জেগার–বুক কেঁপে ওঠার মত ঠাণ্ডা রনির স্বর–আমি তোমার শত্রু নই। সম্পর্কটা ওই রকম রাখাই তোমার জন্যে ভাল হবে। এখন থেকে রকি কে আর মাইনগুলোই হবে তোমার সব থেকে বড় খদ্দের-যেমন আগে ছিল। হিউবার্টরা এখন আর বড়-মুখে কথা বলবে না। জেরি সমার্সের দিনও ফুরিয়েছে। মননস্থির করে নাও তুমি কোন দলে থাকতে চাও।
এবং গুলি খেয়ে মরি? খেকিয়ে উঠল জেগার।
হয়তো। কিন্তু সৎ মানুষকে মাঝেমাঝে এমন ঝুঁকি নিতে হয়। তোমার কাছে গত রাতে যদি কেউ এসে থাকে, তুমি না বললেও সেটা আমি জানতে পারব। আর, যদি সৎ মানুষদের দলে যোগ না দাও, তবে দোকান বন্ধ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবো।
ইতস্তত করছে জেগার। চোখ দুটো কুৎসিত হয়ে উঠেছে। ঠিক আছে, তেতো স্বরে বলল সে। গতরাতে জেরি এখানে এসেছিল। আমাকে জাগিয়ে একটা নতুন রাইফেল আর গুলি কিনেছে সে। তারপর একটা বাটালি তুলে নিয়ে আমাকে বলল, নিজের ভাল বুঝলে আমি যেন মুখ বন্ধ করে রাখি। বাটালি দিয়ে কিছুক্ষণ সেলুনের জানালা খোলার চেষ্টা করল, কিন্তু পেরেক দিয়ে আটকানো থাকায় ওটা খুলল না। রাস্তা দিয়ে কিছু আরোহী এসে পড়ায় ওকে বাধ্য হয়ে সরে পড়তে হলো।
ওকি একাই ছিল? না, ওর সাথে আরও দু’জন ছিল। ওদের একজন ডাকি। আর কি নিয়েছে সে?
খাবার জিনিসপত্র–অনেক খাবার! রনির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল দোকানি। তোমার আর কিছু জানার আছে?
এখান থেকে বেরিয়ে সে কোথায় গেছে?
তা আমি কিভাবে জানব? রাগের সাথে বলল জেগার। ও কোথায় গেছে তা জানি না, জানতে চাইও না। আমাকে নির্বিঘ্নে থাকতে দিলে ও যা করে করুক, আমি কেয়ার করি না।
স্টোর থেকে বেরিয়ে বর্তমান সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মলির রেস্টুরেন্টের দিকে এগোল রনি। জেরি যে অ্যাকশনের জন্যে তৈরি হচ্ছে, এটা ওর কেনাকাটার বহর দেখেই বোঝা যায়। লোকটা দেশ ছেড়ে পালাবার পাত্র নয়। পরাজয় যন্ত্রণাদায়ক, এবং দেশ ছেড়ে যেতে ছোট হলেও একটা জিত ওর চাই। অবশ্য সে আদৌ যাবে কিনা সন্দেহ।
লোকটার সেলুনে ঢোকার চেষ্টা দেখে বোঝা যায় অ্যাডামের সাথে তার সম্পর্ক ভাল নয়। তাছাড়া অ্যাডাম ওকে খুন করবার চেষ্টা করেছিল। অ্যাডামের দুশ্চিন্তায় শুকিয়ে যাওয়ার কারণটাও এখন পরিষ্কার। যাহোক, জেরির এখন যা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে একটা নতুন হাইডআউট।
মলির রেস্টুরেন্টের দরজা ঠেলে ঢুকেই দেখল, ভিতরে সিলভার হিউবার্ট বসে আছে। কিন্তু ওর হাবভাবে সে ঝামেলা চায় মনে হলো না।
কঠিন চেহারার লোকটা ওকে ঢুকতে দেখে নড় করল। হাওডি, ড্যাশার! এসো, বসো।
ধীর পায়ে এগিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল রনি। কি ব্যাপার, সিলভার?
বিশাল লোকটা একটু ইতস্তত করল, তারপর মুখ তুলে চাইল। ওর চেহারা নতি স্বীকার করার লজ্জায় একটু লাল হয়ে উঠেছে। তোমার জন্যেই আমি এখানে অপেক্ষা করছিলাম। আসলে এসব বড়াই করার পর কথাটা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে বাধে ড্যাশার। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল সে, আমি শান্তি চাই। বিবাদ আমি আর চাচ্ছি না।
অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা, সায় দিল রনি। ঝামেলা আমিও চাই না।
হিউবার্ট আশ্বস্ত হলো। কেসিরও কি একই মত?
নিশ্চয়! সে তো প্রথম থেকে শান্তিই চেয়েছিল।
তা ঠিক। ভুলটা আমাদেরই। জনিই আমাদের উস্কে এর মধ্যে ঢুকিয়েছিল। অবশ্য আমি ওকে দোষ দিচ্ছি না। আমি নিজেও কোন অংশে ভাল ছিলাম না। আমরা ভেবেছিলাম বুড়ো কেসি মরে যাওয়ার পর বেন হাল ছেড়ে দেবে। ওর ভিতরে যে লড়ার সাহস আছে, এটা আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা ঝামেলা চেয়েছিলাম–পেয়েছি। যা চেয়েছিলাম তারচেয়ে বেশিই পেয়েছি।
আর তোমার আউটফিট? বিশেষ করে ট্রয়। ওই লোকটা খুব খারাপ, সিলভার।
হ্যাঁ। সিলভারের ঠোঁট দুটো এঁটে বসল। ওকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না, রনি। সে আর এতে জড়াতে আসবে না। একটু ইতস্তত করল সে, তারপর বলল, আমি এমন কিছু না। জেল খেটেছি, মানুষও মেরেছি। কিন্তু বলডি আর আমি যখন ঝগড়া করছিলাম, তার মধ্যে নাক গলিয়ে বলডিকে পিছন থেকে গুলি করা…এটা অসহ্য।
শেষে কি ঘটল?
আমি ওকে দুটো পথের একটা বেছে নেয়ার সুযোগ দিলাম। বললাম, হয় দেশ ছাড়ো, নইলে পিস্তল বের করো। খুব খেপেছিল সে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে ঘোড়ায় জিন চাপাল। তারপর হঠাৎ পিস্তল বের করল। হয়তো ভেবেছিল আমি পিছন ফিরেছি। আমি ওকে লক্ষ করছিলাম এবং–যাক, সে হেরে গেল।
ঠিক আছে, সংক্ষেপে বলল রনি। কেসির সাথে আমি এই বিষয়ে আলাপ করেছি। তোমাদের গরু রুর পুবে চরবে–এবং পশ্চিমে। কিন্তু তোমাকে মানতে হবে ওরা রকিঙ কে রেঞ্জে আছে। একটা জিনিসই আমরা অপছন্দ করি সেটা হচ্ছে, কেউ যদি আমাদের ঠেলে সরিয়ে জবর-দখল করতে চায়। এখানে আমাদের সবার জন্যেই যথেষ্ট পানি আর ঘাস রয়েছে। পরিষ্কার?
আশ্বস্ত হলো সিলভার। নিশ্চয়। এটা আমাদের জন্যে খুব ন্যায্য ব্যবস্থা হয়েছে। চেয়ার পিছনে ঠেলে উঠে পড়ল সে।
রনি তাকিয়ে ওর যাওয়া দেখল। একটা সমস্যার ভাল সমাধান হলো। কিন্তু জেরি সমার্সের সমস্যাটা রয়ে গেল, এবং ওটাই গুরুতর। লোকটা যে ভয়ানক, সেটা অ্যাডামের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।
কাপ হাতে উঠে রান্নাঘর থেকে ওটা আবার ভরে নিয়ে বিল হ্যারিংটনের পাশে এসে দাঁড়াল সে।