস টোডকে রেখেছে আম্মা।
যেমন নাম তেমন চেহারা! হুহ। বেঙই বটে! বেশিদিন থাকবে না তো? আইলিন কবে আসবে?
ঠিক নেই।
ট্যাক্সি বিদেয় করে দিয়ে মালপত্র নিয়ে ঘরে ঢুকল ওরা। বসার ঘরে সোফায় শুয়ে আছেন মিসেস পারকার। ওদের দেখে হাসলেন।
চেহারা দেখে চমকে গেল কিশোর। এ-কি হাল হয়েছে! চোখ বসা, মুখ শুকনো, ফ্যাকাসে, এক ছটাক রক্ত নেই যেন শরীরে।
কি হয়েছে, আন্টি? এ-অবস্থা হলো কি করে?
ও কিছু না, সেরে যাবে। তোমরা কেমন আছ?
ভাল…
ওপরে যাও। ব্যাগট্যাগগুলো রেখে, হাতমুখ ধুয়ে এসো। আমি চা দিতে বলছি।
– আব্বা কোথায়? জানতে চাইল জিনা।
হাঁটতে বেরিয়েছে। গুহা ছেড়ে কি আর যেতে চায়। জোর করে পাঠালাম।
গুহা হলো জিনার বাবার স্টাডি, যেখানে ঢুকলে আর বেরোতে চান না তিনি, গবেষণা করে কাঁটান–জানা আছে তিন গোয়েন্দার।..
ওপরে উঠে পরিচিত সেই পুরানো শোবার ঘরে ঢুকল ওরা। জানালা দিয়ে সাগর চোখে পড়ে। অতি মনোরম দৃশ্য। কিন্তু এ-মুহূর্তে সাগর ওদেরকে খুশি করতে পারল না। কেরিআন্টির অসুখ মন খারাপ করে দিয়েছে।
*
পরদিন সকাল। কিশোরের ঘুম ভাঙল সবার আগে। জানালা দিয়ে রোদ। এসে পড়েছে। কানে আসছে সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের একটানা ছলাৎ ছল, ছলাৎছল। বিছানা থেকে উঠে জানালায় এসে দাঁড়াল সে। ঘন নীল আকাশের ছায়া সাগরকেও নীল করে দিয়েছে। প্রণালীর মুখে যেন ফুটে রয়েছে জিনার সেই দ্বীপটা; গোবেল আইল্যান্ড।
খুব সুন্দর, না? পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মুসা। আমি সাঁতার কাটতে যাচ্ছি।
নাস্তা না করেই?
এসে করব।
তিনজনে এসে দাঁড়াল জিনার ঘরের সামনে। একবার ডাকতেই সাড়া এল। দরজা খুলল জিনা। সে আগেই উঠেছে। ওদের অপেক্ষাতেই ছিল।
কিশোর বলল, চলো, আন্টিকে দেখে যাই।
উঠেই দেখতে গেছি আমি, জিনা বলল। দরজা খোলেনি। ঘুমাচ্ছে।
ও, তাহলে থাক। ঘুম ভাঙানো ঠিক না।
বাড়ির পেছন দিয়ে একটা পথ আছে সৈকতে যাওয়ার। সেটা ধরে চলল। চারজনে। পেছনে লেজ নাড়তে নাড়তে চলল রাফি। লম্বা জিভ বের করে দিয়েছে খুশিতে। সে জানে, মজা হবে এখন।
প্রচুর সাঁতার-টাতার কেটে বাড়ি ফিরল ওরা। খুব খিদে পেয়েছে। বাগানের কোণে বসা ছেলেটাকে নজরে পড়ল রবিনের। বোকা বোকা চেহারা। তেরো-চোদ্দ বছর বয়েস।
ও কে?
বেঙাচি, জবাব দিল জিনা।
মানে!
বেঙের পোনা তো বেঙাচিই হয়, নাকি?
মিসেস টোডের ছেলে? জানতে চাইল কিশোর।
হ্যাঁ। টেরি।
খাইছে! আঁতকে উঠল মুসা। আবার টেরি! শুঁটকি টেরির মত শয়তান না তো?