প্রায় দুপুর হয়ে গেছে, জেন্টলমেন। লাঞ্চের আগে আমরা কেন একটা বোতল খুলে ওয়াইন পান করি না? সেই সুযোগে পুরো ঘটনাটাও শোনা যাবে।
.
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস ওটস, প্রেসিডেন্টের ন্যাশনাল সিকিউরিটি উপদেষ্টা অ্যালান মারসিয়ার ও জুলিয়াস শিলারও যোগ দিলেন লাঞ্চে। লাঞ্চ শেষ করে ফল ও মিষ্টি খাছেন সবাই, জেনারেল ডুজের পাঠানো একটা রিপোর্ট প্রেসিডেন্টের সামনে টেবিলের ওপর রাখলেন অ্যালান মারসিয়ার!
পড়ার সময় হাতের ফর্কটা সারাক্ষণ নাড়াচাড়া করলেন প্রেসিডেন্ট। তারপর তিনি মুখ তুললেন, একাধারে আনন্দ ও বিস্ময় ফুটে উঠল চেহারায়। টপিটজিন।
ব্যাটারটার সাথে পুরোপুরি জড়িত সে, মার্টিন ব্রোগান বললেন : জেনারেল ব্রাভো আর মেক্সিকান আতঙ্কবাদীদের সে-ই তো পাঠিয়েছে।
তার মানে দুই ভাই আলোচনা করে লেডি ফ্ল্যামবোরোকে হাইজ্যাক করেছিল, বললেন প্রেসিডেন্ট।
মাথা ঝাঁকিয়ে ডেইল নিকোলাস বললেন, তবে ব্যাপারটা প্রমাণ করা সহজ হবে না।
অপারেশনের পেছনে মাস্টারমাইন্ড কে, তার পরিচয় জানা গেছে।
লোকটার ওপর আমরা একটা ফাইল তৈরি করেছি, মারটিন ব্রোগান জানালেন। ফাইলটা তিনি বাড়িয়ে দিলেন প্রেসিডেন্টের সামনে। হাইজ্যাক করার পর ক্যাপটেনের ছদ্মবেশ নিয়েছিল, তারপর মুশোখ পরে। তবে পিট তার চেহারা দেখেছে। সে তার নাম জানিয়েছে সুলেমান আজিজ ওমর।
জুলিয়াস শিলার বললেন, লোকটা সম্পর্কে যা শুনেছি, মনে হয় না ওটা তার আসল নাম।
মার্টিন ব্রোগান মাথা নাড়লেন। আসল বলেই মনে হয়। তার অতীত ইতিহাসও উদ্ধার করতে পেরেছি আমরা। ইন্টারপোলও তাকে এ-নামে চেনে। সুলেমান আজিজ নিশ্চিতভাবে ধরে নিয়েছিল, মি, পিট মারা যাচ্ছেন, তাই নামটা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি সে।
ছোট হলো প্রেসিডেন্টের চোখ জোড়া। ফাইলে দেখছি, সরাসরি ও পরোক্ষভাবে পঞ্চাশটার ওপর খুনের সাথে জড়িত লোকটা, তার বেশির ভাগ শিকার খ্যাতনামা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এ কীভাবে সম্ভব?
এই পেশায় ও সবার সেরা।
অকুতোভয় আতঙ্কবাদী।
আততায়ী, সংশোধন করলেন মারটিন ব্রোগান। সুলেমান আজিজ শুধু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে অভ্যন্ত। কোল্ড-ব্লাডেড মার্ডারার বলতে যা বোঝায়, সে তাই। গানটা আপনারা সবাই শুনেছেন, তাই না… নো বডি ডাজ ইট বেটার। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড এত নিখুঁত যে দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মুসলমান হলেও ফ্রেঞ্চ, জার্মান, এমনকি ইসরায়েলিদের হয়েও ভাড়া খাটে সে। তার পেশায় সে-ই সবচেয়ে বেশি টাকা পায়।
ধরা পড়েছে?
না, স্যার, স্নান গলায় বললেন মার্টিন ব্রোগান। নিহত বা আহতদের মধ্যে পাওয়া যায়নি তাকে।
পালিয়েছে? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইলেন প্রেসিডেন্ট।
এখনও যদি বেঁচে থাকে, বেশি দূর পালাতে পারেনি, তাকে আশ্বস্ত করলেন মারটিন ব্রোগান। ডার্ক পিটের ধারণা, তিনি অন্তত তিনটে বুলেট ডুবিয়েছেন তার শরীরে। অত্যন্ত জোরাল ম্যানহান্ট-এর আয়োজন করা হয়েছে, ওই দ্বীপ থেকে পালানো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাকে আমরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধরতে পারব।
তাকে দিয়ে যদি কথা বলানো যায়, রীতিমতো একটা ইন্টেলিজেন্স বিপ্লব ঘটে যাবে, প্রেসিডেন্ট বললেন।
সন্ত্রাসবাদীদের আর কেউ বেঁচে নেই?
আটজনকে ইন্টারোগেট করা যাবে, তবে তারা শুধু সুলেমান আজিজের ভাড়া করা মার্সেনারি, ইয়াজিদের ফ্যানাটিক অনুসারী নয়।
সুলেমান আজিজ যে আখমত ইয়াজিদ আর টপিটজিনের হয়ে কাজ করছিল সেটা প্রমাণ করার জন্য ওদের স্বীকারোক্তি দরকার হবে আমাদের, বললেন প্রেসিডেন্ট, তবে মোটেও আশাবাদী বলে মনে হলো না তাকে।
জুলিয়াস শিলার হতাশ হতে রাজি নন। ভালো দিকও কম নয়, মি, প্রেসিডেন্ট। জাহাজ ও জিম্মিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হাসান জানেন, আখমত ইয়াজিদই তাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এখন তিনি শয়তানটার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগবেন।
অ্যালান মারসিয়ার সায় দিয়ে বললেন, প্রেসিডেন্ট হাসানকে গোবেচারা মনে করার কোনো কারণ নেই, তার সাথে কেউ বেঈমানি করলে কীভাবে সত্যিকার নোংরা হতে হয় তিনি জানেন।
ডগলাস ওটস্ ঘন ঘন মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, হাসান হয়তো বিদ্রোহের অভিযোগে ইয়াজিদের বিচার করার ঝুঁকি নেবেন না, কারণ তাতে দাঙ্গা বেঁধে যেতে পারে। তবে ইয়াজিদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য খুন ছাড়া বাকি সব কিছুই করবেন তিনি।
আখমত ইয়াজিদের রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস করার জন্য সেটা যথেষ্ট হবে, ভবিষ্যদ্বাণী করলেন মারটিন ব্রোগান। মিসরে মৌলবাদীদের মধ্যেও দুটো ভাগ আছে, বেশির ভাগই মধ্যপন্থী, সন্ত্রাস পছন্দ করে না। সব ফাঁস হয়ে গেলে ইয়াজিদের দিকে পেছন ফিরবে তারা, ওদিকে প্রেসিডেন্ট হাসান পার্লামেন্ট থেকে পেয়ে যাবেন বিপুল সমর্থন। সামরিক বাহিনীও আইভরি টাওয়ার থেকে নেমে এসে আবার হাসানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে।
ওয়াইনের গ্লাসে শেষ একটা চুমুক দিয়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, শুনতে ভালোই লাগছে, স্বীকার করছি।
স্বরাষ্ট্রসচিব ওটস্ খুক করে কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
গম্ভীর সুরে বললেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে না, এ প্রতিশ্রুতি কেউ কামরা দিতে পারি না। হয়তো কিছু সময়ের জন্য চাপা পড়ে যাবে ইয়াজিদের বিষয়টা, কিন্তু হাসানের অনুপস্থিতির সময়টাতে মৌলবাদী দলগুলো লেবার পার্টির সাথে একজোট হয়েছে। আমার ধারণা, হাসানের সরকার উচ্ছেদের পেছনে কাজ করবে এরা। আমার লোকেরা মনে করছে, আঠেরো থেকে চব্বিশ মাসের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থান ঘটেতে যাচ্ছে মিসরে। আমার পরামর্শ হলো, আমরা বরঞ্চ হাত গুটিয়ে অপেক্ষা করি, মি. প্রেসিডেন্ট। অন্য কারো কথা ভাবি।