উঠে দাঁড়িয়ে বারের দিকে এগোল রনি। হ্যারিংটন ওখানে দাড়িয়ে ছিল। ঘুরে রনিকে দেখে সে হাসল। তোমাকে দেখে খুশি হলাম, বন্ধু, বলল সে। আমার হয়ে শটগান মেসেঞ্জার হওয়ার ব্যাপারে তোমার মত পাল্টাল?
মাথা নাড়ল রনি। এখনও পাল্টায়নি। এখানে আমি কিছুদিন থাকতে চাই, কিন্তু ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাজই আমার পছন্দ। হয়তো বেন কেসিকে তার হয়ে কাজ করার প্রস্তাব আমি দিতে পারি। ওখানে ফোরম্যান কে?
নিজের কাজ নিজেই দেখে বেন। গরু আর র্যাঞ্চ সম্পর্কে হয়তো ওর চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। কিন্তু বাপের সেই শক্ত শিরদাঁড়াটা সে পায়নি। এটা যে কেন তা বোঝা কঠিন নয়। বিশাল কামরার লোকজনের দিকে রনির দৃষ্টি আকর্ষণ করাল হ্যারিংটন। কামরায় অন্তত ষাটজন লোক আছে এখন। আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওদের অন্তত বিশজন মানুষ হত্যা করেছে। কয়েকজন একাধিক।
ওদের বেশির ভাগ লোকই গরু চোর। হয়তো দশজন অসৎ জুয়াড়ী। এদের সামলানো কোন কচি ছেলের কাজ নয়।
ওদিকে, জন মার্সারকে দেখাল সে, লোকটা শহর চালাতে চায়, কিন্তু এত বড় সে নয়।
কে বড়? রনির দিকে তাকিয়ে হাসল হ্যারিংটন। বন্ধু, ওটা একটা ভাল প্রশ্ন। কিছু লোক মনে করে, আমি। কিন্তু আমি এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই আমার শিপমেন্ট বাঁচাতে শটগান রাইড করব–কিন্তু ওটা নয়।
মাথা নাড়ল হ্যারিংটন। উপযুক্ত লোক আসলে বর্তমানে কেউই নেই। ডাক্তার হ্যাডলে বুদ্ধিমান লোক, কিন্তু নেতৃত্ব দেয়ার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনটাই তার নেই। ডাক্তারি করেই সে সন্তুষ্ট। আর রবার্ট এটা পারবে না।
অ্যাডাম কেন হাল ধরছে না? প্রশ্ন রাখল রনি।
একটু ইতস্তত করল হ্যারিংটন। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত বলল সে। কিন্তু ওকে বোঝা সত্যিই কঠিন।
প্রসঙ্গ পাল্টাল রনি। তোমার সোনার ব্যাপারে কি বুঝছ? সোনা সহজে পাচার করা সম্ভব না। বিশেষ করে এত সোনা।
তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি যতটা খবর পেয়েছি চুরি করা সোনার এক ভোলাও কোন বাজারে এখনও বিক্রি হয়নি। আমার বিশ্বাস চুরি করার আগেই ওরা কি ভাবে কি করা হবে, সব ভেবেই কাজে নেমেছে। তবে কাজটা বেশ কঠিন হবে। কিন্তু কাকে সন্দেহ করব? হাত ঘুরিয়ে কামরার সবাইকে দেখাল সে। এদের সবাই চোর আর হত্যাকারী-কাকে সন্দেহ করব?
হঠাৎ খুশির সুরে কেউ একজনকে সংবর্ধনা জানাল। ওই যে! বেন কেসি এসেছে। চাকরি চাইলে এখনই প্রস্তাব দাও, বলল হ্যারিংটন।
লম্বা গড়নের লোক বেন কেসি। বন্ধুসুলভ চেহারা। সোজা বারের কাছে হ্যারিংটনের দিকে এগিয়ে এল সে। কেমন আছ, বিল? রনিকে কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখে সে জিজ্ঞেস করল, তুমিই না হার্টকে খুঁজে পেয়েছিলে?
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ, বলল রনি। আমি তোমার ওখানে একটা কাজ নিতে চেয়েছিলাম।
হাসল বেন কেসি। আমার অনেক লোক দরকার, বলল সে, কিন্তু রকিং কে-তে কাজ নেয়া এখন বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের লোকেরা পটপট মারা পড়ে।
আমার দিকে লোকে গুলি আগেও করেছে, কিন্তু ওরা কেউ বাঁচেনি।
ঠিক আছে, আগামীকাল সকাল থেকেই তুমি কাজে আসতে পারো। ঘুরে চলে যেতে গিয়েও সে দাঁড়াল। তোমার নামটা কি?
রনি ড্যাশার, কিন্তু বন্ধুরা আমাকে রনি বলেই ডাকে। ওই নাম উচ্চারণে ওখানে অনেকের চোখই ছানাবড়া হয়ে গেল। নামটা জোরে বলেনি সে-তবু। সবাই ওদের কথাই কানপেতে শুনছিল।
কথাটা ডাকির কানেও গিয়েছে। পিলে চমকে গেছে ওর। টেক্সাসে ওকে অ্যাকশনে দেখেছে সে। এমন তুখোড় পিস্তলবাজ সে আগে কখনও দেখেনি। কখন যে ওর হাতে পিস্তল উঠে আসে আর কখন সে গুলি করে, তা পরপারে পৌঁছার আগে কেউ বোঝে না।
রনি ড্যাশার… অবাক চোখে তাকাল বেন। সকালেই তুমি চলে এসো। আমার র্যাঞ্চে তোমার কাজ পাকা!
ডাকি দ্রুত ঘুরে সেলুন ছেড়ে বেরিয়ে সেল। আড়চোখে ওকে লক্ষ করল রনি। রোদে পোড়া গানম্যানকে বেশ বিচলিত মনে হলো। হ্যারিংটন সবই খেয়াল করল, কিন্তু কোন মন্তব্য করল না। অ্যাডাম কাছেই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ওদের দিকে পিছন ফেরা। সে শুনেছে কি না ঠিক বোঝা গেল না।
ঠিক আছে, বলল রনি, তাহলে সকালে দেখা হবে। কামরার লোকজন পেরিয়ে সে দরজার দিকে এগোল।
০৩. রকিঙ কে অ্যান্টিলৌপ
রকিঙ কে অ্যান্টিলৌপ এর একটা খুঁজের ভিতর। বিশাল স্প্যানিশ স্টাইলের একটা বাড়ি। কটনউড গাছগুলোর ভিতর তৈরি। পাশেই বিরাট একটা গুদাম ঘর। পাশে এক সারি করাল। সামনে একটা বিরাট পুকুর। ওটার পানি একেবারে স্বচ্ছ। টপারের পিপাসা পেয়েছে। পানিতে নাক ডুবিয়ে সে তৃষ্ণা মেটাল। দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে মুখ তুলে চাইল রনি।
একটা মেয়ে হরিণীর মত লঘু পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ব্রাউন চুল, কিন্তু সূর্যের আলোয় একটু যেন লালচে আভা ছড়াচ্ছে। বয়স সতেরো হবে। অপূর্ব সুন্দরী। কেটি যা বলেছিল তা সম্পূর্ণ সত্যি।
মেয়েটা হাসল, ওর সবুজ চোখ দুটো রনিকে খুঁটিয়ে দেখছে। তুমিই ড্যাশার? বেন তোমাকে বলতে বলেছে, একটা বাঙ্ক বেছে নিয়ে জিনিস-পত্র রেখে, এলাকাটা একটু ঘুরে দেখতে। রেঞ্জের অন্য মাথায় গেছে সে, ফিরতে রাত হবে। বলেছে, তুমি হয়তো র্যাঞ্চটার সাথে কিছুটা পরিচিত হতে চাইবে।
ধন্যবাদ। রনি হাসল। ঠিকই বলেছে বেন। এলাকার সাথে পরিচিত না হতে পারলে কারও স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। তোমাদের কি অনেক গরু আছে?