তাতেও বিশেষ সুবিধে হবে বলে মনে হয় না, রবিন বলল। লুকিয়েই যদি থাকে, বেরোতে না পারে, কথা বলবে কিভাবে ছেলেদের সঙ্গে?
তাছাড়া, মুসা যোগ করল। তাকে তুমি মনে করে ভুল করতে পারে রকি বীচের ছেলেরা।
এটাই হলো সমস্যা, তিক্তকণ্ঠে বলল কিশোর। যাকগে, কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর ভূত-থেকে-ভূতে ছাড়া উপায় নেই। এখন আরেকটু ভেবে দেখা যাক। পিটার নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে ফেলেছে যারা তাকে খুঁজছে তারা তার চারদিন আগে রেখে আসা নিশানা হারিয়ে ফেলেছে। শেষ চিহ্নটা রেখে এসেছে রেড লায়ন র্যাঞ্চে। সুতরাং…
আবার সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
করবে। লুকিয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে। সে জন্যে নজর রাখতে বলেছি হ্যারি। আর কিংকে। হয়ত এতক্ষণে ওখানে চলে গেছে ওরা। আর, আরেকটা কথা।
কী? জানতে চাইল রবিন।
মনের ভেতর একটা কথা কেবলই খচখচ করছে। আমাকে আবিষ্কার করল কিভাবে কিডন্যাপাররা? পিটার বলে, ভুলই বা করল কেন?
সহজ, সমাধান করে দিলে মুসা। তোমাকে ইয়ার্ডে দেখেছে ওরা।
এখানে আসল পিটার না এসে থাকলে?
হয়ত রাস্তায় কিংবা বাজারে দেখেছে তোমাকে, রবিন বলল। তারপর পিছু নিয়ে চলে এসেছে।
হ্যাঁ, রবিনের সঙ্গে সুর মেলাল মুসা। এটা তো হতেই পারে। ব্যাপারটাকে কাকতালীয় ভেবেছে ওরা। তোমাকে হঠাৎ দেখে ফেলে নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করেছে।
যুক্তি আছে তোমাদের কথায়, ঠিক মেনে নিতে পারছে না কিশোর। তবু, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে জরুরী কিছু মিস করছি আমরা। নিশ্চয় ওই লোকগুলো এমন কিছু পেয়েছে, যা থেকে এখানে এসে খুঁজে বের করেছে আমাকে। রাস্তায় কিংবা বাজারে অ্যাক্সিডেন্টলি দেখে ফেলেনি।
সেটা কি, কিশোর?
জানি না।
নীরব হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা। ভাবছে। অনেক ভেবেও কিছু বের করতে পারল না। শেষে বাড়ি ফিরে গেল রবিন আর মুসা। দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ভাবতে ভাবতে এসে লিভিং রুমে ঢুকল কিশোর। টিভি দেখছেন রাশেদ। পাশা। সে-ও বসে পড়ল। একটা কাজ দিলেন তাকে রাশেদ পাশা। ইয়ার্ডের। অ্যাকাউন্ট বুকে কি একটা গোলমাল হয়েছে, হিসেবের, সেটা মিলিয়ে দিতে হবে। ডিনারের সময় হল। টেবিল সাজিয়ে ডাকতে এলেন মেরিচাচী।
বিরক্তিকর, নিরাশায় ভরা একটা দিন কেটেছে। কিন্তু খেতে বসে কিশোর দেখল, সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে। বেশ খেতে পারছে। এক প্লেট শেষ করে আবার বাড়িয়ে দিয়ে হাসল, তোমার গরুর কাবাবটা খুব ভাল হয়েছে, চাচী।
অবাক হলেন মেরিচাচী। তোর কি হয়েছে আজ, বল তো কিশোর? এভাবে তো খেতে চাস না কখনও! আজ আমার ফ্রিজটাই খালি করে দিয়েছিস!
কিশোরও অবাক। আমি খেয়েছি! ছিলামই তো না সারাদিন, খেলাম কখন?
ওই যতক্ষণই ছিলি। খেয়েছিস ভাল করেছিস। আমিও তো চাই তুই খা…
কিশোরের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলেন মমরিচাচী। গোল গোল হয়ে গেছে। তার চোখ। হা হয়ে গেছে মুখ। চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি।
এই কিশোর, কি হলো? ভুরু কুঁচকে ফেলেছেন রাশেদ পাশী। শরীর খারাপ হয়ে গেল নাকি?
না..না..চাচা, আমি ভাল আছি…এত ভাল অনেকদিন থাকিনি! লাফিয়ে। উঠে দাঁড়াল কিশোর। আসছি!
আরে খেয়ে যা না! ঠেকাতে গেলেন মেরিচাচী।
রওনা হয়ে গেছে ততক্ষণে কিশোর। মিনিটখানেকের বেশি লাগবে না।
দ্রুত এসে লিভিং রুমে ঢুকল সে। রবিনকে ফোন করল। নথি? জলদি মুসাকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে চলে এস। মাকে বলে আসবে সারারাত বাড়ি ফিরবে না। আমাদের সঙ্গে থাকবে।
রবিনকে কোনও প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর। ফিরে এল রান্নাঘরে, খাবার টেবিলে। এত উত্তেজিত হয়ে গেছে, খিদেই নষ্ট হয়ে। গেছে। মেরিচাচীর বিখ্যাত অ্যাপল পাইয়ের টুকরো দুটোর বেশি খেতে পারল না। আর। তারপর চাচীর ভয়ে কোনমতে জোর করে এক গেলাস দুধ গিলে নিয়ে উঠে পড়ল। বেরিয়ে চলে এল ঘর থেকে। দ্রুত এগোল ট্রেলারের দিকে।
পনেরো মিনিট পর দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেলারে ঢুকল রবিন আর মুসা। দেখল, ডেস্কে বসে তাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে কিশোর পাশা। হাসিতে উদ্ভাসিত মুখ।
কি ব্যাপার? রীতিমত হাঁপাচ্ছে রবিন। জোরে জোরে প্যাভাল করে সাইকেল চালিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে।
সারা রাত থাকতে হবে কেন? মুসার প্রশ্ন।
কারণ, নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করল গোয়ন্দাপ্রধান। পিটার মনটেরো কোথায় লুকিয়ে আছে, জানি আমি।
.
১৩.
কোথায়? চিৎকার করে উঠল রবিন।
কি করে জানলে? মুসাও না চেঁচিয়ে পারল না।
সারাক্ষণ আমাদের নাকের নিচেই রয়েছে, জবাব দিল কিশোর। অন্ধ হয়ে ছিলাম আমরা। বলেছি না একটা কিছু মিস করেছি। রাস্তায় দেখে আমাকে ফলো করে এখানে এসে হাজির হয়েছে কিডন্যাপাররা, কথাটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার।
কেন? মুসার প্রশ্ন।
কারণ, তাহলে ওরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যেত পালানোর চেষ্টা করছি না আমি। লুকানোরও চেষ্টা করছি না। তোমাদের সঙ্গে সহজভাবে মিশছি, রকি বীচের আর দশটা ছেলের মত। আমাকে কথা বলতেও শুনে থাকতে পারে। কথায় যে টান। নেই এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না। ভুল ওরা করত না।
কিন্তু কিশোর, মনে করিয়ে দিল রবিন। ভুল ওরা ঠিকই করেছে।
করেছে। এবং সেটাই হলো জবাব। কারণ ওরা আমাকে এমন জায়গায় দেখেছে যেখানে পিটারকে আশা করেছিল। ওখানেই খুঁজছিল তাকে।