এক বছরের মধ্যেই র্যাঞ্চের দুজন কর্মচারী গুপ্তঘাতকের গুলিতে মারা পড়ল। রাসলাররা এক হাজার গরু তাড়িয়ে নিয়ে গেল। বাধা দেয়ার কেউ ছিল না।
আশপাশের ছোট র্যাঞ্চগুলো ওদের গরু চুরি করেই সমৃদ্ধ হলো। রকিঙ কে দিনদিন গরীব হতে থাকল। চারপাশে আরও নতুন মুখ দেখা দিতে শুরু করল। বুড়ো কেসি জানত কিভাবে শহরের আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হয়, কিন্তু এখন চোর-ডাকাত আর ফটকাবাজে শহর ভরে গেছে। ঠেকাবার কেউ নেই।
সোনার খনি থেকে প্রচুর সোনা বেরোচ্ছে। ওরা চোখ রাখে কখন স্টেজে করে সোনা কোনদিকে যায়। ওদিকে, যদিও এখনও রকিঙ কে তে গরুর সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু দিনদিন তা আরও পাতলা হয়ে আসছে। কে চুরি করবে, এই নিয়ে রাসলারদের মধ্যে মারপিট চলছে। পুরানো রাসলার নতুন রাসলারদের হাতে মারা পড়ছে।
ছোট মাইনগুলোর উৎপাদন বাড়লে, দুটো মাইন লুট হয়ে গেল। একটার মালিকই মারা পড়ল। অরাজকতার চরম। আগের শেরিফ গুলি খেয়ে মারা পড়ার পর রবার্ট এখন শেরিফের কাজ চালাচ্ছে।
সবখানেই একজন পালের গোদা থাকে, বলল রনি। এই শহরটাকে কে চালাচ্ছে?
আসলে কেউই না। র্যাঞ্চাররা সবাই বুড়ো কেসিকে মানত, কিন্তু এখন লোকজন অ্যাডামের কথা শুনতে শুরু করেছে।
ঘোড়ার ব্যবসায়ী?
হ্যাঁ, কিন্তু ওর একটা ছোট র্যাঞ্চও আছে। লোকটা কিছু গরুও কেনা-বেচা করে।
কাঠের ফুটপাথে প য়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। ওই যে, জেরি সমার্স আসছে, পাশ কে সরে যেতেযেতে বলল মলি। ও এখানে নতুন, কিন্তু অনেক খোঁজ-খবর রাখে।
মলি কি বোঝাতে চাইল সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই দু’জন লোক দোকানে ঢুকল। প্রথমজনের কালো ভুরু, ধনুকের মত বাঁকা পা, পুষ্ট দেহ, চোখ দুটো যেন একটু গর্তে ঢোকা। কিন্তু ওর পিছনের লোকটাই রনির দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
জেরি সমার্স লোকটা সুদর্শন, ধূসর চোখ আর লালচে চুল। লোকটার বেপরোয়া চলার ভঙ্গি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কি খবর, মলি? বিশদ হাসির সাথে সম্ভাষণ জানাল জেরি। রক্তরাঙা ট্রেইল
আমাদের দু’কাপ কফি আর কিছু খাবার দাও!
বসো, জেরি, কঠিন স্বরে বলল মলি। আর সবার মত তোমাকেও অপেক্ষা করতে হবে। তোমার বন্ধু, রনির দিকে এক ঝলক চেয়ে সে আবার বলল, ডাকি কেও।
জেরির দিকে তাকাল রনি। সেও ওকে দেখছে। এখানে নতুন? প্রশ্ন করল জেরি।
তুমি আগে কখনও এদিকে দেখেছ আমাকে? শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল রনি।
না, তাই জিজ্ঞেস করছি।
আগে আমাকে দেখে না থাকলে আমি নিশ্চয় স্ট্রেঞ্জার। হাসল রনি। তারপর মলির দিকে চেয়ে বলল, আমাকেও এক কাপ কফি দিও। চমৎকার কফি বানাতে পারো তুমি।
নিজের গুরুত্ব এভাবে খর্ব হতে দেখে রুষ্ট হয়েছে সে। ওর চেহারায় সেটা প্রকাশ পাচ্ছে।
কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেল সে। উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা পিস্তল দুটো ওর নজরে পড়েছে। সে বুঝেছে এই লোকটা যেই হোক, ফেলনা মোটেও নয়।
মানুষ চিনতে রনিরও ভুল হয়নি। সে জানে ওই সহজ হাসির পিছনে আছে একজন ভয়ঙ্কর মানুষ। কফি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল রনি। লোকটা পিস্তলবাজিতেও ওস্তাদ। বিপদ ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু বিপদকে কোনদিন ভয় পায়নি, রনি। সরাসরি মোকাবিলা করেছে।
হাই-গ্রেড সেলুনটা কয়েক দরজা পরেই। ওদিকেই রওনা হলো রনি।
মলির দরজা দিয়ে ওকে লক্ষ করল ডাকি। ওর চওড়া কাঁধ, উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা দুইটা পিস্তল, সবই দেখল। জেরি ওর পাশে এসে দাঁড়াল, ওকে কি ভয় পাও তুমি?
হোহ, কাউকে ভয় পাই না আমি।
হয়তো ওকে ভয় করে চললে আরও কিছুদিন বাঁচবে তুমি। ওকে সহজ লোক মনে কোরো না। শক্ত লোক সে। ওর থেকে সাবধানে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমার সামনে ও দাঁড়াতেই পারবে না।
ধপ করে টুলের ওপর বসে নিজের কফিতে চিনি মেশাতে ব্যস্ত হলে ডাকি। ভয় কিছু না। তবে লোকটাকে খুব পরিচিত ঠেকছে। ওকে আমি আগেও কোথাও দেখেছি, কিন্তু কোথায় সেটা মনে করতে পারছি না।
কাঁধ উঁচাল জেরি। কালের সোতে ভেসে বেড়ানো এক কাউবয়। থাকবে না–চলে যাবে।
যাবে না, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মন্তব্য করল মলি। অন্তত কিছুদিন থাকবে। ছেলেটার খুন হওয়া সে সহজ ভাবে নিতে পারেনি।
সে কিভাবে শেরিফের থেকে ভাল করতে পারবে? প্রশ্ন করল সমার্স।
জানি না সে রবার্টের চেয়ে ভাল করতে পারবে কি না, সহজ সুরে মেয়েটা বলল, কিন্তু আমি খুনী হলে খুব চিন্তায় পড়তাম।
বিভিন্ন সেলুন আর আড্ডাখানায় ঘোরার কালে চোখ-কান খোলা রাখছে। রনি। বহু আগেই সে শিখেছে কঠিন শহরের হাওয়া কিভাবে আঁচ করতে হয়। শহরটা প্রায় টগবগ করে ফুটছে। কয়েকটা খুনের খবর সে শুনেছে। গত রাতেও মাথায় বাড়ি দিয়ে একটা ডাকাতি করা হয়েছে। একজন প্রসপেক্টারকে তার ক্লেইমে মৃত পাওয়া গেছে। দেখার কেউ নেই, নেকড়েরা এখন নির্ভয়ে শিকার ধরছে।
বুড়ো কেসি যতদিন বেঁচে ছিল শক্ত হাতে শহরটাকে সে কাবুতে রেখেছিল। সে আর তার কর্মচারীরা শহরের আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এখন সে আর নেই। তার ছেলে বেন কেসি চমৎকারর কাউম্যান, কিন্তু লড়তে জানে না। এখন যে যার খেয়াল-খুশি মত চলছে বাধা দেয়ার কেউ নেই। এখানেই হাঙ্গামার শুরু।
এক বোতল মদ নিয়ে বুড়ো কাউহ্যাণ্ডের সাথে কথা বলছে রনি। লোকটা মাথা হেলিয়ে জন মার্সারকে দেখাল। বেঁটে মোটা একটা লোক। সামনের দিকে চুল উঠে মাথার অনেকখানি জায়গায় টাক পড়েছে। বিশাল বপুর ওপর ঘড়ির সোনার চেইনটা শোভা পাচ্ছে। বুড়ো কেসি মারা যাওয়ার পর জন এখন মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়েছে! নাক সিঁটকে বলল সে। কেসি বেঁচে থাকতে ওর মুখ থেকে কেউ টু-শব্দটিও শুনতে পায়নি। কিন্তু এখন ওর দাপটে মানুষের টেকাই দায় হয়ে উঠেছে।