মানুষটি এবারে নিশীতার দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে বলল, আপনাকে আমরা এখান থেকে চলে যেতে বলছি।
এটা ড. রিয়াজ হাসানের বাসা। তিনি আমাকে চলে যেতে বললে আমি অবশ্যই চলে যাব। নিশীতা রিয়াজের দিকে তাকাতেই রিয়াজ মাথা নেড়ে বলল, না–না–আপনাকে আমি যেতে বলছি না।
চমৎকার, তা হলে আমার এই মুহূর্তে চলে যাবার কোনো প্রয়োজন নেই। নিশীতা মুখে মধুর হাসি ফুটিয়ে তার ব্যাগ থেকে ডিজিটাল ক্যামেরাটা বের করে আনে। আমি কি আপনাদের একটা ছবি তুলতে পারি?
একসাথে কয়েকজন প্রায় চিৎকার করে বলল, না। খবরদার ছবি তুলবেন না।
নিশীতা চোখে-মুখে একটা বিস্ময়ের ভঙ্গি ফুটিয়ে বলল, মনে হচ্ছে খবরের কাগজের জন্য একটা খুব ভালো স্টোরি তৈরি হচ্ছে? আপনারা এখানে কেন এসেছেন জানতে পারি?
মানুষগুলো পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। কঠিন চেহারার মানুষটি বলল, আমরা একটি ইনভেস্টিগেশনে এসেছি। ব্যাপারটি গোপন। আমরা আপনাকে চলে যেতে বলছি।
আপনারা কারা?
সেটি আপনাকে বলতে আমরা বাধ্য নই।
নিশীতা রিয়াজ হাসানের দিকে ঘুরে তাকাল, আপনি কি জানেন এরা কারা?
না–মানে ঠিক পুরোপুরি জানি না। পুলিশ কিংবা আর্মি ইনটেলিজেন্সের লোক হতে পারে।
আপনার বাসায় ঢোকার জন্য সার্চ ওয়ারেন্ট এনেছে?
জানি না। আনলেও আমাকে দেখায় নি।
এই বিদেশীগুলোও কি আমাদের পুলিশ বা আর্মি ইনটেলিজেন্সের?
না। রিয়াজ বলল, একজন আমার পুরোনো সহকর্মী, ড. ফ্রেড লিস্টার।
ড. ফ্রেড লিস্টার মানুষটি নিজের নাম উচ্চারিত হতে শুনে রিয়াজ হাসানের দিকে ঘুরে তাকাল। নিশীতা ভুরু কুঁচকে ড. ফ্রেড লিস্টারের দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, আপনাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি?
ফ্রেড লিস্টার উত্তর দেবার আগেই কঠিন চেহারার মানুষটি রুক্ষ গলায় বলল, দেখুন মিস নিশীতা, আপনাকে আমি শেষবার বলছি, এখান থেকে যান। তা না হলে আপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিশীতা তার ব্যাগ খুলে সেলুলার ফোনটা বের করে দ্রুত কয়েকবার বোতাম টিপে কোথায় জানি ফোন করল! কঠিন চেহারার মানুষটি প্রায় ধমক দিয়ে বলল, আপনি কাকে ফোন করছেন?
নিশীতা তাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করল, হ্যাঁলো, শ্যামল দা, আমি নিশীতা। কালকের পত্রিকার ফাইনাল পেস্টিং কি হয়ে গেছে?
অন্যপাশের কথা শুনে নিশীতা মাথা নেড়ে বলল, আপনি আটকে রাখেন। প্রথম পৃষ্ঠায় নতুন লিড নিউজ যাবে, আপনাকে আমি ফোন করব। ভেরি ভেরি ইম্পরট্যান্ট। মোজাম্মেল ভাইকে জানিয়ে রাখেন। আর শোনেন, হোম ডিপার্টমেন্টে আপনার পরিচিত মানুষ আছে?
অন্যপাশের কথা শুনে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল, বলল চমৎকার। আমাদের সাহায্যের দরকার হতে পারে।
অন্যপাশ থেকে কিছু একটা বলল, শুনে নিশীতা শব্দ করে হেসে বলল, না–না– শ্যামল দা, আপনি ভয় পাবেন না। গতবারের মতো হবে না। আমি কোনো বিপদে পড়ব না।
টেলিফোনটা বন্ধ করে নিশীতা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে মধুরভাবে হেসে বলল, আমি আশা করছি আপনারা যেটা করছেন সেটা পুরোপুরি আইনসম্মত! না হলে অবশ্য আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো, একটা হট স্টোরি দেওয়ার ক্রেডিট পেতে পারি!
মানুষগুলো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের মাঝে কথা বলল, তারপর একজন এগিয়ে এসে রিয়াজ হাসানকে বলল, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ব্যাপারটি শুধু ন্যাশনাল নয়, ইন্টারন্যাশনালি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি সহযোগিতা না করেন সহযোগিতা আদায় কেমন করে করতে হয় আমরা জানি।
রিয়াজ হাসান কোনো কথা না বলে স্থির দৃষ্টিতে মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষগুলো এবারে বের হয়ে যাবার জন্য দরজার দিকে হাঁটতে থাকে। ফ্রেড লিস্টার রিয়াজ হাসানের কাছে এগিয়ে এসে নিচু গলায় ইংরেজিতে বলল, রিয়াজ, আমরা যে টিম এসেছি তার সাথে স্টেট ডিপার্টমেন্টের বব ম্যাকেঞ্জি বলে একজন লোক এসেছে। বব ম্যাকেঞ্জি কে জান?
কে?
আশির দশকে পাকিস্তানে ছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ব্লককে থামানোর জন্য সে পুরো পাকিস্তানকে কিনে নিয়েছিল। বব আমাকে বলেছে মোটামুটি সস্তাতেই কিনেছিল।
রিয়াজ শীতল চোখে ফ্রেড লিস্টারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাকে এসব কথা বলছ কেন?
কারণ বব এবারেও ডিপ্লোমেটিক ব্যাগ হিসেবে দুটি বড় বড় সূটকেস এনেছে। সুটকেস বোঝাই ডলার দিয়ে। সব নতুন এক শ ডলারের নোট। যাদের যাদের কিনতে হয় আমরা কিনে নেব। দেখতেই পাচ্ছ কিনতে শুরু করেছি!
রিয়াজ দাতে দাঁত ঘষে বলল, আমি যখন আমেরিকাতে তোমার সাথে কাজ করতাম তখনো তোমাকে ঘেন্না করতাম। এখনো ঘেন্না করি।
ফ্রেন্ড লিস্টার হা হা করে হেসে বলল, আমার বিরোধিতা করে তোমার কী অবস্থা। হয়েছে তো দেখেছ! আগের অবস্থার পুনরাবৃত্তি কোরো না রিয়াজ। বব ম্যাকেঞ্জি এর মাঝেই খুব উঁচু জায়গায় আমার জন্য খুবই ভালো ভালো বন্ধু যোগাড় করেছে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। ফ্রেড লিস্টার নিশীতাকে দেখিয়ে বলল, তোমার এই গার্লফ্রেন্ডকে ছারপোকার মতো পিষে মারবে। আমার একটা উপদেশ মনে রেখো–বন্ধু ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হয়। কোনো কোনো বন্ধু বিপদ থেকে রক্ষা করে আবার কোনো কোনো বন্ধু কিন্তু বিপদ ডেকে আনে।
তোমার মূল্যবান উপদেশের জন্য অনেক ধন্যবাদ ফ্রেড।