নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না আলেক্সেই। আমেরিকার নীতি তার পিলে চমকে দিয়েছে।
সিনেটর পিটের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, তেলে আমেরিকা স্বয়ংসম্পূর্ণতা পাবে কি না। মেক্সিকো কি আসলে আমেরিকার বন্ধু? সন্দেহ আছে।
মিসরে রয়েছে ধর্মান্ধ নেতা আখমত ইয়াজিদ। কিন্তু মেক্সিকোতেও তো রয়েছে উগ্র মৌলবাদী নেতা, টপিটজিন। আজটেক সাম্রাজ্যের মতো মেক্সিকোয় জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান চায় সে। ইয়াজিদের মতোই তার দেশেও টপিটজিনের রয়েছে বিশাল সমর্থন। বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা এখন সময়ের ব্যাপার।
সমস্ত উন্মাদ, ধর্মান্ধ নেতাগুলো আচমকা কোত্থেকে উদয় হচ্ছে? এই শয়তানগুলোকে কে নাচাচ্ছে? হাতের কাঁপুনি বন্ধ করতে বেগ পেতে হলে সিনেটর জর্জ পিটকে।
.
১২.
গভীর রাতের ভৌতিক নিস্তব্ধতার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড মূর্তিগুলো, চোখহীন কোটর মেলে তাকিয়ে আছে দুর্গম অনুর্বর পাহাড় আর প্রান্তরের দিকে, যেন অপেক্ষা করছে তাদের পাষাণ শরীর প্রাণ সঞ্চার করার জন্য অজানা কোনো অস্তিত্বের উপস্থিতি ঘটবে। নগ্ন, আড়ষ্ট মূর্তিগুলো, এক একটা দোতলা বাড়ির সমান উঁচু, গম্ভীর মুখের চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে আছে গোল চাঁদের উজ্জ্বল আলোয়।
এক হাজার বছর আগে মূর্তিগুলো একটা মন্দিরের ছাদের অবলম্বন হিসেবে ছিল। মন্দিরটা ছিল পাঁচ ধাপে ভাগ করা একটা পিরামিডের মাথায়। কোয়েটজালকোটল পিরামিড আজও টিকে আছে, তবে কালের আঁচড়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে মন্দিরটা। জায়গাটা টুলার টলটেক শহরে। নিচু একটা পাহাড়শ্রেণীর পাশেই এই প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, হারিয়ে যাওয়া শখের দিনে এই শহরে বাস করত ষাট হাজার মানুষ।
খুব কম টুরিস্টই আসে এদিকে, একবার এলে দ্বিতীয়বার কেউ আসতে চায় না জায়গাটার ভৌতিক পরিবেশ আর নির্জনতার জন্য। বিধ্বস্ত শহরের আনাচেকানাচে বেটপ ছায়াগুলো মনে সন্দেহের উদ্রেক করে, গোঙানির শব্দটা বাতাসের কি না ঠিক বোঝা যায় না। এসব কিছু অগ্রাহ্য করে নিঃসঙ্গ একজন মানুষ পিরামিডের খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে চূড়ায় বসানো মূর্তিগুলোর দিকে। ভদ্রলোকের পরনে থ্রিপিস স্যুট, হাতে একটা লেদার অ্যাটাচি কেস।
পাঁচটা টেরেসের প্রতিটিতে থেমে জিরিয়ে নিলেন তিনি, পাথুরে দেয়ালের গায়ে খোদাই করা শিল্পকর্ম দেখলেন। বিশাল সরীসৃপের হাঁ করা মুখ থেকে উঁকি দিচ্ছে মানুষের মুখ, ঈগলের ঠোঁটে ক্ষতিবিক্ষত হচ্ছে মানুষের হৃৎপিণ্ড। আবার উঠতে শুরু করলেন ভদ্রলোক, পেরিয়ে এলেন মানুষের খুলি আর হাড় খোদাই করা একটা বেদি। এগুলো প্রাচীন প্রতীক চিহ্ন, ক্যারিবিয়ান জলদস্যুরা ব্যবহার করত।
পিরামিডের মাথায় উঠে চারদিকে তাকালেন তিনি। ঘামছেন, হাঁপিয়ে গেছেন। না, নিঃসঙ্গ নন ভদ্রলোক। ছায়া থেকে বেরিয়ে এল দুটো মানুষ্য মূর্তি, সার্চ করল তাঁকে। তারপর তারা হাত ইশারায় অ্যাটাচি কেসটা দেখল। বিনীত ভঙ্গিতে সেটা খুললেন ভদ্রলোক। ভেতরের জিনিসপত্র এলোমেলো করল লোক দু’জন, কোনো অস্ত্র না পেয়ে নিঃশব্দে ঘুরে দাঁড়িয়ে মন্দির মঞ্চের কিনারা লক্ষ করে হাটা ধরল।
পেশিতে ঢিল পড়ল গাই রিভাসের। অ্যাটাচি কেসের হাতলে লুকানো বোতামে চাপ দিলেন তিনি, ঢাকনির ভেতর আড়াল করা ছোট্ট টেপ রেকর্ডারটা চালু হলো।
দীর্ঘ এক মিনিট পর মূর্তিগুলোর একটা ছায়া থেকে বেরিয়ে এল একজন লোক। মেঝে পর্যন্ত লম্বা সাদা কাপড়ের আলখেল্লা পরে আছে সে। লম্বা চুল ঘাড়ের কাছে বাধা। চোখ আর নাকের ওপর গোটা কপালজুড়ে বহুরঙা নকশা করা মখমলের গোল একটা চাকতি, চাকতির দুধার থেকে দুটো চওড়া ফিতে বেরিয়েছে, পেঁচিয়ে আছে কানের ওপর দিয়ে মাথার পেছনটাকে। মাথার সামনের অংশে রেশম আর পাখির পালক খাড়া করে বাঁধা। পা দুটো আলখেল্লার ভেতর, তবে চাঁদের আলোয় বাহুতে পরা বৃত্তাকার ব্যান্ড দুটো পরিষ্কার দেখা গেল, সোনার ওপর মণিমুক্তোখচিত।
তেমন লম্বা নয় সে, মসৃণ গোল ধাচের মুখাবয়ব ইন্ডিয়ান পূর্বপুরুষের কথা মনে করিয়ে দেয়। কালো চোখ দিয়ে সামনে দাঁড়ানো ভদ্রলোককে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করল সে। লোকটার বয়স ত্রিশের বেশি না। লোকটা বুকের ওপর হাত দুটো ভাঁজ করে বলল,
আমি টপিটজিন।
আমার নাম গাই রিভাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাঁর বিশেষ দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন আমাকে। রিভাস আশা করেছিলেন আরও বয়স্ক হবে টপিটজিন।
নিচু একটা পাঁচিলের দিকে তাকাল টপিটজিন। কথা বলার জন্য ওখানে আমরা বসতে পারি।
মাথা ঝাঁকিয়ে এগিয়ে গেলেন রিভাস, পাঁচিলের মাথায় বসলেন। সাক্ষাৎদানের জন্য অদ্ভুত একটা জায়গা বেছে নিয়েছেন আপনি।
হ্যাঁ, তার কারণও আছে টুলা আমার উদ্দেশ্য পূরণ করবে। কোনো কারণ নেই, হঠাৎ করে তার চেহারা আর গলার সুরে আক্রোশ ও ঘৃণা ফুটে উঠল। তোমার প্রেসিডেন্ট আমাদের সাথে প্রকাশ্যে আলোচনায় বসতে ভয় পায়। সে একটা কাপুরুষ, সে তার মেক্সিকো সিটির বন্ধুদের অসন্তুষ্ট করতে সাহস পায় না।
টোপ এড়িয়ে যাবার অভিজ্ঞতা রয়েছে রিভাসের। তিনি নরম সুরে বললেন, আপনি আমাকে সাক্ষাৎদানের রাজি হওয়ায় প্রেসিডেন্ট বলেছেন আমি যেন তার কৃতজ্ঞতা আপনার কাছে পৌঁছে দিই।