দুজনে একসাথেই ঘোড়ার পিঠে উঠল। ফিনলে ঘুরে হাত তুলে বলল, ও. কে.। গুডলাক। তারপর ফোলা লাভার কিনার ঘেঁষে এগিয়ে গেল।
দক্ষিণের পথ ধরল রনি। এদিকে লাভা একটা দেয়ালের মত। নিচে কিছু ভাঙা চাই পড়ে আছে। তারপর দেয়ালটা ধীরে ধীরে একটা জমাট বাধা কালো ঢেউয়ের আকার নিল। একঘণ্টার উপর হলো কোন পরিবর্তন নেই। হতাশ হয়ে উত্তরের পথ ধরার কথা ভাবছে, এই সময়ে একটা বিশাল থাবার চিহ্ন দেখতে পেল সে। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে ছাপটা পরীক্ষা করে দেখল। আরও ছাপ র ছ ওখানে। ওটা পাহাড়ী সিংহের ট্র্যাক, এবং সোজা আবার লাভার দিকেই ফিরে গেছে ওটা!
পায়ে হেঁটে এগোল রনি। সিংহের পায়ের ছাপ অনুসরণ করছে। একটা সরু খাজে ঢুকেছে ট্রাক। মনে হচ্ছে ওটা জুনিপারের কতগুলো ঝোঁপের কাছে এসে শেষ হয়েছে। ঠেলে ঝোঁপ পার হয়ে দেখল, দুটো লাভা স্রোতের মাঝখানে কিছুটা ফাঁক রয়েছে-ওটা অনেক গভীরে ঢুকেছে বলে মনে হচ্ছে। বেরিয়ে পাথরের স্তূপ তৈরি করে, সে আবার ভিতরে ঢুকল। টপারকে জুনিপারের ঝোঁপ পার করিয়ে আগে বাড়ল। সিংহটার থাবার ছাপ ওই সরু পথ ধরেই এগিয়ে গেছে। বুঝতে পারছে সিংহটা তার গুহায় ফিরেছে। এই পথে আর কোন প্রাণীর যাতায়াতের চিহ্ন ওখানে নেই।
আধঘণ্টা ট্রেইল ধরে চলার পর হঠাৎ ওটা বেশ ঢালু হয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করল। নিচে সবুজ পাইনের মাথাগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘোড়াটাকে একটা লাভার ছোট একটা গর্তে ঢুকিয়ে বেঁধে রেখে, লাভার ওপর দিয়ে বুকে হেঁটে গাছগুলোর দিকে এগোল রনি।
ওর সামনে বাটির মত একটা গর্ত। এলাকাটা তিন বিঘার বেশি হবে। কিনার ঘেঁষে পাইনের সারি। মাঝখানেও কয়েকটা জন্মেছে। দূরের দেয়ালটার গায়ে একটা আধ-ভাঙা পাথরের বাড়ি। পাথরের একটা ফাইল থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। কাছেই পাচটা ঘোড়া চরতে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ রনির চোখের সামনে, পাথরের বাড়ির ভিতর থেকে একটা লোক বেরিয়ে প্যান থেকে কিছুটা পানি বাইরে ফেলল। লোকটা ডাক।
কিছুদূর ফিরে সাবধানে আরেকটা পথ বেছে নিয়ে আরও নিচে নামল সে। পথটা একটা ভাঙা পাথরের স্থূপ, ম্যানজেনিটা ঝোঁপ আর পাইন গাছের ভিতর শেষ হয়েছে। একপা আগে বাড়তেই একটা চাপা গর্গর শব্দ ওকে সাবধান করল। মাথা ফিরিয়ে পাহাড়ী সিংহটাকে সে দেখতে পেল। বাম দিকে, কিছুটা উপরে, একটা পাথরের ওপর ওত পেতে বসে আছে ওটা। সিংহটা বিশাল। রনি কেবল ওর মাথা আর কাঁধ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু তাতেই বুঝছে, জীবনে যতগুলো বড় বড় সিংহ সে দেখেছে, এটা তার প্রথম সারিতে পড়ে। কান দুটো মাথার সাথে সাঁটিয়ে, সবুজ বিদ্বেষ ভরা চোখে একদৃষ্টে রনির দিকে চেয়ে আছে জন্তুটা। তারপর দাঁত বের করে ভেঙচি কাটল।
স্থির দাঁড়িয়ে সিংহের দিকে চেয়ে আছে সে। পাহাড়ী সিংহ সচরাচর মানুষকে আক্রমণ করে না। কিন্তু যদি নিজেকে কোণঠাসা বলে মনে করে, সে লড়বে। গুলির শব্দ জেরিকে সাবধান করে দেবে। তখন নিজের জীবন রক্ষার জন্যে তাকে তিনজন আউটল আর সিংহের বিরুদ্ধে
একসাথে লড়তে হবে। পিস্তল হাতে অপেক্ষা করছে রনি। আবার ভেঙচি কাটল জন্তুটা, কি করবে মনস্থির করতে পারছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল রনি।
কয়েক সেকেণ্ড পর ওত পাতা ছেড়ে নিজের গুহায় অদৃশ্য হলো। স্বস্তিতে বড় একটা শ্বাস ছাড়ল রনি।
গাছের ভিতর দিয়ে এগিয়ে বাড়িটার আরও কাছে চলে এল সে। নিজের পিস্তলের পাল্লা তার জানা আছে। ওখান থেকে ওই তিন একর এলাকার প্রতিটা কোনা সে কাভার করতে পারবে। কিন্তু আরও কাছে যেতে চায় ও।
ডাক বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা ওর দিকেই এগিয়ে এল। তারপর শুকনো কাঠ সংগ্রহ করার জন্যে ঝুঁকল। কোন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিশ্চয় ওকে সাবধান করেছে, কারণ সে মুখ তুলে চাইল।
চিৎকার করলে তোমাকে হেঁদা করে দেব, ডাক! নিচু স্বরে কেবল ওকে শুনিয়ে কথাটা বলল রনি।
ডাকের হাঁসের মত ঠোঁটগুলো বাঁকা হলো। কে-কে তুমি?
আমি ড্যাশার–তোমার কাছে রেড রিভার রেগান। আমি যা বলি তা করলে চোট পাবে না।
কয়েক সেকেণ্ড রনির দিকে চেয়ে রইল সে। তারপর ওর পিছনে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। কেউ চেঁচিয়ে ডাকল, ডাক! তোমার কি হলো?
রনির ডান পাশে গর্তের কিনার থেকে জোরাল কণ্ঠে কেউ চিৎকার করে বলল, হাত তুলে বেরিয়ে এসো, ডাকি স্মিথ! অমি জেরিকে চাই!
ডাক বাম দিকে ঝাপিয়ে পড়ল। পিস্তলটা উঠে এসেছে ওর ডান হাতে। মুহূর্তে এলাকাটা প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে ভরে উঠল। টলতে টলতে একটু পিছিয়ে গেল রনি। কোত্থেকে একটা গুলি এসে ওর পাশে গাছে বিধল। বাকল ছিটকে চোখে মুখে লাগল। বাঁচার জন্যে পিস্তল খাপে ভরে মাটির ওপর আছড়ে পড়ল সে। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে গড়িয়ে ঝোঁপের তলায় সরে গেল রনি। একটা গুলি ওর মুখে বালু ছিটাল। আরেকটা গাছে বাড়ি খেয়ে অন্যদিকে চলে গেল। এতক্ষণে চোখ খুলতে পেরে গড়িয়ে একটা উপড়ে পড়া গাছের গুঁড়ির আড়ালে সরে গেল। হঠাৎ সব শব্দ থেমে গেল। তারপর ডাকের চিৎকারে নীরবতা ভঙ্গ হলো। ড্যাশার শেষ! আমি রনিকে মেরেছি!
চুপ করো! স্বরটা ঠাণ্ডা। গুলিটা আমি করেছি দরজার আড়াল থেকে!
আগ্রহের সাথে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল ড্যাশারের দেহে। ওটা জেরি সমার্সের স্বর! ধীরে উঠে দাঁড়াল সে। তারপর গাছের আড়ালে আড়ালে খোলা জায়গাটার দিকে এগোল।