টেরি, নিচু স্বরে বলল সে, তোমরা সবাই মিলে ওর লাশটা আপাতত গুদামে নিয়ে রাখো। ওদের আউটফিটের কেউ যদি আজ রাতের মধ্যে ওর দেহটা দাবি না করে, আমরা সকালে ওকে কবর দেব। ডাক্তারের দিকে ফিরল সে। হ্যাডলে, তোমার ব্যাগটা বের করো। মনে হচ্ছে আমি গুলি খেয়েছি।
রনি আর শর্টি সেভেন পাইনস শহরে পৌঁছল। আঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। ওরা দুজনেই ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত। লিভারি আস্তাবলে ঘোড়া রেখে রাস্তা ধরে ওরা এগোল। হার্ট ওদের অনেক পিছনে-মুখটা কঠোর।
কী একটা দেশ! তেতো স্বরে বলল শর্টি। হয় রোদে পুড়ে যাচ্ছে, নয়তো বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে!
হোক বৃষ্টি! জবাব দিল রনি। খাবার তো এত রাতে কোথাও পাওয়া যাবে না, আমার কেবল একটা বিছানা আর কম্বল হলেই চলবে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে হ্যাট আর প্লাসটিকের বর্ষাতি থেকে পানি ঝেড়ে সেলুনের হোটেলে ঢুকল ওরা। লবিতে টিমটিম করে একটা বাতি জ্বলছে। সাড়া পেয়ে ঘুমে কাতর কেরানি তার দরজা খুলে গলা বাড়াল। স্থিরদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, সাত নম্বর। নিজেই র্যাক থেকে চাবিটা নিয়ে নাও। আমি শুয়ে পড়ছি!
দরজা টেনে দিলেও বিছানায় গেল না সে। এক মিনিট চিন্তা করে তাড়াতাড়ি প্যান্ট পরে নিল। তারপর তাড়াতাড়ি আ্যাডামের কামরার দিকে এগোল।
একঘণ্টা আগে বিছানায় গেলেও ঘুমায়নি অ্যাডাম। অনেক কিছুই ঘটছে, কিন্তু কোন খবর সে পাচ্ছে না। দরজার ওপর মৃদু টোকার শব্দ ওর কানে এল। বালিশের তলা থেকে পিস্তলটা বের করে কান পেতে রইল। আবার টোকা পড়ল। কে? নিচু স্বরে প্রশ্ন করল সে।
আমি-জেরেমি! তোমার জন্যে খবর আছে!
বিছানা ছেড়ে নেমে দরজা খুলে দিল অ্যাডাম। জেরেমি ঢুকতেই আবার বন্ধ করল।
ভাবলাম তোমার জানা দরকার। রনি ড্যাশার এখন শহরে! ওর সাথে শর্টি মাইকও এসেছে। মাত্র কয়েক মিনিট আগেই পৌঁছেছে। ওদের আমি সাত নম্বর কামরাটা দিয়েছি।
ড্যাশার? কিছু বলল সে? কোন খবর?
একটা কথাও না। দুজনেই ক্লান্ত, কিন্তু ওদের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগেনি।
ঠিক আছে, ঘুমোতে যাও। কাল সকালে একটু ঘুরেফিরে খবর নেয়ার চেষ্টা কোরো কি ঘটছে।
ভোরবেলা থেকেই খবর আসতে শুরু করল। জনি হিউবার্ট মারা গেছে। এবং সে মারা পড়েছে বেন কেসির হাতে! তিনটে গুলি করেছিল হিউবার্ট। বেন, মাত্র একটা!
হিউবার্টের রাইডাররা ফাঁদে পড়ে পায়ে হেঁটে অ্যালকেলি বেসিন পার হচ্ছে। ওদের সব ঘোড়া তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঘণ্টাখানেক পর আরও দু’জন লোক শহরে পৌঁছল।
হ্যানকিনস আর ড্রেনান দল ছেড়ে ভিন্ন পথ ধরেছিল। অল্পক্ষণ পরেই ওদের কপাল ফিরে গেল। থ্রী এইচের কিছু ঘোড়া দেখতে পেল ওরা। একটা ছোট শাখা ক্যানিয়নে ঘোড়াগুলো ঘাস খাচ্ছিল। সুখকর পরিবেশে দলের সাথে ওদের বিচ্ছেদ হয়নি বলে ঘোড়া নিয়ে দলের কাছে ফিরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করেনি ওরা। ঘোড়ার খালি পিঠে উঠে সোজা সেভেন পাইনসের দিকে রওনা হয়েছে!
মুখে ফোস্কা পড়েছে পায়ের অবস্থা কাহিল। এই অবস্থায় এদের একটাই ইচ্ছে, থ্রী এইচ থেকে দুরে থাকতে চায় ওরা।
রনি ড্যাশার দ্বিতীয় কাপ কফি নিয়ে বসেছে, এই সময়ে হ্যানকিনস আর ড্রিনান প্রায় টলতে টলতে মলির রেস্টুরেন্টে ঢুকল। ঠাণ্ডা নীল চোখে ওদের যাচাই করে দেখল সে।
এখানকার কফি ভালে। কিন্তু তোমরা নাস্তা চাও, নাকি ঝামেলা?
হ্যানকিনস ক্ষুব্ধ চোখে চেয়ে থাকল। ড্রিনান মুখ খুলল। নাস্তা আর গোসলের পর দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই। তুমি কি বলল, রনি?
শর্টির হাত দুটো পিস্তলের ব্যাটের কাছে। অপেক্ষা করছে। তুমি ওর সাথে একমত? হ্যানকিনসকে প্রশ্ন করল রনি।
বেজার মুখে মাথা ঝাঁকাল হ্যানকিনস। ওই দিনই পরের দিকে শহর ছেড়ে চলে গেল ওরা। সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই কর্ন প্যাঁচ পুড়িয়ে দেয়া হলো। জনি হিউবার্টকে ওর ভাইয়ের পাশেই কবর দেয়া হলো। রেঞ্জটা এখন শান্ত। কেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।
থ্রী টি এল-এর মরিসন যে রনির পথ চেয়ে আছে, এটা সে জানে। তবু যে কেন ও এখানেই থাকছে, তা সে নিজেও জানে না। রেড শহরে ফিরে গেছে। অ্যাডামের পাশেই ওকে সর্বক্ষণ দেখা যায়। কেউ ডাকি স্মিথকে ইউনিয়নভিলে দেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সে যে শহর ছেড়ে কোথায় উধাও হয়েছে তা কেউ জানে না।
গত দশ দিন যাবৎ একটা অদ্ভুত অনুভূতি রনির মনে অস্বস্তি জাগাচ্ছে। র্যাঞ্চের বারান্দায় বসে সবদিক বিচার করে সে এর কারণটা বুঝল। জেরিকে সে পড়তে দেখেছে বটে, কিন্তু নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে না লোকটা মরেছে। সমার্স বেঁচে থাকতে এই এলাকায় শান্তি কখনও ফিরে আসবে না। সুতরাং যা-ই ঘটুক না কেন, হাইডআউটে গিয়ে তাকে নিজেই দেখে আসতে হবে।
অল্পক্ষণ আগেই হাইডআউটে পৌঁছেছে ড্যাশার। রকস্লাইড-যেপথে রনি কানিয়নে ঢুকেছিল সেটা আগের মতই আছে। কিন্তু করাতের দাঁতের মত পাহাড়গুলো আর আগের জায়গায় নেই, লক্ষ করল সে। ক্যানিয়নের দুটো অংশেই প্রাণের কোন সাড়া নেই। চারদিক নিঝুম। ক্যানিয়নের তলায় পাথর পড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পাথরের দালানটার কেবল দুটো দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। দুটোতেই ফাটল ধরেছে। বাকিটা পুরোই ধ্বংস হয়েছে। জেরি জীবিত থাকলেও সে ক্যানিয়নে নেই। করালে একটা ঘোড়াও নেই। দালানের পাথরের স্কৃপের ভিতর রনি কোন লাশ খুঁজে পেল না–তবে রক্তের দাগ ওখানে রয়েছে। তারপর করালের কাছে একটা কবর দেখতে পেল।