যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। হার্টের তৈরি ছোট্ট আগুনটার পাশে বসল রনি। শুকনো গ্রীজউড কাঠের আগুন থেকে কোন ধোয়া উঠছে না। রাতে এগিয়ে লাভার কিনারে কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে।
হ্যাঁ। দিনের বেলা ওরা নজর রাখবে। প্রসঙ্গ পাল্টাল হার্ট। মলি সত্যিই একটা দারুণ মেয়ে, তাই না?
শব্দ করে হেসে উঠল রনি। অন্তত এই এলাকার সবথেকে ভাল কফি সে তৈরি করে। যাক, আমার মতে ওকে তাড়াতাড়ি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়াই তোমার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মুখ বিকৃত করল হার্ট। আমি শুনেছি শর্টির সাথে ওর খুব ভাব।
মানুষ অনেক কথাই শোনে! কালো লাভার দিকে মুখ ফেরাল রনি। সব কথায় কান দিতে নেই।
দিন গড়িয়ে চলল, সূর্যটা ধীরে ধীরে নিচে নেমে লাভা স্রোতের মাথায় একটা লাল গোলকের মত জ্বলছে। একটা নাইটহওক পোকা ধরার জন্যে ছোঁ মেরে ওদের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। রনি উঠে টপারের পিঠে জিন চাপাল।
আরও বিশ মিনিট সময় দাও, সে বলল, পিছনে এই পাহাড়গুলো থাকায় ওরা আমাদের দেখতে পাবে না।
শেষে ওরা বেরিয়ে পড়ল। দু’জনের কেউই কথা বলার মুডে নেই। অকাশে একটা-দুটো করে তারা উঠতে শুরু করেছে। এক মাইল এগোবার পর দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে রওনা হলো রনি। ওদের যদি কেউ দেখেও থাকে, তবে দিক বদল করায় ফাঁদ পেতে রাখা অসম্ভব হবে।
রাত দশটার কয়েক মিনিট আগে ঝর্না থেকে ঘোড়া দুটোকে পানি খাওয়াল ওরা। তারপর লাভার একটা খাজে সরে গেল। ওখানে আংশিক আড়াল রয়েছে। লাভার ওপর চড়ে তাকিয়ে রইল ফিনলে। বুনো আর নির্জন দৃশ্য, অসম্ভব রকম সুন্দর। যেন চাঁদের দেশের কোন এলাকা। মনে হচ্ছে যেন একটা সমুদ্র হঠাৎ জমাট বেঁধে পাথর হয়ে গেছে। গাছ নেই, ঝোঁপ নেই, ঘাসও নেই, কেবল ঢেউ খেলানো অনুজ্জ্বল কালো পাথর দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পাথরের কোনা আর পিঠগুলো ভাঙা কাঁচের মতই ধারাল।
বিষণ্ণ মনে দূরের দিকে তাকাল হার্ট। জেমসের কথা ওর মনে পড়ছে। বুনো এলাকা জেমসের কাছে ছিল সব থেকে প্রিয়। কিন্তু ওর জীবন শুরু হওয়ার আগেই ওকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। হার্টের পাশে এসে দাড়াল রনি। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। কঠিন গানফাইটারের নীরব সান্ত্বনা, ওর উপস্থিতি থেকেই অনুভব করছে হার্ট।
ওরা এখানেই আছে, মন্তব্য করল রনি। ওদিকে কোথাও আস্তানা করেছে। আমরা জানি, জেরি আসলে ভাসকো গ্ৰেহাম। ড্যাকোটা জ্যাকের সাথে সে এই এলাকা চষে বেড়িয়েছে। ড্যাকোটা এই এলাকা পাইউট ইণ্ডিয়ানদের থেকেও ভাল চিনত।
মাথা ঝাঁকাল ফিনলে হার্ট। হ্যাঁ, কিন্তু ওদের ঘাটি কোথায়? দূরে চেয়ে আছে সে।
সামনের পাহাড়টা দেখাল রনি। আমরা ওখানে খুঁজে দেখব। ওখান থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে পানি নিচে নামবে। হয়তো কিছু পানি ওখানে জমেছে।
হঠাৎ হাত তুলল হার্ট। শোনো!
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে কান পেতে শুনল রনি। পিছন থেকে স্তব্ধতা চিরে একটা কয়োটির ডাক শোনা গেল। তারপর অস্পষ্ট, এবং বহুদূরে, কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ!
হ্যাঁ, শব্দটা ভিতর থেকেই আসছে। হয়তো ওখানে ওয়াটার-হোল আর কিছু গাছ আছে।
হ্যাঁ।
হার্ট তার সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। রনি, নিচু স্বরে বলল সে, মানুষ কেউ জানে না আগামীতে কি ঘটবে। হয়তো এবার আমার মরণ হবে। ওই লোকগুলো কঠিন। আমার যদি কিছু হয়, তুমি আমার হয়ে সমার্সকে শেষ কোরো, করবে তো?
কাউকে সেটা করতেই হবে, বলল রনি। ও একটা লাগাম ছাড়া বুনো ঘোড়া।
আর মলিকে বোলো ফিনলের গলার স্বর আরও নিচু হয়ে থেমে গেল। কাঁধ উঁচাল সে। জাহান্নামে যাক ওই চিন্তা! আমি ওকে নিজেই বলব!
ড্যাশার হাসল। নিশ্চয়। আমি সেটা জানতাম।
হার্ট কৌতূহলী চোখে গানফাইটার সঙ্গীকে দেখল। রনি, তোমার মৃত্যু নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়? দেখে তো মনে হয় না।
কাঁধ উঁচাল ড্যাশার। না, দুশ্চিন্তা নেই। ওটা যখন আসার তখন আসবেই। আমি নিজের মত চলি। প্রয়োজন নেই, এমন কোন ঝুঁকি নিই –যা হবার তা হবে।
ভোরের সূর্যটা লাভা স্রোতের ওপর ফেকাসে চাঁদের মত অর্ধেকটা বেরিয়েছে। এরই মধ্যে হার্ট, ছোট একটা আগুন জ্বেলে কফি চাপিয়ে দিয়েছে। রনি মরুভূমিতে শুকনো গ্রীজউড আর জুনিপার খুঁজতে গেছে।
আগুনের গন্ধটা ভাল, কিন্তু কফির গন্ধ আরও ভাল। ভিতরে ঢোকার নিশ্চয় কোন রাস্তা আছে, মন্তব্য করল হার্ট। আমাদের সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
হ্যাঁ। কিন্তু সেটা যে কোনপাশে হবে তা বলা মুশকিল। মনে হচ্ছে ওই পাহাড়টা লাভা স্রোতকে দুই ভাগে ভাগ করায় মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়ে গেছে। লাভা ভয়ানক বিপজ্জনক এলাকা। ভিতরে অনেক বুদ্বুদ আছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে, যার উপরটা ডিমের খোসার মতই পাতলা। ওর ওপর পা ফেললে তোমাকে সোজা নিচে পড়তে হবে। কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না। তাই লাভার ওপর দিয়ে চলতে হলে, সাথে একটা লাঠি রাখতে হবে। পা ফেলার আগে লাঠি ঠুকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ভিতরটা ফাপা কিনা।
ওরা নিশ্চয় পায়ে হেঁটে লাভা পার হয়নি।
হয়তো না, কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের তাই করতে হতে পারে।
ঘোড়া দুটোর পিঠে জিন চাপাল হার্ট। আগুন নিভিয়ে, লাথি দিয়ে ওটার সব চিহ্ন রনি মুছে দিল। তুমি উত্তরে যাও, বলল সে, আমি দক্ষিণে যাচ্ছি। যদি কোন পথ খুঁজে পাও, মরুভূমিতে কিছুদূর ঢুকে পাথরের একটা স্থূপতৈরি কোরো আমিও তাই করব।