এদিকে ওয়েন্স তার ঘোড়াটাকে আস্তাবলে রেখে দাঙ্গাবাজিতে অভ্যস্ত বন্দুকবাজ মানুষ যা করে তাই করছিল, অর্থাৎ রাইফেল ও রিভলভারের কলকবজা পরীক্ষা করে দেখছিল। রাইফেল সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে সে যখন রিভলভার পরিষ্কার করছে, সেই সময় হঠাৎ দুই ব্যক্তির আবির্ভাব স্যাম ব্রাউন ও ডি. জি. হার্ভে। দুজনেই ছিল ওয়েন্সের বন্ধু। তাদের দেখামাত্রই ওয়েন্স প্রশ্ন করল, অ্যান্ডি কুপারকে দেখেছ?
উত্তর এল, হ্যাঁ, সে এখন এই শহরেই আছে।
ঠিক তখনই প্রবেশ করল জন ব্লেভান্স, তারপর অ্যাণ্ডির ঘোড়াটাকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করল।
তিনটি মানুষ নীরবে জনের কার্যকলাপ দেখল, তারপর মৌনভঙ্গ করল স্যাম ব্রাউন, ওই ছোকরা হচ্ছে ব্লেভান্স ভাইদের এক ভাই। আর ওটা হচ্ছে অ্যান্ডি কুপারের ঘোড়া। অ্যান্ডি এখন শহর থেকে সরে পড়তে চাইছে।
কনোডোর ওয়েন্স একটিও কথা বলল না। হাতের রিভলভার উলট করে বাঁ দিকের খাপে ঢুকিয়ে দিল, তারপর উইনচেস্টার রাইফেলটা হস্তগত করে আস্তাবলের বাইরে পদার্পণ করল। আস্তাবলের কাছেই একটু দূরে রাস্তার উপরে অবস্থান করছিল ব্লেভান্স পরিবারের বাড়ি আঙুল তুলে ওয়েন্সের বন্ধুরা তাকে বাড়িটা দেখিয়ে দিল।
বাড়িটা ছিল কাঠের তৈরি, একতলা। রাস্তা থেকে ১৫ ফুট দূরে অবস্থিত ওই বাড়ির সামনের দিকে অনেকটা ফাঁকা জায়গা, তারপরই সমান্তরালভাবে চলে গেছে সান্টা ফি রেললাইন। পূর্বে উল্লিখিত আস্তাবলের পুব দিকেই ছিল ব্লেভান্স পরিবারের বাড়ি। ব্লেভান্সদের বাড়ির কাছাকাছি আরও কয়েকটা ছোটো ছোটো বাড়ি ছিল। ব্লেভান্সদের বাড়ির ঠিক আগেই যে কামারশালাটা ছিল, সেখানে এসে দাঁড়াল কমোডোর ওয়েন্স হাতে তার গুলি ভরা রাইফেল।
বাড়ির সামনের দিকে দুটো জানালা, ভিতরে সম্ভবত দুটো ঘর। ওয়েন্সের বাঁ-দিকে খানিকটা ঢাকা জায়গা, বোধ হয় সেখানেও একটা ঘর রয়েছে এবং ওই জায়গাটার সংলগ্ন বারান্দাটা ঘুরে বাড়ির সামনের অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দুটি দরজার একটি রয়েছে ঢাকা জায়গাটার দিকে, আর একটি দরজা অবস্থান করছে বাড়ির প্রধান অংশের সম্মুখে।
বাড়ির ভিতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিল না ওয়েন্স। তার অজ্ঞাতে বাড়ির মধ্যে জমায়েত হয়েছিল কয়েকটি নারী ও পুরুষ।
পুরুষদের মধ্যে ছিল স্বয়ং অ্যান্ডি কুপার, জন ব্লেভান্স, পরিবারের অন্যতম বন্ধু ও ওই বাড়ির অধিবাসী মোস রবার্টস এবং স্যাম হোস্টন ব্লেভান্স।
মেয়েরা ছিল সংখ্যায় তিনজন–ব্লেভান্স ভাইদের বিধবা মাতা মিসেস মেরি ব্লেভান্স, ইভা ব্লেভান্স নামে একটি ভাই-বউ, এবং মিসেস অ্যামান্ডা গ্ল্যাডেন নামে পরিবারের এক বান্ধবী।
শেরিফ ওয়েন্স যখন বাড়ির সামনে উঠানের উপর এসে দাঁড়াল, দরজাগুলি তখন বন্ধ ছিল। ওয়েন্স উঠান থেকে বারান্দায় উঠে এল, সঙ্গেসঙ্গে বাড়ির সংলগ্ন ঢাকা জায়গাটার মধ্যে চারটি মনুষ্যমূর্তি তার চোখে পড়ল।
ওয়েন্স চিৎকার করে উঠল, অ্যান্ডি কুপার, বাইরে এসো।
ছোটো ঘরের ভিতর থেকে বড়ো ঘরে প্রবেশ করল অ্যান্ডি, পরক্ষণেই দরজা খুলে গেল ওয়েন্স দেখল তার সামনে দণ্ডায়মান অ্যান্ডি কুপার, হাতে খোলা রিভলভার।
প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই ঢাকা জায়গাটার সংলগ্ন দরজায় শব্দ উঠল, অর্ধমুক্ত দ্বারপথে ওয়েন্সের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি একটি পরিচিত মানুষকে আবিষ্কার করল–উদ্যত রিভলভার হাতে জন ব্লেভান্স।
কমোডোর ওয়েন্স তখন দুই ভাইয়ের মাঝখানে, তার অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক। কিন্তু ওয়েন্সের চোখে-মুখে ভীতি বা উত্তেজনার চিহ্ন দেখা গেল না, রাইফেলটা যেমন কোমরের কাছে ধরা ছিল তেমনই রইল–শুধু তার দুই চোখের প্রখর দৃষ্টি নিশ্চল হয়ে রইল অ্যান্ডির ওপর, পিছনে জন ব্লেভান্সের গতিবিধি লক্ষ করার সুযোগ বা সময় ছিল না।
শান্তস্বরে ওয়েন্স বলল, কুপার, আমি তোমাকে চাই।
গর্জে উঠল খুনি, কেন? আমাকে কী দরকার?
তোমার নামে পরোয়ানা আছে।
কীসের পরোয়ানা?
অনর্থক কথাবার্তা বলে কালক্ষেপ করতে চাইছিল অ্যান্ডি কুপার। ওই সময়ের মধ্যে বাড়ির ভিতর রিভলভারধারী তিন ব্যক্তি পছন্দমতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ওয়েন্সের উপর নিশানা স্থির করার সুযোগ পাবে বলেই অ্যান্ডি সময় নষ্ট করছিল। ওয়েন্স হয়তো অ্যান্ডির উদ্দেশ্যে বুঝেছিল, কিন্তু কর্তব্য অনুসারে সে পরোয়ানার অভিযোগ ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হল।
ঘোড়া চুরির যে ব্যাপারটা আগে তোমাকে বলেছিলাম, সেই অভিযোগই রয়েছে এই পরোয়ানাতে।
অপেক্ষা করো, এ-বিষয়ে আমি পরে ভেবে দেখব।
আমি অপেক্ষা করতে পারব না। এই মুহূর্তে তোমাকে আমার সঙ্গে আসতে হবে।
অকস্মাৎ চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল অ্যান্ডি কুপার, আমি যাব না।
প্রায় একইসঙ্গে গর্জে উঠল রিভলভার ও রাইফেল।
ওয়েন্স তার রাইফেল তুলে ধরার সময় পায়নি, কোমরের কাছে ধরা অবস্থাতেই সে ট্রিগার টিপেছিল। ওয়েন্স অনুভব করল তার দেহের পাশ দিয়ে ছুটে গেল লক্ষ্যভ্রষ্ট রিভলভারের তপ্ত বুলেট, কিন্তু অ্যান্ডি কুপার প্রতিদ্বন্দ্বীর রাইফেলকে ফাঁকি দিতে পারল না–অসহ্য যাতনায় অ্যান্ডির শরীর দুমড়ে গেল দু-ভাজ হয়ে, উইনচেস্টার রাইফেলের ভারী গুলির আঘাতে বিদীর্ণ হয়ে গেল তার পাকস্থলী।