কিশোর বলে, বলতে থাকল রবিন। কোনও মহিলাই তার পছন্দের জিনিস ফেলে না, বিশেষ করে গহনা। একটা দুল হারিয়ে গেলে আরেকটা পরা যায় না, তবু রেখে দেয়। মহিলাদের স্বভাব। আপনিও মহিলা। একটা হারিয়ে এসেও আরেকটা ফেলতে পারেননি। আপনি স্যার মনটেরোর শত্রু, মিন্স জেসাপ। সেদিন ক্যানিয়নে আপনিই হেলিকপ্টার নিয়ে গিয়েছিলেন। পাইলট ছিলেন আপনিই। তখনই কোনভাবে আপনার কান থেকে দুলটা খুলে পড়ে গিয়েছিল।
.
১৯.
খাইছে! বলে উঠল মুসা। ফ্লাইং স্যুট আর গগলসের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। একজন মহিলা!
ও-ই পাইলট ছিল কিনা, চীফ বললেন। সেটা শিওর হতে হবে আমাদের।
তা হওয়া যাবে, কিং বুলল। যাদের কাছ থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়েছিল তাদের কাছে গেলেই হবে। নিশ্চয় কণ্ঠস্বর চিনতে পারবে ওরা।
আর কানের দুলটা তো আছেই, হ্যারি বলল। প্রমাণ।
জ্বলন্ত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ডলি। ঘৃণা আর রাগ ছড়িয়ে পড়েছে মুখে। আচমকা হেসে উঠল খিলখিল করে, বেশ, আমিই পাইলট ছিলাম, হেলিকপ্টার চালিয়েছি। স্বীকার করছি। তাতে দোষের কি আছে? আমি একজন নানদান। দুশো বছর ধরে ওখানে বাস করছে আমার বাপ-দাদারা।
আর আমরা বাস করছি দুহাজার বছর ধরে, বলল কালো চামড়ার নানদান, হ্যারি। আমরা তোমাদেরকে দয়া করে জায়গা দিয়েছি আমাদের দেশে, নানদা বলে মেনে নিয়েছি। কিন্তু ওটা আমাদের দেশ।
–কক্ষণো না! হিঁসিয়ে উঠল ডলি।
চীফ বললেন, আপনাদের দেশ, আপনাদের পলিটিকস, সেটা আপনাদের ব্যাপার। ওসব নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। এটা নানদা নয়; আমেরিকা। এখানে এসে দুটো ছেলেকে কিডন্যাপ করেছেন। ভলির দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি এখন কিডন্যাপারদের একজন। সেই বিচার হবে, শাস্তি আপনাকে মেনে নিতেই হবে। সাংঘাতিক কঠোর হয়ে উঠল তার কণ্ঠ, ছেলেদুটো কোথায়? পিটার আর কিশোর?
ছিল এখানেই, ডলি জবাব দিল। এখন নেই। জন আর ডেভ এসে নিয়ে গেছে।
কোথায়? জানতে চাইল কিং।
সেটা কোনদিনই তোমাকে বলব না আমি। পিটার এখন আমাদের কব্জায়। স্যার মনটেরোকে যা করতে বলব তাই করতে বাধ্য হবেন তিনি।
না, অত আশা কোরো না। তিনি কোনদিনই তোমাদের কথা শুনবেন না। নিজের ছেলের প্রাণের বিনিময়েও না। যা ভাল বুঝবেন তাই করবেন। তার কাছে সব চেয়ে বড় নানদার ভবিষ্যৎ।
বানিজি একমাত্র ছেলের জীবনের ঝুঁকি নেবেন?
নেবেন। আরও বড় ঝুঁকি হলেও নেবেন, হ্যারি বলল।
চীফ রেগে গেলেন, জাহান্নামে যাক নানদা। আমি এখানকার পুলিশ। আমেরিকার। আমেরিকায় বসে কিডন্যাপিঙের মত মস্ত একটা অপরাধ করেছেন আপনি, মিস জেসাপ। ভাল চান তো ছেলেগুলো কোথায় আছে বলুন।
আমি একজন সৈনিক, দেশপ্রেমিক, জবাব দিল ডলি। কিডন্যাপার নই। কিছুতেই মুখ খোলাতে পারবেন না আমার। ওদেরকে নিয়ে চলে গেছে জন আর ডেভ। ওদেরকে ধরার সাধ্য নেই আর আপনাদের।
চীফের মুখের ওপর হেসে উঠল সে। পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন চীফ হ্যারি, কিং, রবিন আর মুসা। ডলি মুখ না খুললে কি করে জানা যাবে পিটার আর কিশোর কোথায় আছে? সবাই কিছুটা হতাশ, রবিন বাদে। চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রয়েছে ডলির দিকে। এখানে কিডন্যাপাররা না এসে থাকলে কি করে জানবে কে কিশোর আর কে পিটার? ধীরে ধীরে বলল সে। নিশ্চয় মিস জেসপি বলেছেন ওদেরকে টেলিফোনে।
হেসে উঠল ডলি। অবশ্যই বলেছি। সহজ ব্যাপার। পিটারের পেটে ছোট একটা কাটা দাগ আছে। কয়েক বছর আগে, অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করা হয়েছিল তার।
বুঝলাম, মাথা ঝাঁকাল রবিন। তবে সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি জন আর ডেভ যদি মিস জেসাপ আসার আগেই চলে গিয়ে থাকে তাহলে তিনি এত তাড়াহুড়া করে অফিস থেকে চলে এলেন কেন? আসারই বা কি প্রয়োজন ছিল? জবাব একটাই। ফোনে সঙ্গীদের বলে দিয়েছেন, কিভাবে পিটারকে সনাক্ত করতে হবে। ওরা তখন পিটারকে চিনে নিয়ে পালানোর ব্যবস্থা করতে লাগল। মিস জেসাপও চলে এলেন। নিশ্চয় কোনও জরুরী কাজ আছে।
ঠিক, একমত হয়ে মাথা দোলালেন চীফ। রবিন ঠিক বলেছে। নইলে এত তাড়াহুড়া করে অসময়ে বাড়ি আসতে যাবেন কেন মিস জেসাপ?
এটা আমার বাড়ি, কর্কশ কণ্ঠে বলল ডলি। যখন খুশি আমি আসতে পারি এখানে।
তা পারেন, রবিন স্বীকার করল। তবে, এত তাড়াহুড়া কেন? আমার কি মনে হয় জানেন? পিটারকে নিয়ে চলে যাবে আপনার বন্ধুরা। কিশোরকে ফেলে যাবে। তাকে পাহারা দিতেই আপনার এই আসা।
কিশোর? ভরু কোঁচকালেন চীফ।
হ্যাঁ, ঠিক! তুড়ি বাজাল হ্যারি। অহেতুক নানদায় বয়ে নিয়ে যাবে না ওরা কিশোরকে। ওদের দরকার পিটারকে। একলা তাকেই নেবে। দুটো ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।
তা। তার মানে এখানেই আছে এখনও কিশোর! বলে উঠল মুসা।
খোঁজ, খোঁজ, আবার খোঁজ নির্দেশ দিলেন চীফ।
এবার ডলির পাহারায় রইল হ্যারি। অন্যেরা ছড়িয়ে গেল খোঁজার জন্যে। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি আলমারি, মোট কথা একজন মানুষ লুকিয়ে থাকার মত যত জায়গা আছে সব খুঁজে খুঁজে দেখতে লাগল। বেশিক্ষণ লাগল না সব দেখতে। কিশোরের চিহ্নও দেখতে পেল না।
বাইরে দেখা দরকার, কিং বলল। গ্যারেজে। ছাউনি-টাউনিও থাকতে পারে।
ওদেরকে বাইরে বেরোতে দেখে মুচকি হাসল ডলি। গ্যারেজ বাদে ছোট একটা ছাউনি আছে। ছাউনির ভেতরে পাওয়া গেল শুধু বাগান করার যন্ত্রপাতি। গ্যারেজের ভেতরে কিছুই না। বাড়ির আশপাশে পাহাড়ের অনেকখানি জায়গা খুঁজে দেখল মুসা। কিশোরের চিহ্নও পেল না।