(২) এসপিনোসা পরিবারভুক্ত যাবতীয় ব্যক্তির অধিকৃত পশুগুলিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মেনে নিতে হবে (ওই পশুগুলি লুঠের মাল বলে সন্দেহ হলেও সে-বিষয়ে অনুসন্ধান করা চলবে না) এবং কয়েক হাজার একর জমি পূর্বোক্ত ব্যক্তিদের দান করতে বাধ্য থাকবেন আমেরিকান সরকার। শুধু তাই নয়, ওইসব জমির কাছাকাছি গো-চারণের উপযুক্ত তৃণভূমিও জমির মালিকদের দান করবেন সদাশয় সরকার। (সব মিলিয়ে পত্রে লিখিত জমির পরিমাণ সমগ্র কলোরাডো রাজ্যের এক দশমাংশ তো বটেই)।
(৩) ফিলিপ, তার ভ্রাতুস্পুত্র এবং আরও দুজন এসপিনোসা পরিবারের যোগ্য ব্যক্তি কলোরাডো ভলান্টিয়ার কোম্পানি নামক সেনাদলে ভরতি হতে চায়–অবশ্য সাধারণ সৈনিক হিসাবে নয়, ক্যাপ্টেন বা সেনানায়কের মর্যাদা দিয়েই উক্ত বাহিনীতে তাদের নিয়োগ করতে হয়। যোগ্যতার প্রমাণ হিসাবে পত্রলেখক জানিয়েছে, অত্যন্ত অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্যে লড়াই করে তারা সরকারের ছাব্বিশটি প্রজাকে হত্যা করেছে, কিন্তু তাদের তরফে মারা গেছে মাত্র একজন এসপিনোসা–এটাই কি তাদের যোগ্যতার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নয়?
স্থানীয় শাসনকর্তা গভর্নর জন ইভান্স ফিলিপের চিঠি পেয়ে খুশি হলেন। দেশজোড়া অজস্র খুনখারাপির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীটিকে গ্রেপ্তার করার কাজটা সহজ হয়ে গেল। রাজধানী ওয়াশিংটনে ইভান্স সাহায্য চেয়ে পাঠালেন। উত্তর এল, গৃহযুদ্ধ নিয়ে সরকার এখন অত্যন্ত বিব্রত, অতএব নিজস্ব ক্ষমতায় গভর্নর যেন বর্তমান সমস্যার সমাধান করেন।
গভর্নর ইভান্স ওয়াশিংটনের ভরসা না-করে এইবার নিজের ক্ষমতায় সমস্যার সমাধান করতে সচেষ্ট হলেন। চিঠিতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সরকারকে সময় দেওয়া হয়েছিল। ওই পত্রে ফিলিপ জানিয়েছিল তার যুক্তিসংগত ন্যায্য শর্তগুলি সরকার যদি মেনে নিতে রাজি না থাকেন, তাহলে আবার সে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এবং তার ফলে আরও ৫৭৪ জন আমেরিকানের প্রাণহানি যে অবশ্যম্ভাবী এ-কথাটা যেন গভর্নর মনে রাখেন।
গভর্নর ইভান্স ঘোষণা করলেন, জীবিত বা মৃত ফিলিপ এসপিনোসাকে সরকারের কাছে যে হাজির করতে পারবে, সেই ব্যক্তিকে ২৫০০ ডলার পুরস্কার দেবেন সরকার।
এইবার পাঠকদের কাছে ফিলিপ এসপিনোসা নামক ভয়ানক মানুষটির পরিচয় দেওয়া দরকার। মেক্সিকো থেকে নিউ মেক্সিকোর কাঁচেটি অঞ্চলে পদার্পণ করেছিল ফিলিপ, কিন্তু ঠিক কোন সময়ে তার আবির্ভাব ঘটেছিল সে-কথা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। এসপিনোসা বংশ একটি বিরাট গোষ্ঠী–ভাই, ভাইপো, ভাগনে প্রভৃতি বিভিন্ন সম্পর্কের আত্মীয়স্বজন নিয়ে বিরাট দল পরিচালনা করত পূর্বোক্ত ফিলিপ এসপিনোসা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে সমগ্র স্প্যানিশ মেক্সিকোর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ ছিল এসপিনোসা বংশের অন্তর্গত।
স্যান লুই উপত্যকা থেকে কোর্যাডো রাজ্যের স্যান রাফাল নামক পর্বতবেষ্টিত শহরে এসে প্রথম হানা দেয় ফিলিপ এবং তার দলবল–তারপর শুধু হত্যা ও লুণ্ঠনলীলার বীভৎস ইতিহাস।
প্রথম প্রথম তারা ঘোড়া চুরি করত। একটা ঘোড়া বিক্রি করলে কম করেও পাঁচশো ডলারের প্রাপ্তিযোগ–অতএব বেশ কিছুদিন ওই লাভজনক ব্যাবসা চালিয়ে গেল ফিলিপের দল। দস্যুবৃত্তি করলেও তাদের মধ্যে রসবোধ ছিল বিলক্ষণ, তবে রসিকতার ধরনটা হয়তো সকলের কাছে উপভোগ্য ছিল না।
দস্যুদের রসিকতার একটি উদাহরণ পাঠকদের সামনে উপস্থিত করছি :
সান্টা ফি থেকে গ্যালিসটিওর পথে একটা গাড়ি লুঠ করে দস্যুদল শকটচালকের পা দুটি এমনভাবে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দিল যে, বেচারার শরীরটা মাটির ওপর পড়ে রইল অসহায় অবস্থায়। লোকটিকে ওইভাবে ঝুলিয়ে রেখে গাড়ির ঘোড়া দুটিকে চাবুক মেরে দস্যুরা ছুটিয়ে দিল। শকটচালককে তারা খুন করেনি, কারণ উক্ত গাড়োয়ান ছিল মেক্সিকোর অধিবাসী। কিন্তু প্রাণে বাঁচলেও গাড়োয়ান বেচারার অবস্থা হয়েছিল অতিশয় শোচনীয়, পথের ওপর ঠোক্কর খেতে খেতে তার সর্বাঙ্গ হয়ে গিয়েছিল ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত। বলা বাহুল্য, দস্যুদের রসিকতা ওই গাড়োয়ানটির কাছে খুব উপভোগ্য মনে হয়নি।
ঘোড়া চুরির ছোটো কাজে নিজেকে খুব বেশিদিন আবদ্ধ রাখল না ফিলিপ, বসন্তকাল শুরু হতে-না-হতেই দলবল নিয়ে হত্যা ও লুণ্ঠনকার্যে মনোনিবেশ করল সে। আরাকানসাস নদীতীরে এবং সাউথ পার্ক অঞ্চলে ফিলিপের হাতে নিহত মানুষের সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করাও সম্ভব হয়নি। স মিল গালচ নামক স্থানটি দুবৃত্তদের হত্যালীলার ফলে নাম বদলে হয়ে গেল ডেড ম্যানস ক্যানিয়ন অর্থাৎ মৃত মানুষের খাদ। পূর্বোক্ত স্থানে একটি কারখানার মধ্যে বাস করত ওই কারখানারই মালিক বৃদ্ধ হেনরি হার্কেন। হেনরির সহকারী ও অংশীদাররা কাজকর্মের শেষে স্থানত্যাগ করতেই অকুস্থলে আত্মপ্রকাশ করল ফিলিপ ও তার খুনে চ্যালাচামুণ্ডার দল। ওরা এতক্ষণ আড়াল থেকে নজর রাখছিল, এইবার বৃদ্ধকে একা পেয়ে আক্রমণ করল। কুঠারের প্রচণ্ড আঘাতে বৃদ্ধের মস্তক হল বিদীর্ণ, তারপর ঘরবাড়ি দরজার উপর চলল দুবৃত্তদের ধ্বংসলীলা। ঘরবাড়ির ভগ্নদশা দেখে প্রথমে রেড ইন্ডিয়ানদের সন্দেহ করা হয়েছিল, কারণ, ওই অরণ্যচারী জাতি কাউকে হত্যা করলে নিহত ব্যক্তির ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে যায়। তারপর আবার সন্দেহ পড়ল বৃদ্ধের দুই অংশীদারের উপর তাদের নাম মি. ফার্সন ও মি. ব্যাসেট। পরে অবশ্য আসল ঘটনা জানা যায় এবং নিরাপরাধ ভদ্রলোক দুটিও মুক্তি পান।