কী সুযোগ?
এ দেশে একজন মানুষ আছে, যার মস্তিষ্ক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুপার কম্পিউটার থেকে বেশি ক্ষমতাশালী। আমরা যে নিউরাল কম্পিউটার তৈরি করতে চাইছি, তার থেকে লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। কাজেই আমাদের কাজ এখন পানির মতো সোজা।
কী রকম?
ওই মানুষটাকে ধরে আনো। আমরা তার ব্রেন স্ক্যান করি। তারপর সেটা উপস্থাপন করি।
বব লাস্কি নীল চোখের মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল। বলল, তার মানে, আমাদের এনডেভারের এই সেটআপের দরকার নেই?
না, আমাদের ওই মানুষটি দরকার। জীবিত হলে সবচেয়ে ভালো। জীবিত পাওয়া না গেলে মৃত মৃত পুরো শরীরটা পাওয়া না গেলেও ক্ষতি নেই। শুধু মস্তিষ্কটা হলেই হবে ৬ লিকুইড নাইট্রোজেনে ফ্রিজ করে হেড অফিসে পাঠিয়ে দাও।
বব লাস্কি ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, মেয়ে, তুমি আমাদের বললো, এই মানুষটা কে? কোথায় আছে?
ঈশিতা শব্দ করে হেসে উঠল, তাকে হাসির ভান করতে হলো না, সে সত্যি সত্যি হাসতে পারল। হাসতে হাসতে বলল, মানবসভ্যতার যুগান্তকারী পরিবর্তনের জন্য তুমি মনুষ্যরূপী নিউরাল কম্পিউটার চাইবে, আর সাথে সাথে পেয়ে যাবে? এ দেশের মানুষ এত সহজ?
বব লাস্কি হিংস্র গলায় বলল, বলো, সেই মানুষটা কে?
ঈশিতার হাসি আরও বিস্তৃত হলো। বলল, তুমি সত্যিই বিশ্বাস করো যে তুমি চোখ রাঙিয়ে ধমক দেবে, আর আমি ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বলে দেব?
দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, একে দুই সিসি ক্লিপোনাল পুশ করো। সবকিছু বলে দেবে—
নীলচোখের মানুষটি বলল, দুই সিসি নয়, চার সিসি দাও, তাহলে সবকিছু বলে দিয়ে ব্রেন ডেড হয়ে থাকবে।
বব লাস্কি বলল, দাঁড়াও। ক্লিপোনাল দেওয়ার আগে আমি আমাদের লোকাল সিকিউরিটিকে ডাকি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের ভেতর দুজন মানুষ এসে ঢুকল। একজন মধ্যবয়স্ক, অন্যজন একটু কম বয়সী। চুল ছোট করে ছাঁটা এবং পরনে ধূসর সাফারি কোট। ঈশিতা তাদের চিনতে পারে এবং ওই দুজনও তাকে চিনতে পারে। ঈশিতা তাদের প্রথম দেখেছে তার পত্রিকার সম্পাদক নুরুল ইসলামের অফিসে। সমীরকেও এরা হুমকি দিয়ে এসেছে। হাজেরা যেদিন মারা যায়, সেদিন তার বাড়ির কাছে এই দুজনকে দেখেছিল ঈশিতা।
বব লাস্কি বলল, তোমাদের জরুরি কাজে ডেকে এনেছি। আমাদের এনডেভারে মেজর সিস্টেম ফেল করেছে। কোনো একজন মানুষ সিস্টেমে হ্যাক করেছে। এই মেয়েটা জানে, কিন্তু সে বলছে না।
মুখ থেকে কথা বের করতে হবে? মানুষটির মুখে তৈলাক্ত এক ধরনের হাসি ফুটে ওঠে, আমাকে আধঘণ্টা সময় দাও, আর এই মেয়েটাকে দাও। নিরিবিলি—
বব লাস্কি বিরক্ত হয়ে বলল, আমি তোমাদের টর্চার করার জন্য ডাকিনি। আমি জানতে চাইছি, তোমরা কি কোনো মানুষের কথা জানো, যে খুব দ্রুত হিসাব করতে পারে কম্পিউটারের মতো?
হ্যাঁ, জানি। সমীর ছোকরাটাকে টাইট দিতে যে ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছি। ছোট একটা মেয়ে আছে, যে মুখে মুখে গুণ ভাগ করে দেয়।
বব লাস্কি টেবিলে একটা ঘুষি দিয়ে বলে, ইউরেকা! পেয়ে গেছি।
ঈশিতাকে দেখিয়ে বলল, এই সাংবাদিক মেয়েটা সেখানে ছিল। ওই মেয়েটার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে।
বব লাস্কি উত্তেজিত মুখে বলল, আমাদের ওই মেয়েটা দরকার। যেভাবে সম্ভব।
কত দিনের মধ্যে দরকার?
কত দিন নয়, বলো, কত মিনিট।
কত মিনিট?
হ্যাঁ। এয়ারপোর্টে যাও। আমাদের হেলিকপ্টার নিয়ে ফ্লাই করো, দুই ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে এসো।
গোপনে?
অবশ্যই গোপনে। বব লাস্কি বিরক্ত মুখে বলল, তোমাদের মিডিয়া হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মিডিয়া। একটা কিছু পেলে তার পেছনে লেগে থাকে।
ঠিক আছে।
চেষ্টা কোরো জীবিত আনতে।
সম্ভব না হলে ডেডবডি?
হ্যাঁ, কিন্তু ডেডবডি হলে ডিকম্পোজ করা যাবে না। ফ্রিজ করে আনতে হবে।
ঠিক আছে।
মানুষ দুজন যখন বের হয়ে যাচ্ছিল, তখন ঈশিতা তাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নিচু গলায় বলল, আপনারা কি দরকার হলে আপনাদের মায়েদেরও বিক্রি করে দেন?–এ কথা কেন বলছ?
যে নিজের দেশকে বিক্রি করতে পারে, সে নিশ্চয়ই নিজের মাকেও বিক্রি করে দিতে পারে, সে জন্য বলছি।
মধ্যবয়স্ক মানুষটির মুখ যেন ক্রোধে বিকৃত হয়ে গেল। সে ঈশিতার দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল, আমি আমার দেশ বিক্রি করছি না। আমি তোমার দেশ বিক্রি করছি।
আপনার দেশ কোনটি?
আমার দেশ নাই। একাত্তরে আমি আমার দেশ হারিয়েছি। বুঝেছ?
ঈশিতা মাথা নাড়ল। বলল, বুঝেছি। সে আসলেই অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে।
রাফি ঘড়ির দিতে তাকাল, প্রায় দুইটা বাজে। ঈশিতার সঙ্গে কথা ছিল, সে এনডেভার থেকে বের হয়েই তাকে ফোন করবে। এখনো ফোন করেনি, তার মানে ঈশিতা এখনো এনডেভার থেকে বের হতে পারেনি। সে নিজে থেকে বের না হলে ঠিক আছে, কিন্তু ভেতরে গিয়ে আটকা পড়ে থাকলে বিপদের কথা। রাফি কী করবে, এখনো বুঝতে পারছে না। যদি কোনো খোঁজ না পায়, তাহলে শারমিনকে নিয়ে আবার কম্পিউটারে বসতে হবে। আবার এনডেভারের ভেতর ঢুকতে হবে।
ঠিক তখনই তার ফোনটা বাজল। আশা করছিল, ঈশিতার ফোন হবে, কিন্তু দেখা গেল ফোনটা সমীরের। রাফি ফোন ধরে বলল, হ্যালো, সমীর।
সমীর উত্তেজিত গলায় বলল, রাফি, তোমার মনে আছে, দুজন মোষের মতো মানুষ আমাকে ভয় দেখিয়েছিল?
হ্যাঁ। মনে আছে।
সেই মানুষ দুটিকে ক্যাম্পাসে দেখেছি।
সত্যি?
হ্যাঁ। একটা সাদা রঙের পাজেরো থেকে নেমেছে।