লারামি
১৮৮১
বুট পরেই মরেছে সে
একটা কবর! জেরি সমার্স বেঁচে আছে! দ্রুত দ্বিতীয় আস্তানাটার দিকে এগোল রনি। তাড়াহুড়ো করে ওটা ছেড়ে চলে যাওয়ার সব চিহ্নই রয়েছে ওখানে। টপারের দিকে এক নজর চেয়ে দেখল ঘোড়াটা কান খাড়া করে বুনো চোখে এদিকওদিক দেখছে। রনিও একবার চারপাশে দেখল। হঠাৎ জমিটা একটু কেঁপে উঠল।
ছুটে এসে এক লাফে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসল সে। পুরোদমে প্রবেশ পথের দিকে ছুটল টপারকে নিয়ে। ঘোড়ার পায়ের নিচে মাটিটা যেন ককাচ্ছে। পাথরের সাথে পাথর প্রচণ্ড চাপের সাথে ঘষা খাওয়ার আতঙ্ক-জাগানো শব্দ তুলে দক্ষিণের পাহাড়গুলো আরও-আরও উঁচু হয়ে আকাশের দিকে উঠছে। বেরোবার ফাঁকটা এখন আরও সরু হয়েছে। ঘোড়াটাকে নিয়ে লাফিয়ে ফাঁক গলে বেরিয়ে এল রনি। ভূমিকম্পের জের এখানেও সুস্পষ্ট। লম্বা সরু ফাটলগুলো মরুভূমির মধ্যে যতদূর দেখা যায় এগিয়ে গেছে। র্যাঞ্চে ফেরার পথ ধরল রনি।
জেরি সমার্স বেঁচে আছে। তাই যদি হয়, কোথায় আছে সে? কর্ন প্যাচে আগুন ধরিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। থ্রী এইচে যোগ দিয়ে থাকতে পারে সে। কিন্তু তার সম্ভাবনা কম। জেরি সমার্স হচ্ছে লীডার-অন্যের আদেশ মেনে চলা ওর ধাতে সইবে না।
মরুভূমিতে জেরি ট্র্যাক খোজা অর্থহীন। জেরির মত আউটলকে ট্র্যাক করতে হলে মাথা খাটিয়ে করতে হবে। ইউনিয়নভিলে সে যাবে, কারণ ওখানে সে পরিচিত। রনির বিশ্বাস, জেরি চাইবে ওর শত্রুরা সে মারা গেছে মনে করে নিশ্চিন্ত থাকুক।
রাত হয়ে আসছে। এতক্ষণে রনি অনুভব করল সে ক্লান্ত। টপার যেভাবে চলছে, তাতে বুঝতে পারছে ঘোড়াটাও তাই। বাটির মত একটা বড় গর্তে কিছু কটনউড গাছ দেখে ওদিকেই এগোল রনি। ওখানে পানি থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ওর ধারণা ভুল নয়। চুয়ে পড়া পানিতে মাঝখানে একটা ছোট্ট পুকুর মত হয়েছে। একপাশে ম্যানজানিটার ঘন ঝোঁপ। উপড়ে পড়া একটা বিশাল গাছের পাশে ক্যাম্প করল। ছোট্ট একটা আগুন জ্বেলে কফি চাপাল সে।
কফি ঢালছে, এই সময়ে পাথরের ওপর ঘোড়ার খুরের ক্লিক্লিক শব্দ ওর কানে এল। কাপটা নামিয়ে রেখে গাছের গুড়ির মোটা দিকটার আড়ালে চলে গেল–হাতে রাইফেল। অনেকক্ষণ সব চুপচাপ। গরম কফি ভরা কাপটার দিকে সতৃষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল রনি। আসার আর সময় পেল না লোকটা!
একটা উপায় ওর মাথায় খেলল। খুব সতর্কতার সাথে কাপের হাতলটার সাথে রাইফেলের মাথায় বসানো নিশানা করার কাঁটায় বাধিয়ে ধীরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে এল। কপাল ভাল, কাপ থেকে চলকে খুব কমই পড়ল। তৃপ্তির সাথে কফি শেষ করল রনি। আসুক ওরা, এখন সে তৈরি।
আবার একটা ক্লিক শোনা গেল–আরও কাছে। লোকটা যে-ই হোক, খুব সাবধানে এগোচ্ছে। নিচু হয়ে আকাশের দিকে চাইল সে–কোন তারা আড়াল হয় কিনা খেয়াল করছে। কিন্তু তা হলো না। মৃদু কথাবার্তার আওয়াজ রনির কানে এল। মাথা কাত করে কান পেতে শোনার চেষ্টা করল। যখন বুঝতে পারল, হেসে গুঁড়ি ঘুরে ঘাসের ভিতর দিয়ে বুকে হেঁটে এগোল। যখন আকাশের পটভূমিতে ওদের চওড়া হ্যাটগুলো দেখতে পেল; সে উঁচুস্বরে বলে উঠল, তোমরা যদি ক্যাম্পের দিকে এগোলে নিজেদের আগে থেকেই ঘোষণা করো, তাহলে এভাবে ধরা পড়তে হবে না।
বাধ্য ছেলের মত ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল শর্টি আর হ্যারি। হ্যারি বলল, ভাবলাম তোমার হয়তো সঙ্গ ভাল লাগবে। তাছাড়া এদিকে যখন এলামই মনে করলাম তোমাকে কিছু খবরও দিয়ে যাই।
কি খবর? ডক হ্যাডলে আর মিস শেলী শীঘ্রি বিয়ে করতে যাচ্ছে।
পুরানো খবর। আমি আগেই শুনেছি, বলল রনি।
আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে থ্রী এইচে। বলডি আর সিলভারের মধ্যে কিছু গরম কথা কাটাকাটি চলছিল, এই সময়ে ওই কয়েটি ট্রয়, বলডিকে পিছন থেকে গুলি করে বসেছে। ডক হ্যাডলের ধারণা বলডি হয়তো বেঁচেও যেতে পারে–কিন্তু এর কোন নিশ্চয়তা নেই।
ওই আউটফিটটা নিজেদের মধ্যেই মারপিট করে–অন্যের সাথে মিলেমিশে চলবে কিভাবে? মন্তব্য করল রনি। এসো, ক্যাম্পে চলো-কফি তৈরি।
কফিতে চুমুক দিয়ে লারামির কবর খুঁজে পাওয়ার কথা জানাল রনি। আরও বলল, তার বিশ্বাস জেরি সমার্স বেঁচে আছে।
সেটা আমরা শুনেছি। ফিনলে হার্ট ওর ঘোড়ার ছাপ দেখতে পেয়েছে। সাথে আরও একজন আছে–সম্ভবত বেইলি। ওদের কিছুদূর অনুসরণ করার পর হার্ট ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেছে।
ওরা কোন দিকে যেতে পারে বলে মনে করছ? হ্যারি জানতে চাইল।
বলা যায় না। হয়তো স্টার সিটির সেই মাইনে।
এখন কি করবে? প্রশ্ন করল শর্টি। তুমি কি জেরির পিছু নেবে?
সম্ভবত। একটা সিগারেট রোল করল রনি। তবে হতে পারে ওর যথেষ্ট হয়েছে। লোকটা দেশ ছেড়ে চলেও যেতে পারে। চলে গেলে ওকে আর ধাওয়া করব না। আর থ্রী এইচের বেলায়, আশা করি ওরা আর ঝামেলা করবে না। এড়াতে পারলে বেন হাঙ্গামা চায় না। আমারও একই মত।
শর্টিকে একটু মনমরা দেখাচ্ছে। ইশ! একটা ভাল ফাইটের চান্স মিস হয়ে গেল!
স্টার সিটিতে খুব উন্নত মানের আকর পাওয়া গিয়েছিল। ওটা দু’বছর টিকেছিল, তারপর ফুরিয়ে গেল। মাইনাররা করার কিছু না পেয়ে কেউ কেউ ইউনিয়নভিলে, আর অন্য লোকজন বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ল। ছাপড়াগুলো রয়েই গেল।