রিয়াজ ফ্রেন্ড লিস্টারের হাসি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তারপর বলল, তুমি আমাদের ধরে এনেছ কেন?
তোমরা বুদ্ধিমান মানুষ–এখনো সেটা বুঝতে পার নি?
তুমি আমাদেরকে যত বুদ্ধিমান তাব, আমরা তত বুদ্ধিমান নই।
ফ্রেড আবার সহৃদয় ভঙ্গিতে হেসে বলল, তোমাদের দুজনকে এখানে নিয়ে এসেছি যেন প্রজেক্ট নেবুলার কোনো সমস্যা না হয়।
প্রজেক্ট নেবুলা?
হ্যাঁ ফ্রেড ঘরের মেঝেতে পুরোনো বন্ধুর মতো সহজ ভঙ্গিতে বসে বলল, হ্যাঁ, আমরা নাম দিয়েছিলাম প্রজেক্ট নেবুলা, কারণ এটা শুরু হয়েছিল খুব কাছাকাছি একটা ছোটখাটো নেবুলা থেকে। ফ্রেড রিয়াজ হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি চলে আসার পরপরই আমরা প্রথম মহাজাগতিক একটা সঙ্কেত পেয়েছিলাম।
রিয়াজ সোজা হয়ে বসে বলল, সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি। এটা খুব গোপন খবর, সারা পৃথিবীতে সব মিলিয়ে ডজনখানেক মানুষের বেশি জানে না।
রিয়াজ কোনো কথা না বলে চুপ করে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে রইল, ফ্রেড মাথা নেড়ে বলল, অত্যন্ত কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিল সেটি।
কোনটি?
চতুর্থ মাত্রার বুদ্ধিমত্তার একটি প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে আনা।
রিয়াজ চিৎকার করে বলল, তোমরা চতুর্থ মাত্রার প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে এনেছ? তোমরা কি উন্মাদ?
আমাদের কোনো উপায় ছিল না।
কী বলছ তুমি? কিসের উপায় ছিল না?
ফ্রেড একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, দেশের অর্থনীতিতে মন্দাভাব এসে গেছে, দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে–আমাদের এটা থামানো দরকার। নতুন একটা টেকনোলজি দরকার। একেবারে নতুন যেটা পৃথিবীতে নেই।
নতুন একটা টেকনোলজির জন্য তুমি চতুর্থ মাত্রার একটা প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে এনেছ? মানুষ কত বড় নির্বোধ হলে এ রকম একটি কাজ করে?
ফ্রেড মুখে হাসি ফুটিয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, যখন ভালোয় ভালোয় সব শেষ হয়ে যাবে, মহাজাগতিক প্রাণী আমাদেরকে টেকনোলজি দিয়ে তাদের গ্যালাক্সিতে ফিরে যাবে তখন আমাকে কেউ নির্বোধ বলবে না।
তোমরা কি যোগাযোগ করতে পেরেছ?
হ্যাঁ পেরেছি। তোমার কোড ব্যবহার করে আজকে আমরা প্রথমবার মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করেছি। ফ্রেড কেমন জানি একটু শিউরে উঠে বলল, তুমি চিন্তা করতে পারবে না ব্যাপারটি কেমন ভয়ঙ্কর।
রিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি খুব ভালো করে জানি এটা কত ভয়ঙ্কর। তোমাকে নিশ্চয়ই অনুমতি দেওয়া হয় নি, তুমি অনুমতি ছাড়াই এটা করেছ?
হ্যাঁ।
সেজন্য তুমি বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেট দিয়েছ যদি ভালোয় ভালোয় যোগাযোগ করা না যায় নিউক্লিয়ার বোমা দিয়ে ধ্বংস করে দেবে?
হ্যাঁ। এর মাঝে নিউক্লিয়ার মিসাইল এখানে টার্গেট করে ফেলা হয়েছে।
রিয়াজ বিস্ফারিত চোখে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে রইল, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, পৃথিবীতে জনবসতিহীন কত জায়গা রয়েছে–সাহারা মরুভূমি, এন্টার্কটিকা, আন্দ্রিজ পর্বতমালা ওসব ছেড়ে তোমরা এ রকম ঘনবসতি একটা লোকালয় কেন বেছে নিলে?
তার কারণ প্রাণীটি জনবসতিহীন জায়গায় যেতে চাইছিল না। এটি মানুষের কাছাকাছি আসতে চাইছিল।
কেন?
কারণ মানুষকে ব্যবহার করে সে বিচরণ করতে চায়।
রিয়াজ আর্তচিৎকার করে উঠল, বুকের মাঝে আটকে থাকা একটা নিশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, মহাজাগতিক প্রাণী কি সেটা করতে পেরেছে?
ফ্রেড মাথা নাড়ল। বলল, হ্যাঁ। সেটা মানুষের শরীরকে ব্যবহার করে কিছু চলাচল করেছে। সীমিততাবে–কিন্তু করেছে।
যার অর্থ পৃথিবীর মানুষ এখন এই মহাজাগতিক প্রাণীর দয়ার ওপর নির্ভর করছে। এটি যদি আমাদের পৃথিবী দখল করে নিতে চায় তা হলে দখল করে নেবে?
ফ্রেড কোনো কথা না বলে তার হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে রইল। রিয়াজ চাপা স্বরে চিৎকার করে বলল, নির্বোধ আহাম্মক কোথাকার।
ফ্রেড খুব ধীরে ধীরে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মহাজাগতিক প্রাণী যখন তার টেকনোলজি আমার হাতে দিয়ে ফিরে যাবে তখন কেউ আমাকে নির্বোধ বলবে না।
তোমাকে সে কোন টেকনোলজি দেবে?
তাদের স্পেসশিপের আবরণটি যেটি দিয়ে তৈরি সেটা হলেই আর কিছু প্রয়োজন নেই। আমি ইঞ্জিনটার প্রক্রিয়াটাও পাওয়ার চেষ্টা করছি।
যদি না পাও?
না পেলে নাই। পৃথিবীতে যারা ঝুঁকি নেয় না তারা কোনো কিছু অর্জন করতে পারে না।
রিয়াজ হিংস্র গলায় বলল, মানুষ নিজের জীবনকে দিয়ে ঝুঁকি নিতে পারে–তুমি নিয়েছ অন্যের জীবনকে নিয়ে।
প্রজেক্ট নেবুলা অনেক বড় প্রজেক্ট। পৃথিবীর কিছু মানুষ বা অনেক মানুষের জীবনের এখানে কোনো মূল্য নেই।
তুমি কি মনে কর তোমার এই কাজকর্মকে ক্ষমা করা হবে?
প্রজেক্ট নেবুলার ভিতরের কথা খুব বেশি মানুষ জানে না। তোমরা দুজন জান। তোমাদের এই প্রজেক্টের কথা জানাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
রিয়াজ ভুরু কুঁচকে বলল, কেন আমাদের জানাতে আপত্তি নেই।
পুরো যোগাযোগটা করা হয়েছে তোমার কোড ব্যবহার করে–তোমার এটা জানার একটা নৈতিক অধিকার আছে।
এটাই কি একমাত্র কারণ?
ফ্রেড একটা নিশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকাল, বলল, না, অন্য কারণ আছে।
কী কারণ? ফ্রে
ড তার হাতের বড় ম্যানিলা এনভেলপটি রিয়াজের দিকে এগিয়ে দেয়, বলে, দেখ।
রিয়াজ এনভেলপটি খুলে চমকে উঠল। ভিতরে তার এবং নিশীতার খুব অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে বসে থাকার ছবি। কোনো একটি রেস্টুরেন্টে বসে দুজনে খাচ্ছে, সামনে বিয়ারের বোতল। রিয়াজ ছবিগুলো দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফ্রেডের দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, এগুলো কী?