ফেকাসে মুখে, আধমরা অবস্থায় জেরিকে নিয়ে স্টার সিটিতে পৌঁছল বেইলি। সবথেকে ভাল অবস্থায় যেটা আছে, সেই ছাপরাতেই আশ্রয় নিল ওরা। গুলির জখমের সেবায় বেইলির বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। কানের পাশে মাথার চামড়া হাড় পর্যন্ত চিরে গেছে। খুলিতেও একটা প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। কিন্তু পাথর পড়ে দেহের জখমগুলোই বেশি মারাত্মক হয়েছে, কারণ পুরো দেহ টেবিলের তলায় ঢুকাতে পারেনি সে। যখন আহত জেরিকে মোটামুটি নিরাপদে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব, তখন ডাকির সাথে যোগাযোগ করে ওকে স্টার সিটিতে নিয়ে এল।
পুরো সাতদিন যমের সাগ্নে লড়ল জেরি। বেইলি আর ডক বেনটন ওকে সাহায্য করল। ইউনিয়নভিল শহর থেকে ডাক্তারকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে এসেছে ডাকি স্মিথ। প্রাক্তন আর্মি স্যারন বেনটন এখন মদে ডুবে থাকলেও ডাক্তারি ভুলে যায়নি। শেষ পর্যন্ত ওকে যখন ইউনিয়নভিলের সেলুনে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হলো, জেরি তখন দ্রুত সেরে উঠছে। সুস্থ হচ্ছে বটে, কিন্তু যত সারছে ততই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠছে ওর। শেষে এটা আরও বাড়ল।
মেঝের ওপর পায়চারি করে বেড়াচ্ছে জেরি। সরু, ফেকাসে মুখ। চাপা একটা রাগে ফুসছে। বেইলি উদ্বিগ্ন চোখে ওকে লক্ষ করছে-ধীর প্রকৃতির ডাকিও আশঙ্কিত। ড্যাশারের কাছে হেরে যাওয়াই কি এর কারণ? নাকি এটা মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ার ফল–বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক যে এখন ওর আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। সহজ হাসির আচ্ছাদনটা অদৃশ্য হয়েছে, কেবল রয়েছে একটা খুনী-ভাল কিছুই আর ওর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।
আমার মতে, প্রস্তাব দিল ডাক বেইলি, আমাদের আপাতত এখান থেকে সরে যাওয়াই ভাল। ড্যাশার যতদিন আছে, এখানে কারও কিছু করার উপায় নেই। পরে অ্যাডামকে আমরা দেখে নেব।
যাওয়ার কথা ভুলে যাও! ঝট করে বেইলির দিকে ফিরল জেরি। ওর চেহারাটা ভীষণ হয়ে উঠেছে। ড্যাশার আর অ্যাডাম না মরা পর্যন্ত আমরা এদেশ ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না! ওই সোনাও আমি চাই, কিন্তু তারচেয়ে বেশি চাই রনিকে!
বস, আপত্তি তুলল ডাক, পুরো দেশটাই এখন আমাদের বিরুদ্ধে। এখানে থাকলে আমাদের জীবন্ত ফেরার কোন আশা নেই। বাড়িয়ে বলছি না। এখন আমরা সরে পড়তে পারব। ওরা জানে না তুমি বেঁচে আছ, কি মরেছ। কিন্তু বিশ্বাস করো, ওরা সন্দিগ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
ড্যাশার, বলে চলল সে, এলাকাটা চষে বেড়াচ্ছে তোমার খোঁজে। ফিনলে হার্টও তাই করছে। রিজের মাথায় বসে দূরবীন দিয়ে আমি দেখেছি তোমার ট্রেইল ধরেই সে এগোচ্ছিল, পরে হারিয়ে ফেলল। কিন্তু বারবার মুখ তুলে সে এই পাহাড়গুলোর দিকে তাকাচ্ছিল। মনে হলো এদিকটা ভাল করে খুঁজে দেখার ইচ্ছা ওর আছে। আমি তোমাকে বলছি জেরি, হার্ট ক্ষান্ত হওয়ার পাত্র নয়।
বিদ্বেষে জ্বলছে জেরির চোখ। কি ব্যাপার ডাক, ভয় পাচ্ছ? তোমার কাছ থেকে এটা আমি আশা করিনি!
দরজার দিকে এগিয়ে গেল সমার্স। ওখানে হঠাৎ ঘুরে নিচু স্বরে সে বলল, কেউ আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। বুঝেছ? কেউ না!
বেরিয়ে গেল জেরি। ওর পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। ফেকাসে মুখে ডাকি স্মিথের দিকে তাকাল ডাক। অনেক বদলে গেছে ও, মন্তব্য করল সে।
নীরস মুখে মাথা ঝাকলি ডাকি। এখানে থাকার কোন মানে হয় না, ডাক! কোন মানেই নেই! ওই হার্ট লোকটা ব্লাডহাউণ্ডের মত–একবার ট্রেইল ধরলে সহজে ছাড়বে না। লারামিকে মেরেছে সে। আর ড্যাশারের মোকাবিলা করার চেয়ে বাঘের আস্তানায় ঢুকে চান্স নেয়া অনেক ভাল। ভূমিকম্পটা না হলে জেরিকে আজ আর বেঁচে থাকতে হত না।
আমরা তাহলে কি করব? প্রশ্ন করল ডাক।
জবাব না দিয়ে স্মিথ বিড়ালের মত নিঃশব্দ পায়ে জানালার কাছে সরে গিয়ে বাইরে উঁকি দিল। তারপর বসল। কি করব? উঁচু গলায় বলল সে। আমি বসের সাথেই থাকব। আর কি করব? এখন, ড্যাশারকে কি করে শেষ করা যায় সেটাই ভাবতে হবে!
ডাক চট করে স্মিথের দিকে তাকাল, তারপর জানালার দিকে একবার চেয়ে নড় করল। হ্যাঁ, বলল সে, ওকে মারাই হবে আমাদের প্রথম কাজ। পরে অ্যাডামকে শেষ করে সোনা ছিনিয়ে নিতে হবে।
হঠাৎ কামরায় ঢুকল জেরি। চাপা রাগের সাথে প্রথমে বেইলি, পরে ডাকির দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকাল সে। জেরি যে দূরে সরে গিয়ে আবার নিঃশব্দে ওদের কথাবার্তা শোনার জন্যে ফিরে এসেছিল, এটা ওরা দুজনেই বুঝতে পারছে। পায়চারির সাথে বিড়বিড় করছে সমার্স।
থেমে স্থির দৃষ্টিতে বেইলি আর ডাকির দিকে তাকাল সে। চোখে অনিষ্টকর আর অশুভ ইঙ্গিত। কিন্তু তার পিছনে আরও কিছু রয়েছে-বেইলি ওটা প্রথমবারের মত দেখল, এবং চিনে শিউরে উঠল। জেরি সমার্স বদ্ধ-পাগল।
১২. রনি শহরে ঢুকল
এক সপ্তাহ পর রনি শহরে ঢুকল ওর সাথে রয়েছে হ্যারি আর শর্টি। স্টার সিটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে ওরা কিছুই পায়নি। ডকি আর বেইলিকে বেশ কিছুদিন কেউ দেখেনি।
অ্যাডামকে কখনও একা দেখা যায় না। রেড সবসময়েই ওর পাশে রয়েছে। ওর হলুদ-কালো চোখ দুটো সর্বক্ষণ ঘুরছে। জানালা, দরজা আর গলির ওপর চোখ রাখছে সে। অ্যাডাম অনেক শুকিয়েছে। ওর ফোলা গালগুলো এখন চুপসে গালের উপরকার হাড় বেরিয়ে এসেছে। ভিড়ের ভিতর ওকে আর সেলুনে দেখা যায় না।
ফিনলে হার্ট শহরে ফিরে এসেছিল। কিছু সাঃ ই নিয়ে মলির আপত্তি সত্ত্বেও আবার বেরিয়ে পড়েছে। লোকটা স্বীকার করেছে এখন পর্যন্ত সে কিছু খুঁজে পায়নি কিন্তু এখন সে সসবে কাজ করছে। পুরো এলাকাটাকে ভাগ করে নিয়ে, প্রত্যেvটা অংশ ভাল করে খুঁজে দেখছে।