- বইয়ের নামঃ গুপ্তচর শিকারি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
গুপ্তচর শিকারি
০১.
দেখতে এমন সাধারণ হলে কি হবে, হাতের যন্ত্রটা দেখিয়ে বলল মুসা, সাংঘাতিক জিনিস। যে কোন জিনিস খুঁজে বের করতে পাররে এটা দিয়ে, ধাতু হলেই হলো।
যেমন? জানতে চাইল রবিন।
গহনা, মুদ্রা, সোনার কলম…
বলো কি হে, কৃত্রিম বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল রবিন, বাড়ির আশপাশের গুপ্তধন তো আর রাখবে না তুমি..
দেখো, অত ইয়ার্কি মেরো না, আদর করে পুরানো যন্ত্রটায় হাত বুলাল মূসা, আসলেই রাখব না। এর ক্ষমতা তুমি জানো না।
আমি জানি, কিশোর বলল, এ সব মেটাল ডিটেক্টর সত্যিই কাজের জিনিস। কিনে ফেলেছ নাকি? দাম দিয়ে দিয়েছ?
হ্যাঁ, পানির দাম বলতে পারো। নষ্ট ছিল। কিনে নিয়ে নিজেই মেরামত করেছি। চমৎকার কাজ করে এখন। কিন্তু পরীক্ষাটা কোথায় চালাব বুঝতে পারছি না।
কেন, তোমাদের বাড়ির আশেপাশে? রবিন বলল, ওখানে তো গুপ্তধন আছে বলে গুজব রয়েছে।
চেনা জায়গায় অনুসন্ধান চালাতে ভাল্লাগে না।
তা বটে, মাথা দোলাল রবিন, চেনা জায়গায় গুপ্তধন আছে, ভাবা যায়। না। গুপ্তধন শব্দটা শুনলেই মনে হয় অচেনা, ভয়ানক দুৰ্ম কোন জায়গা…
মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল, কিশোর কোথায় তোরা? একটা মেয়ে দেখা করতে এসেছে তোদের সঙ্গে।
অর্কশপ থেকে বেরিয়ে এল কিশোর।
জঞ্জালের স্তূপের পাশে মেরিচাচীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। কালো চুল, বাদামী উজ্জ্বল চোখে রাজ্যের উদ্বেগ। কিশোরকে দেখে এগিয়ে। এল, আমি ইভা গেনার। জিনার বন্ধু! ওর কাছে তোমাদের কথা শুনেছি।
চুপ করে রইল কিশোর। মেয়েটা কি বলে শোনার অপেক্ষা করছে।
রবিন আর মুসাও বেরিয়ে এল।
মেরিচাচীর তাড়া আছে, চলে গেলেন।
ইভা বলল, তোমাদের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি… জিনা বলল…
এসো, ভেতরে এসো, ওঅর্কশপের দরজা দেখাল কিশোর।
ইভাকে ভেতরে নিয়ে এল সে। চারপাশে তাকাতে লাগল মেয়েটা। অবাক হলো না। তিন গোয়েন্দার ওঅর্কশপে কোথায় কি আছে জিনার কাছে শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে।
একটা টুল দেখিয়ে ওকে বসতে বলল কিশোর।
বসল ইভা। কোন রকম ভূমিকার মধ্যে গেল না। বলল, একটা সাংঘাতিক বিপদে পড়েছি…তোমরা কি আমাকে সাহায্য করবে? বলেই কেঁদে ফেলল।
এ সব পরিস্থিতিতে বিব্রত বোধ করে কিশোর। কি করে কান্না থামাবে বুঝতে পারছে না। মুসা তাড়াতাড়ি ওর মেটাল ডিটেক্টরে হাত দিল। কেবল রবিন স্বাভাবিক রইল, শান্তকণ্ঠে বলল, কেঁদো না। কি হয়েছে, বলো, সাহায্য আমরা অবশ্যই করব।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ ডলল ইভা। ফোপাতে ফোঁপাতে বলল, আমার মা-বাবা কেউ নেই। দুজনেই মরে গেছে।
এইবার থমকে গেল রবিন। কি করে সাহায্য করবে মেয়েটাকে? কারও বাবা-মা মরে গেলে তো আর এনে দেয়া যায় না।
সহানুভূতির সুরে কিশোর বলল, কেঁদে আর কি হবে? তোমার কষ্ট আমি খুব বুঝতে পারছি, আমিও তোমার মতই এতিম।
ওদের জন্যে কাঁদছি না আমি, আরেকবার চোখ ডলল ইভা। ওরা অনেক ছোটবেলায় মারা গেছে, চেহারাও ভালমত মনে নেই। কাঁদছি আমার ভাইয়ের জন্যে।
খাইছে! সে-ও কি মারা গেছে নাকি? ফস করে বলে ফেলেই পস্তাতে শুরু করল মুসা, এ ভাবে বলাটা বোকামি হয়ে গেছে।
মাথা নাড়ল ইভা, জানি না! ওকে খুঁজে বের করে দেয়ার জন্যেই এসেছি তোমাদের কাছে।
কি হয়েছে ওর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
চোখের পানি মুছতে মুছতে ইভা বলল ওর ভাইয়ের নাম হ্যারিস গেনার। আরলিংটন কলেজের ফরেন অ্যাফেয়ার্সের ইনস্ট্রাক্টর ছিল। হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেছে। এবং আমি চাই তোমরা ওকে খুঁজে বের করো, অনুরোধের সুরে বলল সে। পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই করতে পারছে ওরা।
জানা গেল, আরলিঙটন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইভা। স্প্রিঙ টার্ম সবে শেষ হয়েছে। ভেবেছিল গরমের ছুটিতে ভাইকে নিয়ে ওয়েস্ট কোস্টে। আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। এই সময় হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল ওর ভাই।
কি করব, বুঝতে পারছি না আমি, কিশোর, ককিয়ে উঠল ইভা। প্লীজ, কিছু একটা করো আমার জন্যে!
দুই সহকারীর মতামতের জন্যে ওদের দিকে তাকাল কিশোর।
ইভার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রবিন, দাঁড়াও দাঁড়াও, তোমার ভাই কিছুদিন আগে বিদেশে পলিটিক্যাল মেথড নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল, তাই না?
অবাক হলো ইভা, তুমি জানলে কি করে?
পত্রিকায় পড়েছি। তোমার ভাইয়ের নিরুদ্দেশের খবর ছাপা হয়েছে। ওখানেই লিখেছে কথাটা।
মাথা ঝাঁকাল ইভা। কোন দেশে পড়তে গিয়েছিল ওর ভাই, জানাল। দেশটার সঙ্গে আমেরিকার সদ্ভাব নেই। ওখানে থাকতে নাকি একদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় খুব আঘাত পেয়েছিল হ্যারিস গেনার। দেশে ফেরার পর ওকে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে, ইভা বলল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ছিল না। নিশ্চয় স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে দাদার। পথ ভুলে কোনদিকে চলে গেছে কে জানে।
ওই আঘাতের কারণে নষ্ট হয়েছে ভাবছ? প্রশ্ন করল কিশোর।
হ্যাঁ। ডাক্তারের কাছে শুনেছি এ ধরনের আঘাতের প্রতিক্রিয়া আঘাত পাওয়ার বেশ কিছুদিন পরেও হয়ে থাকে।