- বইয়ের নামঃ অবাক কাণ্ড
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প
অবাক কাণ্ড
১
ঘটনাটা কি…? গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর থেকে মুখ তুলে তাকিয়েই বলে উঠল কিশোর পাশা। সোজা হতে গিয়ে মাথা বুকে গেল পুরানো সাদা রঙের শেভি ইমপালার হুডে।
মাল নিয়ে ফিরে এসেছেন রাশেদ পাশা। উদ্ভট সব জিনিস কেনায় জুড়ি নেই তার, কিন্তু এবার যেন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন।
ইয়াডের বড় ট্রাকটার ড্রাইভিং হুইল ধরে বসে আছেন তিনি। মাথায় পুরানো একটা রোমশ টুপি, পেছনে ঝুলে রয়েছে র্যাকুনের লেজ। টুপি বটে একখানা! ট্রাকের পেছনে ইয়ার্ডের দুই কর্মচারী, ব্যাভারিয়ান ভাই বোরিস আর রোভার বিচিত্র সব জিনিসের মধ্যে বসে আছে।
বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখকে। মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি রাশেদ পাশার! সেদিকে তাকিয়ে সরে আসতে গিয়ে কনুই লেগে উল্টে পড়ল ইঞ্জিনের ওপর রাখা একটা মবিলের ক্যান। ক্র্যাংককেসের ভেতর দিয়ে গড়িয়ে ঢুকে যেতে শুরু করল ঘন তেল।
খাইছে! চিৎকার করে উঠল মুসা আমান। গাড়ির চেসিসের নিচ থেকে যেন ছিটকে বেরিয়ে এল। না বলতেই ঢেলে দিলে কেন?
দেখার মত চেহারা হয়েছে তার। চেসিসের নিচে কাজ করতে গিয়ে এমনিতেই কালিতে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল, তার ওপর পড়েছে মবিল। কোঁকড়া চুল বেয়ে গড়াচ্ছে। ইঞ্জিনের মবিল পাল্টাতে নিচে ঢুকেছিল সে। কিশোরকে বানিয়েছিল সহকারী। কিন্তু বলার আগেই তেল ঢেলে দিয়েছে কিশোর।
রেগে গিয়ে মুসা বলল, কি হয়েছে?
ক্যানটা আবার সোজা করে ফেলেছে কিশোর। কিন্তু দেরিতে। সমস্ত তেল পড়ে গেছে ততক্ষণে। বলল, সরি! চমকে গিয়েছিলাম!
কেন? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগেছে? বলেই চোখ পড়ল মেরিচাচীর ওপর। অফিসের বারান্দা থেকে নেমে গটমট করে এগিয়ে আসছেন ট্রাকের দিকে। রাশেদ পাশার দিকে তাকিয়ে মুসাও চমকে গেল কিশোরের মতই। খাইছে! এ কি কাণ্ড!
রাশেদ পাশা! ফেটে পড়লেন যেন মেরিচাচী। তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে। এসব কি এনেছ! মালগুলোর দিকে হাত নাড়লেন তিনি। এই জঞ্জাল দিয়ে কি হবে!
জঞ্জাল নয় এগুলো, শান্তকন্ঠে বলল রাশেদ পাশা। ইয়ার্ডের মাল, বিক্রির জন্যে। যারা চিনবে, তারা কিনবে।
তোমার মাথার ওই টুপিটাও? আয়নায় দেখেছ মুখটা?
পেছন থেকে লেজটা সামনে নিয়ে এলেন রাশেদ পাশা। লম্বা বেনিতে যেমন হাত বোলায় মেয়েরা, তেমনি করে বোলাতে বোলাতে বললেন, একেবারে আসল মাল। খাটি জিনিস। ব্যাকুনের চামড়ায় তৈরি ডেভি ক্ৰিকেট ক্যাপ।
দ্রুত ট্রাকের পেছন দিকে চলে এলেন মেরিচাচী। যারা চিনবে, তারা কিনবে! হতচ্ছাড়া সব জিনিস! ট্রাঙ্কটার মধ্যে কি?
নিজেই উঠে গিয়ে টান দিয়ে ডালা তুলে ফেললেন। এতগুলো কমিকের বই। এর জন্য টাকা নষ্ট করলে!
কয়েক লাফে ট্রাকের পেছনে পৌছে গেল কিশোর। কৌতূহলে ফাটছে। উঠে পড়ল ট্রাকে। ট্রাঙ্কের ভেতর গাদা গাদা কমিকের বই।
মারছে! মুসাও এসে দাঁড়িয়েছে ট্রাকের কাছে। লোকটা সাংঘাতিক কমিক ভালবাসত তো! যার কাছ থেকে এনেছে।
অনেক পুরানো, কিশোর বলল। নিশ্চয় অনেকদিন ফেলে রেখেছিল। মুসার দিকে ঝুঁকল। নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল, কত টাকা আছে তোমার কাছে?
বেশি না, পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল মুসা।
অ্যাই, কি হয়েছে? রবিন জিজ্ঞেস করল। সবেমাত্র ইয়ার্ডে ঢুকেছে সে। গায়ে সাদা পোলো শার্ট। পরনে খাকি প্যান্ট। সুন্দর লাগছে ওকে।
দেখে খুশি হলো কিশোর, এই যে, ঠিক সময়ে এসে পড়েছ। দেখো তো পকেটে কত টাকা আছে?
পকেটে হাত ঢোকাল রবিন। বেশি নেই। টানাটানি। কেন?
হাসল কিশোর। কিছু কমিক কিনব।
বইগুলো ঘটছেন মেরিচাচী। আরও কিছু আছে কিনা দেখছেন ট্রাঙ্কের ভেতরে। কি কারণে যে এগুলো আনল। এখন কার কাছে বিক্রি করি? কাস্টোমার কোথায়?
এখানে। রবিনের হাত থেকে টাকাগুলো ছোঁ মেরে নিয়ে নিল কিশোর। নিজের পকেটে যা আছে বের করল। তিনজনেরটা একসাথে করে দ্রুত গুনে ফেলল। নাও, বাড়িয়ে দিয়ে বলল, একুশ ডলার সত্তর সেন্ট। তোমার সমস্ত যন্ত্রণা কিনে নিলাম আমরা। কি বলো, চাচী?
নিয়ে যা! জানে বাঁচলাম! টাকাটা নিতে গিয়েও দ্বিধা করলেন মেরিচাচী। কি করবি ওসব পচা কমিক দিয়ে?
কমিক নিয়ে কি করে মানুষ? পড়ব।
চোখে সন্দেহ দেখা দিল মেরিচাচীর। তোর মতলবটা কি বলো তো? কমিক নিয়ে ডুবে থেকে কাজে ফাঁকি দেয়ার ফন্দি না তো?
হেসে ফেললেন রাশেদ পাশা। টাকা দিচ্ছে নিয়ে নাও। এতক্ষণ তো কোথায় বেচবে কোথায় বেচবে করছিলে। কাস্টোমার পেয়েই দিধা কিসের?
তবু দ্বিধা করছেন মেরিচাণী। কোন উদ্দেশ্য না থাকলে কিশোর টাকা দিয়ে কিনত না। এমনিতেও অবশ্য বিক্রির জিনিস প্রয়োজন হলে কিনে নেয় সে, আর দশজন কাস্টোমারের মতই। আবার নিজে যখন কাজ করে দেয়, তখনও তার পারিশ্রমিক নিয়ে নেয়। কঠোর ভাবে মেনে চলে ব্যবসার নিয়ম কানুন! যদিও পুরো ব্যবসাটা একদিন তারই হবে, তবু নিজের মনে করে কিছু নিয়ে নেয় না। তার এই নিয়মনিষ্ঠায় খুবই খুশি মেরিচাচী। বলেন, সাংঘাতিক উন্নতি করবে একদিন তার ছেলে। কিশোরকে ছেলেই ভাবেন নিঃসন্তান মারিয়া পাশা।