বিক্রম ঘরে ঢুকেই টিভি বন্ধ করে দিল। বনানী চটে গেল, উত্তমকুমারকে চোখে হারাতে হল বলে। আমিও কাব্রেীকে হারিয়ে, মনে মনে নিঃশ্বাস ফেললাম। হাসি-গল্প-চা-চানাচুর-রসগোল্লা শেষ হতে, দম্পতিটি অর্থাৎ শর্বরী-অভিজিৎ, শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় নিল। বিক্রম একা হতেই আমি আর বনানী ভয়ানক অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। বনানী পরিস্থিতি খানিক সহনীয় করতে বলে উঠল, বিক্রমদা আজ থেকেই যান। বিন্দুমাত্র আপত্তি না তুলে, বিন্দুমাত্র আপত্তি না তুলে, বিক্রম সংক্ষেপে ‘আচ্ছা’ বলে সিগারেট ধরাল।
বনানী রান্নাঘরে উঠে গেলে, বিক্রমের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছিস?
খুব ভাল, চমৎকার।
শর্বরীর জন্য মন খারাপ হয়?
একেবারেই না, প্রতিদিন তো দেখা হয়।
বিষম খেলাম আমি, প্রতিদিন।
হ্যাঁ, শর্বরী ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে বাড়ি তো যায় না। সেই ইউনিভার্সিটির চনমনে দিনগুলোর মতন, আমরা কখনও গঙ্গার ধার, কখনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কখনও একাডেমি অফ ফাইন আর্টস, এইসব করি আর কি! স্তম্ভিত আমার বাক্যস্ফূর্তি হয় না।
পরদিন অভিজিৎ আমার অফিসে এল। চিন্তিতমুখে বলল, বিশেষ পরামর্শ রয়েছে, তোর সময় হবে? নিশ্চয়ই হবে। অভিজিতের এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। মিনিট দশেক কাটল, অভিজিৎ মুখ খোলে না। আমি সদয় হলাম। নিজের থেকে যে কথা বলতে ও দ্বিধান্বিত, আমাকেই তা শুরু করিয়ে দিতে হবে। বলেই ফেললাম ‘শোন অভিজিৎ, বিক্রম যদি আবার শর্বরীকে বিয়ে করতে চায়, সেটুকু মেনে নেওয়ার মতন আধুনিক মন তার নিশ্চয় রয়েছে।‘
‘শুধু আধুনিক নয়, সর্বাধুনিক মন রয়েছে আমার। কিন্তু বিক্রমদা তো শর্বরীকে বিয়ে করবে না। ওর কাছ থেকেই তো আসছি। এখন তো বিক্রমদারই অ্যাডভানটেজিয়স পোজিশন। পুনর্মুষিক হতে চাইছে না। ভাগ্যহীন স্বামীর ভূমিকায় বিক্রমদা আর ফিরে যাবে না।‘ অভিমান ভরা প্রশ্বাস গ্রহণ করে, অভিজিৎ জানাল, ‘বিক্রমদার রোল এখন সার্থক প্রেমিকের’, বুকঠেলা নিঃশ্বাস ফেলে, শেষ বক্তব্য রাখল, শর্বরীর স্বামী অভিজিৎ ‘আমি এখন ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো, অভাজন স্বামী মাত্র।‘