কিন্তু জেমসের মৃত্যুর ধরনটা অস্বাভাবিক। ওরা কি তার উদ্দেশ্য টের পেয়েছিল? কিংবা সে কি কোন কথা বলেছে?
নিকটস্থ সেলুনের দিকেই পা বাড়িয়েছিল রনি, কিন্তু মলির স্টেক, ডিম আর পাইয়ের লোভ ওকে ওদিকেই টেনে নিয়ে গেল। কাঠের ফুটপাথে উঠে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে। কেবল একজন কাউবয়কেই ওখানে দেখতে পেল। লোকটার বুট ক্ষয়ে গেছে–হ্যাটটারও খারাপ অবস্থা।
ওর ঢোকার সময়ে দরজার বেলের ঘণ্টায় কাউবয়ের কোন বিকার দেখা গেল না–কিন্তু ঘণ্টার আওয়াজে রান্নাঘর থেকে একজন সুন্দরী যুবতী বেরিয়ে এল। কালো চুল মাথার ওপর খোঁপা করে বাঁধা। গাড়ো নীল চোখ। কৌতূহলী চোখে মেয়েটা ওকে দেখছে। জবাবে সে হেসে বলল, হাওডি! আমি স্টেক, ডিম আর পাই চাই।
মেয়েটা বড় একটা কাঠের চামচ হাতে এগিয়ে এল। সামনে হেলে পড়া একগোছা চুল পিছনে ঠেলে দিয়ে সে বলল, তা হবে না। হয় স্টেক আর পাই, নয়তো ডিম আর পাই–দুটোরই দাম দুই বিট!
দুটোই দাও আমাকে। বলল রনি। সবথেকে বড় আর রসালো স্টেক, দুটোর বদলে চারটে ডিম! কিছু বীনস্ যদি থাকে, সাথে ওটাও কিছু দিও।
বীনস দুটো অর্ডারের সাথেই আসে। কিন্তু এতে তোমার দাম পড়বে ছয় বিট। এত পয়সা তোমার আছে?
যদি না থাকে, হেসে বলল রনি, তাহলে আমি তোমার থালা বাসন ধুয়ে দেব।
তা হবে না! পাকা ব্যবসায়ীর মত জবাব দিল মেয়েটা। ড্যাকোটার এপাশে সব কাউবয়ই ওই চেষ্টা করেছে, কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে ডিশ ধোয়ার চিন্তা আর কেউ করে না। তোমাকে পয়সা দিতে হবে-ক্যাশ!
ঠিক আছে, মলি, সশব্দে একটা ডলার টেবিলের ওপর ফেলল রনি। আমাকে খাওয়াও।
দ্রুত ডলারটা তুলে নিয়ে এপ্রোনের পকেটে রাখল মেয়েটা। বসো আমি এখনই খাবার নিয়ে আসছি, বলেই আবার ফিরল সে। মাংসটা তুমি কেমন চাও?
কেবল শিঙ দুটো কেটে ভেজে আনলেই চলবে-বাকিটা আমি সামলাব।
মাংস ভাজার শব্দ পাওয়া গেল। অল্পক্ষণ পরেই সে গরম কফি নিয়ে এল। মেয়েটা লম্বা-চমৎকার ফিগার। কাউবয়রা যে কেন রান্না ঘরে ডিশ ধোয়ার বাহানা করে সেটা আঁচ করা কঠিন নয়।
এখানে তুমি নতুন? কিছু খবর জানতে চাইছে মেয়েটা। তুমিই কি জেমস হার্টকে পেয়েছিলে?
মাথা ঝাঁকাল সে। খবর দ্রুত ছড়ায়। ওকে তুমি চিনতে?
হ্যাঁ, চিনতাম। টেক্সাসের এপাশে ওর মত কাউবয় আর দুটো পাওয়া যাবে না। আর পিস্তল-বন্দুকেও ওর হাত ছিল ভাল। তবে ওর ভাই ফিনলের তুলনায় ওটা কিছু না।
আরও শোনার জন্যে অপেক্ষা করছে রনি। কিছু সময় আছে যখন, চুপ করে শোনা ভাল। এই ব্যাপারে ওর আরও কিছু জানা দরকার। প্রাথমিক গুলির ক্ষত থেকে যদি ওর মৃত্যু হত তাহলে রনির এতে নাক গলাবার কিছু ছিল না। কিন্তু এটা এখন ওর জন্যে একটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। ওকে বাচাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু যুবককে অন্যায় ভাবে খুন করা হয়েছে। ও দেখতে চায় কে এমন গর্হিত কাজটা করেছে।
শটগান রাইডারের ব্যাপারে হ্যারিংটন এখন কি করবে? কথা বাড়াতে চাচ্ছে রনি।
রনির দিকে তাকাল মলি। শুনেছিলাম তোমাকেই ওরা ওই কাজের প্রস্তাব দিয়েছে।
কথাটা ঠিক। কিন্তু আমি এখন কাজের ধান্ধায় নেই। আর কাজ করলেও সেটা কাউবয়ের কাজই হবে।
রান্নাঘরে ঢুকে রনির জন্যে স্টেক আর ডিম নিয়ে এল মেয়েটা। ওর খাওয়ার মাঝে কথা বলে চলল মলি। এখন কেউই তেমন কাজের লোক খুঁজছে না। একমাত্র বেন কেসির কাজের লোক দরকার, কিন্তু ওর দুই বোনের জন্যে সে কাউকে টেকাতে পারে না।
বেন কেসি? মুখ তুলে চাইল রনি। আজ রবার্ট আর অ্যাডামের সাথে সেও ছিল।
হ্যাঁ, ওই লোকই। সে রকিঙ কে র্যাঞ্চের মালিক। তবে শোনা যায় এখন ওর টাকা-পয়সার টানাটানি চলছে।
তুমি মেয়েদের কথা কি যেন বলছিলে?
ঝট করে আড়চোখে রনির দিকে তাকাল মলি। বুঝেছিলাম ওটা তোমার মনে ধরবে। এ দেশের সব কাউবয়ই ওখানে কাজ নেয়ার জন্যে পাগল। সবাই দুজনের কারও সাথে ঝুলে পড়তে চায়। তবে শেলীই রক্তরাঙা ট্রেইল
বেশি জনপ্রিয়। লিসার মধ্যে কিছু একটা আছে যার জন্যে লোকজন ওকে একটু ভয় পায়। যাহোক, মেয়েটার একজন মনের মানুষ আছে।
ওরা দেখতে ভাল?
ভাল মানে? অত্যন্ত সুন্দরী। গম্ভীর ভাবে মাথা ঝাঁকাল রনি। বেন কেসির বোনদের কথা ভাবছে
সে। এই এলাকার লোকজনের মতিগতির কিছুটা ধারণা নিতে চায় মাত্র। কোথায় কি চলছে জানতে ইচ্ছুক। শেরিফ রবার্ট লোকটা যে ভাল এটা সে বাজি ধরে বলতে পারে। কিন্তু ওর বিবেচনা শক্তি যে কতটা, সেটা সন্দেহের বিষয়।
খাওয়ার মাঝে মলিকে কথায় ব্যস্ত রাখল রনি। এখানকার লোকজন আর পরিবেশ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা গড়ে উঠছে ওর মনে।
এখানে মাইনার আর র্যাঞ্চারদের নিয়ে এই সমাজ। বেন কেসিই এখানকার সবথেকে বড় র্যাঞ্চার। আর মাইন বলতে হ্যারিংটনের সোনার খনিটাই উল্লেখযোগ্য। বেন তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে র্যাঞ্চটা পেয়েছে। ওর বাবা ছিল একটা পাহাড়ী বাঘ। দাঁত ছিল ওই বুড়োর প্রয়োজনে ওগুলো ব্যবহার করতেও সে জানত। লোকটা তার আদান-প্রদানে ছিল সৎ-কিন্তু সেইসাথে ব্যবসায়ী বুদ্ধিও ছিল তার। রকিঙ কে র্যাঞ্চের বন্ধুর চেয়ে শত্রুই ছিল বেশি। বুড়োর মৃত্যুর পর রাসলাররা লুটেপুটে র্যাঞ্চটার আর কিছু রাখেনি।