রিয়াজ চমকে উঠে বলল, শুনেছ কী বলছে ফ্রেড? সে মানব শিশুকে বিনিময় করতে চাইছে। মানব শিশুর বদলে প্রযুক্তি চাইছে।
নিশীতা হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়াল বলল, রাহেলা কোথায়?
সবাই উঠে দাঁড়াল, চারপাশে তাকাল, কোথাও রাহেলাকে দেখা যাচ্ছে না। নিশীতা চাপা স্বরে ডাকল, রাহেলা, রাহেলা।
রাহেলা কোনো উত্তর করল না, হঠাৎ রিয়াজ চমকে উঠল, হাত দিয়ে দেখাল, ঐ যে দেখো।
সবাই অবাক হয়ে দেখল রাহেলা সোজা এগিয়ে যাচ্ছে। মহাকাশযানের নিচে নীলাভ আলোতে যে অতিপ্রাকৃত জগৎ তৈরি হয়ে আছে সে সেদিকে হেঁটে যাচ্ছে। সেখানে তার শিশু সন্তানকে আটকে রেখেছে–সে তাকে মুক্ত করে আনতে যাচ্ছে।
নিশীতা অবাক হয়ে দেখল রাহেলার মাঝে কোনো আতঙ্ক নেই, কোনো ভয়ভীতি দুর্ভাবনা নেই। কোনো বিভ্রান্তি নেই, দুর্বলতা নেই। সে স্থির পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে! কী করতে হবে সে ব্যাপারে সে আশ্চর্যরকম নিশ্চিত, আশ্চর্যরকম আত্মবিশ্বাসী।
» ১১. দূরে রাহেলার দিকে তাকিয়ে থেকে
দূরে রাহেলার দিকে তাকিয়ে থেকে নিশীতা বলল, এখন কী হবে?
রিয়াজ বুকে আটকে থাকা নিশ্বাসটা আটকে রেখে বলল, জানি না। তবে একদিক দিয়ে ভালোই হল। কীভাবে শুরু করব সেটা নিয়ে আর সিদ্ধান্ত নিতে হল না। রাহেলাই শুরু করে দিল।
কী সিদ্ধান্ত?
ফ্রেড লিস্টার আর মহাজাগতিক প্রাণী যে কথাবার্তা বলছে তার মাঝখানে আমাদের কথা বলা।
কীভাবে করব সেটা?
দেখা যাক রিয়াজ চিন্তিত মুখে বলল, ক্যাপ্টেন মারুফ।
বলুন।
ফ্রেড লিস্টার যেই মুহূর্তে রাহেলাকে দেখতে পাবে তখন টের পাবে আমরা এখানে চলে এসেছি। কিছু একটা করতে পারে তখন। আপনি সেটা সামলাবেন।
ক্যাপ্টেন মারুফ তার ঘাড়ে ঝোলানো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা হাতে নিয়ে বলল, ঠিক আছে। নিশ্চিন্ত থাকেন।
চমৎকার। রিয়াজ নিশীতাকে ডাকল, নিশীতা।
কী হল?
কাছে এস, তোমার সাহায্য দরকার এখন।
আমি? আমি কী করব?
তুমি কথা বলবে।
কী কথা বলব? কার সাথে কথা বলব?
মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে।
নিশীতা অবাক হয়ে বলল, আমি কীভাবে কথা বলব? আমি তো আপনার কোডিং সম্পর্কে কিছুই জানি না।
সেজন্যই তুমি কথা বলবে। কোডিং জানা থাকলে কথা বলা যায় না, কথাগুলোতে তখন এক ধরনের পক্ষপাত এসে যায়।
নিশীতা মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু আমি কী বলব?
তোমার যা ইচ্ছে। তুমি একজন মানুষ। তোমার সামনে একটি মহাজাগতিক প্রাণী। সে কিছু ক্রিমিনালের শরীর দখল করে নিয়েছে সেই শরীর ব্যবহার করে এখানে কাজ করছে। আমার ধারণা মানুষ সম্পর্কে তার হিসাবটি ভুল। এই প্রাণী ধরে নিয়েছে সব মানুষই বুঝি কব্জি কাটা দবির–ধরে নিয়েছে যারা ক্রিমিনাল তারা সত্যিকারের মানুষ, অন্যরা দুর্বল, অন্যরা অক্ষম। তার সেই ভুল ধারণা ভেঙে দিতে হবে।
নিশীতা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সেই ভুল ধারণা ভেঙে দেব?
হ্যাঁ। আর কেউ নেই। রিয়াজ নিশীতার দিকে একটা অত্যন্ত সংবেদনশীল মাইক্রোফোন এগিয়ে দিয়ে বলল, নাও কথা বলতে ভ্রু কর। নিশীতা অবাক হয়ে রিয়াজের দিকে তাকাল, রিয়াজ অধৈর্য হয়ে বলল, দেরি কোরো না রাহেলা পৌঁছে যাচ্ছে
নিশীতা মাইক্রোফোনটি নিয়ে ইতস্তত করে বলল, মহাজাগতিক প্রাণী আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছি, কিন্তু আমি জানি না তুমি আমার কথা বুঝতে পারছ কি না। যদি বুঝেও থাক তার কতটুকু বুঝেছ–কীভাবে বুঝেছ। পৃথিবীর পক্ষ থেকে তোমাকে অভিবাদন জানাচ্ছি।
রিয়াজ তার হেডফোনে নিশীতার কথা শুনছিল কোডিং করার পর সে কথাটি হল, এক চার এক পাঁচ নয়, দুই ছয় পাঁচ তিন পাঁচ। আমন্ত্রণ সম আমন্ত্রণ।
নিশীতা আবার বলল, খুব দুঃখের কথা তোমার মতো বুদ্ধিমান একটা প্রাণীর সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হল না। তুমি কব্জি কাটা দবিরের মতো একটা ক্রিমিনালকে পেয়ে ভাবলে সে পৃথিবীর মানুষের উদাহরণ। আসলে সে উদাহরণ ছিল না। পৃথিবীর সাধারণ মানুষ এত নিষ্ঠুর নয়, এত স্বার্থপর নয়, এত নীতিবিবর্জিত নয়।
রিয়াজ শুনল সেটি কোডিং করা হল, ভুল পরিচয় মানুষ।
নিশীতা বলল, তুমি কব্জি কাটা দবিরের মতো একজন একজন মানুষকে দখল করে নিলে, কী লাভ হল তাতে? পৃথিবীর সত্যিকার মানুষের সাথে তোমার পরিচয় হল না। সত্যিকার মানুষের সাথে পরিচয় হবে ভালবাসা দিয়ে। তুমি তার সুযোগ দিলে না। মানুষের সত্যিকার পরিচয় তোমার কাছে অজানা থেকে গেল।
নিশীতার কথাগুলো কোডিং হল এভাবে, দুই এক ছয় চার দুই শূন্য এক নয় আট নয় ভুল ভুল ভুল।
তুমি কেন এসেছ এখানে? পৃথিবীর মানুষের কাছে গোপন রেখে একটা ভয়ঙ্কর ত্রাস সৃষ্টি করে তোমার কী লাভ? এক বুদ্ধিমান প্রাণী অন্য বুদ্ধিমান প্রাণীকে কি ভয় পেতে পারে? নাকি পাওয়া উচিত?
কোডিং হল, ভয় ঠিক নয়, কারণ নয় বোধগম্য।
নিশীতা বলল, এখানে এসে তুমি ফ্রেড লিস্টারের মতো বাজে মানুষের সাথে ব্যবসা করতে নেমে গেলে, তুমি তাকে দেবে প্রযুক্তি আর সে তোমাকে দেবে একটা মানব শিশু, এই মানব শিশু দেওয়ার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তার কত বড় দুঃসাহস, সে মায়ের বুক খালি করে তোমাকে একটা শিশু দিয়ে দেয়?
কোডিং করা হল, অগ্রহণযোগ্য অসম বিনিময়।
নিশীতা আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ঠিক তখন স্পিকারে কথা ভেসে এল, আমন্ত্রিত চুক্তিবদ্ধ আমন্ত্রিত।