ও বলেছিল রবার্টস রেঞ্জে নাকি ওর এক ভাই আছে। খবরটা ওকে পৌঁছাতে বলেছিল।
হ্যাঁ। ফিনলে হার্ট। মাথা নাড়ল হ্যারিংটন। এটা সে সহজ ভাবে নেবে না। বললে ভুল হবে না যে এখন ওই খুনীদের দুশ্চিন্তার কারণ আছে। ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে।
উপত্যকাটা পিছনে ফেলে বাকবোর্ডটা একটা সরু ক্যানিয়ন ধরে এগোল। ছাড়াছাড়া পরিত্যক্ত মাইন আর ছাপরা নজরে পড়ছে। তারপর ট্রেইল শেষ হলো একটা সরু রাস্তায়–দুপাশে ফল্স্ ফ্রন্ট দেয়া বাড়িঘর। ওগুলোর পিছনে সিকি মাইল দূরে পাহাড়টা ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে, দুপাশে প্রচুর বাড়ি-ঘর। কিছু মাইনিঙ ক্লেইম আর কুঁড়ে-ঘরও রয়েছে।
এক্সপ্রেস অফিসটা লিভারি আস্তাবলের ঠিক উল্টো দিকে। এক্সপ্রেস অফিসের পাশেই একটা সেলুন। ওটার বাতির আলো গিয়ে পড়েছে। ওপাশের জেনারেল স্টোরের ওপর। সামনে ঘোড়ার জিনের দোকান, বুটের দোকান, কামারের দোকান, নাপিত আর দাঁতের ডাক্তারের পিছনে আইনজীবীর অফিস রনির নজরে পড়ল। জেল, হোটেল, বিভিন্ন দোকান আর জুয়া খেলার জায়গাও আছে ওখানে। গুনে দেখল মোট নয়টা সেলুন। শেষ মাথায় সোনার আকর মূল্যায়নের অফিস।
লিভারি আস্তাবলের দিকে এগোল রনি। ওর দিকে চেয়ে আছে হ্যারিংটন। ভুলো না! কাজটা এখনও তোমার!
অ্যাডাম আর রেডও ওই দিকে মোড় নিল। অ্যাডাম রনির দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল রেড। অ্যাডাম লিভারি স্টেবলে ঢুকলে সে নিচু স্বরে বলল, শটগান মেসেঞ্জারের কাজটা নেয়ার আগে ভাল করে চিন্তা করে দেখো। ওরা বেশিদিন টেকে না।
ঠিক, জবাব দিল রনি। মনে হয় কেউ ওদের মৃত্যু চায়।
এই শহরটায় থাকলে মানুষের ঝামেলাই বাড়ে, মন্তব্য করল রেড। মনট্যানা ভাল জায়গা। কখনও ওখানে গেছ?
হয়তো। অনেক জায়গাই ঘুরেছি আমি।
বুটের মাথা দিয়ে মাটিতে একটা লাথি মেরে টপারের পিঠ থেকে জিন নামানো লক্ষ করল রেড। তোমাকে কেমন যেন চেনা ঠেকছে।
তাই নাকি?
মনে হয় তোমাকে মন্ট্যানায় দেখেছি। কিংবা টেক্সাসে।
কে বলতে পারে? হয়তো। কথাটা হজম করতে রেডের কষ্ট হচ্ছে। এই এলাকায় কঠিন মানুষ হিসেবে ওর নাম আছে। এটা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় ও। ওর প্রশ্নের জবাব কেউ এড়িয়ে যাবে, এটা ওর পছন্দ নয়। কিন্তু ওর ধারণা হচ্ছে এই লোকটাকে জানা ওর দরকার। একান্ত প্রয়োজন। একটা সিগারেট তৈরি করে, আড়চোখে রনির দিকে একবার চেয়ে, এক মুঠো খড় নিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে ঘসতে শুরু করল সে।
হার্ট কি অনেক কথা বলেছে? খবর বের করতে চাইছে সে।
বলল ওর এক ভাই আছে, স্বীকার করল রনি। ওকে আমার খুঁজে বের করতে হবে।
জনাব, তোমার কেটে পড়াই ভাল। এই শহরটা মোটেও সুবিধের।
ভাল, রনির চোখ কৌতুকে একটু চিকচিক করে উঠল। আমি কারও সাথে ঝগড়া-বিরোধ করার জন্যে এখানে আসিনি। ঘুরে দরজার দিকে রওনা হলো সে। আবার দেখা হবে।
থামো! রেড এখন খেপে গেছে। আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। সেটার জবাব চাই আমি!
রনি ধীরে আস্তাবলের আধো আলোয় ঘুরে পঁড়াল।
হার্ট কি বলেছে তা আমি জানতে চাই। প্রয়োজন হলে পিটিয়ে আমি তোমার থেকে সেটা বের করব।
কথাটা বলেই সে বুঝতে পারল ভুল কথা বলা হয়েছে। ওর দিকে এক পা এগিয়ে গেল রনি। ঠিক আছে, স্বীকার করে নিল সে। তুমি তাহলে পিটিয়েই তা বের করো। কিন্তু জলদি করো, অপেক্ষা করার সময় নেই আমার।
ঢোক গিলল রেড। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল একবার। সে বুঝে নিয়েছে এই লোককে ধমক দিয়ে কাজ আদায় করা যাবে না–ওর ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে সিঁটিয়ে গেল সে। গোলমাল চাচ্ছে না ও। অন্তত এখন, এখানে নয়।
আরে ছিঃ! বলল সে। তুমি কি আমার কথা সিরিয়াসলি নিলে নাকি? আমি তো ঠাট্টা করছিলাম।
কথার কোন জবাব না দিয়ে রনি ওর দিকে চেয়ে রইল, অপেক্ষা করছে। অস্বস্তিভরে একটা পা সরাল রেড। ওর ছুটে এগিয়ে এসে আঘাত করতে, কিংবা গুলি চালাতে ইচ্ছে করছে। এগুলো চাইছে বটে, কিন্তু ওর সহজাত প্রবৃত্তি ওকে সাবধান করছে, বলছে, এটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
ওকে আর একটা চাহনি দিয়ে রনি বাইরে বেরিয়ে এল। একবারও পিছন ফিরে চাইল না।
কঠিন চোখে ওর প্রস্থান দেখল রেড। তারপর ফিসফিস করে বলল, দেখে নিও! তুমি চব্বিশ ঘণ্টাও টিকতে পারবে না এই শহরে।
০২. রনি আস্তাবল থেকে
রনি আস্তাবল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গেসঙ্গেই অ্যাডাম গভীর ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। জাগে লাল হয়ে উঠেছে ওর চেহারা। হাঁদা রাম! গর্জে উঠল সে। তোমাকে কে বলেছিল জেমস সম্পর্কে ওকে প্রশ্ন করতে? সে কিছু বলেছে বা বলেনি, তাতে কি আসেযায়? এসব প্রশ্ন ওকে কেবল সন্দিগ্ধই করে তুলবে।
কী বলো? জবাবে বলল রেড। ও কে, যে কিছু সন্দেহ করবে?
লোকটা কে তা আমিও জানি না, কিন্তু এটুকু বুঝি ওর সাথে লাগতে গেলে পিস্তল ছোড়ার জন্যে তৈরি হয়ে যেতে হবে। এবং তাতে ফলাফল ভাল হবে না। আমার ধারণা লোকটা পিস্তল চালাতে জানে–ধাপ্পা দিচ্ছে না।
গোড়ালির ওপর ঘুরে রাগত গানম্যানকে পিছনে ফেলে অ্যাডাম এগিয়ে গেল। কিন্তু মুখে যাই বলুক ওর মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না। জেমস যে কথা বলেছে সেটা জানা কথা। মরার আগে সে যদি ওকে তার ভাইয়ের কথা বলে থাকে–হয়তো আরও অনেক কথাই বলেছে। তবু, অন্ধকার রাতে ও কিবা এমন দেখে থাকতে পারে? ওর বলার কি থাকতে পারে? এটা প্রায় অসম্ভব যে ও কাউকে চিনতে পেরেছিল। সুতরাং এখন টাইট হয়ে বসে থাকা ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। দেখতে হবে পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়।… স্ট্রেঞ্জার লোকটাকে এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়াই ভাল।