ওর হাসিটা উবে গেল। এক সময়ে ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তবু বেশ কয়েক হাজার হবে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই চুরি শুরু হয়েছে।
শুনেছি। কিন্তু কর্মচারীরা এটা থামাবার চেষ্টা করে না?
ওরা চেষ্টা করেছিল ঠিকই, কিন্তু যারা চেষ্টা করল, তারা বেশিদিন টিকল না। পটাপট মারা পড়ল। মেয়েটার স্বরে তিক্ততা। এই র্যাঞ্চে একজন শক্ত ফাইটিঙ ফোরম্যানের দরকার। যে এটাকে সত্যিই চালাতে পারবে।
হয়তো। আবার হয়তো না। ওই ধরনের জিনিসে অনেক ঝামেলা আসতে পারে, যদি তোমার ফোরম্যানের ভাল বিবেচনাও না থাকে।
শেলী যদি সব সময়ে বেন-এর পক্ষ না নিত তাহলে আমরা একজন পেতাম। মেয়েটার চোখ দুটো জ্বলে উঠল। জেরি সমার্সকে কাজে নেয়ার জন্যে বেনকে আমি বহুবার বলেছি। উপযুক্ত লোক। সবাইকে ঠাণ্ডা করতে ওর বেশি সময় লাগত না। তখন আর কেউ আমাদের ওপর কথা বলতে পারত না।
সমার্স? অবাক হলো রনি। সতর্ক নজরে মেয়েটাকে দেখল সে। হয়তো কাজটার জন্যে ও-ই ঠিক মানুষ হবে। কিন্তু আমার তা মনে হয়নি, ম্যাম। অবশ্য আমি এখানে নতুন। লোকটা কি করে?
করে? মুহূর্তের জন্যে হতবুদ্ধি হয়ে রনির দিকে চেয়ে থাকল লিসা। কি বোঝাতে চাচ্ছ?
ওর পেশাটা কি? ও কি কাউহ্যাণ্ড?
হ্যাঁ, ওই কাজও করেছে সে। কিন্তু বর্তমানে কিছু করছে না।
বোঝার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল রনি। বুঝলাম। টপারের পিঠ থেকে জিন নামাল সে। হ্যাঁ, ওটা খুব ভাল পেশা-কিন্তু ওতে টাকা নেই। মানুষ ওটা বেশিদিন করতে পারে না। টাকা ফুরিয়ে যায়। অন্য কোন পেটের ধান্ধা করতে হয়। কিন্তু হয়তো ওর বেশি টাকার প্রয়োজন নেই-বন্ধু-বান্ধবের থেকেই সেটার ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে।
মেয়েটা খেপে উঠল। কী? কেন, ওর সম্পর্কে এমন একটা কথা তুমি কিভাবে বললে?
নিষ্পাপ চেহারা রাখার চেষ্টা করল রনি। কঠিন কথাটা সে কেন যে বলেছে, তা সে নিজেও জানে না। মুহূর্তের জন্যে তার খারাপ লাগল।
কে জানে? জেরি সমার্স হয়তো এই সমাজের একজন মাথাও হতে পারে। কিন্তু ওর সহজাত প্রবৃত্তি বলছে লোকটা নীচ। এমন মনে হওয়ার বিশেষ কোন কারণ নেই–তবু মনে হচ্ছে।
হয়তো আমি ভুল বলেছি, ম্যাম। আন্তরিক হৃদ্যতার সাথেই বলল সে। কিন্তু মানুষের পেট চালাবার জন্যে সবাইকেই কিছু না কিছু করতে হয়। সে কাউবয়ের কাজ করে কোথাও, বা র্যাঞ্চের মালিক, প্রসপেক্টার, কিংবা মাইনে কাজ করে, বারটেণ্ডার কিংবা আর কিছু। ওর কিছু একটা রোজগার থাকতেই হবে। নইলে কারও পেট চলে না। জানি না, হয়তো ওর অন্য কোন আয় আছে।
নিরাসক্ত চাহনিতে রনির দিকে তাকাল লিসা। ওর প্রিয় লোক জেরি ওর ভাইয়ের বিরক্তির কারণ-আর বোনের দুশ্চিন্তা। কিন্তু যে যাই বলুক তুষোড় গানম্যান জেরিকে ওর ভাল লাগে। কাউকে ভয় পায় না, অথচ হাসি-খুশি। ভাইয়ের মত মনের জোরের কমতি ওর নেই। লিসার মনে জ্বালা, কারণ সবাই ওদের র্যাঞ্চ লুটেপুটে খাচ্ছে–ওর ভাই কিছু করছে না।
ওদের তিনজনেরই র্যাঞ্চে সমান শেয়ার আছে। সেটা বেন দিয়েছে। কিন্তু বোন শেলী সব কিছুতেই ভাইয়ের পক্ষ নেয়। এতে যে ওর মনের ভিতরে আগুন ধরে যায়, সেটা কেউ বোঝে না। র্যাঞ্চে চুরি হচ্ছে, কিন্তু ভাই কিছুই করছে না।
তোমার ঘোড়াটা সত্যিই চমৎকার। প্রসঙ্গ পাল্টাল সে।
সত্যিকার সন্তুষ্টির সাথে মাথা ঝাঁকাল রনি। ওঁর চেয়ে ভাল ঘোড়া আর হয় না। আজ পর্যন্ত অনেক ঘোড়াই আমি চড়েছি। অনেক মানুষের থেকে ওর বেশি বুদ্ধি।
তুমি কি অনেকদিন থাকবে? নাকি বেন তোমাকে কেবল গরু জড়ো করার জন্যে কাজে নিয়েছে?
সেটা আমি নিজেও ঠিক জানি না, জানাল রনি। ওই বিষয়ে আমাদের কোন কথা হয়নি। শুনলাম ওর লোক দরকার তাই কাজের জন্যে ওকে বললাম-সে’ও রাজি হয়ে গেল।
তুমি কি জানো আমরা কিছু লোক হারিয়েছি? প্রশ্ন করল লিসা। বেন তোমাকে বলেছে?
হ্যাঁ, সে এবং আরও কয়েকজনে বলেছে। রোদে উজ্জ্বল পাহাড়গুলোর দিকে চেয়ে লম্বা একটা বড় শ্বাস নিল রনি। তবে আমার বিশ্বাস সব রেঞ্জেই কিছু না কিছু ঝামেলা থাকে।
জিনটা বয়ে নিয়ে শেডের ভিতর নির্দিষ্ট জায়গায় ঝুলিয়ে রাখল রনি। বর্তমানে কতজন লোক কাজ করে এখানে?
মাত্র পাঁচজন। একটা সময় ছিল যখন বারো থেকে বিশজনও এখানে কাজ করেছে। লিসার স্বরটা একটু তেতো। এটাই এখানকার সব থেকে বড় র্যাঞ্চ।
ওরা কি এখানে অনেক দিন থেকে আছে?
মাত্র দু’জন। টেরি আর হ্যারি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই টেরি আছে। হ্যারি এসেছে বছর চারেক আগে।
আর বাকি তিনজন?
তোমাকে ওদের সাথেই কাজ করতে হবে–তুমি নিজেই বিচার করে নিতে পারবে। ওরা সবাই ভাল, আর কাজের লোক বলেই আমার বিশ্বাস। কিড লেকার মাত্র দু’হপ্তা হলো আছে। বাকি দুজন মাসখানেক আগে কাজে এসেছে। রজার আর হেনরি স্যাড়ল পার্টনার।
মেয়েটা কয়েক মিনিট চুপ করে রইল। তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশটা খুঁটিয়ে দেখছে রনি। দালান আর জমি পরিপাটি ভাবে রাখা হয়েছে। গরু যা দেখা যাচ্ছে ওগুলোর চেহারাও ভাল। বেন কেসি ফাইটার না হলেও র্যাঞ্চিঙ বোঝে।
রাউণ্ড-আপের সময়ে ঝামেলা হবে, শান্ত স্বরে বলল লিসা। তোমাকে আগে থেকে সাবধান না করাটা আমাদের অন্যায় হবে। পুবে, একটা র্যাঞ্চ আছে–ওদের দৌরাত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। ওরা তিন ভাই, ব্লু মাউন্টিনের কাছে থাকে।