মাইনের মালিক মুখ তুলে চাইল। হাওডি, রনি। বসো।
হা। কফিতে একটা চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল সে। গতরাতে জেরি সমার্স শহরে এসেছিল।
বিস্ময়ে হ্যারিংটনের চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। শহরে? এখানে?
হ্যাঁ, তাই। তুমি এখানকার এলাকা সব ভাল করে চেনো?
নিশ্চয়। পুরো ছেলেবেলা আমি এখানেই কাটিয়েছি। বড় হয়ে পুবে পড়তে গেছিলাম। কিছু ঘোরাঘুরির পর আবার এখানেই ফিরেছি। কিন্তু কেন বলো তো?
জেরি যতদিন আশপাশে আছে, এখানকার কেউই নিরাপদ নয়।
হার্ট ওকে খুঁজে বের করবে।
সময়ে, কিন্তু হাতে সময় খুব কম। অ্যাডাম এখন নিজের ছায়া দেখেও ভয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করেছে। রেড এমনভাবে হাঁটে মনে হয় যেন ডিমের খোসার ওপর হাঁটছে। আমি জানতে চাই, একটা লোক এখানে কোথায় লুকোতে পারে? ওর কাছে খাবার আছে, গোলা বারুদও আছে, কিন্তু ওর পানির প্রয়োজন হবে। সাথে এমন একটা জায়গা যেখানে হঠাৎ করে কারও ওকে দেখে ফেলার সম্ভাবনা নেই। আমার ধারণা এখান থেকে সে খুব একটা দূরে নেই।
বেশির ভাগ ওয়াটার হোল তো তুমি নিজেই চেনো। হ্যারিংটন হাত দিয়ে নিজের চোয়াল ঘষছে। জেরি জীবিত, আর কাছেই কোথাও আছে শুনে সে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তার টাকার প্রয়োজন, এবং সোনার একটা বড় চালান পাঠাবার কথা ভাবছে সে। উত্তরে আর দক্ষিণে লুকোবার মত কোন জায়গা নেই। পুবের এলাকাটা তুমি চেনো, পোড়া কর্ন প্যাঁচ, ইউনিয়নভিল, আর স্টার সিটি।
স্টার সিটিতে সে ছিল, বলল রনি। কিন্তু ওটা ছেড়ে সে কাছে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। মনে হয় একটা আঘাত হানার মতলব আঁটছে সে। আচ্ছা, পশ্চিমে কি আছে?
সমস্যাটা মনেমনে ভেবে দেখল হ্যারিংটন। সোজা পশ্চিমে আছে জমাট বাধা লাভা সোত। কিন্তু ওর ওপরে হাঁটা খুব ঝুঁকির কাজ। ওই পাথরে বেশ কিছু বুদ্বুদ আছে, যেগুলোর ওপরটা খুবই পাতলা। ভুল করে ওগুলোর একটার ওপর পা ফেললে নিচে পড়ে নিশ্চিত মৃত্যু। দেয়াল এত মসৃণ যে বাইরের সাহায্য ছাড়া কারও বেরিয়ে আসা অসম্ভব। তাছাড়া ওই পাথরগুলো খুরের মত ধারাল। বুট পরে হাঁটলেও ফালি-ফালি করে কেটে অল্পক্ষণের মধ্যেই শেষ করে ফেলে।
পানি নেই?
হ্যাঁ, ওটার ধারে পানি আছে। পুবে, সামান্য উত্তর ঘেঁষে একটা ঝর্না আছে। লাভার কিনার ধরে এগোলে ওটা মিস করার উপায় নেই। জানা মতে লাভার ভিতরে কিছুই নেই। লাভা স্রোতটা দশ মাইল লম্বা, আর দুই থেকে তিন মাইল চওড়া। কিছু উঁচু পাহাড়ও আছে ভিতরে।
হ্যারিংটন চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবছে রনি। যতই ভাবছে, লাভা স্রোতের ভিতরেই জেরি আশ্রয় নিয়েছে বলে তার মনে হচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে পানি সংগ্রহ করা কঠিন কাজ নয়। তাছাড়া হয়তো ভিতরেও পানি থাকতে পারে।
পরদিন সকালে মলির রেস্টুরেন্টে ঢুকে রনি দেখল ফিনলে ভিতরে বসে কফি খাচ্ছে।
শর্টি ঠিকই বলেছিল, বলল সে। ওরা হাই কার্ড মাইনেই ছিল। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওটা ছেড়ে আর কোথাও গেছে।
কাছে এগিয়ে চেয়ার টেনে বসল রনি। আমার মাথায় একটা আইডিয়া খেলছে। শুনতে চাও?
নিশ্চয়। আমার মাথায় আর কিছুই আসছে না।
কফির কাপ ভরে দেয়ার সময়ে মলির দিকে চেয়ে হাসল ফিনলে। মনে হয় এখানে থাকার সময় আমার ফুরিয়ে আসছে, বলল সে। তুমি পাহাড়ে বাস করার কথা কখনও ভেবেছ, মলি?
বাস করার জন্যে ওটাও ভাল জায়গা, সায় দিল মলি। আমি অনেক জায়গার কথাই ভেবেছি।
এই অভিযান থেকে ফিরে এসে আমি বাড়ির পথ ধরব। হয়তো আমাকে একাই ফিরতে হবে, হয়তো না।
দাঁত বের করে হেসে কফির কাপ তুলল রনি। আড়চোখে দেখল, মলি ওর দিকে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে আছে। চোখ টিপল রনি, তারপর মন্তব্য করল, পাহাড়ে কারও একা থাকা ঠিক না। বেশিদিন তো নয়ই। মানুষের সঙ্গ দরকার।
তোমরা দুজনে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছ? হাসি চেপে জানতে চাইল মলি। ধাঁধার ভাষায় কথা বলছ। রান্নাঘরের দিকে রওনা হয়ে একটু ইতস্তত করল সে। তারপর বলল, কারও যদি পাহাড়ে বাস করার ইচ্ছে থাকে, তবে তার তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করা দরকার। বেশি অপেক্ষা করলে ফল শুভ হয় না।
১৩. রান্নাঘর থেকে ডিম ভাজার শব্দ
রান্নাঘর থেকে ডিম ভাজার শব্দ ভেসে আসছে। হার্টকে খুঁটিয়ে দেখছে রনি। খোঁচাখোঁচা দাড়ির আড়ালে ওর চেহারাটা সুশ্রী। জামা-কাপড় ব্যবহারে কিছুট জীর্ণ হলেও পরিষ্কার। জুটিটা ভালই মিলবে।
হ্যাঁ, তোমার আইডিয়ার কথা কি যেন বলছিলে? জানতে চাইল ফিনলে।
নিজের ধারণার কথা ওকে জানাল রনি। আমার ধারণা ভুল হতে পারে, আবার সে ওখানে থাকতেও পারে। ওখানে গিয়ে আমি নিজের চোখে দেখে নিশ্চিত হতে চাই। কিন্তু শহরে হয়তো ওর কিছু বন্ধু-বান্ধব থাকতে পারে, তাই আমাদের একসাথে রওনা না হওয়াই ভাল।
রকিঙ কের পথ ধরল রনি। শহর ছেড়ে তিন মাইল দূরে ট্রেইল পানির যোতে কাটা একটা শুকনো নালায় নেমেছে। এখানে নিচে নেমে দিক পরিবর্তন করে লাভার দিকে এগোল সে।
মিউল ক্যানিয়নের মুখে রনির জন্যে অপেক্ষা করছিল হার্ট। দাঁত বের করে হেসে উঠে দাঁড়াল সে। ঠিক মতই এসে পৌঁছেছ দেখছি। মাথা আঁকিয়ে পিছনে লাভার দিকে ইঙ্গিত করল ফিনলে। বিচ্ছিরি
একটা জায়গা। তবে মনে হচ্ছে এখানেই ওকে পাওয়া যাবে।