শ– শোনো, আমাদের কলকাতায় আমরা এভাবেই বলি।
ত–মানে?
শ–মানে আমরা প্লাস দিয়ে বয়স বলি। ধরো ষাট প্লাস, বাষট্রি প্লাস।
ত– কিন্তু ও তো প্লাস লেখেনি। লিখেছে বাহান্ন। আর প্লাস বললেও তুমি তো পঞ্চাশ প্লাস বলবে আমাকে, বাহান্ন তো নয়।
শ– বাহান্ন তো পঞ্চাশের পরই আসে। বাহান্নই তো।
ত– বাহান্ন কী করে হলো? তুমি তো সেদিন আমার পঞ্চাশ জন্মোৎসব পালন করতে এলে। এর পর তো এক বছরও পার হয়নি। একান্নর উৎসবে তুমি বলেছো আসতে পারবে না। এখানে বাহান্নটা তুমি পাচ্ছো কোথায়?
শ–পঞ্চাশ হয়েছে। এখন একান্ন হবে। আর একান্ন হলে আমরা একান্ন প্লাস বলি, তার মানে বাহান্ন।
ত– কিন্তু আমার তো এখনও একান্ন হয়নি। একান্ন না হলে তো একান্ন প্লাস হয় না। আর একান্ন প্লাস যার হয়নি, তার বাহান্ন কী করে হলো?
শ– আমরা কলকাতায় এভাবেই বলি।
ত– আবারও বলছো ওভাবেই বলো। কীভাবে বলো, যার সবে পঞ্চাশ হলো, তাকে বাহান্ন বছর বয়স বলো?
শ– তুমি বাহান্ন না হলে আনন্দবাজার লিখবে কেন বাহান্ন?
ত– সেটাই তো বলছি। লেখাটা তো উচিত হয়নি। তোমার কাছে এখনও কি মনে হচ্ছে আমার বয়স বাহান্ন?
শ– কাগজে তো সেরকমই লিখলো। তোমার বয়স নিশ্চয়ই বাহান্ন।
ত– তাহলে আমার সত্যিকারের জন্মসাল কি ভুল?
শ– সে কী করে জানবো?
ত–তুমি কি তাহলে মনে করছো আনন্দবাজারে সংযুক্তা বসু নামে যে মহিলাটি চাকরি করে, যাকে আমি চিনিনা, আমার যা বয়স লিখেছে, সেটি ঠিক, আর আমার বয়স যা আমার জন্ম থেকে আমার মা জানে, বাবা জানে, যে জন্মসাল আমার পাসপোর্টে, বইএর জ্যাকেটে, আমার সার্টিফিকেটে, সমস্ত পরিচিতিতে– সব ভুল?
শ– কাগজে কি এমনি এমনি লিখবে?
ত– তুমি যে আমার জন্মদিন পালন করতে এলে, সেটা কত বছরের জন্মদিন ছিল?
শ– পঞ্চাশ।
ত– তুমি যে এসেছিলে, একবছর পার হয়ে গেছে?
শ– না।
ত– তাহলে আমার বয়স কত এখন?
শ– বাহান্ন।
ত– আমার বয়স তো পঞ্চাশ হয়েছে। তাহলে নিশ্চয়ই পঞ্চাশ।
শ– কিন্তু আনন্দবাজারে তো বাহান্ন লিখেছে।
ত– আনন্দবাজারে যেহেতু বাহান্ন লিখেছে, তোমার হিসেবে না মিললেও আমার বয়স বাহান্ন?
শ–তোমার বয়স যদি বাহান্ন না হয়, তাহলে আনন্দবাজার কেন বাহান্ন লিখবে?
ত– সেটাই তো বলছি, ওরা ভুল করেছে।
শ– ভুল করেছে? কাগজ ভুল করেছে?
ত– হ্যাঁ। কেন? তোমার কি মনে হয় আমার বয়সের ব্যাপারে আমি ভুল করতে পারি, কিন্তু কাগজ ভুল করতে পারে না।
শ– কাগজ ভুল করবে কেন?
ত– আচ্ছা বাদ দাও, একটা কথা বলোতো, আমি কলকাতা ছাড়ার পর তুমি এবং আমার আরও বন্ধুরা তো একটা অভিযোগই করো যে আমি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করি না। কাউকে ফোন করি না। ইমেইল করি না। অভিযোগ করো না?
শ– হ্যাঁ, তা তো করিই। তুমি তো কখনও কোনও বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করো না।
ত– আর ফেসবুকে, টুইটারে?
শ– কত মেসেজ রেখেছি ফেসবুকে, কোনওদিন কোনও উত্তর দাওনি। তোমার বন্ধুরা এখন কোনও উত্তর আশাও করে না। আমরা সবাই জানি তুমি কোনও মেসেজের উত্তর দেবে না। কিন্তু তাতে কী! তোমাকে সবাই আমরা ভালোবাসি। তুমি লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকো, ইওরোপ আমেরিকায় কদিন পর পরই যাচ্ছো লেকচার দিতে, তোমার মতো ব্যস্ত লেখক কজন আছে! তুমি আমাদের ফোন করবে, এসএমএস করবে, ইমেইল করবে, ফেসবুকে আসবে, স্কাইপে আসবে, সত্যি বলছি, কল্পনার বাইরে আমাদের। তুমি মন দিয়ে লেখো, তোমার কাজ করো, সেটাই চাই। যোগাযোগ আমরাই করে নেবো। সাতদিন ফোন না ধরলেও একদিন তো ধরবে। এ কি আর আজ থেকে? আমরা অভ্যস্ত এই নিয়মে।
ত– তাহলে আনন্দবাজারের এই লেখাটা তোমার ভালো লাগলো কেন?
শ– এতে লেখা ভালো না লাগার কী আছে? তোমাকে নিয়ে কতদিন পর লিখলো।
ত– কাগজে তো লিখেছে, আমি নাকি বন্ধুদের সঙ্গে খুব যোগাযোগ করি।
শ– হ্যাঁ লিখেছে। নিশ্চয়ই যোগাযোগ করো। তা না হলে লিখবে কেন?
ত–তুমি তো একটু আগে বললে, আমি যোগাযোগ করি না কোনও বন্ধুর সঙ্গে।
শ– করো না। কিন্তু হয়তো হয়তো করো।
ত– তুমি তো আমার বাড়িতে অনেকদিন থেকেও গেছো, দেখেছো কারও সঙ্গে কনটাক্ট করতে?
শ– না তা দেখিনি। সাংবাদিকদের মতো কি ওভাবে দেখতে জানি? সাংবা দিকরা অনেক বড় মানুষ। আমরা তুলনায় অতি তুচ্ছ, অতি সাধারণ লোক। তুমি সেলিব্রিটি হয়ে আমাদের সঙ্গে মিশছো। কজন সেলিব্রিটি মিশবে এভাবে?
ত– তাহলে মনে করছো তোমাদের সঙ্গে নেটে যোগাযোগ করি, আড্ডা দিই, যেটা তুমি এবং আমি জানি না, কিন্তু কাগজওয়ালারা জানে?
শ– কাগজের লোকেরা অনেককিছু জানে।
ত– তাহলে এটাও, এই কটাক্টের ব্যাপারটাও, তোমার মনে হচ্ছে ঠিক লিখেছে?
শ– আনন্দবাজার কেন ঠিক লিখবে না?
ত– এরকম হতে পারে না যে ওরা ভুল লিখেছে?
শ– আনন্দবাজার?
ত– হ্যাঁ আনন্দবাজার।
শ– জানি আনন্দবাজারের ওপর তোমার অনেক রাগ আছে..।
ত– কেন ভাবছো আমি রেগে বলছি এসব কথা? আমার কথায় তুমি কোনও যুক্তি পাচ্ছো না? বন্ধুরা-চেনা পরিচিতরা সবাই বলে, আমি যোগোযোগ করি না। আমিও জানি আমি যোগাযোগ করি না। সেখানে যে ওভাবে লিখে দিল, আমি বন্ধু দের সঙ্গে যোগাযোগ করি সারাক্ষণ, তাতে তোমার মনে হয়না ওরা একটা ভুল তথ্য ছাপিয়েছে? নাকি যেহেতু এটা ছাপার অক্ষরে দেখেছো, তাই তুমি বিশ্বাস করছো, ওরা যা লিখেছে, সেটাই ধ্রুব সত্য, আর আমি যা জানি, তুমি যা জানো, আমি যা দেখছি, তুমি যা দেখেছো, সব মিথ্যে, ভুল?