তা হলে কি তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্তরের কিছু এসেছে?
বলা খুব মুশকিল। তবে, একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন।
কী?
আপনার অনুমান যদি সত্যি হয়ে থাকে সেটি পৃথিবীতে গোপন থাকবে না।
গোপন থাকবে না?
না। আমি যে ল্যাবরেটরিতে কাজ করতাম তারা সারা পৃথিবীতে এই ধরনের ঘটনা খুঁজছে। আপনি যে ঘটনার বর্ণনা দিলেন সেটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে এই মুহূর্তে ঢাকায় আমার পুরোনো সব সহকর্মী হাজির হয়ে গেছে!
নিশীতা একটু উত্তেজিত হয়ে বলল, আমেরিকান সায়েন্টিস্টরা এখন ঢাকায় চলে এসেছে?
আমার তাই ধারণা।
কিন্তু আপনি আমাদের বাংলাদেশের সায়েন্টিস্ট। এ ব্যাপারে আপনি কিছু করবেন না?
রিয়াজ মাথা নাড়ল, বলল, না।
কেন নয়?
কারণ আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমি মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে আর কাজ করি না।
কেন করেন না?
সেটা অনেক দীর্ঘ ব্যাপার। বেশিরভাগই ব্যক্তিগত ব্যাপার। বলার মতো কিছু নয়।
নিশীতা কী বলবে কিছু বুঝতে পারল না, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, কিন্তু এই মহাজাগতিক প্রাণী যদি আমাদের কোনো ক্ষতি করে? পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করে?
যদি তারা তৃতীয় স্তরের হয়ে থাকে তা হলে কিছু করার নেই। আমরা তাদের সামনে কিছু নই, তেলাপোকা কিংবা পিঁপড়ার মতো! আমাদের যদি দয়া করে বেঁচে থাকতে দেয় তা হলে বেঁচে থাকব। যদি চতুর্থ মাত্রার হয় তা হলে যোগাযোগের একটা ছোট সম্ভাবনা আছে–
আমরা কেমন করে বুঝব তারা কোন মাত্রার?
রিয়াজ এই প্রথম একটু হাসার ভঙ্গি করে বলল, আপনাকে তার চেষ্টা করতে হবে। সেগুলো বিশ্লেষণ করার লোক আছে। সেটা করার জন্য কোনো কোনো মানুষকে বছরে এক শ থেকে দুই শ হাজার ডলার বেতন দেওয়া হয়। আমি আপনাকে বলেছি, সেই মানুষগুলো মনে হয় এর মাঝে এই দেশে চলে এসে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে! আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই।
নিশীতা অবাক হয়ে রিয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি সত্যিই কিছু করবেন না?
রিয়াজ নরম গলায় বলল, আমি যেখানে কাজ করতাম সেই ল্যাবরেটরির বছরে বাজেট ছিল কয়েক বিলিয়ন ডলার। সেই ল্যাবরেটরি থেকেও সুযোগের অভাবে আমরা সবকিছু করতে পারতাম না। এখান থেকে আমি কী করব?
ইন্টারনেটে দেখেছি মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনার একটা কোডিং এলগরিদম আছে, সেটা ট্রান্সমিট করতে পারেন না?
রিয়াজ শব্দ করে হেসে বলল, তার জন্য বিশাল এ্যান্টেনা লাগবে, মেগাওয়াট পাওয়ার লাগবে। আমার বাসায় ডিশ এ্যান্টেনা দিয়ে তো সেটা করা যাবে না!
কেন? করলে কী হবে?
মহাজাগতিক প্রাণী যদি আমার বাসার ছাদে ঘোরাঘুরি করে তা হলে সেটা করা যায় কিন্তু দূর গ্যালাক্সিতে তো আর এটা দিয়ে খবর পাঠানো যাবে না?
নিশীতা একটু সামনে ঝুঁকে বলল, কিন্তু হয়তো এই মহাজাগতিক প্রাণী কাছাকাছিই আছে! ঢাকা শহরেই আছে।
না, নেই। পৃথিবীতে মহাজাগতিক প্রাণী সত্যি সত্যি চলে আসার সম্ভাবনা এত কম যে ধরে নিতে পারেন তার সম্ভাবনা শূন্য। আমরা তবু চোখ কান খোলা রাখি। আপনি যেটা বলছেন সেটার ব্যাপারে।
রিয়াজ হঠাৎ চুপ করে গেল। নিশীতা বলল, সেটার ব্যাপারে?
নাহ্। কিছু না।
রিয়াজ বলতে চাইছে না বলে নিশীতা জোর করল না। সে তার হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল, বলল, আমি যদি মহাজাগতিক প্রাণী নিয়ে একটা স্টোরি করি আপনি একটা ইন্টারভিউ দেবেন?
ইন্টারভিউ? আমি?
হ্যাঁ।
রিয়াজ মাথা নাড়ল, বলল, না। সেটা একেবারেই ঠিক হবে না, মানুষ পাগল ভাববে। আর এসব ব্যাপার আসলে গোপনে করতে হয় সাধারণ মানুষের এগুলো জানা ঠিক নয়! তারা কখনোই এসব ব্যাপার ঠিকভাবে নিতে পারে না।
নিশীতা তর্ক করার জন্য কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল, বলল, ঠিক আছে আপনাকে আমি জোর করব না। কিন্তু যদি আপনি মত পাল্টান আমাকে জানাবেন, প্লিজ।
ঠিক আছে, জানাব।
আমার টেলিফোন নম্বর দিয়ে যাচ্ছি। নিশীতা তার ব্যাগ থেকে কার্ড বের করে রিয়াজের হাতে ধরিয়ে দিল। রিয়াজ অন্যমনস্কভাবে চোখ বুলিয়ে কার্ডটা তার শার্টের পকেটে রেখে দেয়। নিশীতা বুঝতে পারল নেহায়েত ভদ্রতা করে পকেটে রেখেছে, রিয়াজ নিজে থেকে তাকে টেলিফোন করবে না।
নিশীতা অবশ্য কল্পনা করে নি দুদিনের ভিতরেই সে রিয়াজের টেলিফোন পাবে, সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে, সম্পূর্ণ বিচিত্র পরিবেশে।
০৪. রিয়াজের বাসা থেকে ফিরে
রিয়াজের বাসা থেকে ফিরে এসেই পরের দিন নিশীতা আমেরিকান এজেন্সিতে খোঁজ করে জানার চেষ্টা করল সত্যি সত্যি আমেরিকা থেকে কিছু বিজ্ঞানী এসে হাজির হয়েছে কি না, কিন্তু সে ভালো সদুত্তর পেল না। পরদিন বড় বড় হোটেলগুলোতে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সেখানেও লাভ হল না, হোটেলগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় বাড়াবাড়ি রকমভাবে গোপন রাখে। পরদিন ভোরে সে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনে একবার খোঁজ নেবার পরিকল্পনা করছিল, কার সাথে যোগাযোগ করলে সবচেয়ে ভালো হয় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে অন্যমনস্কভাবে খবরের কাগজটি হাতে নিয়ে সে চমকে ওঠে। প্রথম পৃষ্ঠার মাঝামাঝি বক্স করে। একটা খবর ছাপা হয়েছে, খবরের শিরোনাম–শহরে রহস্যময় আলোর রেখা! নিচে লেখা। গত রাত বারোটার দিকে দক্ষিণ-পূর্ব আকাশ থেকে একটা রহস্যময় আলো ঢাকা শহরের বুকে নেমে এসেছে। রাতে ঝড়বৃষ্টি ছিল না কাজেই এটি বজ্রপাত নয়। আলোটি বজ্রপাতের মতো আঁকাবাকা নয়, একেবারে সরলরেখার মতো। মনে হয়েছে উত্তরার কাছাকাছি কোথাও আলোটি নেমে এসেছে। খোঁজখবর নিয়েও সেই এলাকায় কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায় নি। আলোটি কোথা থেকে এসেছে কেউ বলতে পারে নি। এটাকে উল্কাপাত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, যদিও উল্কাটির কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় নি।