মানুষগুলো ঘুরে আমার দিকে তাকাল এবং আমি দেখতে পেলাম এরা সত্যিকারের মানুষ নয়–এগুলো সাইবর্গ। মাথার পাশে যান্ত্রিক করোটি, সেখানে নানা ধরনের টিউবে কপোট্রন শীতল করার তরল প্রবাহিত হচ্ছে। কারো কারো একটি চোখ কৃত্রিম, সেখানে লাল আলো জ্বলছে। সাইবর্গগুলো একবার আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে আবার মেয়েটিকে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকে। একটি সাইবর্গ তার শক্তিশালী হাত দিয়ে মেয়েটিকে প্রায় শূন্যে তুলে নিয়ে ফেলে দিল। আমি সাইবর্গগুলোর এক ধরনের কুৎসিত যান্ত্রিক হাসি শুনতে পেলাম।
কী করছ? কী করছ তোমরা? বলে চিৎকার করতে করতে আমি বালিয়াড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে সাইবর্গগুলোর দিকে যেতে থাকি। একটা শক্তিশালী সাইবর্গ তার বাম পা দিয়ে মেয়েটিকে বালুতে চেপে ধরে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে খসখসে গলায় বলল, তুমি কে? এখানে কেন এসেছ?
আমি কাছাকাছি একটা বালিয়াড়ির উপর দাঁড়িয়ে থেকে চিৎকার করে বললাম, আমি যেই হই না কেন, তুমি মেয়েটিকে ছেড়ে দাও।
মেয়েটিকে যদি ছেড়েই দেব তা হলে ধরে আনলাম কেন?
আমিও সেটা জানতে চাই। কেন ধরে এনেছ?
দেখার জন্যে। অনেক দিন মেয়ে দেখি না।
দেখার জন্যে পা দিয়ে মাটিতে চেপে ধরে রাখতে হয় না। তোমার গোবদা পা সরাও–মেয়েটিকে ছাড়।
সাইবর্গটি একটা নোংরা মুখভঙ্গি করে বলল, অন্যরকম করে দেখতে চাই।
আমি ক্রুদ্ধ গলায় বললাম, বাজে কথা বলো না। সাইবর্গ মাত্রই নপুংসক। মিছিমিছি অন্যরকম ভান করো না।
সব সময় তো নপুংসক ছিলাম না এখন না হয় হয়েছি।
অনেক বাজে কথা হয়েছে। এখন মেয়েটিকে ছেড়ে দাও।
সাইবর্গটি আমার কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে অন্য সাইবর্গগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, এই মানুষটি খুব দুর্ব্যবহার করছে।
সাইবর্গগুলো সম্মতির ভঙ্গি করে মাথা নাড়ল। মেয়েটিকে মাটিতে চেপে রাখা সাইবর্গটি বলল, সাইবর্গের সাথে দুর্ব্যবহার করলে তার শাস্তি পেতে হবে। এটাকেও ধরে আন।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে সাইবর্গগুলোকে লক্ষ করলাম, দেখতে ভিন্ন মনে হলেও এগুলো আসলে হাইব্রিড তিন মডেলের। এই মডেলগুলোর বড় ধরনের সমস্যা আছে। তা ছাড়াও এদের মেটাকোড এত সহজ যে ইচ্ছে করলেই এগুলোকে আমি চোখের পলকে বিকল করে দিতে পারি। কিন্তু এরা কী করে আমার দেখার ইচ্ছে করল, আমি কয়েক পা এগিয়ে দুই হাত কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে বললাম, আমি দশ সেকেন্ড সময় দিচ্ছি নোংরা আবর্জনা কোথাকার! এর মাঝে যদি এখান থেকে বিদায় না হও তোমাদের কপোট্রনের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেব।
দুটি সাইবর্গ মুখে অশ্লীল কথার তুবড়ি ছুটিয়ে বালিয়াড়ি ভেঙে আমার কাছে ছুটে আসতে থাকে, আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম, আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পূর্বমুহূর্তে ফিসফিস করে বললাম, কালো গহ্বরে এনিফর্মের নৃত্য।
সাইবর্গ দুটি থমকে দাঁড়িয়ে গেল, একজন ফিসফিস করে বলল, কী বললে? কী। বললে তুমি?
আমি বলেছি কালো গহ্বর অর্থাৎ ব্ল্যাকহোলে এনিফর্মের নৃত্য।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সাইবর্গ দুটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং স্থির হয়ে দাঁড়িয়েই রইল। আমি পা দিয়ে ধাক্কা দিতেই একটি সাইবর্গ বালিয়াড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। আমি দ্বিতীয় সাইবর্গটিকে গুঁড়িয়ে দেবার আগে কৌতূহলী হয়ে তার ব্যাগটিতে উঁকি দিলাম, সেখানে একটি মাঝারি আকারের অস্ত্র লুকানো আছে। কাজটি ঘোরতর বেআইনি, সাইবর্গকে এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের মাঝে আনা যায় নি, তাদের কাছে কখনোই অস্ত্র থাকার কথা নয়। আমি ব্যাগটি থেকে অস্ত্রটি বের করে তাকে ধাক্কা দিতেই এই সাইবর্গটিও বালিয়াড়ি থেকে নিচে গড়িয়ে পড়ল।
অন্য দুটি সাইবর্গ এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, আমি অস্ত্রটি তাদের দিকে তাক করে বললাম, দশ সেকেন্ডের আর দুই সেকেন্ড বাকি আছে আবর্জনার পিণ্ড। এই মুহূর্তে দূর হও।
আমার কথায় এবারে ম্যাজিকের মতো কাজ হল। সাইবর্গ দুটি মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে ছুটতে ছুটতে পালিয়ে গেল, এরা দৌড়ে অভ্যস্ত নয়, বিশেষ করে বালুর উপরে দৌড়ানো খুব কঠিন, সাইবর্গ দুটি কয়েকবার পা হড়কে নিচে পড়ে গিয়েও থামল না।
আমি বালিয়াড়ির ঢাল বেয়ে নিচে নেমে এলাম। মেয়েটি ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়ে শরীর থেকে বালু ঝাড়ছে। আমি কাছে যেতেই বড় বড় চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিশ্বাস ফেলে বলল, ধন্যবাদ। তুমি না এলে যে কী সর্বনাশ হত!
কিছু হত না। আমি হাসার ভঙ্গি করে বললাম, আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ব্যর্থ আবিষ্কার হচ্ছে সাইবর্গ। মানুষ আর যন্ত্র মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে লাভের মাঝে লাভ হয়েছে এটা মানুষও হয় নি যন্ত্রও হয় নি।
তুমি কেমন করে জান?
আমি জানি। এই ব্যাপার নিয়ে আমার অনেক দিনের কৌতূহল। কিছু কিছু জিনিস আমি জানি।
মেয়েটি মাথার এলোমেলো চুলকে হাত দিয়ে খানিকটা বিন্যস্ত করার চেষ্টা করে বলল, সেটি অবিশ্যি দেখতে পেলাম। এই দুটি সাইবর্গকে কী সহজে কাবু করে ফেললে।
মেটাকোড জানলে তুমিও পারবে। আমি হাত দিয়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, আমার নাম শ্রাতুল। কিন্তু আমি সেটা প্রমাণ করতে পারব না। আমার শরীরে কোনো ট্রাকিওশান নেই।